পকেট নাইফ - রম্য গল্প

পকেট নাইফ একটি ছোট গল্প। রাহাত নামের একটা ছেলে একজনকে ছিনতাইকারী মনে করে এক মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে বোকা বনে যায়!

পকেট নাইফ - রম্য গল্প
পকেট নাইফ - রম্য গল্প

পর্ব - ১

বাস থেকে নামল রাহাত। আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি। বেশ স্বতঃস্ফূর্ত একটা দিন। অনেকেই তাদের আপনজনের সাথে দেখা করছে, উপহার বিনিময় করছে।

তবে রাহাত কারো সাথে দেখা করতে আসেনি। ও প্রতি বছর এই দিনটাতে ঘুরে ঘুরে অন্যদের ভালবাসা বিনিময় দেখেই মজা পায়।

বাস থেকে নেমেই ওর চোখ গেল কিছূদুর সামনে এক লোকের উপর। বাসে কয়েকটা সিট সামনে ওর সহযাত্রী ছিল লোকটা।

একটু মোটাসোটা, প্যান্ট শার্ট বেশ টাইট, চুল উস্কোখুস্কো। লোকটাকে একটু অন্যরকম মনে হলো রাহাতের। আশেপাশে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজছে লোকটা।

রাহাত একবার ভাবল এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপার। কিন্তু কিছুদূর গিয়েই থমকে দাঁড়াল।

বাসের হুড়োহুড়িতে লোকটার ইন করা শার্ট কিছুটা ঝুলে থাকায় এতক্ষণ দেখা যায়নি জিনিসটা। তার পিছনের পকেট থেকে বেরিয়ে আছে একটা স্টিলের মত ইঞ্চি তিনেক লম্বা কিছু।

একটা পকেট নাইফ!


পর্ব - ২

সাহায্য করার প্রবণতা মূহূর্তেই গোয়েন্দাগিরিতে রূপ নিল রাহাতের! একটা পকেট নাইফ দেখেই, লোকটা কে? তার উদ্দেশ্য কি? সে কি কোনো ক্রিমিনাল? ইত্যাদি হাজার প্রশ্ন তৈরি হলো তার মনে।

এদিকে হাঁটা শুরু করলো লোকটা। থেমে নেই রাহাতও। দেখতে হবে লোকটা কোথায় যায়। সত্যিই আজকাল চেহারা দেখে বোঝা যায় না কে নিরীহ আর কে দুর্ধর্ষ।

বারবার পিছনের পকেটে হাত দিয়ে ছুরিটা চেক করার অভ্যাস বলে দিচ্ছে লোকটা কোনো সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী বা পেশাদার খুনি টাইপের কেউ হবে।

হাঁটতে হাঁটতে কাছের পার্কের দিকে চলে এল লোকটা। আশেপাশে দেখে লোকটা ঢুকলো গেট দিয়ে। রাহাত ও নজর রেখে চলেছে লোকটার উপর।

ফলো করতে করতে সে চলে এলো এক কোণায় গাছগাছালির আড়ালে। একটা বেশ সুন্দরী মেয়ে বেঞ্চিতে বসে বিকেলের সময় কাটাচ্ছে।

ধুকপুক ধুকপুক করে চলেছে রাহাতের বুকের মধ্যে। কি করতে চলেছে লোকটা? মেয়েটা কি টার্গেট? তাকেই খুন করতে চলেছে লোকটা?

এদিকে তার হাত পকেটের দিকে এগিয়ে চলেছে। মূলত পকেট নাইফটার দিকে।

শেষবারেরটার মত আশপাশটা দেখে নিল রাহাত। বেঞ্চে মেয়েটা বসা ৯-১০ ফুট দূরে। লোকটা তার থেকে ২-৩ ফুটের মধ্যে চলে গিয়েছে।

রাহাত আছে লোকটার ৬-৭ ফুট পিছনে, পার্কের মাঝ বরাবর দুজন পুলিশের কনস্টেবল ফুচকা খাচ্ছে। যা করবার এখনি করতে হবে।

ভাবা শেষ। ডিসিশন ফাইনাল। মেয়েটা এখনও টের পায়নি ব্যাপারটা। লোকটা তার সামনে গিয়ে যেইনা নিঃশব্দে পকেট থেকে পকেট নাইফ বের করেছে অমনি রাহাত, "হাইজ্যাকার! হাইজ্যাকার!" বলে দুটো চিৎকার দিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল মোটা লোকটার উপর আর মেয়েটাও উঠলো লাফিয়ে...

যতক্ষণে পুলিশ দুজন এসে পৌঁছালো মোটা লোকটা রাহাতের নিচে অজ্ঞান। তার হাত পিছমোড়া করে রেখেছে রাহাত। মেয়েটা এতটাই থমকে গেছে যে একটা চিৎকার দিয়ে নিজের মুখ দু'হাত দিয়ে চেপে রেখেছে।

একটা বীরত্বপূর্ণ সফল হাসি দিয়ে যেইনা রাহাত মেয়েটার দিকে তাকিয়েছে তখন দ্বিতীয় চমকটা পেল সে নিজেই। মেয়েটার ভ্যানিটি ব্যাগের কড়া আঘাত।


পর্ব - ৩

পুলিশ দুজন যতক্ষণে এসে পৌঁছালো লোকটার জ্ঞান ফিরেছে, রাহাতের কপালে একটা ছোট সাইজের আলুর মত উদয় হয়েছে আর মেয়েটা বেঞ্চে বসে পড়েছে।

কনস্টেবলেরা অবাক হয়ে একজন পকেট নাইফটা আরেকজন মোটা লোকটাকে তুলে বসালো। বেশ অবাক তারাও। হাইজ্যাকার চিৎকারটা শুনে ফুচকা ফেলেই দৌড়ে আসতে হল তাদের!

এদিকে মোটা লোকটা বেশ ভ্যাবাচ্যাকা। একে তো রাহাতের আক্রমণ তার উপর নিচের হাতের ছুরিটা দেখে আরো ভয় পেয়ে গিয়েছে সে।

মেয়েটা তার পরিচর্যা শুরু করেছে। ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে বেশ ভালভাবেই পরিচিত তারা।

অপেক্ষাকৃত বয়ষ্ক কনস্টেবল জিজ্ঞাসা করল ব্যাপারটা কি? কে হাইজ্যাকার? কি হয়েছে?

রাহাত সংক্ষেপে বললো বাস থেকে নামার পর এখানে আসার ঘটনা। সেও বেশ অবাক হল যখন মেয়েটা বলল, আরে ওটা আমার বয়ফ্রেন্ড! আজ ভ্যালেন্টাইন ডে তে এই পার্কে দেখা করতেই আমরা এসেছি।

মাথায় আলু নিয়েও নিজের অতিবুদ্ধিতায় পুলিশ কনস্টেবল দুজনের সাথে হেসে উঠলো রাহাত।

তবে একজনের মুখে হাসি নেই। কে আর হবে! সুন্দরী মেয়েটার অতিকায় বয়ফ্রেন্ড!

সে বলল, কয়েকটা গোলাপের তোড়া এনেছিলাম পকেটে করে। হঠাৎ ও কে দিয়ে চমকে দিবো বলে। কিন্তু এখন দেখছি পকেটে মানিব্যাগ আর ফুল কোনোটাই নেই!

আরো বললো, ছুরিটা কোথা থেকে এলো সেটা তার চিন্তার বাইরে।

এটা শুনে আরেক প্রস্থ হাসি হয়ে গেল। বোঝাই গেল পকেটমার মহাশয় মানিব্যাগ আর ফুল দুটোই নিয়ে রিটার্ন গিফট হিসেবে রেখে গিয়েছে তার পকেট নাইফ!