পৃথিবীতে দুর্গাপূজার সূচনা কোথায়? বিচিত্র ইতিহাস ও আসল সত্য

অনেক ঋষি মনীষীদের নানা রকম মতামত থেকে ধারণা করা যায় অনেক প্রাচীনকালে রাজাদের হাতেই দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু। শ্রী রামচন্দ্রও ছিলেন অযোধ্যার রাজা।

পৃথিবীতে দুর্গাপূজার সূচনা কোথায়? বিচিত্র ইতিহাস ও আসল সত্য
পৃথিবীতে দুর্গাপূজার সূচনা কোথায়? বিচিত্র ইতিহাস ও আসল সত্য


বাঙ্গালীদের কাছে শ্রেষ্ঠ পুজা দুর্গা পূজা, এই পুজোতে সবাই সারা বছর ধরে প্রায় অপেক্ষা করে থাকেন। এই পুজো কয়দিন সবাই সব দুঃখ ভুলে গিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন। তবে এই পুজোর সূচনার ইতিহাস অনেকেরই হয়তো জানা নেই। সর্বপ্রথম কোথায় শুরু হয়েছিল কেউ হয়তো এই খোঁজ নেন নি কোনদিন বা অনেকেই হয়তো জানেন।


দুর্গাপূজা নিয়ে নানা মুনির নানা মত, স্বাভাবিকভাবে যত মত তত পথ। দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক বিচিত্র কাহিনী বা ইতিহাস। অনেকেই পুরান বিশ্বাস করেন আবার অনেকেই বিশ্বাস করেন বাস্তবের ইতিহাস।


সর্বপ্রথম দুর্গাপূজা বসন্ত ঋতুতে হতো। যা এক কথায় বাসন্তি পুজা নামে পরিচিত, একথা তো সকলেরই জানা। রামায়ণের লক্ষণের দ্বারা দেবীর অকালবোধন পুজোর কথা প্রচলিত থাকলেও এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে বেশ কিছু কথা।


প্রাচীনকালে রাজপরিবারে ও রাজারাই বেশি দুর্গাপুজো পালন করতেন যুদ্ধ জয়ের আশায় মহামায়ার পূজা করতেন তারা বংশপরম্পরায়। অনেকেই স্বপ্নের মাধ্যমে পাওয়া দেবীর আবির্ভাব থেকেই শুরু করেছেন দুর্গাপূজা। দেবী মায়ের বর্ণনা অনুসারে অনেকেই খুঁজে পেয়েছেন দেবী মায়ের মূর্তি সেই থেকেই শুরু করেছেন দুর্গাপূজা। সেই দুর্গাপূজা বংশপরম্পরায় চলতে চলতে আজও অনেক বনেদি বাড়িতে মহা উৎসবে পালিত হয় এই দুর্গাপূজা।সারা পৃথিবীতে দুর্গাপূজা হয়ে থাকে শুধুমাত্র ভারতেই নয়।


রাজা সুরথ এবং সমাধি বৈশ্যের কাহিনী 

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে পৃথিবীর রাজা ছিলেন রাজা সুরথ। তিনি অত্যন্ত ভালো যোদ্ধা এবং সুশাসক হয়েও পরাজিত হয়েছিলেন যবন জাতির কাছে। হেরে গিয়ে তিনি সমস্ত সম্পত্তি ও সেনাবাহিনী হারিয়ে ছিলেন। সমস্ত কিছু হারিয়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন ঘন জঙ্গলে। আর সেই জঙ্গলে তাকে আশ্রয় দেন এক ঋষি।


তিনিতো জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন, তবে সারাক্ষণই তিনি চিন্তায় মগ্ন থাকতেন তার রাজ্যের প্রজাদের জন্য সেই মুহূর্তে রাজা সুরথের সাথে আলাপ হয় সমাধি নামক এক ব্যক্তির। যিনি জাতে ছিলেন বৈশ্য। রাজা জানতে পেরেছিলেন সামাধীর স্ত্রী ও সন্তান রা তার সমস্ত সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। তা সত্বেও তিনি সারাক্ষণ পরিবারের কথা চিন্তা করে চলেছেন। রাজা সুরথ এবং সামাধি, দুজনের অবস্থা একই রকম। তারা দুজনে মন কে শান্ত করতে শরনাপন্ন হন এক ঋষির।


আর এই  সংকটময় পরিস্থিতিতে দুজনের মন কে শান্ত করতে ঋষি বলেছিলেন দেবী মহামায়ার কাহিনী। তার সাথে সাথে বর্ণনা করেন মহিষাসুর বধ, টার সাথে আরো অনেক বধ এর কাহিনী তাদেরকে বলেন ঋষি। এইসব কাহিনী শুনে রাজা সরথ নদীর তীরে দেবী মহামায়ার ধ্যানে মগ্ন হয়ে পড়েন।


অবশেষে দেবী দুর্গার আশীর্বাদে তিনি তত্ত্ব জ্ঞান লাভ করেন। তার সাথে নিজের সাম্রাজ্য ফিরে পান। তিনি রাজ্যে ফিরে গেলে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। জানা যায় যে রাজা সুরথের হাতেই দেবী দুর্গার আরাধনা শুভ সূচনা। আর সেখান থেকেই দুর্গা পুজো হয়ে আসছে। অশুভ শক্তিকে দমন করতে আজও ভক্তিভরে  দুর্গাপূজা হয়ে চলেছে।


আমার অনেকেই মনে করেন রামায়ণের যুগ থেকে চলে আসছে দুর্গাপূজা, রাম লক্ষনের অকালবোধন বসন্ত ঋতুতে হলেও ওটাও ছিল দুর্গাপূজা। সেইমতো তখনো অকালবোধনে ১০৮ টা পদ্মফুলের প্রয়োজন ছিল দেবীর আরাধনায় আর আজও দুর্গাপুজোয় ১০৮ টা পদ্মফুলের প্রয়োজন হয়। সেই মতই অনেকেরই ধারণা অকালবোধন থেকেই দুর্গাপূজার সূচনা।


অসুরদের বর প্রাপ্তি হওয়ার পর থেকে দেবতাদের ওপর অত্যাচার শুরু হতে থাকে। এমনই বর ছিল যে কোন পুরুষ তাদের পরাজিত করতে পারবে না। সেই মত আনন্দের সাথে তাদের রাজত্ব চালিয়ে গিয়েছিল। অবশেষে রীতিমতো বাধ্য হয়েই মহামায়ার আবির্ভাব ঘটায়। যা ছিল এক নারী শক্তি। এই নারীশক্তি দেবি মহামায়ার হাতেই অসুর বিনাশ হয়।


মহামায়া দেবী দুর্গা অসুর বধ এর সাথে সাথে মর্তলোকে পূজিত হতে শুরু করেন। অশুভ শক্তির বিনাশ করতে তখন থেকেই দেবী দুর্গার পুজো হয়ে আসছে পৃথিবীতে। নানা রকম রোগ-ব্যাধি সমস্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মুক্তি পেতে মহামায়ার শরণাপন্ন হয়েছেন পৃথিবীর মানুষ। আর এইসব অশুভ শক্তি মহামায়া অসুর বধ এর মত বধ করতে পারেন। তিনি এক অপার শক্তি।