বাংলা লেখার পূর্ণাঙ্গ সফটওয়্যার বিজয় কিবোর্ডের ইতিহাস

আজ আমার আর্টিকেলটি তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখা, যাঁরা তথ্যপ্রযুক্তির ইতিহাসে বাংলা ভাষাকে বিশ্ব দরবারে সমুজ্জ্বল করে রেখেছেন কম্পিউটারে বাংলা হরফে টাইপিং ব্যবস্হা করার মাধ্যমে। এরই ফলশ্রুতিতে আজ আমরা যে কোনো বিষয় বাংলায় টাইপ করতে পারছি। বিজয় বাংলা কীবোর্ড হচ্ছে সেরকম কীবোর্ড যা কম্পিউটারে প্রথম বাংলা লেখা হয়।

বাংলা লেখার পূর্ণাঙ্গ সফটওয়্যার বিজয় কিবোর্ডের ইতিহাস
বাংলা লেখার পূর্ণাঙ্গ সফটওয়্যার বিজয় কিবোর্ডের ইতিহাস


বিজয় হচ্ছে কম্পিউটারে বাংলা লেখার প্রথম কীবোর্ড। যেটির মাধ্যমে সাধারণ ইংরেজি কীবোর্ড ব্যবহার করেই বাংলা লেখা যায়। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৮ সালে বিজয় কী বোর্ডের প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়।


বিজয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। প্রথম সংস্করণের সকল বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে দ্বিতীয় সংস্করণে এমন কিছু নতুন বর্ণ যুক্ত করা হয় যা ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা লেখার জন্য প্রয়োজন হয়। 


বিজয় কীবোর্ড পরিচিতি 

বিজয় কীবোর্ড হলো ইউনিকোড ও এ এন এস আই সমর্থিত বাংলা লেখার সফটওয়্যার। এই কীবোর্ড হলো মাইক্রোসফট উইন্ডোজ, ম্যাকওএস এবং লিনাক্সের জন্য একটি গ্রাফিক্যাল লে আউট পরিবর্তক। 


বিজয় কীবোর্ডের মূল উদ্ভাবক 

বিজয় কীবোর্ডের উদ্ভাবক বা জনক বা প্রতিষ্ঠাতা হলেন স্যার মোস্তফা জব্বার। যাঁর জন্ম (১২ই আগস্ট, ১৯৪৯)একজন বাংলাদেশি প্রযুক্তি উদ্যেক্তা। বর্তমানে তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তির জগতের কিংবদন্তি স্যার মোস্তফা জব্বার এই সফটওয়্যারটি প্রস্তুত করে বাজারজাত করেন।


কম্পিউটারের জন্য প্রচলিত এই সফটওয়্যার ও কীবোর্ড বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা সহ বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের কম্পিউটারে বাংলা লেখার সর্বাধিক জনপ্রিয় সফটওয়্যার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 


কী বোর্ডের নাম কেন বিজয়

বিজয় হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং জনগণের বিজয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪-৩১ মিনিটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে মুক্তি পায় বাংলার মানুষ, সেটিই বিজয়। বিজয় বাংলা লিপিকে সেই মুক্তি দিয়েছে বলে এর বিজয় নামকরণ হয়েছে। 

স্যামসাং কোম্পানীর ইতিহাসঃ উন্নয়ন, অগ্রগতি ও আওতা

গুগলের আবিষ্কার ও ইতিহাসঃ কিছু না জানা তথ্য

ইন্টারনেটের আবিষ্কার ও ইতিহাসঃ বিশ্ব বদলানো আবিষ্কার

ফেসবুকের আবিষ্কার ও ইতিহাসঃ বৃহৎ সামাজিক পরিবর্তন

কম্পিউটারের আবিষ্কার ও ইতিহাসঃ এক ক্রান্তিকারী আবিষ্কার


বিজয় প্রযুক্তির জন্ম 

বাংলা হরফকে কীবোর্ডে বিন্যস্ত করার একটি নতুন ধারণার নাম বিজয় কীবোর্ড। বাংলা মূল বর্ণগুলোর মাঝে শুধুমাত্র ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯ টি, দুটি স্বরবর্ণ, ০৯ টি স্বরচিহ্ন, হসন্ত দাড়ি ও তিনটি ফলাকে কীবোর্ডে স্হান দেয়া হয়েছে।


যুক্তাক্ষর ও স্বরবর্ণ তৈরির জন্য হসন্তকে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে বাংলা যুক্তাক্ষর কীবোর্ডে রাখার প্রয়োজন হয় নি। এতে বাংলা বর্ণকে যথাসম্ভব অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ বা উচ্চারণের জোড় হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিজয়ের প্রথম কোডিং হয়েছে দিল্লিতে।


দেবেন্দ্র জোশী নামক একজন ভারতীয় ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এ কাজটি করেন। এরপর বাংলাদেশে এর উন্নয়ন অব্যাহত থাকে। 


'বিজয় ' লে আউট মুদ্রিত কী বোর্ড অর্জন 

বিজয় লে আউট হয়ে কী বোর্ডটি ১৯৮৮ সালে বাজারে আসে। ২০০৪ সালে বিজয় কীবোর্ড লে আউট প্যাটেন্টকৃত হয় ও ২০০৮ সাল থেকে এর লাইসেন্সিং চালু হয়। 


বিজয় দেশ - বিদেশে অর্জন করেছে অসাধারণ সফলতা। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সেরা সফটওয়্যারের পুরস্কার থেকে শুরু করে মোস্তফা জব্বারকে এসোসিওর সম্মাননা পাইয়ে দেবার জন্য কৃতিত্ব বিজয়ের।


বেস্টওয়ে পুরস্কার বা পিআইবি সোহেল সামাদ পুরস্কার কিংবা নেত্রকোনার গুনীজন সম্মাননা, সব কিছুর পেছনেই রয়েছে বিজয়ের অবদান। 


বিজয় কীবোর্ডে বাংলা লেখার পদ্ধতি 

কম্পিউটারে বিজয় সফটওয়্যারটি সঠিকভাবে ইনস্টল করার পর বাংলা লেখার জন্য কি বোর্ড পরিবর্তন করে বিজয়ে রূপান্তর করে নিতে হবে। তবে তার আগে বাংলা ফন্ট নির্বাচন করতে হবে। যেমন SutonnyMj ফন্টটি সিলেক্ট করার পর কি বোর্ড থেকে ctrl+Al+B প্রেস করে কি বোর্ড পরিবর্তন করতে হবে।


এই ফন্ট সেট আপটি বাংলায় ঠিকমতো কনভার্ট হয়েছে কিনা সেটি দেখতে Shift+F প্রেস করতে হবে। যদি ফন্ট সেট আপটি ঠিক হয় তাহলে বাংলা বর্ণমালার প্রথম বর্ণ 'অ' দেখাবে। 


বিজয় কীবোর্ড দ্বারা স্বরবর্ণ লেখার পদ্ধতি 

Shift+F =অ, G+F=আ, G+D=ই, G+(Shift +S)=ঈ, G+S=উ,G+(Shift +S)=ঊ, G+A=ঋ,G+C=এ, G+(Shift +C)=ঐ,X=ও,G+(Shift + X) =ঔ


ব্যঞ্জনবর্ণ লেখার পদ্ধতি 

ক=J,খ=Shift +J, গ=o, ঘ= Shift =o, ঙ= Q, চ= Y, ছ=Shift +Y, জ= U, ঝ =Shift + U, ঞ= Shift + l, ট= T, ঠ = Shift +T, ড=E, ঢ= Shift + E, ণ =Shift + B, ত= K, থ = Shift +K, দ = L, ধ = Shift + L,ন =B, প =R, ফ =Shift +R, ব = H, ভ =Shift + H, ম = M, য = W, র = V, ল = Shift + V, শ = Shift +M, ষ = Shift + N, স = N, হ =l, ঢ় =P, য় =Shift +W, ৎ= Shift +l, ং= Shift +Q, ঃ = \, ঁ= Shift + 7


বিজয় বাংলা কীবোর্ড সফটওয়্যার সংস্করণ 

বিজয় বাংলা কীবোর্ড বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে সংস্করণ হয়েছে। যেমন বিজয় ১(ম্যাক), বিজয়২( ম্যাক), বিজয় ৩ (ম্যাক), বিজয় ৪( ম্যাক), বিজয় ২০০০, প্রো(ম্যাক,উইন্ডোজ), বিজয় ২০০১, ২০০৩, ২০০৪, প্রো, বিজয় বায়ান্ন প্রো, বিজয় বায়ান্ন ২০১১, ২০১২, ২০১৪, ২০১৬, তারপর বিজয় একুশে ও বিজয় একাত্তর নামে সংস্করণ হয়েছে। 


কম্পিউটারে বাংলা লেখার টাইপের ইতিহাসে আরও অনেক লিপির পরিচয় বহন করলে ও বিজয় বাংলা কীবোর্ড বেশ জনপ্রিয়। অনেক ক্ষেত্রে এটি নানা আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি করলেও পরিপূর্ণভাবে সঠিক নিয়মে বাংলা লেখার পূর্ণাঙ্গ নির্ভরশীল সফটওয়্যার এটি।


এই সফটওয়্যারটি অনেকের কাছে বেশ প্রচলিত।  কম্পিউটারে বাংলা টাইপ করার ক্ষেত্রে বিজয় বাংলা সফটওয়্যারই প্রথম ইতিহাস সৃষ্টিকারী কীবোর্ড।