পরিহার্য কিছু এসইও কৌশল: ভুলেও এগুলো অনুসরণ করবেন না
আপনি কি জানেন এমনও কিছু এসইও কৌশল রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি বিপদে পড়তে পারেন? হয়তো জানেন না, তাই আজকের পোস্টে আপনাদের জানাবো কোন এসইও কৌশলগুলো পরিহার করা উচিত এবং কেনো এগুলো অনুসরণ করা বিপদজনক।

বর্তমান সময় এমন একটি সময় যেখানে সকল ব্যবসায়, প্রতিযোগী এবং শিল্পের জনপ্রিয়তা এবং মার্কেটিং বাড়ানোর জন্য আধুনিক মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে। আর এসইও আপনাকে বুঝতে সাহায্য করে যে আপনি গ্রাহকদের কাছে জনপ্রিয়তা ধরে রাখার এই কাজে সফল হচ্ছেন নাকি অসফল।
কিন্তু এই বছরের ঐতিহ্যবাহী এসইও কৌশলগুলো ব্যবহার করে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না কারণ অনেক সময় ব্যয় করেও এই এসইও কৌশলগুলো কাঙ্কিত ফলাফল দিতে পারছেনা। অনেক ধরনের এসইও হ্যাক বের হয়েছে যেগুলো বারবার ব্যান করা হচ্ছে।
যেহেতু গুগল এবং অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনগুলো খুব দ্রুত তাদের অ্যালগরিদম বদল করে, সুতরাং ভুল কোন এসইও প্র্যাক্টিস করলে অবশ্যই তা ধরা পড়বে এবং তা আপনার ওয়েবসাইট বা ব্যবসায়ের এসইও স্কোরের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
আপনি এসব ফাদে পড়ে নিজের এসইও স্কোর, সম্মান এবং ওয়েবসাইট ব্লকও খেতে পারেন।
আপনার এটা অবশ্যই নিশ্চিত থাকা উচিত যে আপনি এমন কোন ভুল করছেন না এবং সঠিক এসইও কৌশল ব্যবহার করছেন। এজন্য আপনাকে আজকের পোস্টে এমন কিছু এসইও কৌশল দেখানো হবে যেগুলো আপনার পরিহার করা উচিত:
১. জাতিবাচক কিওয়ার্ড ব্যবহার কম করুন
অনেক এসইও এক্সপার্টরা এখনও দৃশ্যমানতাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন এবং জাতিবাচক কিওয়ার্ড বেশি ব্যবহার করে ওয়েবসাইট অপ্টিমাইজ করতে চান।
তবে, গুগল এর নতুন এলগরিদম এর আপডেট আসার পর থেকে, এই পদক্ষেপ কাজ করবে না কারণ:
i) জাতিবাচক শব্দগুলো আসলে সব গ্রাহকদের জন্য সঠিক নয়। যদি আপনি এসইও জাতিবাচক কিওয়ার্ড দ্বারা অপটিমাইজ করেন, তাহলে এই এসইও টার্ম আপনার জাতিবাচক গ্রাহকদেরই আকর্ষণ করবে যা আপনার জন্য ভালো হবেনা।
ii) কোন বাইরের গ্রুপ মেম্বার আপনার ওয়েবসাইট এর সাথে যোগাযোগ করবে না যেটা আপনার সাইটকে জনপ্রিয় হতে দেবেনা এবং নেতিবাচক এসইও এর সৃষ্টি করবে।
২. কিওয়ার্ড এর ঘনত্বে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেবেন না
কিছু এক্সপার্টদের কাছে এসইও মানে হচ্ছে পোস্টের সঠিক কিওয়ার্ড বেশি বার ব্যবহার করে তার দ্বারা জনপ্রিতা পাওয়া। কিন্তু এই এসইও কৌশল প্রয়োগ করে কাজ হবেনা কারণ এখন শুধু কিওয়ার্ড নয়, বরং পরিষ্কার, ডোমেইন অথোরিটি এবং সুবিধাজনকতা দেখে র্যাঙ্কিং বিশ্লেষন করা হয়।
তাই আপনার উচিত এসইও টুল ব্যবহার করা যাতে শুধু কিওয়ার্ড নয়, বরং অন্যান্য সব ব্যাপার ঠিক করে আপনি নিজের এসইও স্কোর বাড়াতে পারেন।
৩.মোবাইলের অপ্টিমাইজেশনে গুরুত্ব দেয়া বন্ধ করুন
স্ট্যাটিস্টা এর তথ্য অনুযায়ী, গ্লোবাইল ওয়েবসাইট ট্র্যাফিক এর ৫১.৫৩% মোবাইল ডিভাইস থেকে এসেছে, যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
গুগল এই বিষয়টি লক্ষ্য করেছে এবং তারা মোবাইল ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইটগুলোকে র্যাঙ্কিং এর ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে এবং এগুলো বেশি উন্নতি করছে।
মোবাইল-ফ্রেন্ডলিনেস শুধুমাত্র ওয়েবসাইট এর কোনো ফিল বা দৃশ্য নয় বরং সাইটের লোড টাইম, বন্ধুত্বসুলভতা বিষয়টি দেখে এবং এসইও কৌশল আপনার ওয়েবসাইটকে সঠিকদিকে পরিচালনা করে।
৪. পেজের মূল কন্টেন্ট এর সাথে অতিরিক্ত কিছু যুক্ত করবেন না
এটা এমন এক সময় যেখানে এখন পেজ লোডের সময় কমিয়ে এবং লিঙ্ক বানিয়ে গ্রাহকদের সঠিক তথ্য দেয়ার পাশাপাশি এসইও স্কোর বাড়ানো যায়। তবে মূল তথ্যেত সাথে অন্য কোন অদরকারি বিজ্ঞতি বা কোন ভুল ছবি প্রদর্শন করলে তা ভুল কৌশল হিসাবে বিবেচিত হবে।
এই ভুলের জন্যে সাইটের যে বিপদগুলো হতে পারে তা হলো:
১. আপনার গ্রাহককে দ্বিধায় ফেলে দিতে পারে।
২. আপনার সাইটের বাউন্স রেট অনেক বেশি হবে। এছাড়া এসব কারণে গ্রাহক বিরক্ত হয়ে পুরো কন্টেন্ট নাও পড়তে পারে।
৩. আপনার পেজের লোডিং টাইম বেড়ে যাবে, যদি আপনি পেজে অতিরিক্ত ছবি বা মাল্টিমিডিয়া যুক্ত করেন। এতে আপনার পেজের মান নষ্ট হবে।
হোম পেজে সঠিক লিংক এর পাশাপাশি পরিমিত মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে পেজের মান বজায় রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
৫. নিখুত ডোমেইন ম্যাচ করার জন্য অতিরিক্ত খরচ করবেন না
২০১২ সালে, গুগল এই কাজটি করেছিল তাদের এসইও কৌশলের অংশ হিসাবে। কেন জানতে চান? আসলে ওই সময় অনেক অপ্রয়োজনীয় লিংকে তাদের ওয়েবসাইট ফিচার করা হচ্ছিল যা ছিল অদরকারী। তাই তারা এসইও কৌশল হিসাবে ডোমেইন ম্যাচ এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
তবে এখন আর এই এসইও কৌশল ডোমেইন অথোরিটির শীর্ষ অবস্থানে নেই।
কেননা, ধরুন একটি সেরা পিজ্জার অনুসন্ধান করতে গেলে সবাই অনুসন্ধান বারে লিখবেন, bestpizza.com। কিন্তু আসলে এমন কোন ওয়েবসাইট আসলে হয়তো নেই, সুতরাং সকল অনুসন্ধান আসলে ডোমেইন ম্যাচ রেখে করা যায় না। আর অনুসন্ধান এক্ষেত্রে করা গেলেও হয়তো সেরা বিকল্প না এসে উচ্চ র্যাঙ্কের সাইট আগে আসতে পারে।
তাই বর্তমান বছরে এমন কোন এসইও কৌশল প্রয়োগের দরকার নেই। আপনি শুধু ব্র্যান্ডিং এর উপর ভিত্তি করে অনুসন্ধান করলেই সঠিক ফলাফল পেয়ে যাবেন।
৬. ক্লিকবেইট কন্টেন্ট ব্যবহার করে ক্লিকরেট বাড়ানোর চেষ্টা করবেন না
ক্লিকবেইট কন্টেন্ট হলো আপনার পেজের এমন কিছু জিনিস যেগুলো আসলে কিছু আকর্ষণীয় ছবি এবং টাইটেল, কিন্তু এখান কোন তথ্য সম্পূর্ণ থাকেনা। তবে আকর্ষণীয় বিধায় গ্রাহকরা এখানে ক্লিক করে থাকে।
যদিও ক্লিকবেইট আপনার সাইটের ট্র্যাফিক বা জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারবে, কিন্তু, যথোপযোগী তথ্যের সংমিশ্রণ থাকা অবশ্যই সাইটের উপযোগীতা প্রকাশ করে। তাই যদি আপনার টাইটেল বা ছবি গ্রাহকের অপ্রয়োজনীয় হয়, তাহলে তা তাদের ব্যবহার অভিজ্ঞতা নষ্ট করতে পারে যা আপনার জন্য ভুল এসইও কৌশল হিসাবে বিবেচিত হবে।
এরচেয়ে, আপনি সঠিক তথ্য দিয়ে আপনার পেজকে যথোপযোগী করার এসইও কৌশল প্রয়োগ করুন। যাতে আপনার পেজে গ্রাহকরা বেশি সময় ভিজিট করে এবং বাউন্স রেট কমে যায়।
৭. এসইও বাড়ানোর জন্য ভুল তথ্য দিয়ে ওয়েবসাইট আচ্ছাদিত করবেন না
একটি ভুল এসইও কৌশল আপনার ওয়েবসাইটকে সারচ ইঞ্জিন এবং মানুষ থেকে দূরত্বে ঠেলে দিতে পারে বা আচ্ছাদিত করতে পারে। এর মানে হচ্ছে সূচিপত্র আর উপসংহার এর মাঝখানে সবসময় বিভিন্ন তথ্য (কখনও ভুল তথ্যও থাকে) দিয়ে আচ্ছাদিত করে রাখা হয় যাতে গ্রাহক এবং সারচ ইঞ্জিন র্যাঙ্ক এ প্রভাব ফেলার চেষ্টা করা হয়।
কিন্তু এতে অনেক সময় ল্যান্ডিং পেজে ঢোকার পর গ্রাহকরা আকর্ষণীয় কিছু দেখতে পেলেও তা আসলে তাদের দরকারী তথ্যগুলোর প্রয়োজনীয়তা মেটাতে পারেনা।
এই এসইও কৌশল আপনার ওয়েবসাইট এর ট্র্যাফিক বাড়াবে ঠিকই, তবে সাইট ফ্ল্যাগও করা হতে পারে এই আচ্ছাদন কৌশল ব্যবহারের কারণে। গুগল এবং অন্যান্য সারচ ইঞ্জিনগুলো এসব সাইট বা পেজকে পুনরায় সূচিপত্র তৈরি বা তাদের র্যাঙ্ক নিচে নামিয়ে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসে।
৮. পেইড রিভিউতে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করা বন্ধ করুন
কোন পণ্য বা সেবার শেষের দিকের গ্রাহকরা সবসময় ওয়েবসাইট বিশ্লেষণ না করে, আগের গ্রাহকদের রিভিউগুলো যাচাই করে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, কি ঠিক না বলুন?
আপনি এসইও কৌশল হিসাবে এক্ষত্রে হয়তো চাইবেন ভুয়া পেইড রিভিউ দিয়ে এসব কাস্টমার নিজের হাতে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু পণ্যের মান ভালো না হলে তারা আপনার পেজ রিপোর্ট করতে পারে এবং আপনি নিষিদ্ধও হতে পারেন। সুতরাং কখনো এমন কোন ভুয়া পেইড রিভিউ বানাবেন না যা গ্রাহকদের ধোকার মুখে ফেলে দেয়। সবসময় এমন এসইও কৌশল থেকে দূরে থাকুন।
৯. ছবির বিবরণে কিওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না
ভিডিও এবং মাল্টিমিডিয়া সম্পন্ন ওয়েবসাইট বেশকিছু সময় ধরে বাজার দখল করে রেখেছিল। বিশেষত তাদের ছবি এবং ভিডিওগুলোর সঠিক সংমিশ্রণ এর এসইও কৌশল প্রয়োগ করে। কি তাই তো?
আসলেই, গ্রাহকরা টেক্সট পড়ার চেয়ে ভিডিও দেখতে বেশি পছন্দ করে যেহেতু এটা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যকর এবং এর রিকল ভ্যালুও বেশি।
তবে বেশি ছবি বা ভিডিও যুক্ত করলে পেজের ভ্যালু বা ট্র্যাফিক বাড়েনা। ছবি বা ভিডিওর বিবরণ সঠিকভাবে না দিলে সেটা ওয়েবসাইটকে ভালো র্যাঙ্ক এ পৌছাতে ব্যর্থ হবে।
তাই, ছবি ও ভিডিওগুলো সঠিক বিবরণ দ্বারা প্রস্তুত করার এসইও কৌশল প্রয়োগ করুন। এখানে কিওয়ার্ড ব্যবহার করার চেষ্টা করে পেজের কন্টেন্ট এর মান নষ্ট করবেন না।
১০. ইচ্ছাকৃতভাবে কন্টেন্ট এর লেন্থ বাড়াবেন না এবং ওয়েবসাইটে অতিরিক্ত পেজ বানাবেন না
এই এসইও কৌশলটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং সচরাচর মানুষ এই এসইও কৌশল সম্বন্ধে ভুল ধারণা পোষণ করে।
কন্টেন্ট এর লেন্থ এবং পেজ বাড়িয়ে ওয়েবসাইট জটিল না করে, বরং অল্প কন্টেন্ট রেখে সঠিক ও দরকারী তথ্য সরবরাহ করার মাধ্যমে গ্রাহকদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করুন। এটাই এই বছরের সেরা এসইও কৌশল।
উপসংহার
আজকের দিনে ওয়েবসাইট আর শুধু উচ্চ র্যাঙ্ক আর ভালো এসইও ধরে রাখার জন্য নয়, বরং গ্রাহকদের কাছে সঠিক এবং আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য কাজ করে।
বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে ওয়েবসাইটে সঠিক তথ্যের ভান্ডার বৃদ্ধি করে আপনি পেজের মান উন্নয়ন এবং পাশাপাশি জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে গ্রাহক সন্তুষ্টি পেতে পারেন।
আপনি নিজস্ব ব্লগ খুলতে পারেন, যেখানে আপনার ওয়েবসাইটে সঠিক এসইও কৌশল ব্যবহার করে আপনি লাভবান হতে পারেন। এ বিষয়ক যেকোনো ধারণা ও সাহায্য পেতে আমাদের কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন।