ফ্রিল্যান্সার হিসাবে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলুন সহজেই
করোনার এই প্রকোপে ফ্রিল্যান্সিং বেকার ছেলে মেয়েদের উপার্জন এর খাত হিসাবে কাজ করছে। কিভাবে খুব সহজেই এই খাতে অভিজ্ঞ হবেন এবং সেই বিকল্প খাতগুলো কি কি, তা আজকের পোস্ট থেকে জেনে নিন।

ইন্টারনেট এর যাদুকরী ছোয়ায় বর্তমানে আমরা যে সকল সুবিধা ভোগ করছি তার মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং অন্যতম। আগে কাজ মানেই কর্মক্ষেত্র বা অফিসে গিয়ে করতে হত। কিন্তু এখন ইন্টারনেট থাকলে বাড়িতে বসেই বিদেশীদের কাজ করে দিয়ে ভাল টাকা আয় করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং এ অনেক ধরনের কাজ করা যায়। তবে অর্থ আয়ের দিক থেকে কিছু কাজ সেরা।
এ সকল কাজ করতে সময়ও কম লাগে, কিন্তু সে অনুযায়ী রোজগারের পরিমান বেশী। যারা স্বাধীনভাবে কাজ করে অর্থ আয় করতে চান তাদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আয় করা সবচেয়ে ভাল। যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং এ বিদেশী বা আমেরিকানদের কাজ বেশী করা হয়, সেগুলো রাতে করতে পারবেন। আমেরিকার সাথে আমাদের সময়ের পার্থক্য রয়েছে। তাদের ওখানে দিন মানে আমাদের এখানে রাত। আপনার খুব বেশী একাডেমিক অথবা কাজের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হবেনা।
তবে ভবিষ্যত এ যদি আপনি ফ্রিল্যান্সিং কে পেশা হিসেবে নিতে চান তাহলে আপনাকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে দক্ষ হতে হবে। আজ আমরা আয়োজন সাজিয়েছি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যে সকল কাজ করে ভাল অর্থ আয় করতে পারবেন সেই সকল কাজ নিয়ে। চলুন প্রিয় পাঠক দেরী না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
ফ্রিল্যান্সিং এর বিভিন্ন কার্যকর খাতসমূহের তালিকাঃ
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট অন্যতম একটি আয়ের উৎস। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে এই কাজটি করা আপনার জন্য খুবই লাভজনক হবে।
প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার এই সময়ে বিশ্বের ছোট-বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ব্যক্তিগত ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রায় সবাই ধীরে ধীরে ইন্টারনেটের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।
সবাই চাইছেন তার একটি ভার্চুয়াল ঠিকানা হোক। কারণ, একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান একদিকে যেভাবে এর গ্রাহকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে, অপরদিকে বিভিন্ন শহরে বা দেশে অবস্থিত নিজ নিজ শাখার সাথে সহজে এবং কম খরচে যোগাযোগ করতে পারে।
ওয়েব দুনিয়ায় বর্তমানে মোট ওয়েবসাইটের সংখ্যা প্রায় ৬৫ কোটি। প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে হাজার হাজার ওয়েবসাইট। এই বিপুল সংখ্যক ওয়েবসাইট তৈরির জন্য ডিজাইনের পাশাপাশি প্রয়োজন ওয়েব ডেভেলপমেন্টের। নতুন ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট কিংবা পুরনো ওয়েবসাইটকে নতুনভাবে ডেভেলপ করার জন্য প্রয়োজন ভালোমানের ওয়েব ডেভেলপার।
এ কারণেই অনলাইন মার্কেটপ্লেসসহ লোকাল মার্কেটে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের চাহিদা বেড়েই চলেছে। আপনি ওয়েব ডেভেলপ করে প্রতি ঘন্টায় ১৫০ ডলার পর্যন্ত রোজগার করতে পারবেন তবে তারজন্য ওয়েব ডেভেলপ এর কাজে আপনাকে দক্ষ হতে হবে।
ব্লগিং
মার্কেটপ্লেসের কাজ না হলেও অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে ব্লগিং। বাংলাদেশ থেকেই এখন প্রচুর তরুণ-তরুণী ব্লগিং এর মাধ্যমে নিজেদের স্মার্ট ক্যারিয়ার নিশ্চিত করেছেন। এ খাত থেকে প্রতিমাসে ২ থেকে ১০ হাজার ডলার আয় করছেন এমন সফল ব্লগারের সংখ্যাও এখন অনেক। ব্লগিং ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রায় একই বিষয়।
দুটিই একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করা সম্ভব। ব্লগিং এর মাধ্যমে শুধু টাকা নয়, পাওয়া যায় বিপুল সম্মানও। আন্তর্জাতিক বিশ্বে ব্লগারদের সাংবাদিক হিসেবেও এখন গণ্য করা হয়। স্মার্ট ক্যারিয়ার হিসেবে তাই ব্লগিং এখন ওয়েব উদ্যোক্তাদের মধ্যে সাড়া জাগানো ক্যারিয়ার।
ব্লগিংয়ের মাধ্যমে অনেক উপায়েই আয় করা যায়। এর মধ্যে গুগল অ্যাডসেন্স আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায়। সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্টের এ বিজ্ঞাপন প্লাটফর্মের মাধ্যমে প্রতিমাসে ১০ হাজার ডলারের ওপরে আয় করছেন এমন ব্লগারের সংখ্যাও বাংলাদেশে রয়েছে। গুগল অ্যাডসেন্স এবং সরাসরি বিজ্ঞাপন স্পেস বিক্রিসহ নানা উপায়ে আয় করতে পারেন একজন ব্লগার।
নিজের ব্লগের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট পণ্যকে সুপারিশ করেও (রেফার) আয় করার সুযোগ রয়েছে একজন ব্লগারের, যাকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলা হয়। ইন্টারনেট থেকে ভালো আয়ের ক্ষেত্রে এ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংও একটি উপযোগী মাধ্যম। এ মাধ্যমে আপনি অন্য যেকোনো আয়ের উপায়, যেমন অ্যাডসেন্স থেকেও বেশি আয় করতে পারবেন।
কনটেন্ট রাইটিং
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনলাইনে আয় করার সহজ ও কার্যকর উপায় হলো লেখালেখি, যাকে আর্টিকেল রাইটিং বা কনটেন্ট রাইটিং বলা হয়। যারা ইংরেজিতে ভালো তারাই লেখালেখিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারেন। কনটেন্ট রাইটাররা বিভিন্ন কাজের জন্য কনটেন্ট লিখে থাকেন। ওয়েব কনটেন্ট ছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য রিসোর্স বই, ব্রোশিউর, লিফলেট বা অন্যান্য প্রচারণার কাজে কনটেন্ট ডেভেলপ করা হয়ে থাকে।
একজন কনটেন্ট ডেভেলপারের অনেক কাজের ক্ষেত্র রয়েছে। ক্ষেত্রগুলো হলো- কপিরাইটিং, বস্নগ লেখা, ওয়েব কনটেন্ট, প্রেস রিলিজ রাইটিং, ট্রান্সলেশন, ট্রান্সক্রিপশন, সামারাইজেশন, রিজিউম রাইটিং, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি। লেখার বিষয়টি নির্ভর করে লেখকের দক্ষতা, রুচি, সহযোগিতা সর্বোপরি যে সাইট বা বিষয়ের জন্য লেখা হচ্ছে তার চাহিদার ওপর।
তবে বিষয়বস্ত্ত যা-ই হোক না কেনো, একজন ওয়েব কনটেন্ট রাইটারকে কোনো নির্দিষ্ট টপিক নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করে ডাটাবেজ তৈরি করতে হয়। উন্নত বিশ্বে একজন কনটেন্ট রাইটারকে সাংবাদিক বা গবেষক হিসেবেও অভিহিত করা হয়। বিষয়বস্তু অনুযায়ী ঠিক করে নিতে হয় লাইন অব অ্যাকশন। লেখা অবশ্যই প্রাঞ্জল ও তথ্যসমৃদ্ধ হতে হবে। রাইটার হিসেবে মনে রাখতে হবে যারা ওয়েবসাইটে আপনার লেখা পড়বেন, তারা মিনিটপ্রতি বা ঘণ্টাপ্রতি নির্দিষ্ট পয়সা খরচ করে পড়বেন। সুতরাং তারা চাইবেন সবচেয়ে কম সময়ে প্রয়োজনীয় জিনিস পড়তে।
তাই তথ্যনির্ভর, সংক্ষিপ্ত বিষয়ভিত্তিক লেখাই আপনাকে লিখতে হবে। কনটেন্ট লেখার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই অন্যের লেখা কপি করা যাবে না। এতে লেখক হিসেবে আপনার গ্রহণযোগ্যতা যেমন বাড়বে, তেমনি উপার্জনের পথও প্রশস্ত হবে। কনটেন্ট রাইটার হতে গেলে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে ভালো হতে হবে।
প্রয়োজন শুদ্ধ বানান। আমেরিকান স্পেলিং শুদ্ধভাবে জানতে হবে। গ্রামার সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্রিটিশ ও আমেরিকান গ্রামার সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা ভালো। আর ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য প্রয়োজনীয় যে বিষয়গুলো রয়েছে, যেমন- ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করা, কাভার লেটার লেখা, আপডেট করা
আর ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য প্রয়োজনীয় যে বিষয়গুলো রয়েছে, যেমন ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করা, কাভার লেটার লেখা, আপডেটেড থাকা এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
বাংলাদেশে এমন অনেক ফ্রিল্যান্স লেখক আছেন যারা ঘণ্টায় ১০ থেকে ৩০ ডলার পর্যন্ত আয় করে থাকেন। এছাড়া দেশী-বিদেশী ইন্টারনেট মার্কেটিং অথবা কনটেন্ট মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানেও আপনি ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বেতনে চাকরি করতে পারেন। তাই কনটেন্ট রাইটার হিসেবেও ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।
সার্ভে
বর্তমানে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সার্ভে কাজে ভাল রোজগার করতে পারবেন। সার্ভে মানে হচ্ছে জরিপ। কোন প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, গবেষনা প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, কোম্পানি বা পন্যের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করাই হচ্ছে সার্ভে করা। আমাদের দেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ কাজ করা হয়, কিন্তু আমেরিকায় বা বিদেশে যেহেতু প্রযুক্তি অনেক উন্নত, তাই এখানে সার্ভে করা হয় অনলাইনে।
আপনি চাইলে মার্কেটপ্লেস এ একাউন্ট খুলে আমেরিকান আইপি এবং আমেরিকান এড্রেস দিয়ে সার্ভের কাজ করতে পারবেন। এটা রাত থেকে কাজ করতে পারবেন। ইংরেজি এবং কম্পিউটার এর বেসিক ধারনা থাকলেই কাজটি শুরু করতে পারবেন। এতে মাসে ১৫০০০-২০০০০ হাজার টাকা সহজেই রোজগার করতে পারবেন। দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে আপনার রোজগার ও বাড়বে। তখন একটু বেশী মূল্যের আইপি কিনে কাজ করতে পারেন।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন(এসইও)
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে এসইও করার কাজটি ভাল আয়ের ক্ষেত্রে দারুন একটি ক্ষেত্র।
ইন্টারনেট বাণিজ্যের এ যুগে ওয়েবসাইট ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান তো কল্পনাই করা যায় না। আবার ওয়েবসাইট থাকলেই কিন্তু এখন চলে না। এটি সর্বত্র পৌঁছে দিতে ব্যাপক মার্কেটিংয়ের প্রয়োজন হয়। ওয়েবসাইটকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায়।
ওয়েবসাইটকে গুগলের প্রথম দিকে নিয়ে আসার যে কৌশল সেগুলোকেই মূলত সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বলা হয়। দিন দিন বিশ্বব্যাপী যত ওয়েবসাইট বাড়ছে, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের কাজের ক্ষেত্রও অনেক বাড়ছে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতেও তাই দিন দিন বাড়ছে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের কাজ।
আর এ হিসেবে ফ্রিল্যান্সার হতে চাওয়া তরুণ-তরুণীদের অন্যতম পছন্দ হতে পারে এ ক্ষেত্রটি। ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলোর তথ্যানুসারে, একজন দক্ষ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার মাসে ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন।
উপসংহার
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজগুলো দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে কারন একঘেয়ে গড়পরতা ১০-৫ টা পর্যন্ত অফিস করে খুব কম স্যালারির চাকরি অনেকেই পছন্দ করেন না। এরচেয়ে বাড়ি ভা যেকোন স্থান থেকে নিজের সুবিধামত কাজ করে টাকা আয়ের জন্য ফ্রিল্যান্সিং সবচেয়ে ভাল উপায়। এ কাজে খুব বেশী ইংরেজি, কম্পিউটার বা কাজ না জানলেও প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করা যায়। আস্তে আস্তে দক্ষতা অর্জন সাপেক্ষে আপনার আয় বাড়বে। তা হতে পারে মাসে লাখ লাখ টাকা।
তাই ফ্রিল্যান্সিং এ ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা থাকলে মনস্থির করে ল্যাপটপ ও ব্রডব্যান্ড কানেকশন নিয়ে কাজগুলো শুরু করুন। আপনার ক্যারিয়ার গুছিয়ে নিতে পারবেন। আশা করি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কোন কোন কাজে বেশী অর্থ আয় করতে পারবেন তা জানতে আর্টিকেলটি আপনার কাজে আসবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বা যেকোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা আপনার মতামত গুরুত্বসহকারে নিয়ে দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।