ত্বকের যত্নে আইসকিউবের ৭টি জাদুকরী উপকারিতা

আপনারা কি সবাই জানতে চান ত্বকের যত্নে কিভাবে আইস কিউব ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যায়? অবাক লাগছে ? তাহলে আর দেরি না করে এখনি আমাদের আজকের পোস্ট পড়ে ফেলুন আর জেনে নিন বিস্তারিত।

ত্বকের যত্নে আইসকিউবের ৭টি জাদুকরী উপকারিতা
ত্বকের যত্নে আইসকিউবের ৭টি জাদুকরী উপকারিতা


ত্বকের যত্নে আইসকিউবের ব্যবহারের কথা আমরা সবাই ই হয়ত কমবেশী শুনে থাকব। তবে অনেকেরই ধারণা কেটে-ছড়ে গেলে, আঘাত লাগলে, পোকা কামড় দিলে আইসকিউব ব্যবহার করলে তার ব্যথা এবং জ্বলুনি কমে আসে।


কিন্তু এছাড়াও আরও নানাবিধ কারণে আইসকিউব ব্যবহার করা যায়, এবং তা জাদুকরী ফলাফল এনে দিতে পারে।


ত্বকের পরিচর্যায় আইসকিউবের কোন জুড়ি নেই, যেকোন উপাদান ত্বকের উপযোগী করে ব্যবহার, যেকোন প্রোডাক্টের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং ত্বকের নানাবিধ সমস্যা দূর করতে আইসকিউব অব্যর্থ এবং প্বার্শপ্রতিক্রিয়ামুক্ত একটি সমাধান।


সুপ্রিয় পাঠক, আমাদের আজকের আয়োজনের বিষয়বস্তু হচ্ছে আইসকিউবের ৭ টি জাদুকরী ব্যবহার যা ত্বকের অনেক সমস্যার সমাধান এনে দেবে। চলুন দেরী না করে জেনে নেয়া যাক ৭ টি জাদুকরী উপকারিতা কি কি!


আইসকিউবের ৭ টি জাদুকরী উপকারিতা:-



১. ক্ষতিগ্রস্থ ত্বক সুস্থ করতে

ত্বক বিভিন্ন কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয়, যেমন রোদেপুড়ে গেলে, ব্লিচ করার পর, সেভ করার পর, ত্বকে এলার্জি বা র‍্যাশ হলে, মেকাপ তোলার পর, কোন কীটপতঙ্গ কামড় দিলে ত্বক তার স্বাভাবিক অবস্থা হারায় এবং অস্বস্তি দেখা দেয়। এই অস্বস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্থ ত্বক সারাতে ব্যবহার করুন আইসকিউব। 


আইসকিউব ত্বকের জ্বালাপোড়া ও অস্বস্তি দূর করে ত্বক ঠান্ডা করবে এবং প্রশান্তি এনে দেবে। সরাসরি আইসকিউব ব্যবহারে সমস্যা হলে পাতলা কাপড় বা ট্যিসু পেচিয়ে আইসকিউব ব্যবহার করুন।


২. আইসকিউব করুন যেকোন প্রাকৃতিক উপাদান

ত্বকের যত্নে অনেকেরই প্রথম পছন্দ ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপাদান। এটা যেমন সহজলভ্য তেমনি ত্বকের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও থাকেনা।


কিন্তু সবার ত্বকেই সব উপাদান ভাল কাজ করেনা, অথবা অনেকেরই কোন প্যাক ব্যবহার করার মত যথেষ্ট সময় নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে যেকোন প্রাকৃতিক উপাদানের রস আইসকিউব করে ব্যবহার করতে পারেন, এতে কার্যকারিতা বেশী হবে।


যেমন শসা, গাজর, লেবু, মধু, চাল ও ডাল ধোয়া পানি, এলোভেরা জেল, ইত্যাদি অনেককিছুই আইসকিউব করে ব্যবহার করতে পারেন। এতে প্বার্শপ্রতিক্রিয়ার ভয় থাকবে না। 


৩. বলিরেখা ও পোরস কমায়

ত্বকের বার্ধক্য আসে ওপেন পোরস ও বলিরেখার জন্য। আর এগুলো দূর করতে দরকার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন ও অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি।


আর এই কাজটি সহজেই করতে পারবেন আইসকিউবের সাহায্যে। প্রতিদিন দুইবার মুখ ধোওয়ার পর মুখে আইসকিউব ঘষুন, বিশেষ করে যেসব স্থানে ওপেন পোরস এবং বলিরেখা আছে সেসব স্থানে। 


৪. মেকআপ স্মুথ ও স্থায়ী করতে

অনেকেই পোরস সমস্যার কারণে মেকআপ করলেও তা ঠিকভাবে মুখের সাথে মিশেনা, মেকআপ ভেসে ভেসে থাকে, যার জন্য মেকআপ করেও পারফেক্ট লুক পাওয়া যায়না।


এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করুন আইসকিউব। ফেসওয়াস দিয়ে মুখ ধোওয়ার পর আইসকিউব মুখে ঘষে নিন, এরপর ৫ মিনিট পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।


তারপর প্রাইমার, ফাউন্ডেশন, ব্লাসার, হাইলাইটার, কনট্যুর সবকিছু ব্যবহার করুন। এতে করে মেকআপ স্মুথ হবে, দীর্ঘসময় মুখের মেকআপ ভাল থাকবে, গলে যাবেনা।


৫. ত্বকের র‍্যাশ, জ্বালাপোড়া ও ফোলাভাব কমাতে

এলার্জি ও বাইরের ধুলাবালি, খাদ্যাভ্যাস,, বিভিন্ন প্রোডাক্ট এর প্বার্শপ্রতিক্রিয়া থেকে ত্বকে র‍্যাশ, জ্বালাপোড়া, ও ত্বক ফুলে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। মুখের ত্বকে র‍্যাশ হলে সৌন্দর্য কমে যায়, অস্বস্তি হয়, ক্রিম বা মেকআপ ঠিকমত বসেনা।


এজন্য র‍্যাশ হলে ত্বকে আইসকিউব ঘষুন। এতে ত্বকের র‍্যাশের আকার কমে আসবে, নিয়মিত আইসকিউব করলে ত্বকের র‍্যাশ একেবারে গায়েব হয়ে যাবে।


অতিরিক্ত ঘুমের কারণে, আঘাত বা অন্য কারণে ত্বক ফুলে গেলে সেখানে আইসকিউব ব্যবহার করুন, ফোলাভাব কমে গিয়ে ত্বক উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।


রোদে গেলে যদি ত্বক জ্বালাপোড়া করে তবে বাসায় এসে ত্বকে আইসকিউব ঘষুন। এটা দ্রুত ত্বকে আরাম দেবে এবং জ্বালাপোড়া কমাবে। 


৬. মসৃণ ও শিশুদের মত ত্বক পেতে

শিশুদের মত ফোলাফোলা টলটলে মসৃণ ত্বক পেতে কে না চায়! কিন্তু অনেক ধরনের উপাদান আমাদের ত্বক ফর্সা বা দাগমুক্ত করলেও তা আমাদের ত্বক শিশুদের মত টলটলে মসৃণ করতে পারেনা, কিন্তু আইসকিউব এই কাজটি সহজেই পারে।


ত্বকের ধরন বুঝে যে ধরনের উপাদান ব্যবহার করতে চাইছেন তা জমিয়ে আইসকিউব করে নিন। যেমন তৈলাক্ত ত্বক হলে তরমুজ, পেঁপে, ডালের পানির আইসকিউব করে নিতে পারেন।


আর শুষ্ক ত্বক হলে দুধ, মধু, এলোভেরা, মাখন, পাকাকলা, আপেলের রসের আইসকিউব করে মুখে ঘষতে পারেন। প্রতিদিন নিয়মিত দুইবার আইসকিউব করুন ত্বকে। তাহলে আপনার ত্বক হবে শিশুদের মত মসৃণ ও টলটলে!


৭. স্কিনের ধরন পরিবর্তন করতে

আমাদের সবার স্কিনের ধরন সমান নয়, কারো অয়েলি স্কিন, কারো ড্রাই, আবার কারো মিক্সড বা সেনসিটিভ স্কিন। এক্ষেত্রে কেউ যদি তার স্কিন টাইপ বা ধরন পরিবর্তন করতে চান তাহলে আইসকিউবের সাহায্য নিতে পারেন।


তৈলাক্ত ত্বকে শুধু জলের আইসকিউব রাব করলেই ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ কমে আসবে। শুষ্ক ত্বক স্বাভাবিক করতে দুধ ও মধু, দুধ ও বাদামের রসের, মধু ও এলোভেরা জেলের আইসকিউব ব্যবহার করতে পারেন।


অতিরিক্ত সেনসিটিভ ত্বকে চাল ও ডাল ধোয়া পানি, গ্রিন টি, তরমুজের রসের আইসকিউব ব্যবহার করলে সেনসিটিভিটি অনেক কমে আসবে। 


উপসংহার

ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা এবং জ্বালাপোড়াতে অতিষ্ঠ হয়ে গেলে সমাধান হিসেবে আইকিউব বেছে নিন। যেকোন প্রোডাক্ট বা উপাদানের কার্যকারিতা বৃদ্ধি, ত্বকের ধরন পরিবর্তন, মসৃণতা বৃদ্ধির জন্য ভরসা রাখুন আইসকিউবের উপর।


এটা আপনার অনেক জটিল সমস্যার অনেক সহজ ও আরামদায়ক সমাধান দেবে। সুপ্রিয় পাঠক, আশা করি আজকের পোস্টটি ত্বকের বিভিন্ন সমাধান পেতে আপনাকে সাহায্য করবে।


পোস্টটির বিষয়ে কোন তথ্য জানানোর হলে বা কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করুন। আমরা অবশ্যই তথ্য জানিয়ে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। 

ধন্যবাদ সবাইকে।