বিদেশে ভ্রমণ করতে চান? পাসপোর্টে এই ভুলগুলো একদম করবেন না
পাসপোর্ট করতে গেলে আপনাকে জন্মনিবন্ধন কার্ড বা ভোটার আইডি কার্ড দেখিয়ে ফর্ম পূরনের কাজের জন্য শো করতে হবে। অনেকের একটার সাথে আরেকটার মিল নেই। অর্থাৎ জন্মনিবন্ধনে বয়স একরকম দেয়া আবার ভোটার আইডি কার্ডের বয়স অন্যরকম দেয়া।

দেশে ভ্রমনের পাশাপাশি আমাদের বিদেশেও ভ্রমণ করার শখ থাকে অনেকের। আর তার জন্য প্রয়োজন পাসপোর্ট এবং ভিসা। অবশ্য কোনো রাষ্ট্রে শুধু পাসপোর্ট থাকলেই যাওয়া সম্ভব ভিসার প্রয়োজন হয়না।তবে বেশিরভাগ রাষ্ট্রে যেতে গেলে পাসপোর্ট ভিসা দুটোই লাগে।
তাই পাসপোর্ট করার সময় যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারন পাসপোর্ট একবার ভুল হলে আপনাকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হবে।
শুধু ভ্রমণের উদ্দেশ্যেই মানুষ বিদেশে যায় না। কেউ কেউ স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যান। আবার কেউ কেউ কাজ করতে, কেউবা আবার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান।
কিন্তু পাসপোর্ট এ যদি একবার ভুল হয়ে যায় তাহলে আর যাওয়া সম্ভব হবে না।
সর্বপ্রথম কোনটা ঠিক করা জরুরি?
জন্মনিবন্ধন কার্ড এবং ভোটার আইডি কার্ড
পাসপোর্ট করতে গেলে আপনাকে জন্মনিবন্ধন কার্ড বা ভোটার আইডি কার্ড দেখিয়ে ফর্ম পূরনের কাজের জন্য শো করতে হবে। অনেকের একটার সাথে আরেকটার মিল নেই। অর্থাৎ জন্মনিবন্ধনে বয়স একরকম দেয়া আবার ভোটার আইডি কার্ডের বয়স অন্যরকম দেয়া।
অতঃপর পাসপোর্ট করার সময় এই ভিন্ন বয়স বা বাবা মায়ের নামের ভিন্নতা যেমন ধরুন এন আইডি তে মায়ের নামের আগে টাইটেল দেয়া নেই জন্মনিবন্ধন কার্ডে টাইটেল দেয়া আছে।
আপনার নামের বেলাও এমন ভুল রয়েছে। তাহলে আপনি কি করবেন? এই ভুল কার্ড দেখিয়ে পাসপোর্ট করতে দিয়ে দিবেন?
না এমনটা কখনো করবেন না। কারণ, এই ভুলটা আপনার কাছে সামান্য মনে হতে পারে কিন্তু এই ছোট্ট ভুল আপনার সারাজীবনের জন্য ভোগান্তিকর হবে।
একবার পাসপোর্ট ভুল হলে আর কখনো ভিসা লাগার সম্ভাবনা নেই। তাই পাসপোর্ট করার সময় আপনার সঠিক পরিচয় সম্বলিত কার্ড দেখিয়ে পাসপোর্ট করুন।
কোনো দালালের মাধ্যম বেছে নিবেন না
অনেকে আছেন দালাল, ফড়িয়াদের মাধ্যমে পাসপোর্ট এর কাজ শুরু করেন। যার দরুন পাসপোর্ট এ ভুল হয়ে যায় আবার টাকাও বেশি লাগে।
অন্যদিকে নিজে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন থেকে দূরে সরে যেতে হয়। আপনার পাসপোর্ট আপনি নিজে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে করার চেষ্টা করুন। সব জেনে বুঝে পাসপোর্ট করুন।
দালাল, ফড়িয়াদের মাধ্যমে করে টাকা বেশি দিয়ে ভুল পাসপোর্ট করাবেন না। তাহলে পরবর্তী ভিসার জন্য আবেদন করে ভিসা না পেলে আপনার বিদেশে নানাকাজের স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাবে।
পাসপোর্ট করার জন্য ফর্ম ফিল আপ করার আগে যেগুলো ভাল করে দেখে নিবেন
আপনার নাম ও ঠিকানা
আপনার ভোটার আইডি কার্ডের সাথে মিল রেখে নামের ঘর পূরণ করুন। ১৮ বছরের কম হলে জন্মনিবন্ধনের সাথে মিল রেখে পাসপোর্ট এর নাম ঠিকানার ঘর পূরণ করুন।
আপনার সার্টিফিকেট নামও একই থাকে যেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। না হলে আপনি স্কলারশিপ বা অন্যান্য কাজে সার্টিফিকেট এর কপি দেখানো লাগলে তখন আপনার ভিসা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না।
আবার অনেকে পাসপোর্ট করা হয়ে যাওয়ার পরও জন্মনিবন্ধন বা এন আইডি কার্ডের নাম ঠিকানা পরিবর্তন করতে চান। কিন্তু নাহ, মনে রাখবেন একবার পাসপোর্ট করা হয়ে গেলে আপনি আপনার পূর্ববর্তী কোনো কার্ড আর সংশোধন, পরিবর্তন করবেন না।
কারণ বিদেশে যাওয়ার জন্য যখন ভিসার আবেদন করবেন তখন পাসপোর্ট এর সাথে আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মিল না থাকার কারনে ভিসা পাবেন না।
এছাড়াও আপনি একবার পাসপোর্ট করে ফেললে পরবর্তীতে সংশোধন করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে। তাছাড়া এখন নানা কারনে সরকার পাসপোর্ট সংশোধনী বন্ধ করে রেখেছেন।
আপনি যদি দূর্ভাগ্যবশত ভুল নাম ঠিকানা, জন্ম তারিখ দিয়ে পাসপোর্ট করে ফেলেন এবং পরবর্তীতে পাসপোর্ট এর মেয়াদ শেষ হলে আপনি আর রিনিউ না করে ভাবলেন যে আপনি নতুন আরেকটি পাসপোর্ট করবেন আগেরটা বাদ দিয়ে।
সেক্ষেত্রে আপনি নতুন পাসপোর্ট আর করতে পারবেন না।
আপনি পূর্ববর্তী পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য থানায় জিডি করতে হবে এবং একটি একটি করে ঠিক করতে হবে যদি একাধিক ভুল থাকে।
আরেক যদি সব বাদ দিয়ে নতুন পাসপোর্ট করতে যান তাহলে আপনার ফিংগারের ছাপের কারনে আপনি ধরা পড়ে যাবেন আপনার পূর্বে আরেকটি পাসপোর্ট আছে বা ছিল। তাই পাসপোর্ট করার সময় অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ব্যাংক একাউন্টের এর তথ্য
পাসপোর্ট এর ফর্ম পূরন বা ফর্ম ফিল আপের সময় বা পাসপোর্ট করার সময় ব্যাংক একাউন্টের তথ্য লাগে না তবে পাসপোর্ট করার পর যখন আপনি ভিসার জন্য আবেদন করবেন তখন ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর কপি জমা দিতে হয়।
এক এক দেশ ভেদে ব্যাংক স্টেটমেন্ট এ টাকার পরিমাণ ভিন্ন দেখাতে হয়। বিশেষ করে সর্বনিম্ন ২৫,০০০ টাকার উপরে মাথা প্রতি টাকার পরিমান দেখাতে হয় ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর কপিতে।
তখন যদি আপনার ব্যাংক একাউন্টে নাম ঠিকানা পাসপোর্ট এর সাথে মিল না থাকে তাহলে ভিসা পাওয়া যাবে না।
পরিশেষে এটাই বলতে চাই, পাসপোর্ট করার সময় অধিক সতর্কতার সাথে পাসপোর্ট করতে দেবেন। সব তথ্য বারবার চেক করে নিবেন কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে কিনা? কোনো তথ্যের সাথে অমিল আছে কিনা? ইত্যাদি বিষয় এবং সব জায়গায় একই তথ্য ব্যবহার করবেন।
তো সুপ্রিয় পাঠকগণ, এই ছিল আমাদের পাসপোর্ট সম্পর্কিত আজকের পরামর্শ। আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনাদের উপকার হবে এবং নির্ভুলভাবে পাসপোর্ট করতে সহায়ক হবে এবং বিদেশ ভ্রমনে থাকবে না আর কোনো বাধা।
খুব শীঘ্রই আসব পরবর্তী পোস্টে নতুন কিছু নিয়ে। কোনো কিছু জানার থাকলে অবশ্যই মন্তব্য করতে পারেন কমেন্ট সেকশনে। সাথেই থাকুন।
শুভকামনা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি সুপ্রিয় পাঠকগণ।