পশ্চিমবঙ্গের এই ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখুনঃ নাহলে মিস করবেন
ইতিহাস পছন্দ করেন তবে পশ্চিমবঙ্গের কিছু ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখুন। ইতিহাস পড়তে আমরা অনেকেই পছন্দ করি। এতে অনেক অজানা জ্ঞান ও তথ্য পাওয়া যায়। অনেকেই আবার ইতিহাস এর পাতায় হারিয়ে যেতে ভীষণ পছন্দ করে। কিন্তু অনেকেরেই প্রচুর কাজ সামলে আর ঘুরে হওয়া ওঠে না।

ভ্রমণ প্রেমীদের এর কারণে দুঃখ পাওয়ার কোনো দরকার নেই। আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কত কিছু অজানা রহস্য। কত রকমের ইতিহাস। এককালে এখানেই বড় বড় শাসক রা রাজ্ পাঠ চালিয়েছেন। ইতিহাসের পাতায় তা যেকোনো উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা রয়েছে। আমাদের পশ্চিম বঙ্গের সৌন্দর্য কোনো অংশে কম নোই। কাছে পিঠে সেই ওজনে রহস্য কিভাবে উৎঘাটন করবেন আসুন দেখে নি:
১) গৌড়
গৌড় একটি পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক শহর, যা মালদা জেলায় অবস্থিত। ধ্রুপদী ও মধ্যযুগীয় ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান রাজধানী।বেশ কয়েকটি রাজ্যের অধীনে গৌড় ছিল বাংলার রাজধানী শহর। সপ্তম শতাব্দীতে গৌড় রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজা শশাঙ্ক। সেন রাজবংশের সময় গৌড় লখনৌতি নামে পরিচিতি লাভ করেছিল। এটি ১২০৪ সালে দিল্লি সুলতান দেড় অন্তগ ছিল। পালবংশ, সেনা বংশ, দিল্লী সুলতান, বেঙ্গল সুলতান, পর্তগী রায় এখানে শাসন চালিয়েছিল।
যেকোনো শহর থেকে ট্রেন বা বাস এ করে মালদা আস্তে পারেন। বাংলাদেশ বর্ডার ও এ খুব কাছে।
কি কি দেখবেন?
লুয়াচোরি গেটওয়ে, দাখিল দরজা, ফিরোজ মিনার, কদম রসুল মসজিদ, ছোট সোনা মসজিদ, মোগল তাহাখানা, দারসবাড়ি মসজিদ, গৌড় স্তম্ভ, লট্টান মসজিদ, বারো শোনা মসজিদ, বল্লাল বাটি।
২) বিষ্ণুপুর
বিষ্ণুপুর গুপ্ত আমলে স্থানীয় হিন্দু রাজারা শাসন করতেন সমুদ্রগুপ্ত এর শাসন এর অন্তর্গত। এই জায়গার মল্ল শাসকদের অন্তর্গত হওয়ার পর এই জায়গাটিকে মল্লভূমও বলা হয়। মল্ল শাসকরা বৈষ্ণব ছিলেন এবং এই জায়গায় ১৭ এবং ১৮ শতকে বিখ্যাত পোড়ামাটির মন্দিরগুলি তৈরি করেছিলেন। প্রায় এক হাজার বছর ধরে এটি মল্লভূমের মল্ল রাজাদের রাজধানী ছিল, যার মধ্যে বাঁকুড়া একটি অংশ ছিল, যতক্ষণ না মুঘল সাম্রাজ্য রাজবংশের শেষ রাজাদের অধীনে দুর্বল হয়ে পড়েছিল তাদের শাসনকালের অবসান ঘটে।রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা আঠারো শতকের শেষের দিকে হিন্দুস্তানি ধ্রুপদী সংগীতের বিষ্ণুপুর ঘরানা উত্থাপন করেছিল। টেরাকোটা মন্দিরের জন্য বিখ্যাত।
কি কি দেখবেন?
রাসমঞ্চ, শ্যাম রাইয়ের পঞ্চ রত্ন মন্দির, কেশতা রাইয়ের জোড়বাংলা মন্দির,রাধামাধব মন্দির,মদনমোহন মন্দির,ডালমডাল কামান,লালগড়,লালবন্ধ,আচার্য যোগেশচন্দ্র,জাদুঘর,গমগড়,পাথর দরজা (বিষ্ণুপুরের মূল ফটক),গড় দরজা (বিষ্ণুপুরের ছোট প্রবেশদ্বার),প্রস্তর রথ,নূতন মহল,বিষ্ণুপুর হাওয়া মহল,শ্রীনিবাস আচার্যের স্মৃতিসৌধগুর-নিতাই মন্দির (তেজপাল),কেশবরাই মন্দির (পাটপুর)
৩) কালনা
কালনা বা অম্বিকা কালনা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি শহর। এটি ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত । শহরটি অম্বিকা কালনা নামে আরও বেশি পরিচিত, দেবী কালী, মা অম্বিকার নামে নামকরণ করা হয়েছে। এর রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন, যেমন রাজবাড়ি (প্রাসাদ), এবং ১০৮ টি শিব মন্দির রয়েছে।অম্বিকা কালনা এক সময়ে তাম্রলিপ্ত রাজ্যের একটি সীমান্ত শহর ছিল। সেই সময় শশাঙ্কের রাজত্বকালে এই শহরে একটি নৌ ঘাঁটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কালনাতে শ্রীচৈতন্যের জীবদ্দশায় নির্মিত একমাত্র চৈতন্য মন্দির রয়েছে। ১৮ শ শতকের শেষদিকে বর্ধমানের মহারাজদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই শহরটি শীর্ষে পৌঁছেছিল, যারা পোড়ামাটির অলঙ্কার সহ বেশ কয়েকটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।
কি কি দেখবেন?
নব কৈলাশ বা ১০৮ শিব মন্দির, কৃষ্ণা চন্দ্র মন্দির, লালজি মন্দির , প্রতাপেশ্বর মন্দির, মেজর বাড়ি, শ্যামচাঁদ রাধারানী মন্দির, প্রজাপতি বাড়ি, গোপালবাড়ি মন্দির, সিদ্বেশ্বরী কালী মন্দির, অনন্ত বাসুদেব মন্দির, বুদ্ধ মন্দির, পাথুরিয়া মহল ঘাট।
৪) মুর্শিদাবাদ
মুর্শিদাবাদ হুগলি নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত। অঞ্চলটি প্রাচীন বাংলার গৌড় রাজ্য এবং বঙ্গ রাজ্যের অংশ ছিল। রিয়াজ-উস-সালাতিন এই শহরের প্রাথমিক বিকাশকে মখসুস খান নামে এক বণিকের কাছে জমা দেয়। আইন-ই-আকবরীতেও বণিকের ভূমিকা উল্লেখ করা হয়েছে। ১৬২১ সালে, ইংরেজী এজেন্টরা জানিয়েছিল যে এলাকায় প্রচুর পরিমাণে রেশম পাওয়া যায়। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বতন্ত্র নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে নগরটির পতন শুরু হয়েছিল। নবাবকে মুর্শিদাবাদের নবাব নামে পরিচিত জমিদার হিসাবে মর্যাদাবান করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা কোষাগার, আদালত এবং রাজস্ব অফিস কলকাতায় স্থানান্তরিত করে।
কি কি দেখবেন?
হাজারদুয়ারী প্রাসাদ, মুর্শিদাবাদের কাড়ানসারই, জাহান কোষা কামান, কাঠগোলা, মুর্শিদাবাদ ক্লক টাওয়ার।
৫) নবদ্বীপ
নবদ্বীপ একসময়ে রাজনৈতিক শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন ছিল এবং বল্লাল সেনের নেতৃত্বে বাংলার রাজধানী এবং পরবর্তীকালে সেন সাম্রাজ্যের রাজা লক্ষ্মণ সেনর্রাজা ছিলেন, যিনি ১১৯৯ থেকে ১২০৬ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। ১২০২ সালে নবদ্বীপ বখতিয়ার খিলজি দ্বারা আক্রমিত হয়েছিল। এই বিজয় বাংলায় মুসলিম শাসনের পথ সুগম করেছিল।এটি একটি পবিত্র স্থান ও যেখানে ভগবান চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম হয়েছিল।
কি কি দেখবেন?
চৈতন্য মহাপ্রভু মন্দির, ডুমুরেশবরি মাতা, পুরাতন মহাপ্রভু মন্দির, নবদ্বীপে নদী, গঙ্গায় নৌকা বিহার , মা পোড়ামা, বুড়ো শিব মন্দির ইত্যাদি।
৬) কর্ণগড়
কর্ণগড়ের রাজত্বকৃত রাজবংশের মধ্যে রয়েছে রাজা লক্ষ্মণ সিংহ, রাজা শ্যাম সিং, রাজা ছোটু রায় , রাজা রঘুনাথ রায়, রাজা রাম সিংহ, রাজা যশবন্ত সিং, রাজা অজিত সিং এবং রানী শিরোমনি। কর্ণগড়ের শেষ রাজা রাজা অজিত সিং নিঃসন্তান মারা যান। তাঁর সম্পত্তি তাঁর দুই রানী, রানী ভবানী এবং রানী শিরোমণির হাতে চলে যায়। চুয়ার বিদ্রোহের সময়, নেতা গোবর্ধন দিকপাতি প্রাসাদটি দখল করেছিলেন। উভয় রানী নরজোলের রাজা, রাজা ত্রিলোচন খানের সাথে দেখা করেছিলেন যিনি তাদের আশ্রয় দিয়েছিল এবং তাদের সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কর্ণগড় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একটি গ্রাম।
কি কি দেখবেন?
অনাদিলিঙ্গ দান্দেশ্বরা, দেবী ভগবতী মহামায়া মন্দির, এই দুটি মন্দিরই দশম শতাব্দীতে ওড়িশার কেশারি / সোমভামসি রাজবংশের রাজা কর্ণ কেশারি নির্মিত করেছিলেন।
৭) ত্রিবেণী
হুগলী জেলার অন্তর্গত এটি হিন্দুদের একটি পুরাতন পবিত্র স্থান, যার পবিত্রতা বহু শতাব্দী ধরে স্বীকৃত এবং দ্বাদশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তের সংস্কৃত 'পাভানা-দুটামে' উল্লেখ করা হয়েছিল। পাল ও সেন আমলে ত্রিবেণী অত্যন্ত গুরুত্ব পেয়েছিল এবং মুসলিম আগ্রাসনের পরে সপ্তগ্রাম বাংলার সুলতানদের একটি প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
কি কি দেখবেন?
ত্রিবেণী ঘাট, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তৈরী নিশান হাট, জাফর খান গাজী মসজিদ, হংসেশ্বরী মন্দির, অনন্ত বাসুদেব মন্দির, কুন্তী নদীর উপর ঝুলন্ত সেতু।
তাহলে র দেরী কিসের? নিজের রাজ্যের ইতিহাস খুঁজতে বেরিয়ে পড়া এক অতি এন্ড ও রোমাঞ্চকর বিষয়।