ত্বকের যত্নে ফেস সিরামের উপকারিতা

ত্বকের যত্নে ফেস সিরামের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আপনাদের সবারই উচিত এর উপকারীতা সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে রাখা ও ব্যবহার করা। সবাই হয়তো বিস্তারিত জনেন না, তবে আমাদের আজকের পোস্ট আশা করি আপনাদের সবাইকে জানতে সহায়তা করবে।

ত্বকের যত্নে ফেস সিরামের উপকারিতা
ত্বকের যত্নে ফেস সিরামের উপকারিতা

সুস্থ ত্বক পেতে প্রয়োজন নিয়মিত পরিচর্যা। কিন্তু ব্যস্ততা এবং সঠিক তথ্যের অভাবে আমরা অনেকেই জানি না যে, ঠিক কি কি উপাদান দিয়ে ত্বকের পরিচর্যা করলে ত্বক সুস্থ ও সুন্দর থাকবে।


এলোমেলো রূপচর্চায় ত্বকের উপকারের পরিবর্তে অপকার হয়ে থাকে বেশী। চুলের জন্য সিরামের ব্যবহার হয়ে আসছে বেশ আগে থেকেই।


কিন্তু ফেস সিরামের ব্যবহার সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা, অথবা নাম শুনে থাকলেও এর উপকারিতা সম্পর্কে কোন ধারণা রাখিনা।


ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং কোষ সুস্থ রাখতে সিরাম অতি প্রয়োজনীয়। সিরাম প্রিমিয়াম পণ্য তাই দাম কিছুটা বেশী।


কিন্তু পরিমাণে খুবই অল্প লাগে বিধায় একবারে কিনে রাখলে অনেকদিন ব্যবহার করতে পারবেন।


সুপ্রিয় পাঠক আজ আমাদের আয়োজনে থাকছে ত্বকের যত্নে ফেস সিরামের উপকারিতা  সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। চলুন জেনে নেয়া যাক ফেস সিরামের উপকারিতা সম্পর্কে।


ত্বকের যত্নে ফেস সিরামের উপকারিতা -


১. সব ধরনের ত্বকের বিশেষ যত্ন

সব ধরনের ত্বকে সব প্রোডাক্ট উপকারী নয়। যারা ঘরোয়া রূপচর্চা করে থাকেন তারা ভাবেন প্রাকৃতিক জিনিস সব ধরনের ত্বকের জন্যই বোধহয় উপকারী। কিন্তু এটা সত্য নয়।


আর এই অসুবিধা দূর করতে পারে সিরাম। কারব সব ধরনের ত্বকের জন্যই রয়েছে আলাদা ধরনের সিরাম। যেমন শুষ্ক ত্বকের সিরাম, অয়েলি এবং মিক্সড ত্বকের সিরাম, এন্টি এজিং সিরাম।


নিজের ত্বকের ধরণ বুঝে সিরাম বেছে নিলে তা যেকোন ত্বকের সমস্যা দূর করে ত্বকের কোষগুলোকে সুস্থ রাখবে এবং ত্বকের ভিতর থেকে সমস্যা সমাধান করবে।


২. ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়

এখানে প্রশ্ন আসতে পারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সিরাম কেন ব্যবহার করতে হবে! এরজন্য ক্রিম, প্যাক, পিল অফ মাস্ক আরও কত কি আছে!


এক্ষেত্রে জেনে রাখা প্রয়োজন ক্রিম বা প্যাক আপনার ত্বকের উপরের লেয়ারে একটি প্রলেপ দেয়, যা ত্বক ফর্সা দেখাতে সাহায্য করে।


প্যাক বা মাস্কও একই কাজ করে। এজন্য ক্রিম ব্যবহার বাদ দিলেই ত্বক আগের চেয়ে কালচে হয়ে যায়। কিন্তু সিরাম ত্বকের ভিতরে পৌছে কোষগুলোকে প্রাণবন্ত করে তোলে।


এতে থাকা ভিটামিন ই, সি, এন্টি অক্সিডেন্ট, টেট্রা পেপটাইড ত্বকের কোষগুলো সুস্থ ও স্বাভাবিক করে, আদ্রতা বজায় রাখে এবং ত্বকের রঙের উজ্জ্বলতা এবং সফটনেস বজায় রাখে। তবে এক্ষেত্রে হোয়াইটেনিং সিরাম ব্যবহার করতে হবে।


৩. শুষ্কতা এবং তৈলাক্তভাব দূর করে

অবাক হচ্ছেন কি? ভাবছেন একইসাথে শুষ্কতা এবং তৈলাক্তভাব কিভাবে দূর করা যায়? আসলে দু ধরনের ত্বকের জন্যই আলাদা আলাদা সিরাম রয়েছে।


অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকে যেমন বয়সের ছাপ, ফাইন লাইন, রিংকেল দ্রুত দেখা দেয় তেমনি তৈলাক্ত ত্বকে অতি দ্রুত ব্রণ, র‍্যাশ এবং ওপেন পোরসের সমস্যা দেখা দেয়।


এই সমস্যাগুলো থেকে বাঁচতে ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেস সিরাম ব্যবহার করুন। ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়ার পর মুখে টোনার ব্যবহার করুন, এরপর ত্বকের ধরন অনুযায়ী সিরাম ২-৩ ফোটা হাতে নিয়ে আলতো হাতে ম্যাসাজ করুন।


তারপর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এটা আপনার ত্বকের শুষ্কতা এবং বাড়তি তৈলাক্তভাব কমিয়ে ত্বককে প্রাণবন্ত করে তুলবে।


৪. এন্টি এজিং হিসেবে কাজ করে

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে পিগমেন্টেশন, শুষ্কতা, ফাইন লাইনস দেখা যায়। অনেকের ধারণা এগুলো পরিবেশ দূষণ এবং অনিয়মিত জীবন-যাপনের জন্য হয়ে থাকে। এবং এই ধারণা মিথ্যা নয়।


এখন অনেক কমবয়সীদেরও খুব দ্রুত ত্বকে বলিরেখা দেখা দেয়। এর কারণ হচ্ছে আমরা ঠিকভাবে ত্বকের যত্ন নেই না। অনেকের ধারণা ত্বকে শুধু ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক ভাল থাকে।


কিন্তু ময়েশ্চারাইজার শুধু ত্বকের উপরের অংশে কাজ করে। আর সিরাম কাজ করে কোষের গভীরে গিয়ে।


তাই আগে সিরাম ব্যবহার করে পরে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের কোষগুলো আদ্রতা পায়, ফলে বলিরেখা ও ফাইন লাইনস দূর হয়। ত্বকে তারুণ্য ফিরে আসে।


৫. ত্বকের দাগ এবং ট্যান দূর করে

আমরা ঘর থেকে বাইরে বের হওয়ার সময় যতই সান প্রোটেক্টর বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করিনা কেন, ত্বক সূর্যের আলোতে ট্যান হয়েই থাকে।


আর সানবার্ন হলে ত্বকে তৈলাক্তভাব এবং ব্রণ বেড়ে যায়। এছাড়াও ত্বকে যাদের ব্রণের সমস্যা আছে তাদের মুখে দাগের সমস্যাও রয়েছে। এই দাগ সহজে দূর হয়না।


কিন্তু এই দুটি সমস্যার সহজ সমাধান করতে পারেন সিরামের মাধ্যমে। টোনারের পর সিরাম ব্যবহার করলে তার উপর সান প্রোটেক্টর এবং পাউডার লাগিয়ে নিয়ে বাইরে গেলে সানবার্ণ হবেনা।


আর নিয়মিত সিরাম ব্যবহার করলে ত্বকে যতই জেদী দাগ থাকুক না কেন অল্প সময়ের মধ্যেই ত্বকের দাগ দূর হয়ে যাবে। তাই ত্বকের সমস্যার সহজ এবং দ্রুত সমাধান পেতে সিরামের কোন বিকল্প নেই।


৬. ত্বকের সজীবতা বাড়ায়

অনেকের ত্বকেই কোন ধরনের সমস্যা থাকেনা। যেমন ব্রণ, র‍্যাশ, দাগ, শুষ্কতা বা তৈলাক্ততা। কিন্তু তাদের ত্বকে কোন গ্লো বা সজীবতা থাকেনা।


ফলে তাদের ত্বকের যে মখমলের মত ঝলমলে ভাব থাকা উচিত না থাকেনা। এর কারণ ত্বকের কোষগুলো দূর্বল এবং ক্ষতিগ্রস্থ অবস্থায় থাকে, যা,বাইরে থেকে দেখা বা বোঝা যায়না।


এটা ঠিক করতে সিরামের কোন জুড়ি নেই। ত্বকের ধরণ এবং আপনার ব্যবহারের সুবিধা অনুযায়ী লিকুইড, স্প্রে, অথবা জেল সিরাম ব্যবহার করতে পারেন।


এতে করে ত্বকের ভিতরের কোষ সুস্থ এবং স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং ত্বক দেখাবে সতেজ ও ঝলমলে।


আরও পড়ুনঃ চুলের খুশকি দূর করার কিছু কার্যকর উপায়


শেষ কথা

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে নতুন কোষের বৃদ্ধি কমে যায়, তাই ত্বকের সমস্যাগুলোও বাড়তে থাকে। এজন্য বিদ্যমান কোষের ঠিকমত যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। আর এরজন্য দরকার ঠিকভাবে স্কিনকেয়ার রুটিন মেনে চলা।


একটি প্রক্রিয়ার সবগুলো ধাপ যদি মেনে চলা না হয় তাহলে ত্বকের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব নয়। সিরাম যেহেতু সব ধরনের ত্বকেই ব্যবহার করা যায় তাই কেনার সময় উপাদান এবং কোন ধরনের ত্বকের জন্য কিনছেন তা দেখে কেনা জরুরী।


সিরাম বেশ দামী প্রোডাক্ট, কিন্তু এটা ব্যবহার করতে হয় ২-৩ ফোটা করে। তাই খরচের তুলনায় ব্যবহারেও সাশ্রয়ী। সিরাম তরুণীদের চেয়ে একটু বয়স্কা বা স্কিনে সমস্যা আছে যাদের, তাদের জন্য বেশী কার্যকরী।


আশা করি সিরাম কি এবং সিরাম ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। সুপ্রিয় পাঠক পোস্টটি পড়ে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না।


এরপর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমরা পরবর্তীতে সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।