বিশ্বের সবচেয়ে বড় ৩টি ই-কমার্স সাইটের ইতিহাস জানুন
বর্তমানের এই নতুন পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে ইলেকট্রনিক কর্মাস। ইন্টারনেট ভিত্তিক হাব তৈরী করে পণ্য বা সেবা বিক্রির নতুন এক পদ্ধতি। যার সংক্ষিপ্ত নাম হলো ই-কমার্স অথবা ই-বাণিজ্য। বর্তমান পৃথিবীতে অসংখ্য ই-কমার্স সাইট রয়েছে।

বিংশ শতাব্দির শেষের দিকে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলাতে শুরু করে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন। প্রতিদিন সকালে মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বাজারে যেত।
কিন্তু প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বাজার চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। যেখানে সব কিছু একসাথে পাওয়া যায়। অর্ডার করলে বাজারেও যেতে হয় না। অল্প সময়ের মধ্যে নিজের বাড়িতে পণ্য চলে আসে।
বর্তমানের এই নতুন পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে ইলেকট্রনিক কর্মাস। ইন্টারনেট ভিত্তিক হাব তৈরী করে পণ্য বা সেবা বিক্রির নতুন এক পদ্ধতি। যার সংক্ষিপ্ত নাম হলো ই-কমার্স অথবা ই-বাণিজ্য।
বর্তমান পৃথিবীতে অসংখ্য ই-কমার্স সাইট রয়েছে। যারা বিশ্বব্যাপি তাদের পণ্য ও সেবা প্রদান করছে। কিন্তু আজ কথা বলবো বিশ্বের সবচেয়ে বড় তিনটি ই-কমার্স সাইট তৈরী শুরুর গল্প নিয়ে।
কীভাবে তারা এতবড় প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে নিলো?
এই প্রযুক্তির মাতৃ বা প্রথম প্রতিষ্ঠান হলো অ্যামাজন। এটিই বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স সাইট। এটির বাণিজ্যিক জাল সারা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে গেছে।
১. অ্যামাজন
অ্যামাজন হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি ই-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৪ সালে বই বিক্রি দিয়ে শুরু করে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হিসাবে এখন পরিচিত।
এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান হলেন জেফ বেজোস। এটির বর্তমান মূল্য ৬২.০৬ বিলিয়ন ডলার। এই প্রতিষ্ঠানে কর্মী সংখ্যা এক লক্ষের অধিক।
ইতিহাস
বিশ শতকের শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুবক জেফ বেজোস ইন্টারনেট ভিত্তিক একটি পণ্য বিক্রির সাইট তৈরী করেন। যেখানে তিনি প্রথমে বই বিক্রি করা শুরু করেন।
পরবর্তীতে ধীরে ধীরে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্য থেকে শুরু করে খেলনা, খাবার, আসবাবপত্র, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য ইত্যাদি বিক্রি শুরু হয়।
বর্তমানে পৃথিবীতে এমন কোন পণ্য নেই, যেটা অ্যামাজনে পাওয়া যায় না। অ্যামাজন এখন বিভিন্ন ডিজিটাল পণ্য যেমন সফটওয়্যার, বিভিন্ন মাল্টিমিডিয়া পণ্য, ক্লাউড স্টোরেজ ইত্যাদিও বিক্রি করছে।
নিত্য প্রয়োজনীয় ও ডিজিটাল পণ্যের বাজার ছাড়াও আমাজনের রয়েছে আমাজন মিউজিক, আমাজন গেমস, আমাজন ভিডিও ইত্যাদি নানা ওয়েব সার্ভিস।
‘আমাজন আর্ট’ সেকশনে বিক্রি হয় নানা চিত্রশিল্পীর আঁকা সুন্দর সুন্দর চিত্র। আমাজনের তৈরি কিন্ডল ই-বুক রিডার গোটা বিশ্বেই ব্যাপক জনপ্রিয়।
এছাড়াও আমাজনের বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন ভিত্তিক ওয়েবসাইটে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের বহু ফ্রিল্যান্সাররা উপার্জন করছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।
২. ইবে ইনক
Image Source: bbc.com
ইবে হলো আমেরিকান মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেশন এবং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। এটি ১৯৯৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়।
কোম্পানীর মোট সম্পদের পরিমাণ ১৭.৭৮ বিলিয়ন ডলার। প্রতিষ্ঠাতারা হলেন পিয়ের ওমিদিয়ার, থমাস জে. টাইরনে (চেয়ারম্যান), ডেভিন উইং (সিইও)। এই কোম্পানীর কর্মী সংখ্যা ছত্রিশ হাজারের অধিক।
ইতিহাস
মার্কিন যুবক পিয়েরে ১৯৯৫ সালে কোম্পানীটি প্রতিষ্ঠা করেন। ইবের সদরদপ্তর অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান হোসেতে।
শুরতে অল্প কিছু পণ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও সল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস হিবাসে পরিচিত হয়ে ওঠে।
এই সাইটের ১৯০টি আলাদা আলাদা বাজার রয়েছে। এখানে খুব সহজে পণ্য কেনার পাশাপাশি বিক্রিও করা যায়। বিক্রেতাদের জন্য এখানে আছে বিক্রেতা সেকশন।
এছাড়াও এখানে নিলামের মাধ্যমে পণ্য কেনা বেচার ব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্বের ৩০টি দেশে বর্তমানে ইবে চালু রয়েছে।
৩. আলিবাবা গ্রুপ
Image Source: gadgets.ndtv.com
আলিবাব একটি চীনা বহুজাতিক ই-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৯ সালে জ্যাক মা ও পেং লেই মিলে এটিকে প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পদের পরিমাণ ১১৪.৩২ বিলিয়ন ডলার।
এতে প্রায় সত্তর হাজার কর্মী কাজ করছেন।
ইতিহাস
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ই-কমার্স প্লাটফর্ম হলো আলিবাবা। প্রতিষ্ঠাতা এক সময় ছিলেন একজন ইংরেজি শিক্ষক। নিজের কঠিন পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার পর এটিকে দাঁড় করাতে পেরেছেন।
গত কয়েক বছরে আলিবাবা গ্রুপের ই-কমার্স সাইটগুলোতে পণ্য বিক্রি করে ৪৮৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছে।
২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর কোম্পানিটি ২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের শেয়ার বিক্রি করেছে যা জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুকের থেকেও বেশি।
বিশ্বে ১৯০টি দেশের বিক্রেতাদের পণ্য বিক্রয়ের সুযোগ করে দিয়েছে আলিবাবা গ্রুপ। প্রায় সব ধরনের পণ্যই পাওয়া যায় এসব ওয়েবসাইটে।
তবে এই মার্কেটপ্লেসগুলোতে চীনের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীই বেশি দেখতে পাওয়া যায়। যদিও অন্যান্য দেশের পণ্যসামগ্রীর পরিমাণও এখানে কম নয়।
খুব সস্তায় রকমারি পণ্য পাওয়া যায় বলে আলিবাবা গ্রুপের মার্কেটপ্লেসগুলোর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে আলি এক্সপ্রেস ই-কমার্স সাইটটির বহু ব্যবহারকারী আমাদের দেশেও রয়েছে।
বর্তমানে বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটের পণ্যের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে অনেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। যা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের এক নতুন সেক্টর।
এখানে অনেক তরুণরা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগও পাচ্ছে। ফলে এই ধরনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম মঙ্গলজনক।
আজ এই পর্যন্তই, আপনাদের কাছে অতি শীঘ্রই ফিরে আসবো আবার নতুন কিছু নিয়ে। সেই অবধি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ধন্যবাদ
আরও পড়ুনঃ ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি দুনিয়া নিয়ে আমাদের কিছু ভুল ধারণা