নতুনদের জন্য অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: সাফল্যের 5 টি ধাপ

আপনি কি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের নতুন? অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে দ্রুত সাফল্যের জন্য কিভাবে কাজ করবেন বুঝতে পারছেন না? আমাদের আজকের আয়োজনে রয়েছে এমন পাঁচটি ধাপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা অনুসরণের মাধ্যমে আপনি একজন নতুন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে দ্রুত এফিলিয়েট মার্কেটিং এর উন্নতি করতে পারবেন।

নতুনদের জন্য অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: সাফল্যের 5 টি ধাপ
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নতুনদের জন্য


অনলাইন থেকে দ্রুত আয় করার অন্যতম মাধ্যম অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। এই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে অনেকেই ঘরে বসে আয় করছে মোটা অংকের অর্থ। আবার এমন অনেকেই রয়েছে যারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে তাদের চাহিদা অনুযায়ী সুবিধা করতে পারেনি। কিন্তু আজ আমি এখানে এমন পাঁচটি ধাপ নিয়ে আলোচনা করবো যার মাধ্যমে একজন নতুন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে আপনিও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের দারুন আয় করতে পারবেন। 



অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি? 

যারা এই নিবন্ধটি পড়তে এসেছেন তারা নিশ্চয়ই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে কিছু না কিছু জানেন। তবে যারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের একেবারেই নতুন তাদের জন্য প্রথমে দুটো কথা বলে নিতে চাই। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে সাফল্য আসার জন্য আপনাকে প্রথমে বুঝতে হবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংটি কি। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে এমন একটি অনলাইন ব্যবস্থা যেখানে আপনি বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের পণ্যগুলোর বিজ্ঞাপন করে থাকেন। এবং এই বিজ্ঞাপনের শেষে ওই পণ্যটি ক্রয় এর জন্য একটি লিংক প্রদান করে থাকেন।


এরপর যখন কোনো ক্রেতা বা পাঠক আপনার লেখাটি পড়ে ওই পণ্য সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং পণ্যটি কেনার জন্য প্রদত্ত লিংকে ক্লিক করে পণ্যটি ক্রয় করে তখন তার কমিশন হিসেবে আপনি একটি অর্থ পান। এই পুরো ব্যবস্থাটাই হচ্ছে এফিলিয়েট মার্কেটিং। অর্থাৎ সহজ ভাষায় এফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে কোন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করা এবং এর কমিশন থেকে কিছু অর্থ নিজের জন্য কামিয়ে নেওয়া। এই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ এবং দীর্ঘমেয়াদী বলে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অ্যামাজনের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো রেখেছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার সুযোগ। কাজেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য আপনাকে ব্যক্তিগত পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের ঝামেলায় যেতে হবে না।


এছাড়া আপনার নিজেরও কোনো ই-কমার্স ওয়েবসাইট এর প্রয়োজন পড়বে না। কারণ এখানে আপনি অন্য কারো পণ্য আপনার উপস্থাপনার গুনে গ্রাহকের কাছে উপস্থাপন করছেন এবং সেখান থেকে আয় করছেন অর্থ। আপনি যদি একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকেন তবে প্রথমেই আপনার যে বিষয়টি প্রয়োজন পড়বে তা হচ্ছে কিছুটা বিনিয়োগের। আপনি যদি সামান্য বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত থাকেন তবে এখানে আপনার জন্য রয়েছে এমন পাঁচটি ধাপ যা অনুসরণের মাধ্যমে আপনি সহজেই এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাফল্য অর্জন করতে পারবেন। তাহলে চলুন এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাফল্য নিয়ে আসার পাঁচটি ধাপ সম্পর্কে পর্যায়ক্রমে জেনে নেই। 



পূর্ব প্রস্তুতি 

কোন একটি কাজ শুরু করার প্রথমে আপনার যা করতে হয় তা হচ্ছে পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা। পূর্বপ্রস্তুতি শব্দটি শুনতে যত সহজ মনে হোক না কেন একটি কাজের সাফল্য কিন্তু পূর্বপ্রস্তুতির উপর নির্ভর করে। যেমন একটি বড় বিজনেস করার জন্য আপনাকে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয় একইভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য আপনার কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মন স্থির করা। অর্থাৎ আপনি যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে চাচ্ছেন সে সম্পর্কেও নিজের মনকে প্রস্তুত করা।


অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য আপনার প্রচুর অধ্যবসায়ের প্রয়োজন হয়। কাজেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাফল্য আনার জন্য প্রথমেই আপনাকে একটি নিজস্ব পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে যার মধ্যে আপনি আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কে ভবিষ্যতে কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান সেই বিষয়ে বিস্তারিত চিন্তাভাবনাগুলো ছক কেটে সাজিয়ে নিবেন। এরপর যে বিষয়টি প্রয়োজন তা হচ্ছে আপনার কিছু বিনিয়োগ। আপনি একদম খালি হাতে আফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন না সেইজন্য আপনার বিনিয়োগ কতটুকু সে বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন। এরপর আপনার পর্যাপ্ত ডিভাইস এবং ইন্টারনেট ব্যবস্থা রয়েছে কিনা সেদিকে নজর বুলিয়ে নিন। এই বিষয়গুলো অর্জনের মাধ্যমে আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর পূর্ব প্রস্তুতি শেষ হবে। 




নিস নির্বাচন 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য নিস নির্বাচন মূলত এর পূর্ব প্রস্তুতির অংশ। তবে এই বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যান্য বিষয় থেকে একটু ভিন্ন কাজেই এই বিষয়টিকে একটু ভালভাবে বোঝার স্বার্থে পরবর্তী ধাপে আলোচনা করছি। নিস নির্বাচনের পূর্বে আমাদের জানা প্রয়োজন যে নিস বিষয়টি কি। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে নিস হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট পণ্য। অর্থাৎ এটি এমন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে যে বিষয়ের ওপর আপনি আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং টি করতে চাচ্ছেন। মনে করুন আপনি আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য মোবাইল ফোনটি বেছে নিয়েছেন এক্ষেত্রে মোবাইলফোন হবে আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের নিস।


অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য একটিমাত্র নিস নিয়ে কাজ শুরু করাই উত্তম। কারণ অনেক সফল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার রায় বলে থাকেন অনেকগুলো নিস নিয়ে একত্রে কাজ করার পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট নিয়ে কাজ করলে সাফল্য আসার সম্ভাবনা বেশি। তবে এক্ষেত্রে নিস নির্বাচনে আপনাকে মার্কেট বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করতে হবে। কারণ কোন ধরনের পণ্যের জন্য মানুষের মধ্যে চাহিদা রয়েছে তার উপর ভিত্তি করে নির্বাচন করতে হবে। এইজন্য আপনি কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে পারেন সেই সাথে আপনার অফলাইনে মার্কেট বিশ্লেষন করে আপনার নিস নির্বাচন করতে পারেন। 



ওয়েবসাইট তৈরি 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য নিস নির্বাচনের পর যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে একটি ওয়েবসাইট তৈরি। আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন। যেমন আপনি নিস ভিত্তিক ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন আবার ফেসবুক পেজ তৈরি করে এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন। অনেকে আবার ইউটিউব ভিডিওর মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে থাকে। এক্ষেত্রে আপনার কোন দিকে দক্ষতা বেশি সেটি নির্বাচন করে আপনার মন মত একটি সাইট বানিয়ে নিতে হবে।


বর্তমান সময়ে অনেক সফল ব্লগাররাই তাদের ব্লগ সাইটগুলোতে শুধুমাত্র লেখালেখি করার জন্য সম্মত নন। বরং লেখালেখি করার পাশাপাশি অনেকেই আবার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করছেন একই ব্লগ সাইটে। তবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে নেওয়াই উত্তম। এক্ষেত্রে আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর প্রতি আপনার ক্রেতাদের নির্ভরযোগ্যতা তৈরি হবে। একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য আপনি ওয়ার্ডপ্রেস প্লাটফর্মটিকে বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া আরো অন্যান্য ওয়েব ডেভলপিং প্লাটফর্ম রয়েছে যা আপনাকে বিনামূল্যে অথবা অর্থের বিনিময়ে ওয়েবসাইট তৈরি করার সুবিধা প্রদান করে থাকে। 





এসইও

মিস নির্বাচন এবং ওয়েবসাইট তৈরীর পরে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তা হচ্ছে এসইও। যথাযথ এসইও আপনার সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। কারণ এই এসইওর মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য প্রয়োজনীয় কিওয়ার্ড পেয়ে যাবেন। এছাড়া এসইওর মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটটিকে ব্রাউজারের শীর্ষে নিয়ে আসতে পারবেন যাতে করে অনেকগুলো মানুষের কাছে আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সেবাটি পৌঁছে যায়। এতে যেমন আপনার ট্রাফিক বৃদ্ধি পাবে তেমনি আপনার পণ্যের বিক্রয় হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। 





ট্রাফিক 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য ট্রাফিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে অধিক সংখ্যক ট্রাফিক থেকে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে কোন ধরনের ট্রাফিক আপনার ওয়েবসাইটে আসছে সেটি বিশ্লেষণ করা। আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে তখনই আয় করতে পারবেন যখন আপনার ওয়েবসাইটে আসার ট্রাফিক আপনার প্রদত্ত লিঙ্ক থেকে পণ্যটি ক্রয় করবে। তাই আপনার ওয়েবসাইটে যদি লাখো ফলোয়ার্স থাকে কিন্তু তারা যদি আপনার পণ্য ক্রয় না করে তবে আপনি একজন সফল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হতে পারবেন না। আপনার পণ্যের ওপর আগ্রহী এমন এক হাজার ট্রাফিকও আপনার ওয়েবসাইটের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক্ষেত্রে। এজন্য একজন সফল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুধুমাত্র ট্রাফিক বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্ব দিবেন না। বরং সার্চ ব্রাউজার থেকে আসা ট্রাফিক দের ওপর মনোযোগী হন। কারন এ ধরনের ট্রাফিক আপনার ওয়েবসাইটে আসে পণ্যটি সম্পর্কে জানতে এবং সেটি ক্রয় করতে। 



বস্তুত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে অর্থ আয় করা বেশ সহজ তবে প্রতিযোগিতার বাজারে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের প্রতিযোগিতা প্রচুর। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আপনাকে অবশ্যই কিছু সঠিক নিয়ম নীতি পালন করতে হবে। আপনি যদি একজন নতুন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হয়ে থাকেন তবে উপরের ধাপগুলো অনুসরণ এর মাধ্যমে আপনি অবশ্যই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ সাফল্য অর্জন করতে পারবেন।