নতুন ফ্রিল্যান্সারদের কিছু সমস্যা ও তার সমাধান

নতুন ফ্রিল্যান্সাররা কিছু ভুল অবশ্যই করে থাকে, এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তবে এগুলো কি ভুল এবং এর সমাধান কি, সেটা আমরা আজকের পোস্টে জেনে নেবো।

নতুন ফ্রিল্যান্সারদের কিছু সমস্যা ও তার সমাধান
নতুন ফ্রিল্যান্সারদের কিছু সমস্যা ও তার সমাধান


ইন্টারনেট এর এই যুগে এখন সবকিছুই হাতের নাগালে চলে এসেছে। টাকা রোজগারের জন্য এখন অফিস বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া জরুরী নয়, বাড়িতে বা যেকোন স্থানে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে কাজ করে টাকা রোজগার করতে পারবেন। এটাই ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সাররা প্রথমে মার্কেটপ্লেস এ বিড করার জন্য তাদের একটি প্রোফাইল তৈরি করে।


এরপর তারা কাজ বিড করে গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক তাদের কাজ সম্পন্ন করে টাকা বুঝে নেয়। কাজ শেষে ক্রেতা কতটুকু সন্তুষ্ট হয়েছে এটা রেটিং দিয়ে জানিয়ে দেয়। এটা শুনতে খুবই ভাল লাগে যে ফ্রিল্যান্সিং এ বাড়িতে বসে কাজ করেই হাজার ডলার আয় করা যায়, কিন্তু বাস্তবে প্রথম দিকে কাজ পেতে এবং নিজের অবস্থান তৈরি করতে ও তা ধরে রাখতে অনেক ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে।


এগুলো এড়ানোর জন্য আপনাকে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের কিছু সমস্যা ও সেগুলো সমাধানের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। চলুন প্রিয় পাঠক দেরী না করে আলোচনা শুরু করা যাক।


নতুন ফ্রিল্যান্সারদের কিছু সমস্যা ও সমাধানঃ


১. ধৈর্য হারিয়ে ফেলা

নতুন ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে যেকোন কাজ পেতে গেলে আপনাকে অনেকের সাথে বিড করে ক্লায়েন্ট এর কাছ থেকে কাজটি নিতে হবে৷ যেমন- একজন ক্লায়েন্ট ৫০ টি ছবি এডিট করাতে চাইছেন। এটার জন্য তিনি ৫০ ডলার দেবেন। কিন্তু খুব কম সময়ে কাজটি করে দিতে হবে। এখানে অনেক ফ্রিল্যান্সার রাই কাজটি করার জন্য বিড করবেন। তারা হয়ত কাজটি করার জন্য সর্বনিম্ন ৫ ঘন্টা সময় চাইল।


আপনি যদি বিড করার সময় কাজটি করতে ৪ ঘন্টা সময় লাগবে বলেন তাহলে কাজটি ক্লায়েন্ট আপনাকে দিয়ে করাবেন। ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে বিড করার দক্ষতা এবং কৌশল শিখতে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের সময় প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন ধরনের ক্লায়েন্টদের বিভিন্ন রকম চাহিদা থাকে। কারো কাছে কম সময়ে কাজটি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারো কাছে কম অর্থে কাজ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।


এই বিষয়টি বুঝে নিয়ে বিড করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রথম কাজ পেতে কয়েক সপ্তাহ বা মাস সময় লাগতে পারে। অনেকেই কাজ পেতে দেরী হলে অধৈর্য হয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। এটা করবেন না, মনে রাখবেন ধৈর্য্যের ফল সবসময়ই মিষ্টি হয়।

তাই ধৈর্য নিয়ে কাজে লেগে থাকুন। খুব শীঘ্রই কাজের কৌশল শিখে ফেলবেন এবং অনেক কাজও পাবেন।


২. আকর্ষনীয় গিগ তৈরি না করা

ক্লায়েন্টরা মূলত আপনার প্রোফাইল এবং গিগ দেখে আপনার সম্পর্কে জানতে পারবে। আপনি কি বিষয়ে কাজ করেন, ঘন্টা প্রতি কাজের রেট কত। আপনার রেটিং, কাজের সাফল্য সবকিছু। কিন্তি নতুন ফ্রিল্যান্সাররা অনেক সময় সুন্দরভাবে প্রোফাইল এবং গিগ তৈরি করেন না, গিগ এ দায়সারা তথ্য দিয়ে রাখেন অনেকেই।


ফলে কাজ পেতে অনেক সমস্যায় পড়েন। তাই আকর্ষনীয় প্রোফাইল তৈরির চেষ্টা করুন। যাতে ক্লায়েন্টরা সহজেই দেখে আকৃষ্ট হয়, এবং বুঝতে পারে কাজের ব্যাপারে আপনার দক্ষতা রয়েছে। আপনি যথাসময়ে ভালভাবে কাজটি শেষ করবেন।


৩. কাজে দক্ষ না হওয়া

ফ্রিল্যান্সিং মানেই হচ্ছে যেকাজগুলো আপনি ভাল পারেন সেগুলো করে অর্থ আয়ের ব্যবস্থা করা। কিন্তু দেখা যায় নতুন ফ্রিল্যান্সাররা ভালভাবে কাজ শেখার আগেই কাজ বিড করেন, ভাবেন যে কাজ পাওয়ার পর তা যেভাবে হোক শেষ করবেন বা অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নেবেন। কিন্তু বস্তুত নিজে কাজ না জানলে অন্যকে দিয়ে মনমত এবং সময়মত করিয়ে নেয়া অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়না।


ফলে কাজ পেলেও কাজের মান খারাপ হয়, ফলে ক্লায়েন্ট আর কখনো তাদের দিয়ে কাজ করাতে চান না। তাই যেকাজটিই বিড করা হোক না কেন অবশ্যই আগে কাজটি ভালভাবে শিখে তারপর কাজ শুরু করা। তাহলে কাজ শুরু করতে দেরী হলেও কাজ পাওয়ার পর তা ভালভাবে করতে পারবেন। এর ফলে মার্কেটপ্লেস এ আপনার আলাদা ক্লায়েন্টবেস তৈরি হবে এবং রেটিং ও বাড়বে।


৪. সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করতে পারা

নতুন ফ্রিল্যান্সারদের অন্যতম প্রধান যে সমস্যাটি হয়ে থাকে তা হল, তারা কাজ পাওয়ার জন্য খুব কম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করবে বলে কাজ বিড করে। কাজ পাওয়ার পর এত দ্রুত কাজ শেষ করতে পারেনা। বা দ্রুত কাজ করতে যাওয়ার কাজের মান খারাপ হয়ে যায়। ফলে ক্লায়েন্ট খুশি হয়না, অনেক ক্ষেত্রে পেমেন্ট নিয়ে ঝামেলা হয়, রেটিং কমে যায়।


এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনার কাজ করতে কতটুকু সময় লাগবে তা সঠিকভাবে অনুমান করে নিন, তারপর কাজ বিড করুন। কারন ফ্রিল্যান্সিং এ সফল হতে হলে শুধু কাজ পেলেই হবে না তা ভালভাবে সম্পন্ন করে ক্লায়েন্ট ধরে রাখতে হবে এবং রেটিং ও বাড়াতে হবে। তাহলেই নতুন ফ্রিল্যান্সার থেকে সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়া সম্ভব।


৫. কঠিন কাজ না জানা

ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে বেশীরভাগ নতুন ফ্রিল্যান্সার রাই সহজ কাজ শিখে বিড করেন। যেমন নরমাল ফটো এডিটিং, কার্ড ডিজাইন, ব্লগ রাইটিং,ইত্যাদি। কিন্তু সহজ কাজে বিড ও বেশী পড়ে, ফলে এ কাজগুলো পাওয়া কঠিন হয়। অনেকেই যেহেতু সমান স্কিল নিয়ে কাজে বিড করে তখন কে কাজ পাবে সেটা নির্ধারন কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু তুলনামুলক একটু কঠিন কাজে কম বিড পড়ে, ফলে এ কাজগুলো জানলে কাজ পাওয়ার সম্ভবনা বহুগুনে বেড়ে যায়।


নতুন ফ্রিল্যান্সার রা এজন্যই প্রথম দিকে কাজ পান না। কারন অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে। তাই কাজ শেখার সময় এডভান্স লেভেলের কাজ শেখার উপর জোর দিন। এটা ফ্রিল্যান্সিং এ ভালভাবে টিকে থাকতে এবং ভাল রেটিং পেতে সাহায্য করবে। 


৬. ইংরেজিতে দক্ষতা না থাকা

ফ্রিল্যান্সিং এর কাজগুলো যেহেতু সবই বিদেশীদের কাজ, তাই তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হয় ইংরেজিতে। এক্ষেত্রে ইংরেজিতে সঠিকভাবে লিখতে এবং মনের ভাব প্রকাশ করতে জানা আবশ্যক। নতুন ফ্রিল্যান্সারদের অনেক সময় ইংরেজিতে লেখার দক্ষতা কম থাকে, ফলে তারা কাজ বিড করতে সমস্যার সম্মুখীন হন।


তাই ফ্রিল্যান্সিং শেখার সময় বেসিক ইংরেজি শিখতে হবে যাতে ক্লায়েন্টদের সাথে কাজের বিষয়ে যোগাযোগ করার জন্য প্র‍য়োজনীয় দক্ষতা ফ্রিল্যান্সারদের থাকতে হবে। আপনার যোগাযোগ দক্ষতা যত বেশী হবে কাজ পাবার সম্ভাবনা তত বেশী হবে, এছাড়া ক্লায়েন্ট ধরে রাখতে এবং ভাল রেটিং পেতে তাদের সাথে সাবলীল ভাবে বিনয়ের সাথে যোগাযোগ করা আবশ্যক।


৭. বেশী রেট এ বিড করা

নতুন ফ্রিল্যান্সারদের আরেকটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে অন্যান্য অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারদের মত রেট এ বিড করা। প্রথম অবস্থায় স্বাভাবিক রেট এ কেউ নতুন ফ্রিল্যান্সারদের কাজ দিতে চায়না কারন তাদের কাজ ভুল হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং এ নতুন হন প্রথমে কাজ পেতে এবং ক্লায়েন্টদের ধরে রাখতে কম রেট এ বিড করুন। সঠিকভাবে কাজ করার পর ক্লায়েন্ট খুশি হলে আপনাকে বাড়তি পেমেন্টও করতে পারেন। 


উপসংহার

ইন্টারনেট এর যে সকল যুগান্তকারী সুবিধা আমরা উপভোগ করছি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। এর মাধ্যমে যারা বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারেন না বা চান না তাদের জন্যও অর্থ আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। যেহেতু সারাবিশ্বের ক্লায়েন্টদের মাধ্যমেই কাজ পাওয়া যায় তাই অনলাইনে কাজের অভাব নেই। আপনাকে শুধু কাজ জানতে হবে এবং সাথে কিছু কৌশল এবং নিয়মানুবর্তিতা জানতে হবে। তাহলেই আপনি নতুন ফ্রিল্যান্সার থেকে খুব সহজেই দক্ষ এবং ৫ স্টার রেটিং এর ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন।


একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হতে পারলে আপনার মাসিক আয় হতে পারে হাজার হাজার ডলার। শুধু আপনাকে ধৈর্য ধারন করে নিষ্ঠার সাথে আপনার কাজ করে যেতে হবে। সফলতা অবশ্যই আপনার কাছে ধরা দেবে। সুপ্রিয় পাঠক, আশা করি নতুন ফ্রিল্যান্সারদের যে সমস্যাগুলো হয়ে থাকে ও তার সমাধানে পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে।


এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে অথবা যেকোন মতামত জানাতে আমাদের কমেন্ট করতে পারেন। আমরা অবশ্যই আপনার মতামতকে গুরুত্বসহকারে নিয়ে দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।