ডায়াবেটিস আছে? তবুও খেতে পারেন মিষ্টি, তবে কিছু নিয়ম মেনে
যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারাই জানেন এর কত রকম সমস্যা। তাই এমন কিছু নিয়ম নিয়মিত মেনে চললে সুগার নিয়ে বেশি চিন্তা করতে হবে না আপনাকে। সাধারণ মানুষের মতো জীবন যাপন করতে পারবেন আপনিও।

মিষ্টিমুখ, মিষ্টির কথা শুনলে অনেকেরই জিভে জল চলে আসে। বিভিন্ন রকমের মিষ্টি, উৎসব হোক অথবা কোনো সুসংবাদ, মিষ্টিমুখ তো করতেই হবে। তবে আর কি, যদি আপনার থাকে ডায়াবেটিস, তাহলে তো আর কথাই নেই। আপনাকে কেউ মিষ্টি অফার ও করবেনা।
কেননা আপনার সুগার আছে বলে মিষ্টি এড়িয়ে চলা টা জরুরী। তাই আপনারা পাতে মিষ্টিটা পড়ল না। সামনে আসতে চলেছে পুজো, পুজো মানেই হৈ-হুল্লোড়, মিষ্টি মুখ, তবে মিষ্টি ছড়া কি উৎসব হয়! যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের জন্য রয়েছে নানান বিধি নিষেধ। মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা হলেও রোগের ভয়ে খাওয়ার আর কোন উপায় নেই।
কিন্তু আপনি জানেন কি, মিষ্টি খেলেও আপনার সুগার থাকবে নিয়ন্ত্রনে। ডায়াবেটিস রোগীদের মিষ্টি মানেই ভয়। এমনটা কিন্তু কোন কথা নেই। কিছু নিয়ম মেনে চলতে পারলেই মিষ্টির স্বাদ পেতে পারেন আপনিও।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, মিষ্টি খেয়েও কিভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবেন আপনি -
নিয়ম ১) ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবচেয়ে ভালো মিষ্টি হলো রসগোল্লা। তার মানে এই নয় যে রসগোল্লা খাওয়া যেতে পারে বলে গপগপ করে অনেকগুলো রসগোল্লা খেয়ে ফেললেন।
সেক্ষেত্রে কিন্তু রসগোল্লার রস ঝরিয়ে, তারপরে খেতে হবে তাও আবার সীমিত পরিমাণ। তাছাড়া সুগার ফ্রি রসগোল্লা পাওয়া যায়, সেটাও খেতে পারেন।
নিয়ম ২) মিষ্টি খাওয়ার সময় একটা কথা মাথায় রাখবেন, মিষ্টি খাওয়ার আগে প্রোটিন ও ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়ার পরেই মিষ্টি খান। তাহলে কিন্তু আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
নিয়ম ৩) যেদিন মিষ্টি খাবেন সেদিন কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে দিন শরীরে। অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন সেই দিন। ভাতের পরিমাণে সবজি বেশি খান। ভাত খাওয়ার পাশাপাশি সালাদ ও তরকারি বেশি খাওয়ার চেষ্টা করুন। ভাত খান অল্প করে।
নিয়ম ৪) যেদিন আপনি মিষ্টি খেয়েছেন বা খাবেন, সেই দিন ফিশ ফ্রাই, চিকেন কাটলেট, এর পরিবর্তে লো ফ্যাট যুক্ত মাছ বা চিকেন কাবাব খেতে পারেন। তবে চিকেন এক্ষেত্রে চললেও মাটন টা কিন্তু একেবারেই চলবে না।
নিয়ম ৫) উৎসবের দিন হলেও বা কি হয়েছে। সেই দিনেও ডায়েট চার্ট ফলো করুন। প্রতিদিনের মতো সেদিনও খাদ্যতালিকায় রাখুন মরসুমী ফল।
নিয়ম ৬) শরীরচর্চা কিন্তু আপনাকে করতেই হবে। যোগাসন, হাঁটাচলা প্রতিদিন নিয়মিত রুপে করতে হবে আপনাক। তবেই আপনার ডায়াবেটিস বা সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
নিয়ম ৭) সকাল বেলা খালি পেটে মেথি ভেজানো জল খেতে পারেন। এতে কিন্তু আপনার সুগার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাছাড়া মেথি ভেজানো জল শরীরের অন্যান্য সমস্যার সমাধানও করতে পারে।
নিয়ম ৮) যারা চকলেট খেতে ভালোবাসেন তারা কিন্তু আর চিন্তা করতে পারবেন না চকলেট খাওয়া নিয়ে। ডার্ক চকলেট খেতে পারেন এতে কিন্তু আপনার ব্লাড সুগার, ব্লাড প্রেসার, নিয়ন্ত্রণে থাকে তার সাথে সাথে আপনার মুখ মিষ্টি এবং মনের ফুর্তি দুটোই বাজায় থাকলো।
নিয়ম ৯) মাটির নিচের সবজি যতটা পারবেন ততটা কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। না খেলে তো আরো বেশি ভালো। তার সাথে সাথে সবুজ শাকসবজি, গাজরের জুস, বিটের জুস, ইত্যাদি খেতে পারেন আপনি। এতে কিন্তু আপনার শরীরের শক্তি সঞ্চয় এর পাশাপাশি সুগার থাকবে একেবারে আপনার হাতের মুঠোয়।
নিয়ম ১০) পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত টেনশন, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, আপনার সুগার লেভেল বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই রিলাক্স থাকার চেষ্টা করুন। মিষ্টিমুখ করুন, তবে সেটা যেন সীমিত হয়। মাঝেমধ্যে মিষ্টি খেতেই পারেন, তবে সে ক্ষেত্রে সেদিনটা আপনাকে শরীরকে বিশেষ নজরে রাখতে হবে।
নিয়ম ১১) কারো ঘরে সিঁড়ি থাকলে, সিঁড়ি দিয়ে যতটা সম্ভব ওঠানামা করার চেষ্টা করুন। নিজের কাজ নিজে করার ক্ষেত্রে শরীরে বাড়তি হাটার দরকার হয়। সেক্ষেত্রে আপনার সুগার টাও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যত বেশি হাঁটাচলা করবেন তাতই সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
নিয়ম ১২) অতিরিক্ত চিনি জাতীয় মিষ্টি থেকে দূরত্ব বজায় রাখাই ভালো। মিষ্টি খাওয়া যেতে পারে বলে এমনটা নয় যেকোনো মিষ্টি আপনি সাধারণ মানুষের মত খেয়ে ফেলতে পারেন। আমাদের শরীরে ও চিনির পরিমাণ আছে। তাই মিষ্টি খাওয়ার ক্ষেত্রে একটু বিশেষ খেয়াল রাখবেন।
নিয়ম ১৩) মাঝে মাঝে হাতের কাছে মিষ্টি না থাকলে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা হলে মিষ্টি জাতীয় কোন ফল খেতে পারেন। এতে আপনার মুখ মিষ্টি হওয়া বজায় থাকার সাথে সাথে শরীরেও এর পুষ্টিগুণ পেয়ে যাবেন আপনি।
কিছু নিয়ম পালন করে ডায়াবেটিস থাকার পরও সাধারন ভাবে জীবন যাপন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে শরীরের যত্নের সাথে সাথে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশেষভাবে নজর রাখাটা জরুরি।
নিজের শরীরের উপর ছোট ছোট বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিলে আপনার সুগার লেভেল হঠাৎ করে বেড়ে যাবে না। আপনার হাতের নিয়ন্ত্রনেই থাকবে। কেননা আপনি যেমন ভাবে চলাফেরা করবেন, তেমনই তো আপনার সুগার ওঠানামা করবে তাই না।