টাকাই কি জীবনের সব সুখ এনে দিতে পারে?
অঢেল টাকা পয়সা পর্যাপ্ত সুখ এনে দিতে পারে না আবার পরিমিত টাকা স্বর্গের সুখ এনে দিতে পারে। সুখ বিষয়টা আপেক্ষিক।

কেউ কেউ বলে,
" অভাব যখন দরজা দিয়ে আসে ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়"।
আবার কেউ কেউ বলে,
" বিশ্বাস,ভরসা, ভালোবাসা থাকলে গাছতলায় গিয়ে ভালোবাসার মানুষের সাথে সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়"।
এভাবে তর্ক চলতেই থাকে.......
মানুষ প্রথম যখন কারো প্রেমে পড়ে তখন সে এক নেশার ঘোরের মধ্যে থাকে। মেডিকেল সাইন্স বলে কোকেন নিকোটিন নিলে মানুষের মস্তিষ্কের ডোপামিন কোষগুলো যেমন করে সাড়া দেয় প্রেমে পড়লেও মস্তিষ্কের কোষগুলো ঠিক তেমনভাবেই সাড়া দেয়। এজন্য প্রাথমিক অবস্থায় দুজন দুজনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে একে অপরের ভুল ত্রুটি চোখেই পড়ে না।
এমনকি একে ওপরের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকে। এই অবস্থায় দুজনে মনে করে তারা ভালোবাসা দিয়ে গাছতলায় সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবে। ফলে বাংলা সিনেমার মতো বাড়ি ছেড়ে পালাতেও পিছপা হয় না। দোষ তাদের না,দোষ বয়সের,আবেগের।
তারপরে আস্তে আস্তে যখন বিয়ের পর নেশার ঘোর থেকে বাস্তবতায় ফিরে দায়িত্ব গ্রহনের পালা শুরু হয়ে যায় ,আবেগ থেকে বাস্তববাদী হতে শুরু করে তখন বুঝতে পারে জীবনের আসল মানে।
মানুষের চরিত্র গঠনে পরিবারের ভূমিকা কতখানি? জেনে নিন
কারন বিয়ের আগে ইনবক্সে দু চারটা রোমান্টিক চ্যাট ই লাইফের সবকিছু নয়। সংসার চালাতে,বাচ্চাদের সু শিক্ষায় শিক্ষিত করতে টাকার তো অবশ্যই প্রয়োজন পড়ে। কারন জীবনটা কোন বাংলা সিনেমা নয় আর আপনিও জসীম আর শাবানা নন যে গাছতলায় গিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবেন।
নুন আনতে পান্তা ফুরোলেই সংসারে অশান্তি। এমনকি বিচ্ছেদও হয়। কারন যার দু বেলা দু মুঠো ভাত খাওয়ার সামর্থ্য নেই সে জানে ক্ষিধের কত জ্বালা।
ক্ষুধার জ্বালাকে উপলব্ধি করেই
কবি রফিক আজাদ বলেছেন
"ভাত দে হারামজাদা,তা নাহলে মানচিত্র খাবো"
"ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়,
পূর্নিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি"
পরিবারের ভরনপোষনের ক্ষমতা না থাকলে সংসারে অশান্তি এসে ভর করে। ঝগড়া কলহ লেগেই থাকে। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ঘটনা ঘটে।
তবে টাকা পয়সা জীবনের সবকিছু নয়।
রান্না করতে গেলে যেমন আগুন লাগে, লাইফ চালাতেও টাকা লাগে।
রান্না আগুন ছাড়া হবে না এইটা সত্যি,কিন্তু রান্নাটা মুখরোচক হওয়ার জন্য অন্যান্য অনেক উপাদান (তেল,লবন ইত্যাদি )জরুরি।
জীবনে টাকাও সেম, এটা ছাড়া চলবে না কিন্তু শুধু টাকা দিয়েই সবকিছু হয় না।
আমরা মাঝে মাঝে টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে ভুলেই যাই লাইফে টাকার পাশাপাশি অন্যান্য অনেক কিছুই দরকার।
সুস্থতা, পরিবার, বিশ্বাস, ভালোবাসা,সম্মানবোধ,ভরসা, নীতি নৈতিকতা দিয়ে যখন জীবনের রান্নাটা হয়,তখন সেটা হয় সুস্বাদু।
হ্যা রান্নার আগুনটা(কাল্পনিক অর্থে টাকা)যদি কম হয় রান্নাটা ধীরে হয়, সময় বেশী লাগে,বাট রান্না হয়,খাওয়া যায়। কিন্তু রান্নায় যদি লবণ মরিচের মত একটা উপাদান কম থাকে,সেই রান্না মুখে দিতেও বিস্বাদ লাগে।
টাকা কম থাকলেও সুখ আসে। কিন্তু অনেক টাকা থাকার পরেও পারিবারিক শান্তি, সুস্থতা, বিশ্বাস,সম্মানের মত উপাদানের অভাবে জীবন এলোমেলো হয়ে যায়।
জীবনে টাকা মেইন,বাট টাকাই সব না।
আসলে টাকা পয়সা জীবনে আপাতদৃষ্টিতে সুখ এনে দিতে পারলেও চীরস্থায়ী প্রশান্তি আর আত্মতৃপ্তির বন্দোবস্ত কখনোই করতে পারে না। যদি করতো তাহলে চারদিকে বিখ্যাত ব্যক্তিদের বিচ্ছেদ হতো না।
আবার টাকা ছাড়া জীবনও চলবে না এটা ঠিক। তবে অধিক টাকা পয়সার লোভ আবার অনর্থ ডেকে আনতে পারে। পরিমিত টাকা পয়সা আবার স্বর্গের সুখ এনে দিতে পারে। এটা নির্ভর করে আপনার স্ত্রী আর পরিবেশের ওপর। আপনার স্ত্রী যদি লোভী হয় তাহলে লক্ষ লক্ষ টাকাও আপনার পার্টনারকে হ্যাপি রাখতে পারবে না। আপনার পার্টনারের চাহিদা সীমিত অল্প টাকায় সংসারে সুখে থাকা সম্ভব।
আমি এক দম্পতির কথা জানি বিয়ের পরে প্রচন্ড অভাবের কারনে সে স্বামী রেখে অন্য পুরুষের সাথে পালিয়ে যায়। এখানে তার অঢেল টাকা পয়সার দরকার ছিল তার দৃষ্টিতে পরিপূর্ন সুখ টাকাতেই সম্ভব।
আমি আরো এক দম্পতিকে দেখেছি মাসে মাত্র কয়েক হাজার টাকার চাকরি করে অনায়াসেই বিশ্বাস,ভরসা আর ভালোবাসা দিয়ে একসাথে সারাজীবন কাটিয়ে বৃদ্ধ হতে।এখানে অল্প টাকা তাদের সুখের পথে বাধা হয়ে দাড়ায় নি।
আমি আরো এক দম্পতির কথা জানি যে তার অসুস্থ স্ত্রী নিয়ে দিনের পর দিন কাটিয়ে দেয়। টাকা পয়সা তার জীবনে সুখ আনতে পারে নি
আমি এমন একজন দম্পতিকে দেখেছি, যার বিবাহিত জীবনের কতগুলো বছর কেটে গেছে একটা বাচ্চা নেওয়ার আশায় তারপরেও প্রাপ্তি শূন্য। এখানে অঢেল টাকাপয়সা তাদের পরিপূর্ন সুখ এনে দিতে ব্যর্থ।
আমি আরো এক দম্পতির কথা জানি, যে মেয়েটা ছেলেটার অঢেল টাকা পয়সা দেখে বিয়ে করেছিল আজ সে প্রতিনিয়ত বালিশ ভেজায় চোখের জলে,
এখন সে বুঝতে পারে মাস শেষে মুখের ওপর একগাদা টাকা ছুড়ে দেওয়ায় জীবনের সবকিছু নয়। তার একজন দায়িত্ববান স্বামীর প্রয়োজন ছিল। যে সম্মান করবে,ভালোবাসবে,বিপদে তার পাশে থাকবে,প্রচন্ড জ্বরের রাতে যেন সে পাশে বসে থেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে আর বলবে কিছু হবে না আমি আছি,মন খারাপের রাতে যেন সে তার হাসি মুখের কারন হয়। সে যেন ছায়া হয়,ছাদ হয়,ভরসা হয়।
কিন্তু এর কিছুই হয় না।
তার ধারনায় ভুল প্রমানিত হয় যে টাকা পয়সায় পৃথিবীর সব সুখ এনে দিতে পারে না।
এ জন্যই মুলত এ জন্যই বড় বড় খ্যাতনামা ব্যক্তিদের অঢেল টাকা পয়সা থাকা সত্বেও ভুরি ভুরি বিচ্ছেদ হয়।
আরেক দম্পতিকে দেখেছি, বিয়ের পর মেয়েটার রূপ সৌন্দর্য্যে কত শত দিন ডুব দিয়া আগ্রহ হারাইয়া ছেলেটা যখন বুঝতে পারে মেয়েটা চরিত্রহীন;বিয়ের পরেও পরপুরুষের সাথে সম্পর্ক করে,তাকে সম্মান করে না,ঝগড়া করে,মেয়ে উশৃঙ্খল নারীবাদী চেতনার সে তখন বুঝতে সক্ষম হয় রূপ সৌন্দর্য আর টাকা পয়সা জীবনের সবকিছু নয়।
তার অর্জিত অঢেল টাকা তার স্ত্রীকে তার নিজের করে রাখতে পারে নি। সে বুঝে যায় তার দরকার ছিল বিশ্বাস,ভরসা, মানসিক প্রশান্তি,ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ আর একজন ধার্মিক স্ত্রীর। সে বুঝতে পারে টাকাই সবসুখ আনতে পারে না যদি না কেউ ছোটবেলা থেকে পরিবার থেকে চরিত্রবান,তাকওয়াবান আর ধার্মিক হওয়ার গুন রপ্ত করে।
তাই টাকা সুখ আনতে পারবে কি না এটা লাইফ পার্টনারের চাহিদা আর পরিবেশের ওপর নির্ভর করে।
আজকালকের পোলাপানদের কাছে বিয়ের আগে ভালোবাসা মানেই সব। প্রেম করার জন্য একটা মেয়ে কিংবা ছেলে পেয়ে গেলেই হলো;ব্যাস।
লাইফ হ্যাপি।
ভাই থামেন।
শুধুমাত্র রোমান্টিকতায় লাইফ চলেনা। আর এটা বুঝতে পারে বিয়ের পর। তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।
কারন লাইফকে lead করতে গেলে, happy থাকতে গেলে,satisfaction নিয়ে বাচতে গেলে পার্টনারের মাঝে extra কিছু quality থাকা লাগে।
নিজেকে ছোট করে দেখার মানসিকতা,নিজের ভুলগুলো স্বীকার করে সরি বলার মানসিকতা,পরস্পরের মধ্যে সমঝোতা,বৈরী পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা,দায়িত্ববোধ,জ্ঞান,রাগ কনট্রোল করার ক্ষমতা,পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ,নীতি নৈতিকতা আর ধার্মিকতা থাকতে হয়।
আজকের জেনারেশনের মধ্যে এসব নেই বলেই এত এত বিচ্ছেদ আর মন ভাঙার গল্প।
কারন আজকের অধিকাংশ পোলাপানদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে নারীবাদী আর পুরুষবাদী চেতনা,নিজেকে বড় করে দেখার মানসিকতা।
সমানে সমানে আর যাই হোক ভালোবাসা টিকে না।কারন তারা
নিজেরা নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে ব্যস্ত।
পরস্পরকে সম্মান করা আর ভালোবাসার সময় কই!
তাই সময় এখন পালা বদলের। নিজেকে পরিবর্তন করা এখন সময়ের দাবি।