ন্যায়বিচার : অন্যায়ের শিকার হওয়া নারীর কাহিনী

একটি অন্যায়ের শিকার হওয়া নারীর কাহিনী। গল্পের প্রধান চরিত্র ‘পিয়া’ যার ন্যায় বিচার প্রাপ্তি হয় তার মৃত্যুর পর। গল্পটি শেষ অব্দি পড়ার অনুরোধ রইলো।

ন্যায়বিচার : অন্যায়ের শিকার হওয়া নারীর কাহিনী
ন্যায়বিচার : অন্যায়ের শিকার হওয়া নারীর কাহিনী

গত দুদিন ধরে গন্ধে টেকা যাচ্ছে না। প্রথমে কিছু মনে না হলেও এবার সন্দেহ ধীরে ধীরে বাসা বাঁধছে মিতা দেবীর মনে। প্রতিবেশীদের তিনি সবকিছু খুলে বললেন।


এক সপ্তাহ আগে অনিল তাকে ডেকে বলে গেছে, “মাসিমা আমার আমরা একটু দরকারে বাড়ি যাচ্ছি। কদিন বাদে ফিরবো হ্যাঁ”।


কিন্তু আজ প্রায় আট দিন হল অনিল ও পিয়া কাউকেই উনি ফোনে পাচ্ছেন না। তারপর এই দুদিন যাবত ঘর থেকে পচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।


প্রতিবেশীদের কথায় মিতা দেবীর মনে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পুলিশকে তিনি খবর দিলেন। অনিলকে তিনি ভালো করে না চিনলেও পিয়াকে তিনি খুব স্নেহ করতেন।


তাই ভেবেছিলেন যদি অন্য কোন ব্যাপার হয়। যাই হোক পুলিশ এসে সব শুনে ঘরের তালা ভেঙে ঘরে ঢুকলো।


ঘরে দৃশ্য দেখে সবার মাথায় হাত পড়ে গেল। খাটের উপর পিয়ার আধ পচা দেহটার উপর মাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে। পচে, ফুলে গিয়ে দেহটা বীভৎস আকার ধারণ করেছে। পুলিশ দেহটিকে নিয়ে চলে গেল ময়নাতদন্তের জন্য আর ঘরটা সিল করে দিয়ে গেল।


পিয়ার দেহটা দেখার পর থেকে মিতা দেবীর চোখে ঘুম নেই। খালি ভাবছেন এত প্রাণোচ্ছল মেয়েটির এই পরিণতি হলো।


পিয়া প্রায় এক বছর হল মিতা দেবীর বাড়িতে ভাড়া এসেছিল।  সে হাইকোর্টে স্টেনোগ্রাফারের চাকরি করতো। মাস ছয়েক আগে অনিলের সাথে তার বিয়ে হয় যদিও ছেলেটিকে তার পছন্দ করেনি কিন্তু পিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি কিছু বলেনি।


পিয়া রোজ অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে তার ঘরে ঢুকতো। তারপর চা খেতে খেতে সারাদিনের সমস্ত ঘটনা তার সাথে গল্প করতো। মাঝেমাঝেই পিয়া বলতো, “মাসিমা আমার জানত সব সময় মনে হয় ‘ন্যায়ের দেবী ’ এখনই তার চোখের বাঁধন খুলে সব অপরাধীদের ভস্ম করে দেবে ”।


ঘটনাটি ঘটে গেছে প্রায় দিন কুড়ি হল। পুলিশ পিয়ার দেহ তার মা-বাবার হাতে তুলে দিয়েছে। তার স্বামীর কোন খোঁজ নেই পুলিশ তাদের মতো করে তদন্ত চালাচ্ছে।


মিতা দেবী একটি জিনিস বার করতে স্টোররুমের গেছেন ঘরটির জানলার কাছে তিনি একটি ডায়েরি পেলেন। এই জানলাটি পিয়ার ঘরের সোজাসুজি একটু উঁচুতে। ডায়রিটা তুলে তিনি দেখলেন তাতে পিয়ার হাতের লেখা।


ঘরে এসে তিনি ডাইরিটা খুলে পড়তে লাগলেন। প্রথমদিকে নানা রকমের লেখা পড়তে পড়তে তার চোখ আটকে গেল পঁচিশে এপ্রিলের পাতায়, যেদিন অনিল তাকে ডেকে বলে গেছিল তারা বাড়ি যাচ্ছে। পিয়া লিখেছে...


“আজ ই হয়তো পৃথিবীতে আমার আর আমার সন্তানের শেষদিন কারণ গতকাল আমি ওই মুখোশধারী শয়তান তার আসল চেহারা জানতে পেরে গেছি।


অনিল আর তার স্ত্রীর  প্রধান ব্যবসা হলো আমার মত সাধারণ মেয়েদের ভালোবাসার জালে ফেলে, তাদের বিয়ে করে তাদের সমস্ত সম্পত্তি আত্মসাৎ করা।


অনিলের সাথে আমার পরিচয় কর্মসূত্রে এক বন্ধুর বাড়িতে। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে চলা এই সম্পর্কের দিকে যার পরিণতি বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হওয়া।


আমরা বেশ সুখেই দিন কাটাছিলাম। কিন্তু বিগত এক মাস ধরে আমি অনিল এর ব্যবহারে একটু অবাক হচ্ছিলাম।


যবে থেকে ও আমাদের সন্তান আসার সংবাদ পেয়েছে ও যেন বদলে গেছে। খালি আমার ফান্ড সম্পর্কে জানতে চায়। ফোন এলে বাইরে কার সাথে কথা বলে। আমি জিজ্ঞেসা করলে আমার কাছে লুকিয়ে যায়।


সন্দেহের বশবর্তী হয়ে আমি অনিলের পিছন পিছন তার অফিস যাই। সেখানেই আমি তার স্ত্রীর সম্পর্কে জানতে পারি। পরে আরো অনেক খোঁজ খবর নিয়ে তার বাড়ির ঠিকানা ও এই ব্যবসার সন্ধান পাই। সে আরো দুজন মেয়ের এই ভাবেই ক্ষতি করেছে, তাদের ঠকিয়েছে!


প্রথমে ভেবেছিলাম নিজেকে শেষ করে দেব। যার জন্য নিজের মা-বাবাকে ছেড়ে চলে এলাম সে কিনা একজন ঠক! তারপর আমার আগত সন্তান কথা চিন্তা করে ঠিক করলাম আমি লড়াই করব।


ন্যায়ের মন্দিরের একজন প্রতিনিধি হয়ে। আমার সাথে হওয়া এই অন্যায়ের আমি কিছুতেই মানবোনা। অনিলকে আমি ২৪ ঘন্টা সময় দিয়েছি নিজের দোষ স্বীকার করার জন্য নাহলে আমি নিজে গিয়ে পুলিশকে সব জানিয়ে দেব বলেছি।


কিন্তু আমার সন্দেহ হচ্ছে যে সে হয়তো আমাকে ছাড়বে না। তাই আমি এই লেখা লিখে রাখলাম যাতে আমি মরে গেলেও ন্যায় বিচার পাওয়া যায়।”


মিতা দেবী ডাইরিটি পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে সমস্ত ঘটনাটা খুলে বললেন।  পুলিশ তথ্য পেয়ে অনিলকে ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে ও কোর্টে কেসটা উঠে।


কোর্টের রায় অনিল ও তার স্ত্রীর যাবতজীবন কারাদণ্ড হয়েছে। আজ মিতা দেবী পিয়ার ছবি সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,“আমি ন্যায়ের দেবী হয়ে অনিলকে ভষ্ম করে দিতে পারিনি  কিন্তু তোকে ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা করে দিতে পেরেছি রে মা ”।


আরও পড়ুনঃ স্বাক্ষরঃ রেণু তোমার থাকাটা খুব জরুরী