ফেসবুক একাউন্ট নিরাপদে রাখতে জেনে নিন কিছু কৌশল
ফেসবুক কে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। আর যদি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যায় তাহলে তো কথাই নেই। তিথি কখন কারণ হয়ে দাঁড়ায় আতঙ্কের। তাই ফেসবুক একাউন্টকে নিরাপদে রাখা অত্যন্ত জরুরী। আজকে আমি এমন কয়েকটি কৌশল নিয়ে আলোচনা করবো যার মাধ্যমে আপনি আপনার ফেসবুক একাউন্টকে নিরাপদে রাখতে পারেন।

বর্তমান সময়ে ফেসবুক আর কোন যোগাযোগের মাধ্যম নয় বরং এটি হয়ে উঠেছে প্রত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ছাপানো সংবাদপত্রের আগেই এই ফেসবুক আপনার দোরগোড়ায় নিয়ে আসে নিত্যনতুন আপডেটেড সব খবর।
শুধু নিউজ ফিড ঘেঁটে এখন আর কেউ ফেসবুক এ অযথা সময় পার করে না বরং এটিকে অনলাইন বিজনেস একটি প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে। সেই সাথে ফেসবুক কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অনলাইন পড়াশোনা চলছে পুরোদমে।
কিন্তু এতসব ইতিবাচক দিকগুলো এর মাঝেও ফেসবুক কখনো কখনো হয়ে উঠছে আতঙ্কের কারণ। বারবারই তাই ফেসবুক নিরাপত্তার বিষয়টি হয়ে উঠছে প্রাসঙ্গিক।
আজকের আয়োজনে তাই আমি আলোচনা করব ফেসবুকের এমন কিছু দারুণ কৌশল যার মাধ্যমে আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেই নিজের ফেসবুক একাউন্টের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবেন। সেইসাথে নানাবিধ হুমকি থেকে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কে রাখতে পারবেন সুরক্ষিত।
ফেসবুকের নিরাপত্তা কেন প্রয়োজনীয়?
বস্তুত এমন অনেকেই রয়েছেন যারা ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিয়ে উদাসীন। অনেকেই মনে করেন যে আমি একজন সাদাসিধে মানুষ আমার ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করে অন্য কারো কি লাভ হতে পারে।
কিন্তু বাস্তবিক অর্থে কিন্তু ঘটনাটা সেরকম নয়। আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট অনিরাপদ অবস্থায় থাকলে আপনিও হতে পারেন নানারকম হয়রানির শিকার।
এমনকি আপনার অ্যাকাউন্টটি হ্যাক করে হ্যাকার আপনার পরিচিত বন্ধুবান্ধব দের কাছ থেকে টাকা ধার করতে পারে। যা আপনার অর্থ এবং সম্মান দুইয়েরই ক্ষতি করবে।
এছাড়া ফেসবুক কে হাতিয়ার করে নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সত্যিকার অর্থে ফেসবুক একাউন্ট এখন আর কোন যোগাযোগের মাধ্যম নয় বরং এটি আপনার ডিজিটাল সম্পত্তি।
তাই যেমন সোনার গহনা আপনি ব্যাংকের লকারে রেখে নিরাপদে থাকতে চান তেমনি ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি কেউ নিরাপদে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা জন্য যা করণীয়
মূলত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখার বিভিন্ন উপায়গুলো ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আপনাকে প্রদান করে থাকে। আপনার শুধু প্রয়োজন এসকল কৌশলগুলোকে ভালোভাবে জানা এবং তা ব্যবহার করা।
নিচে আমি এরকমই কয়েকটি কৌশল নিয়ে আলোচনা করছি যার মাধ্যমে আপনি আপনার ফেসবুক একাউন্টকে রাখতে পারবেন সুরক্ষিত।
১. লগ ইন করার তথ্য বিশ্লেষন
ফেসবুকে এমন একটি অপশন রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার একাউন্টি কোথা থেকে এবং কোন ডিভাইসের মাধ্যমে লগইন করা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করতে পারবেন। এখন প্রায় সকলের কাছেই একের অধিক ডিভাইস থাকে।
এগুলো হতে পারে স্মার্টফোন ল্যাপটপ অথবা ট্যাব। আর আমরা আমাদের প্রয়োজন মতো বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে একই অ্যাকাউন্টে লগইন করে থাকি।
ফেসবুক আপনার এই সকল ডিভাইসের ট্র্যাক রাখতে সক্ষম। এর জন্য প্রথমেই আপনাকে ফেসবুকের সিকিউরিটি অপশনে যেতে হবে। তারপরে সেখানে একটি অপশন আছে যাকে বলা হচ্ছে 'where you are logged in?'৷
এই অপশনে গেলে আপনি দেখতে পারবেন যে কোন কোন ডিভাইস থেকে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লগইন করা হয়েছে। এখানে প্রতিটি ডিভাইসের আইপি অ্যাড্রেস সহ লোকেশন টা দেখাবে।
ফলে এখানে গিয়ে আপনি যদি এমন কোন ডিভাইস সনাক্ত করতে সক্ষম হযন যা আপনার নয় অথবা যে ডিভাইসটির প্রবেশ সন্দেহজনক তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এতে করে তাৎক্ষণিকভাবে আপনার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে দিন।
২. গোপনীয় বার্তা
এখন ফেসবুকের মেসেঞ্জার সেবা ব্যবহার করি আপনি ও আপনার প্রেরিত বার তাকে রাখতে পারবেন গোপনীয়। যদিও হোয়াটসঅ্যাপ এ ধরনের সুবিধা অনেক আগে থেকেই দিয়ে আসছে।
কিন্তু ফেসবুকে আপনার কোন বার্তাকে গোপনীয় রাখার জন্য আপনাকে এই অপশনটি চালু করে নিতে হবে। এর জন্য আপনাকে মেসেঞ্জার এর সেটিংস অপশনে গিয়ে অ্যান্ড টু অ্যান্ড নামক অপশনটি চালু করে নিবেন।
এরপর আপনি যে ব্যক্তির সাথে চ্যাট করবেন তার তথ্য সম্পূর্ণ এনক্রিপটেড অবস্থায় থাকবে। অবশ্যই নির্দিষ্ট সময় পর আপনি সেই তথ্য মুছে ফেলতে পারেন। ফেসবুক বর্তমানে ডেটা চুরি হওয়ার ঘটনাটি বেশ প্রবল আকার ধারণ করেছে।
এতে ব্যবহারকারীর প্রেরিত ডাটা চুরি করার মাধ্যমে পরবর্তীতে তাকে হয়রানি করা সম্ভব। এ ধরনের হয়রানির শিকার থেকে বাঁচতে মেসেঞ্জারে এই সুবিধাটি হতে পারে আপনার জন্য বেশ ভালো।
৩. প্রোফাইল পিকচারের নিরাপত্তা
ফেসবুকে আপলোড করা আপনার প্রোফাইল পিকচারের নিরাপত্তা আপনি নিশ্চিত করতে পারবেন। বস্তুত অনেকসময় দেখা যায় যে একজন ব্যবহারকারীর প্রোফাইল পিকচার ডাউনলোড করে অন্য ব্যক্তি তার নাম দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে।
এরপর ওই ব্যবহারকারীর পরিচয় ব্যবহার করে অন্যান্য ব্যক্তিদেরকে বিভ্রান্ত করে। এ ধরনের অনিরাপত্তা অনেকসময় সম্মানহানিকর। তাই কোন প্রোফাইল পিকচার আপলোড করার পর আপনি সেটিকে প্রটেকশন দিতে পারেন।
প্রোফাইল পিকচার আপলোড করার সময় এ ধরনের অপশন আপনি পেয়ে যাবেন। এতে করে আপনার প্রোফাইল পিকচারটি অন্য কোন ব্যক্তি স্ক্রিনশট বা ডাউনলোড করতে পারবেনা।
৪. পোষ্টের কমেন্ট নিয়ন্ত্রণ
আপনার পাবলিক পোস্টে অনেক সময় এমন কমেন্ট এসে থাকে যা আপনি চাচ্ছেন না। এ ধরনের অবাঞ্চিত কমেন্টগুলো একইসাথে বিরক্তিকর এবং বিব্রতকর।
এখন আপনি চাইলেই এধরনের অবাঞ্ছিত কমেন্টগুলো কি সীমিত করতে পারেন। এর জন্য সেটিং অপশনে গিয়ে আপনাকে কমেন্ট সীমিতকরণ এর মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
অনেক সময় দেখা যায় যে আমাদের পাবলিক পোস্টে এমন সব কমেন্ট আসে যা আমাদের সম্পর্কে এমন সব তথ্য জানিয়ে দেয় যা আসলে আমরা জানাতে চাই না। তাই এধরণের অনিরাপত্তার থেকে আপনি সহজেই মুক্তি পেতে পারেন এই ফিচারটি ব্যবহারের মাধ্যমে।
৫. উত্তরসূরি নির্বাচন
আপনি আপনার পরবর্তীতে ফেসবুকের উত্তরসূরি নির্বাচন করে দিয়ে যেতে পারে। কি শুনতে অবাক লাগছে? আসলে পূর্বেই বলেছি যে ফেসবুক এখন আর কোন যোগাযোগের মাধ্যম নয় বরং এটি হচ্ছে ডিজিটাল সম্পত্তি।
তাই ব্যক্তির চলে গেলেও তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কিন্তু থেকে যায়। আর আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে যে কেউ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে।
এর জন্য আপনি ফেসবুকের সেটিংস অপশনে প্রাইভেসিতে গিয়ে লিগেসি কন্টাক্ট এ আপনার উত্তরসূরি নির্ধারণ করে দিতে পারেন। যার মাধ্যমে আপনি মূলত ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কি এটি জানাবেন যে আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার ফেসবুক কে চালাতে পারবে।