ফিক্সড ডিপোজিট না সোনা কোনটিতে বিনিয়োগ করলে অধিক পরিমাণে রিটার্ন আসবে
ফিক্সড ডিপোজিট না সোনা কোথায় নিজের কষ্টের টাকা সুরক্ষিত ভাবে রাখবেন। ফিক্সড ডিপোজিট নাকি সোনা কোনটিতে বিনিয়োগ করলে আপনার অধিক পরিমাণে রিটার্ন আসবে ! আসুন জেনে নিন বিস্তারিত ভাবে।

ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট বলতে আমরা সাধারণত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমাদের অর্থ জমা করা এবং সেই বরাদ্দকৃত সময় শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ বা মুনাফা যোগ করা হয় আমাদের জমা করা অর্থ এর সাথে যাকে আমরা স্থির বা স্থায়ী আমানত বলেও জানি।
আমাদের কষ্ট করে অর্জন করা অর্থকে কাজে লাগাবার অন্যতম একটি সহজ উপায় হল ফিক্সড ডিপোজিট বা স্থায়ী আমানত অথবা এফডিতে বিনিয়োগ করা। স্থায়ী আমানত বা ফিক্সড ডিপোজিট হল এক ধরনের বিনিয়োগ হিসাব যা সঞ্চয়ী হিসাবের বিশেষ প্রকারভেদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অর্থ জমা দিতে হয় এবং মেয়াদ শেষে জমাকৃত অর্থের সাথে নির্দিষ্ট হারে সুদ বা মুনাফা দেওয়া হয়।
শেয়ার বা অর্থ বাজারের অনেক বিনিয়োগের চেয়ে ফিক্সড ডিপোজিট বা স্থায়ী আমানত হিসেবে বিনিয়োগ অনেক বেশি ঝুঁকি মুক্ত। স্থায়ী আমানত বা ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট সহজেই খুলে ফেলা যায় এবং খুবই দ্রুত কাজ সম্পাদন করা যায়, যেখানে জমা কৃত অর্থ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যাংকে জমা দিতে হবে এরপর মেয়াদ শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ বা মুনাফা ভোগ করতে পারবেন আর সাথে তো আপনার মূল টাকা পাচ্ছেনই।
চলুন এবার জানা যাক,
ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট এর সুবিধা এবং অসুবিধা:
১. স্থায়ী আমানত বা ফিক্সড ডিপোজিট আপনার সঞ্চয়ের অভ্যাসকে আরো বেশি উৎসাহিত করতে পারে কারণ, আপনি নির্দিষ্ট সময়ের আগে অর্থ উঠাতে পারবেন না। এই কথা জেনেই স্থায়ী আমানত বা ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্টে অর্থ বিনিয়োগ করছেন ।
২. স্থায়ী আমানত বা ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট সেভিংস একাউন্টের চেয়ে বেশি হারে মুনাফা বা সুদ প্রদান করে ।
৩. স্থায়ী আমানতে আপনার বিনিয়োগের মূল অর্থ ফিরে পাবার পাশাপাশি কিছু সংখ্যক অর্থ আয় অনেকটাই নিশ্চিত।
৪. স্থায়ী আমানত বা ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্টে জমা করা অর্থ দুঃসময়ে বা ভবিষ্যৎ অথবা যেকোনো সময়ে নগদ অর্থের প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করে। তবে এক্ষেত্রে আপনার মূল অর্থ থেকে অধিকাংশ অর্থ কর্তন করা হয় যা আর্থিক ভাবে কিছুটা ক্ষতি করে
৬. ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্টে কতটুকু সময় পর্যন্ত আপনি অর্থ বিনিয়োগ করতে চান সেটি সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। সাধারণত ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্টের সময় ৩০ দিন থেকে শুরু করে ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী।
ফিক্সড ডিপোজিট বা স্থায়ী আমানত হিসেবে অর্থ বিনিয়োগ করার আগে যে কথাটি জেনে রাখা উচিত, তা হচ্ছে আপনি নির্দিষ্ট সময়ের আগে অর্থ উত্তোলন করলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জরিমানা সাপেক্ষে অধিকাংশ অর্থ কর্তন করে রাখবে। তাই বিনিয়োগ করার আগে বুদ্ধিমানের কাজ হবে ভালো করে চিন্তা ভাবনা করে সঠিক স্থানে অর্থ জমা করা।
সোনায় বা স্বর্ণে অর্থ বিনিয়োগ :
প্রাচীনকাল থেকেই স্বর্ণ বা সোনার সাথে মানুষের পরিচয়। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে বা পর্যবেক্ষণ করে সোনাকে পাওয়া যায় বিনিময়ের অন্যতম সহজ মাধ্যম হিসেবে। উপমহাদেশীয় সংস্কৃতি অনুসারে স্বর্ণ সাধারণত বিভিন্ন গহনা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে কিন্তু বিনিয়োগ হিসেবে এটার ব্যবহার তেমন কোন ব্যাবহার নেই। বিনিয়োগ এর মাধ্যমে হিসেবে স্বর্ণ অত্যন্ত চমৎকারভাবে ব্যবহার করা যায়। ভবিষ্যৎ ঝুঁকি এড়াতে বা নিরাপত্তা নিশ্চিতের রক্ষক হিসেবে স্বর্ণতে বিনিয়োগ করে থাকেন অনেকে।
যেকোনো সময়ে যুদ্ধ বা সামাজিক অস্থিশিলতায় স্বর্ণের মূল্য অনেক বেশি। সবচেয়ে বেশি মজার তথ্য হল সোনার বা স্বর্ণের দামের সাথে তেলের দীর্ঘ মেয়াদী আন্তরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। আর এর থেকে বুঝা যায় যে, অর্থনৈতিক মন্দার সময় স্বর্ণ বিক্রি বেড়ে যায় এবং গেল বছর অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে স্বর্ণের দাম রেকর্ড বৃদ্ধি যাতে করে এখন সময় স্বর্ণে বিনিয়োগ করার। গত ৩৬ বছরে স্বর্ণের দাম বিবেচনায় আনলে পরিস্কার ধারণা হবে স্বর্ণের বাজার সম্পর্কে। এবং বিগত ৬ মাসের দাম জরিপ করে বোঝা যাবে স্বর্ণের বিনিয়োগ কতটা সহায়ক।
স্বর্ণ ২ ভাবে বিনিয়োগ করা যায়
১. গোল্ড ইটিএফ
২. আসল স্বর্ণে: স্বর্ণের কয়েন বা বার বা অলংকারে।
গোল্ড ইটিএফ মানে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড অর্থাৎ এই ফান্ড শেয়ার বাজারে ক্রয় বিক্রয় করা হয়। কেউ কোন ইটিএফে বিনিয়োগ করলে সেটি একটি নির্দিষ্ট ইনডেক্সেই বিনিয়োগ করা হয়, তেমনই কেউ স্বর্ণ ইটিএফ-এ বিনিয়োগ করলে এক রকম ভাবে তখন সে কোন নির্দিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জের স্বর্ণ ইটিএফ ইনডেক্সে বিনিয়োগ করতে পারে।গোল্ড ইটিএফ ২ ধরনের হয়,
১. গোল্ড স্টক ইনডেক্স এবং
২. গোল্ড প্রাইস ইনডেক্স।
আমাদের দেশে এখনো ইনডেক্স সুবিধা সমূহ শুরু হয়নি। তবে সরাসরি স্বর্ণে বিনিয়োগ করার সুবিধা আছে। এতে করে আপনি স্বর্ণ নিজের হাত দিয়ে ধরতে পারবেন এবং সেটা দিয়ে যা ইচ্ছা করতে পারবেন। পুরো বিশ্ব জুড়ে সোনার মূল্য প্রায় একই, যে কোনো পরিস্থিতি হোক না কেন স্বর্ণ দিয়ে সহজেই পণ্য বা সেবা নিতে পারেন। সোনা বা স্বর্ণ শুধু যে একটি ঝুঁকি বিহীন বিনিয়োগ তা নয় বরং রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট-ও ভালো।
এক্ষেত্রে আপনার জন্য জানা জরুরী সোনা বা স্বর্ণের স্বল্প মেয়াদী বিনিয়োগে তেমন মুনাফা নিতে পারবেন না এজন্য করতে হবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ। গবেষণায় দেখা যায়, ১০ বছর ব্যবধানে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণের মূল্য কম করে হলেও ৫ গুন বেড়ে যায়। স্বর্ণে বিনিয়োগ করার জন্য আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে, আপনার স্বর্ণ সম্পূর্ণ খাঁটি এবং স্বর্ণের মান এর ব্যাপারে ও আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে কারণ স্বর্ণে বিনিয়োগ করার উপযুক্ত সময় এখনই।
উপরোক্ত আলোচনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ফিক্সড ডিপোজিট বা স্থায়ী আমানত অথবা এফডি একাউন্টে বিনিয়োগ করলে আপনার জমা করা অর্থ কর্তন করা হতে পারে তবে আপনার জমা করা অর্থ যদি খাঁটি সোনা বা স্বর্ণতে বিনিয়োগ করলে আপনার অর্থ সুরক্ষিত থাকবে এক্ষেত্রে আপনার দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে। আপনার কষ্ট করে অর্জন করা অর্থ সঠিক স্থানে বিনিয়োগ করলে উপযুক্ত মূল্য রিটার্ন পাবেন।