বিশ্বের সেরা ৫জন ক্ষমতাধর ব্যক্তি সম্পর্কে জানুন

মানুষ তার কর্ম দ্বারা নিজেদের অবস্থান পর্যায়ক্রমে শক্ত করে থাকে। এবং একসময় তারাই হয়ে ওঠে বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তি। আর আজ আপনাদেরকে এমনই ৫জন ক্ষমতাধর ব্যক্তি সম্পর্কে জানাবো। তাই লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

বিশ্বের সেরা ৫জন ক্ষমতাধর ব্যক্তি সম্পর্কে জানুন
বিশ্বের সেরা ৫জন ক্ষমতাধর ব্যক্তি সম্পর্কে জানুন

১. শি জিনপিং

 

Image Source: rand.org


জন্ম : ১৫ জুন, ১৯৫৩ (৬৭ বছর)

পদ : গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রপতি

রাজনৈতিক দল : কমিউনিস্ট পার্টি অফ চায়না (সিপিসি)

অন্যান্য দায়িত্ব : কেন্দ্রীয় সামরিক পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, সিপিসির কেন্দ্রীয়, সচিবালয়ের মহাসচিব

চীনের রাষ্ট্রপতি : ২০১২ থেকে বর্তমান

উচ্চশিক্ষা : কিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়

জন্মস্থান : বেইজিং, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন

স্ত্রী : পেং লিউয়ান


বিশ্লেষকরা বলে থাকেন, বিংশ শতাব্দী যদি যুক্তরাষ্ট্রের হয়, একবিংশ শতাব্দী হবে চীনের। বিশ বছর আগেও যে চীনকে মনে হয়নি তারা কখনো সুপার পাওয়ার হতে পারে, সেই চীনই এখন যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিচ্ছে।


বাণিজ্যযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে জবাব দিচ্ছে চীন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ককে অনেকে দ্বিতীয় স্নায়ুযুদ্ধ বলে থাকেন।


চীন যার হাত ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপার পাওয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে, তিনি চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং।


ফোর্বসের তথ্যমতে, শি জিন পিং বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ছয় বছরের মধ্যেই তিনি এই অবস্থানে চলে এসেছেন।


অর্থাৎ, তিনি পেছনে ফেলেছেন ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। শি জিনপিং মাও সে তুং এর পর দ্বিতীয় নেতা, যার আদর্শ ও চিন্তাধারা জীবিত অবস্থায়ই চীনের সংবিধানে লেখা হয়েছে।


২০১৮ সালে চীনের সংসদে প্রেসিডেন্টদের দশ বছর মেয়াদী ক্ষমতায় থাকার আইন তুলে দেয়া হয়। অর্থাৎ, শি জিনপিং এখন আজীবন চীনের প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন।


২. ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিন

 

Image Source: britannica.com


জন্ম : ৭ অক্টোবর ১৯৫২ (বয়স ৬৮) লেনিনগ্রাদ, রুশীয় এসএফএসআর, সোভিয়েত ইউনিয়ন (এখন সেন্ট পিটার্সবার্গ, রাশিয়া)

জাতীয়তা : রাশিয়ান

রাজনৈতিক দল : সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি (১৯৭৫-১৯৯১)

আওয়ার হোম - রাশিয়া (১৯৯৫-৯৯)

ইউনিটি (১৯৯৯-২০০১)

ইন্ডিপেনডেন্ট (১৯৯১–৯৫; ২০০১–০৮)

ইউনাইটেড রাশিয়া (২০০৮-২০১২)

অন্যান্য রাজনৈতিক দল : পিপলস ফ্রন্ট (২০১১-বর্তমান)

বাসস্থান : নভো-অগারইয়োবো, মস্কো, রাশিয়া


গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা হচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর বয়স ৬৮।


রাশিয়ায় অনেক তরুণ ভোটার আছেন, যারা তাদের জীবনে ভ্লাদিমির পুতিন ছাড়া আর কাউকে দেশটির নেতা হিসেবে দেখেননি।


তিনি দেশের বাইরে যুদ্ধ চালিয়েছেন। দেশের ভেতরে পেনশন ব্যবস্থার সংস্কার করেছেন। প্রতিবেশী ইউক্রেনের একটি অংশ দখল করে নিয়ে তিনি রাশিয়ার সীমানা বাড়িয়েছেন।


রাশিয়ার সবচেয়ে বেশি বিক্রির ক্যালেণ্ডারে শোভা পেয়েছে তার ছবি। অন্যদিকে অতি সম্প্রতি তিনি দেশটির সংবিধানে ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তাব করেছেন যাতে ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তন আনা যায়। তারপর এক নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেছেন।


৩. অ্যাঞ্জেলা মার্কেল

 

Image Source: harvard.edu


জন্ম : ১৭ জুলাই ১৯৫৪ (বয়স ৬৬) হ্যামবুর্গ, পশ্চিম জার্মানি

রাজনৈতিক দল : ক্রিসচিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (১৯৯০–বর্তমান)

অন্যান্য রাজনৈতিক দল : ডেমোক্রেটিক এ্যাওকেনিং (১৯৮৯–১৯৯০)

দাম্পত্য সঙ্গী : উলরিশ মের্কেল (১৯৭৭–১৯৮২) ইওয়াখিম জাউয়ার (১৯৯৮–বর্তমান)


অ্যাঞ্জেলা মার্কেল জার্মানের একজন সফল রাষ্ট্রনেতা ও জনপ্রিয় ইউরোপিয় রজনীতিবিদ। জার্মান চ্যান্সেলর মার্কেলই ইউরোপিয় ইউনিয়নের কার্যত নেতা।


বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতি ও সামরিক সুসজ্জিত দেশের চ্যান্সেলর হিসেবে তিনি বিশ্ব রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।


জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী হিসেবে স্বীকৃত। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোর নানা জরিপে বরাবরই তাঁর নাম থাকছে প্রভাবশালী নারী রাজনীতিবিদ হিসেবে। এ বছরও ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী তিনি।


বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতি ও সামরিক সুসজ্জিত দেশের চ্যান্সেলর হিসেবে তিনি বিশ্বরাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।


বিশ্বরাজনীতির পালাবদলে তাঁর দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ এখনো সেলুনে গিয়ে অন্যদের মতো চুল কাটান, কোনো বিশেষ ছাড় তিনি নেন না।


তাঁর ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা, গণমাধ্যমে পারফরম্যান্স বিবেচনা, জার্মানিতে প্রায় ১০ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া এবং তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য আবারও বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর  নারীর তালিকার শীর্ষে তিনি।


সারা বিশ্বে ২০০ কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন বিতরণ করা হবে। এমন ঘোষণায় নতুন করে বৈশ্বিক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল।


জি-২০ দেশগুলোর ‘রিয়াদ সম্মেলনে’ অ্যাঞ্জেলা ঘোষণাটি করেন। বিশ্বব্যাপী করোনা আবির্ভাবের পর থেকে তা সামাল দিতে ও ভ্যাকসিন উন্নয়নে বড় অর্থনীতির ২০টি দেশ (জি-২০) ২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করেছে।


৪. পোপ ফ্রান্সিস

 

Image Source: wikipedia.org


জন্ম নাম : জর্জি মারিও বার্গোগ্লিও

জন্ম : 17 ডিসেম্বর 1936 (বয়স 84)

বুয়েনস আইরেস, আর্জেন্টিনা

জাতীয়তা : আর্জেন্টিনা (ভ্যাটিকান নাগরিকত্ব সহ)

সংজ্ঞা : ক্যাথলিক

বাসস্থান : ডোমাস সান্টে মার্থেই


ফ্রান্সিসের ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনাস আইরেসে জন্মগ্রহণ করেন। রোমান ক্যাথলিক যাজকদের প্রশিক্ষণ কলেজে পড়াশোনা শুরু করার আগে তিনি কিছুদিন রাসায়নিক প্রযুক্তিবিদ ও 'নাইট ক্লাব বাউন্সার' হিসেবে কাজ করেন।


১৯৬৯ সালে ক্যাথলিক পুরোহিত হিসেবে তার অভিষেক হয়। তিনি খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু। বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চের প্রধান তিনি।


পোপ ফ্রান্সিস এমন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব যিনি উদারনৈতিক বিশ্বচেতনার অনুসারী। তাঁর মূল্যবোধ পৃথিবীর সব মানুষকে যুক্ত করে এবং কাউকেই বাদ দেয় না।


২০১৩ সালের ১৩ মার্চ পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ১২০ কোটি ক্যাথলিক খ্রিস্টবিশ্বাসীর সর্বোচ্চ ধর্মগুরু বহুমাত্রিক পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে আসছেন।


তিনি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ তথা দক্ষিণ গোলার্ধের প্রথম পোপ এবং প্রায় ১ হাজার ৩০০ বছরের মধ্যে প্রথম অ-ইউরোপীয় পোপ।


পোপ ফ্রান্সিস বলেন, প্রভুর আজ্ঞা অনুধ্যান করে তোমরা দেখবে। যা পড় তা যেন বিশ্বাস কর। যা বিশ্বাস কর তা শিক্ষা  দাও এবং যা শিক্ষা দাও তা অনুশীলন কর।


৫. ডোনাল্ড জন ট্রাম্প

 

Image Source: usembassy.gov


জন্ম : ১৪ জুন ১৯৪৬ (বয়স ৭৫)

কুইন্স, নিউ ইয়র্ক সিটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

জাতীয়তা : মার্কিন

রাজনৈতিক দল : রিপাবলিকান (২০১২-বর্তমান; ২০০৯-১১; ১৯৮৭-৯৯)

দাম্পত্য সঙ্গী: ইভানা জেলনিকোভা (বি. ১৯৭৭–১৯৯১), মার্লা ম্যাপলস্‌ (বি. ১৯৯৩–১৯৯৯), মেলানিয়া নস (বি. ২০০৫)

পিতা-মাতা : ফ্রেড ট্রাম্প, ম্যারী অ্যানী ম্যাকলিওড

বাসস্থান : ট্রাম্প টাওয়ার, ম্যানহাটন, নিউ ইয়র্ক সিটি, ইউএস

মার-আ-লাগো, পাম বিচ, ফ্লোরিডা, ইউএস


যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম রাষ্ট্রপতি। এ ছাড়াও তিনি একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, বিশিষ্ট সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও লেখক হিসেবে আলোচিত।


তিনি দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের পরিচালক এবং ট্রাম্প এন্টারটেইনমেন্ট রিসোর্টের প্রতিষ্ঠাতা। গোটা বিশ্বের জন্যই বিস্ময়কর ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের মেয়াদকাল।


সেই মেয়াদকালের বাইরেও তাঁর অঘটনগুলো জন্ম দিয়েছে নানা বিতর্ক। কখনো তিনি বিরোধীপক্ষ বা ব্যক্তিকে অবিশ্বাস্যভাবে কাছে টেনেছেন।


আবার আপনজনদের দূরে ঠেলে দিয়েছেন। নানা রকম মন্তব্য করে সবসময়ই আলোচনায় থেকেছেন এই বিদায়ী প্রেসিডেন্ট।


নির্বাচনে হেরে যাওয়ার কথা স্বীকার করতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো গররাজি।  তবে ট্রাম্পের প্রচার শিবির থেকে পরাজয় মেনে নেওয়ার আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।


আজ এই পর্যন্তই! আবারও নতুন কোনো বিষয় নিয়ে আসবো আপনাদের কাছে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ!


আরও পড়ুনঃ হুমায়ুন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক এবং কাল্পনিক হিমু চরিত্র সৃষ্টিকারী