ফ্যাশন ইতিহাসে সবথেকে বিপদজনক ফ্যাশন ট্রেন্ড, জানলে চমকে উঠতে হবে
ফ্যাশন ট্রেন্ডে গা ভাসাতে গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে অনেকের, যারা বেঁচে আছেন তারা নানা রকম শারীরিক সমস্যা নিয়ে বেঁচে আছেন। এমন ফ্যাশন, যা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।

এক এক যুগে এক এক রকম ফ্যাশনের চল থাকে। তখন সব জায়গায় একই রকম ফ্যাশন চলাকালীন সবাইকেই সেই ফ্যাশন অনুযায়ী চলতে হয়। যুগের সাথে সাথে, দিনের সাথে সাথে ফ্যাশনেরও পরিবর্তন ঘটে। ফ্যাশন পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের পোশাক পরিচ্ছদের ধরণ পাল্টায়। এমনটাই আনন্দ পেয়ে থাকেন অনেকেই।
কিন্তু এই ফ্যাশন ট্রেন্ডে গা ভাসাতে গিয়ে যদি তার ফলাফল হয় মারাত্মক তাহলে কেমন হবে! তা একমাত্র বিপদজনক ছাড়া কিছুই নয়, মানে নিজেই নিজের ক্ষতি করা। আর তাছাড়া সৌন্দর্যের খাতিরে যন্ত্রনা, কষ্ট সহ্য করার কোন মানে হয় ন।
তাসত্ত্বেও, যুগে যুগে এমন সব ফ্যাশনের চল আসে সেই ফ্যাশনে গা ভাসিয়েছেন বহু মানুষ। কে কতটা সেই ফ্যাশনে এগিয়ে থাকতে পারে তা নিয়ে চলত লড়াই। এমনও ফ্যাশন রয়েছে যা অনেক নারীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা যায় যে পোশাক, হিল, করসেট পরার কারণে অনেক নারীর মৃত্যু ঘটেছে। আর এই জন্যই এগুলোকে ইতিহাসের সবচেয়ে বিপদজনক ফ্যাশন ট্রেন্ড নামে অভিহিত করা হয়েছে।
ফ্যাশন ট্রেন্ডে অনেক সময় যন্ত্রণা পেতে হয়, যেমন বিকিনি ওয়াসকিং, ভ্রু প্লাক করতে গিয়ে যন্ত্রণা পেতে হয়। তেমনি অতীতে এমন কিছু রূপচর্চা, সৌন্দর্য চর্চা আছে যা ছিল কঠিন ও ভয়ঙ্কর। অতীতে এমন কিছু ফ্যাশন ট্রেন্ড ছিল যা ভয়ঙ্কর ও যন্ত্রণাদায়ক।
জানা যাক সেইসব ভয়ঙ্কর ও যন্ত্রণাদায়ক ফ্যাশন ট্রেন্ড সম্পর্কে-
১. করসেট : (Corset)
অতীত থেকে বর্তমান নারীরা নিজেদের স্লিম দেখানোর জন্য কত কিছুই না করে থাকেন। ডায়েট প্ল্যান, নিয়মিত ব্যায়াম, ছোটাছুটি, অনেক পছন্দের খাবার ত্যাগ করা, এমনকি সুন্দর স্লিম ড্রেস পরা।
সব নারীরাই চান যে তারা স্লিম থাকুক। বিশেষ করে পাতলা কোমর অতীত থেকে বর্তমান চলে আসছে। ভবিষ্যতেও চলবে, যতটা কোমর পাতলা করা যায় ততটাই নিজেকে আরো সুন্দরী করে তোলা যাবে, এমনটাই ভেবে অনেক নারী এটার উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
তবে পেট ও কোমরের অংশে সবচেয়ে বেশি মেদ জমে। আর সেই কারণেই, আকর্ষণীয় ফিগার পাওয়া মুখের কথা নয়, অনেকটাই কষ্ট, পরিশ্রম এবং দীর্ঘদিনের বিষয়। আর এইসব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই উদ্ভব হয় করসেটের। যার ফলে চিকন কোমর দেখানোর প্রবণতা চালু হয়।
এটি বর্তমানেও বিদ্যমান, তবে এই পোশাক অনেকটাই বিপদজনক, কারণ হলো করসেট অনেকটাই টাইট হয়ে থাকে। এই পোশাক পরলে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে না। অনেক নারী তো করসেট দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকার কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। আর এমন ঘটনা নেহাত কম নয়।
এই পোশাকের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, করসেট পরলে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ পতঙ্গ গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এর কারনে ইন্টারনল বা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে। সেইসঙ্গে ভাঙতে পারে পাঁজর এবং হতে পারে হজমের সমস্যা। হিস্টিরিয়া, বিষন্নতা, এবং কোষ্ঠকাঠিন্যসহ একশটা রোগ হতে পারে করসেট পড়লে।
৪ টি এমন প্রশ্ন যেগুলো করলে মেয়েদের সহজেই ইম্প্রেস করতে পারবেন
২. পাঁজরের হাড় অপসারণ : (Rib bone removal)
সর্বনাশ! সুন্দর দেখানোর জন্য মানুষ এমনটাও করতে পারে, ভাবা যায়! পাঁজরের হাড় অপসারণ করে শারীরিক গঠনের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য মানুষ এটাকে ফ্যাশন ট্রেন্ড বলে মনে করতেন।
ভিক্টোরিয়ান যুগে এই ফ্যাশন ট্রেন্ড চালু হয়। এই ক্ষেত্রে সার্জনরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাঁজরের হাড় অপসারণ করতেন। আর যা পরবর্তীতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াত।
৩. ক্রিনোলিন : (Crinoline)
এই পোশাকটি আর এক বিপদজনক পোশাক। ১৮৫৬ সালে আরশি মিলিয়েট এই ভয়ঙ্কর পোশাকটির উদ্ভাবক, ডিজাইনারও বলা চলে। ভিক্টোরিয়ান পোশাক ক্রিনোলিন ইতিহাসের বিপদজনক সব ফ্যাশন ট্রেন্ড গুলোর মধ্যে অন্যতম। ইতিহাস অনুযায়ী জানা গিয়েছে এই ভয়ঙ্কর পোশাক পরে প্রায় ৩ হাজার নারী মারা যান।
বলাই বাহুল্য যে, যার মধ্যে ছিলেন উইলিয়াম ওয়াইল্ডের কন্যা এমিলি এবং মেরি। যারা এই গ্রাউন্ড পরিহিত অবস্থায় আগুন লেগে পুড়ে মারা যান। এই পোশাক অনেক ঘের এবং অনেক স্তরের হয়ে থাকে। এই ধরনের পোশাকের কাপড় সাধারণত টিস্যু বা সিল্কের হয়ে থাকে। আর এইসব কাপড়ে তো আগুন খুব তাড়াতাড়ি লেগে যায়।
তাছাড়া এই পোশাক পরে হাঁটতে গিয়ে অনেকেই হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এমনকি যানবাহনের গাড়ি চাকাতে জড়িয়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে অনেক। ক্রিনোলিন গাউন পরে বাইরে বেরোল তা বাতাসে উড়তে থাকে, ফলে এটি পরে বাইরে বের হলে চলাচলের সময় যেকোনো সময় বিপদ ঘটে যেতে পারে।
৪. পা বেঁধে রাখা : (Golden Lotus Foot Binding)
এ কেমন ফ্যাশন? শরীরের কোনো অঙ্গ কে বেঁধে রাখা যায়! অস্বস্তি বোধ হয় না! তবে জানলে অবাক হবেন যে, চিনা নারীরা পা দুটোকে ভাঁজ করার অভ্যাস গড়তে ছোট জুতো পরতেন। আর ছোটবেলা থেকে এই অভ্যাস চলাকালীন পায়ের আঙ্গুল গুলো ভাজ হয়ে থাকতো। এমন অবস্থায় পা ও পায়ের নখগুলো অবশ হয়ে আসতো।
সম্রাট লি ইওর সময় থেকে পা বাধানোর ইতিহাস শুরু হয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, তখন ছোট পা কে সৌন্দর্যের তালিকায় ফেলা হতো, জা যার পা যত ছোট, তাকে তত বেশি সুন্দরী বলে বিবেচনা করা হতো। আর এই প্রক্রিয়াটি ছিল ভীষণ বেদনাদায়ক। সে যাই হোক না কেন, এই বেদনাদায়ক প্রক্রিয়াটি বংশ-পরম্পরাতেই চলে এসেছে। যন্ত্রণাদায়ক হলেও নারীরা সৌন্দর্যের কারণে বংশপরম্পরায় এই প্রক্রিয়াটি মেনে চলতেন।
জানা যায় যে ৪ থেকে ৯ বছর বয়স পর্যন্ত এই পা বাধার কাজটি চলত। আর এর ফলে পায়ের হাড় ভেঙে ঘোড়ার খুরের মত আকার ধারণ করতো। আর এর থেকে সংক্রমণ ঘটে অনেক শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। আর যারা বেঁচে থাকতেন তারা সারাজীবন শারীরিক সমস্যা নিয়ে বেঁচে থাকতেন।
সুন্দরতা যে মানুষের জীবনে এতটা যন্ত্রণা ও বেদনাদায়ক হতে পারে এগুলো না জানলে হয়তো জানা যেত না। পৃথিবীতে কত রকমের নিয়ম, কত রকমের মানুষ, তা হয়ত কল্পনারও বাইরে।