বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ৪টি ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ সম্পর্কে জেনে নিন
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যাবতীয় সকল কর্মকান্ড প্রায় অনলাইনেই সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু যে সকল মাধ্যমে আমরা এসব কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেছি, সেগুলোর সম্বন্ধে বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা নেই। তাই আজকের পোস্টে আপনাদের এসব বিষয়ে জানাতে এলাম।

দিন বদলের সাথে সাথে মানুষের কর্মপদ্ধতিতে এসেছে পরিবর্তন। আগে কারো সাথে দেখা বা মিটিং করতে হলে আমরা যত দূরেই থাকিনা কেন সামনাসামনি গিয়ে দেখা বা মিটিং করতে হত। কিন্তু এখন প্রযুক্তির কল্যানে যে যেখানেই অবস্থান করুক না কেন ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে যে কারও সাথে মিটিং বা চ্যাটিং সম্ভব হচ্ছে। প্রযুক্তি আমাদের পথের দুরত্ব যেমন কমিয়ে দিয়েছে তেমনি কাজের সুবিধা বাড়িয়ে দিয়েছে হাজারগুন। এসব ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ এ ৪ জন থেকে একসাথে ১০০০ মানুষ একসাথে মিটিং এ অংশ নিতে পারে।
বর্তমান করোনা মহামারীকালীন সময়ে বিভিন্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রম, কোম্পানি মিটিং এমনকি রাষ্টীয় সেমিনার, বিভিন্ন দেশের সাথে বানিজ্য চুক্তিও হচ্ছে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে। এক্ষেত্রে আপনার ফোন বা ল্যাপটপে উক্ত অ্যাপ ইন্সটল থাকতে হবে এবং খুব দ্রুতগতির ডেটা কানেকশন অথবা ব্রডব্যান কানেকশন থাকতে হবে। ইন্টারনেট এর গতির উপর ভিডিও কোয়ালিটি নির্ভর করে অনেকটাই।
যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, মেসেঞ্জার অ্যাপ এর কথা তারা সবাই জানেন, যে মেসেঞ্জার দিয়ে ভিডিও কল করা যায়, যেকোন দেশেই করা যায়। এরজন্য ফোনে ম্যাসেঞ্জার এবং ডেটা কানেকশন থাকলেই চলে। আর ডেটা ও বেশী খরচ হয়না। কিন্তু ম্যাসেঞ্জার এর ভিডিও কলের কোয়ালিটি সবসময় ভাল হয়না। আজ আমরা ৪ টি ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ সম্পর্কে জানব যা বর্তমান সময়ে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
১. গুগল ডুও
গুগল ডুও গুগলের তৈরি নতুন একটি ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ। বর্তমানে আমাদের দেশে অ্যাপটি খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, কারন অ্যাপটিতে ভিডিও কলের কোয়ালিটি খুবই ভাল। এটা খুব সহজেই গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন, এটা ব্যবহারের জন্য কোন প্রিমিয়াম চার্জ নেই। অ্যাপটি ব্যবহার করতে হলে ফোন নাম্বার দিয়ে একাউন্ট করতে হবে, যেটা হোয়াটসঅ্যাপ এর মতই।
আপনি অ্যাপ ইন্সটল করার পর আপনার কন্ট্যাক্ট লিস্টের কারা কারা অ্যাপ ব্যবহার করছে জানতে পারবেন। চাইলে বন্ধুদের ইনভাইট করতে পারেন, যেহেতু অ্যাপটির কোয়ালিটি ভাল তাই এটা ব্যবহারের জন্য বন্ধুদের সাজেস্ট করতেই পারেন। গুগল ডুও এর চমৎকার একটি ফিচার রয়েছে তা হল, নক নক ফিচার! এর মাধ্যমে কল ধরার আগেই জানতে পারবেন কে আপনাকে কল করছে।
এটাই অ্যাপটির সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয়। আর এই ফিচারটি আপনাকে কষ্ট করে চালু করে নিতে হবে না, বাই ডিফল্ট চালু করাই থাকে। তো প্রিয় পাঠক চাইলে ভিডিও কনফারেন্সিং এ চমৎকার অভিজ্ঞতা পেতে আজই অ্যাপটি ডাউনলোড করতে পারেন।
২. জুম
বর্তমান সময়ে ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ হিসেবে জুমের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ করোনা মহামারীতে এর ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। গুগল প্লে স্টোর জুম ক্লাউড মিটিংস নামে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন। এরপর লগইন করুন, চাইলে গুগল বা ফেসবুক আইডি দিয়ে লগইন করতে পারেন।
জুম এ ভিডিও কোয়ালিটি ভাল, এবং একসাথে ১০০ জন অ্যাপ এর মাধ্যমে মিটিং করতে পারেন। রয়েছে মিটিং রেকর্ড এবং রেইজ হ্যান্ডের সুবিধা। হোস্ট মিটিং এ জয়েন না করলেও মিটিং শুরু করতে পারবেন। আপনাকে মিটিং এ জয়েন করতে হলে মিটিং আইডি ও আইডি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। চাইলে মিটিং চলাকালীন অন্যদের মিটিং এ জয়েন করানো সম্ভব।
জুমের প্রিমিয়াম ভার্সনে ভিডিও কলের আরও চমৎকার ফিচারগুলো পাবেন। তবে ফ্রি ভার্সনে একটানা ৪০ মিনিট মিটিং কন্টিনিউ করতে পারবেন, এরপর আবার পুনরায় জয়েন দিতে হবে। অ্যাপটির একটি অসুবিধা হচ্ছে এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরালো নয়। এবং প্রিমিয়াম ভার্সনের মূল্য সাধারন মানুষের জন্য কিছুটা বেশী। তবে আশা করা যায় এ সমস্যার খুব দ্রুত সমাধান আসবে।
৩. গুগল মিট
গুগল মিট সারাবিশ্বে জনপ্রিয় একটি ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ। বলা যেতে পারে বর্তমানে সবচেয়ে বেশী মানুষ ভিডিও কনফারেন্সিং এর জন্য এই অ্যাপটি ব্যবহার করছেন। এটার প্রস্তুতকারী গুগল এবং এর কোয়ালিটি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা চমৎকার। আগে অ্যাপটি অন্য নামে প্রচলিত ছিল, তখন ব্যবহার করতে হলে গুগল একাউন্ট এবং প্রিমিয়াম ভার্সনে ব্যবহার করতে হত।
কিন্তু বর্তমানে গুগল গ্রাহক সুবিধার কথা মাথায় রেখে অ্যাপটি বিনামূল্যে ব্যবহারের সুবিধা প্রদান করছে। শুধু অ্যাপটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে এতে একাউন্ট করে নিলেই ডেটা কানেকশন থাকলে অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন।
গুগল মিট দিয়ে সর্বনিম্ন ২ জন থেকে সর্বোচ্চ ১০০ জন ভিডিও কল এ অংশগ্রহন করতে পারেন। রয়েছে স্ক্রিন শেয়ারিং সুবিধা। অ্যাপটি ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, মোবাইল এবং আইফোন এ ব্যবহার করতে পারবেন। ভিডিও কলে চমৎকার এক্সপিরিয়েন্স পেতে অ্যাপটি ডাউনলোড করতে পারেন।
৪. মাইক্রোসফট টিম
মাইক্রোসফট টিম আরেকটি অন্যতম ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ যার সাহায্যে যেকোন স্থান থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং করতে পারবেন। এই অ্যাপটির জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা দুই কোটি অতিক্রম করেছে। অ্যাপটির একটি চমৎকার ফিচার হচ্ছে চারপাশের নয়েজ বা বাড়তি শব্দ দূর করতে পারে। যাতে উভয় পাশের ব্যক্তিরাই ভাল কোয়ালিটিতে টিম মিটিং করতে পারেন।
এতে রয়েছে কিছু চমৎকার ফিচার যা অন্যান্য অ্যাপ এর চেয়ে একে আলাদা করেছে৷ যেমন হোয়াইট বোর্ড সুবিধা, কোন কিছু কাউকে মিটিং চলাকালীন একে বা লিখে বোঝানোর জন্য, রয়েছে এটেন্ডেন্স লিস্ট ডাউনলোড সুবিধা যাতে বোঝা যায় মিটিং এ কারা কারা উপস্থিত ছিল। তাই আপনি চাইলে এই অ্যাপটির মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সিং করতে পারেন। আশা করি আপনার ভাল লাগবে।
উপসংহার
প্রযুক্তি আমাদের কাজের গতি এবং সম্ভাবনাকে দিন দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখন আর মহামারীতেও ব্যবসা বানিজ্য থেমে নেই, থেমে নেই অন্যদের সাথে যোগাযোগ, আমরা বাড়ি বসে অফিসের কাজসহ সকল ধরনের কাজই করছি ইনারনেটের মাধ্যমে। ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপগুলো আমাদের কাজ করার সুবিধা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুনে।
একসাথে এত মানুষ সরাসরি মিটিং এর খরচ বা আয়োজনে সময় এবং অর্থ দুইই সাশ্রয় করেছে। এছাড়াও ফাইল শেয়ারিং, রেইজ হ্যান্ড, হোয়াইট বোর্ড অপশনগুলো দ্বারা সামনাসামনি মিটিং এর আমেজ এনে দিয়েছে৷ যদিও অ্যাপগুলোতে নিরাপত্তা সহ কিছু সমস্যা এখনো রয়েছে, তবে খুব দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা যায়। এছাড়া নিজেরা সতর্ক থাকলে অসুবিধা এড়ানো সম্ভব হবে৷
আশা করি ভিডিও কনফারেন্স বিষয়ক পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে। এ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন বা মতামত দেওয়ার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা আপনার মতামত গুরুত্বসহকারে নিয়ে অবশ্যই দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।