ফেসবুক পেজ জনপ্রিয় করে তোলার সেরা ৭ টি উপায়
ফেসবুক পেজ, এই জিনিসটির নাম শুনিনি এমন মনে হয় কোনো ফেসবুক ব্যবহারকারী আজকের জামানায় নেই। ফেসবুকের A-Z ব্যবহারকারী জানেন যে একটি ফেসবুক পেজ আসলে কি, কেনো ব্যবহার করা হয় এবং কিভাবে খুলতে হয়। আজ আমরা জানতে চলেছি যে কিভাবে ৭টি উপায় অবলম্বন করে সহজেই নিজের ফেসবুক পেজ কে জনপ্রিয় করে তুলতে পারি।

যেহেতু টাইমলাইন চালু করলেই সর্বদা আমাদের সামনে কোনো না কোনো পেজের কন্টেন্ট আসেই, তাই এ সম্বন্ধে না জানার কোনো কারণ আমি দেখিনা।
আমরা টাইমলাইন খুললেই, কোনো জনপ্রিয় নায়ক নায়িকা, খেলোয়াড়, কোনো নিউজ মিডিয়া বা নাটক সিনেমার পেজ কন্টেন্ট দেখতে পাই। আমরা অনেক পেজে লাইক দিয়ে সবসময় পেজগুলো ফলোও করে থাকি।
কিন্তু এতোসব কিছুর ভিতরেও, আমাদের কি জানা আছে যে কিভাবে একটি ফেসবুক পেজ জনপ্রিয় করে তুলতে হয়?
আমরা সবাই ফেসবুক পেজ সম্বন্ধে জানলেও, এই জনপ্রিয় করে তোলার বিষয়টা হয়তো শুধু তারাই জানেন যারা পেজ চালান।
আসলেই বিষয়টি সেরকম, যারা পেজের কন্টেন্ট উপভোগ করেন, তারা কিভাবে বুঝবেন যে পেজ কিভাবে জনপ্রিয় করে তুলতে হয়? তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে হয়তো তারা ভেবে চিন্তে দুই একটা উপায় বলতে পারবেন, তাও হয়তো সম্পূর্ণ সঠিক হবে না।
তবে যারা পেজ খুলতে চান, বা বর্তমানে নিজেদের পেজ জনপ্রিয় করতে চান, তারা আজকের পোস্টটি অনুসরন করলে আশা করি ভালো ফল পাবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে, মূল আলোচনা শুরু করা যাক।
ফেসবুক পেজ জনপ্রিয় বলতে আসলে কি বোঝায়?
আচ্ছা, আপনার কাছে জনপ্রিয় ফেসবুক পেজ মানে আসলে কি? হয়তো আপনি জানেন যে, প্রচুর পরিমাণ লাইক পেলেই বা ভিজিটর থাকলেই হয়তো একটি ফেসবুক পেজ জনপ্রিয় হয়, তাইনা? কিন্তু আসলেই কি তাই?
উত্তর হচ্ছে না, কারণ যেকোনো পেজেই হুটহাট করে অনেক ভিজিটর বা লাইক আসতে পারে। কিন্তু যদি সেটা স্ট্যাবল না থাকে, তাহলে এটাকে জনপ্রিয় বলা যাবে না। তাই, জনপ্রিয় হতে হলে পেজে ৩ টি জিনিস থাকা আবশ্যক। সেগুলো হচ্ছে,
১. পেজে প্রচুর লাইক থাকা
২. নিয়মিত অনেক ভিজিটর থাকা
৩. পোস্ট বা কন্টেন্ট প্রচুর বা সঠিক মাত্রায় শেয়ার হওয়া
তাহলে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন এবার, যে জনপ্রিয় পেজ আসলে কি?
ফেসবুক পেজ জনপ্রিয় করে তোলার সেরা ৭ টি উপায়:
১. পেজের সঠিক নামকরণ করুন
আপনার পেজের নামকরণ, পেজের জনপ্রিয়তায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। কেননা, পেজের নামই কিন্তু পেজের কার্যক্রমের বাহক। পেজের নাম দেখেই সবাই বুঝবে, যে আপনি আসলে কি উদ্দ্যেশ্যে পেজটি খুলেছেন বা কোন কাজে ব্যবহার করছেন।
আপনি যদি কোনো জনপ্রিয় ব্যক্তি হোন, বা নিজেকে রিপ্রেজেন্ট করার উদ্দ্যেশ্যে পেজ খুলে থাকেন, তাহলে অবশ্যই নিজের নাম অনুযায়ী পেজ খুলবেন বা এমন কোনো নামে পেজ খুলবেন, যেটা দেখেই মানুষ এক ঝলকে বুঝতে পারে যে এটা আপনার পেজ।
আর যদি কোনো কার্যক্রম ভিত্তিক বা পণ্যের মার্কেটিং এর উদ্দ্যেশ্যে পেজ খোলেন, তাহলে নিশ্চয়ই সুন্দরভাবে সেটা নামের ভিতর রাখার চেষ্টা করবেন, যাতে সবাই বোঝে যে, কোন কার্যক্রম বা পণ্যের জন্য খোলা হয়েছে। নাম দেখেই আপনার পেজে, অধিকাংশ ভিজিটর আসবে।
২. নিয়মিত এবং সঠিক কন্টেন্ট পোস্ট করুন
ফেসবুক পেজ সবার কাছে ছড়ানোর জন্য, নিয়মিত পোস্ট করা খুব জরুরী। কারণ পেজ হচ্ছে একটি পাবলিক প্লেস, এখানে আপনার কন্টেন্ট সারা দেশ ব্যাপী বা বিশ্বব্যাপীও ছড়াতে পারে। তবে সেটা নিশ্চয়ই একদিনে হবেনা।
আপনার কন্টেন্ট হয়তো প্রথমে একটা জেলায় ছড়াবে, তারপর ১০ টা, ২০ টা, এভাবে দেশব্যাপী ছড়াবে। কিন্তু এই ছড়ানোর জন্য কিন্তু নিয়মিত কন্টেন্ট প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক।
কারণ আপনার কন্টেন্টই আপনাকে সবার কাছে পৌছে দেবে, আর আপনাকে সবাই কন্টেন্ট এর মাধ্যমেই খুজে হয়তো পেজে লাইক দেবে বা ফলো করবে।
আর সঠিক কন্টেন্ট এর বিষয়টা তো নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছেন। আপনি যদি নিজের নামে পেজ খুলে অন্যের কন্টেন্ট শেয়ার করেন, বাজে অশালীন পোস্ট শেয়ার করেন, তাহলে কিন্তু কখনোই জনপ্রিয়তা পাবেন না বরং সমালোচনার স্বীকার হবেন।
তাই অবশ্যই, নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াতে হলে, সঠিক বিষয়ক, অর্থাৎ নিজের পেজের নাম বা কার্যক্রম অনুযায়ী কন্টেন্ট শেয়ার করবেন।
৩. বিভিন্ন কন্টেন্ট পোস্ট করুন এবং নিজের বন্ধুদের কাজে লাগান
আপনার পেজে সর্বদা নতুন নতুন কন্টেন্ট সমন্বয় করে পোস্ট করবেন। কারণ আপনারা ভালো করেই জানেন, একঘেয়েমি কন্টেন্ট কেউই পছন্দ করেন না।
তাই সবসময় চেষ্টা করবেন, সিরিয়াস, জোকস, ডেইলি কিছু টিপস, মিমস, পোল, ভিডিও ইত্যাদির সমন্বয় করে কন্টেন্ট শেয়ার করার। এতে সবার আগ্রহ পেজের প্রতি বজায় থাকবে আর আকর্ষণ বেড়ে যাবে।
আর অবশ্যই, নিজের ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্টের সবাইকে নিজের পেজে লাইক দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন। সবাইকে পাশে থাকার অনুরোধ করবেন।
আপনার ফেসবুকে যদি ২০০০ বন্ধু থাকে, আর যদি আপনাকে ২০০ জন সাপোর্ট করে, তাহলেও কিন্তু সেটা অনেক। এভাবে বৈচিত্রতা ও দক্ষতার সমন্বয় করে নিজের পেজকে এগিয়ে নিতে পারবেন।
৪. বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ, বা সোশ্যাল মিডিয়ায় পেজের প্রচারণা চালান
ফেসবুকের জনপ্রিয় গ্রুপগুলোতে অবশ্যই হাজারো বা লাখো সদস্য থাকে। আপনি এমন একটি বা অনেকগুলো গ্রুপের এডমিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, নিজের পেজের কন্টেন্ট অথবা সাপোর্টের জন্য অনুরোধ করতে পারেন।
যদি আপনি এই কাজে সফল হোন, তাহলে অবশ্যই আপনি অনেকটাই সফল হয়ে যাবেন আপনার পেজ জনপ্রিয় করতে। কারণ, একটি জনপ্রিয় গ্রুপে কোনো পোস্ট হলে, সেখানে প্রচুর পরিমাণ সাড়া পাওয়া যায় নিশ্চিতভাবেই।
অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া, যেমন -ইন্সট্রগ্রাম, টুইটার বা যেকোনো অন্য মিডিয়ায় আপনার পেজের প্রচারণা চালাতেও অবশ্যই ভুলবেন না।
এখান থেকেও যদি কিছু সাপোর্ট পেয়ে যান, তাহলে অবশ্যই ভালো হবে। আর যত অপশন ট্রাই করবেন, সম্ভাবনা ততই বাড়তে থাকবে।
আপনার বা আপনার কোনো পরিচিত মানুষের যদি ওয়েবসাইট বা ব্লগ থেকে থাকে, তাহলে তাদের থেকেও এই ব্যাপারে সহায়তা নিতে পারেন।
৫. পেজের সেটিংস ঠিক করে সাজান
আপনার পেজের সেটিংস সঠিকভাবে সাজানো খুব দরকারী একটি কাজ। একটি মানুষের যেমন সবার আগে চেহারা যাচাই করা হয়, ঠিক তেমনি আপনার পেজেরও সবাই আগে সামনের সেটিংসগুলো দেখবে, প্রোফাইল পিকচার, কভার পিকচার এবং ডেস্ক্রিপশন পড়বে।
তাই এই জায়গাগুলো অবশ্যই সুন্দর করে এডিট করবেন যাতে সবাই এগুলো দেখে আকর্ষিত হয় এবং আপনাকে লাইক দেয় ও ফলো করে।
৬. জনপ্রিয় ও ট্রেন্ডিং বিষয়ে কন্টেন্ট বানান ও ক্যাপশনে হ্যাশট্যাগ# ব্যবহার করুন
জনপ্রিয় ও ট্রেন্ডিং বিষয়বলী, সবসময়ই ফেসবুকে সবার প্রধান আকর্ষণ হয়ে থাকে। এরকম নতুন বা জনপ্রিয় কিছু দেখতে পেলেই সবাই সেখানে ঝাপিয়ে পড়েন।
তাই অবশ্যই জনপ্রিয় ও ট্রেন্ডিং বিষয়গুলোর উপর নজর রাখবেন ও সেই বিষয়গুলোর উপর কন্টেন্ট শেয়ার করবেন। যদি ছোট ছোট ভিডিও বানাতে পারেন, তাহলে হয়তো বিষয়টা আরো সুবিধাজনক হবে।
এছাড়াও, সব ধরনের কন্টেন্টে, হ্যাশট্যাগ # ব্যবহার করতে ভুলবেন না। কারণ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করলে, আপনার কন্টেন্ট একটি ক্যাটাগরি হিসাবে তালিকাবদ্ধ হয়, আর যখন ফেসবুকে কেউ কোনো কন্টেন্ট সার্চ করে, তখন সেই ক্যাটাগরির ভিতরে যদি আপনার কন্টেন্ট থাকে, তাহলে সেটা সামনে চলে আসে, ঠিক গুগলের মতোই।
আর বুঝতেই পারছেন, সার্চ লিস্টে আসলে আপনার ভিজিটর বাড়বে, সাথে লাইক, ফলোও বাড়বে।
৭. অর্থ ব্যয় করতে পারেন
আমি এতোক্ষণ আপনাদের যেসব উপায়গুলো বললাম, এগুলো ছিলো বিনামূল্যে পেজ জনপ্রিয় করে তোলার উপায়।
কিন্তু যদি কোনো কারণবশত, বা দুর্ভাগ্যবশত এই নিয়মগুলো আপনাদের কাজে না আসে, তাহলে আপনারা অর্থ ব্যয় করে, নিজের পেজের লাইক কমেন্ট ফলোয়ার বা ভিজিটর বাড়িয়ে নিতে পারবেন।
ফেসবুক পেইড প্রমোশন বা বুস্টিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই কাজটি করতে পারবেন। এতে খুব দ্রুত, ম্যানুয়ালি বুস্টিং প্রতিষ্ঠানগুলো আপনার পেজে লাইক কমেন্ট জেনারেট করে আপনার পেজ জনপ্রিয় করতে সহায়তা করে।
উপসংহার
সুপ্রিয় পাঠকগণ, আজকের মতো এই ছিলো ফেসবুক পেজ জনপ্রিয় করার বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে আমাদের আজকের পোস্ট। আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে। চাইলে পোস্টটি সেভ করে রাখতে পারেন ও বন্ধু বান্ধব এবং আত্নীয়দের সাথে শেয়ার দিতে পারেন।
এছাড়া যদি আজকের পোস্ট নিয়ে আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তাহলে জানাতে পারেন কমেন্ট সেকশনে। খুব দ্রুত আবার দেখা হবে সামনের কোনো নতুন পোস্টে, নিয়ে আসবো নতুন কোনো তথ্য আপনাদের কাছে। ততক্ষণ অব্দি, সবাইকে জানাই বিদায় ও শুভকামনা!