বিশ্ব পরিবেশ দিবস এর শুরুটা কিভাবে হয়েছিল? জানুন তার ইতিহাস
প্রকৃতির অবদান মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ৫ ই জুন "বিশ্ব পরিবেশ দিবস" পালন করার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা। তবে আমরা চাইলে শুধু একটা দিন নয়, সারা বছর এই দিনটি পালন করতে পারি, নিজের মত করে।

আমাদের এই পৃথিবী প্রকৃতির উপর কতটা নির্ভরশীল তা কিন্তু অনেকাংশেই অনেক মানুষ ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিল। এই করোনা কালে বিপদকালীন সামান্য একটু অক্সিজেনের জন্য কত মানুষের প্রাণ গিয়েছে, আর এই অক্সিজেন এর একমাত্র উৎস হল সবুজ গাছপালা। এই করোনা পরিস্থিতিতে প্রকৃতির কদর বেড়েছে অনেকটাই। যারা গাছ লাগানো থেকে দূরে থাকেন তারাও বাঁচার তাগিদে গাছ লাগানোর মত উদ্যোগে হাত লাগিয়েছেন।
তবে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে যুগ যুগ ধরে। প্রতিবছর ৫ জুন পালিত হয় "বিশ্ব পরিবেশ দিবস"। পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং গাছ লাগানোর নতুন পদক্ষেপক উৎসাহিত করতে প্রতিবছর ৫ ই জুন পালিত হয় "বিশ্ব পরিবেশ দিবস"।
প্রকৃতি ও গাছপালার কথা মনে হতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সবুজ আস্তরণ। এই সবুজকে ভালোবাসে না এমন মানুষ মেলা ভার। নিজের ঘরকেও সাজিয়ে তোলেন অনেকেই এই সবুজ গাছপালা দিয়ে। সুন্দর করে নিজের হাতে যত্ন নেন সেই সবুজ গাছপালা কে।
প্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন
১৯৭৪ সালে প্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়। সামুদ্রিক দূষণ, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, মানব জনসংখ্যা, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, এর মত পরিবেশগত বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির স্বার্থে এই "বিশ্ব পরিবেশ দিবস" পালন করা হয়।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস এর মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে পৌঁছানোর জন্য একটি জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম, যে দিনটিতে পরিবেশ রক্ষার্থে প্রতিবছর ১৪৩ টিরও বেশী দেশ অংশগ্রহণ করে থাকে। পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রতিবছর একটি থিম ও ফোরাম সরবরাহ করা হয়।
পরিবেশ দিবসের সূচনা
১৯৬৮ সালের ২০ মে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কাছে সুইডেন সরকার একটি চিঠি পাঠায়। সেই চিঠির বিষয়বস্তু ছিল প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে তাদের অত্যন্ত উদ্বেগের কথা। আর সেই বছরেই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সাধারণ অধিবেশনে আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে স্থান দেয়া হয়।
আর তার পরের বছর থেকে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার পর এই সমস্যার সমাধানের উপায় খুঁজতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সম্মতিতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালে ৫ থেকে ১৬ ই জুন জাতিসংঘ মানব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
আর এই সম্মেলনটি ইতিহাসে প্রথম পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন এর স্বীকৃতি পায়। ১৯৭৩ সালে সম্মেলনের প্রথম দিন অর্থাৎ ৫ জুন এই দিনটিকে "বিশ্ব পরিবেশ দিবস" হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। আর এর ঠিক পরের বছর ১৯৭৪ সালে আমেরিকায়় "অনলি ওয়ান আর্থ" বা "একমাত্র পৃথিবী" এই থিম নিয়ে প্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবস অনুষ্ঠিত হয়।
২০২১ এর পরিবেশ দিবসের থিম
এবছর পরিবেশ দিবসের থিম হলো "বাস্তু তন্ত্রের পুনরুদ্ধার করা", এবারে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি পালন করার জন্য আয়োজক দেশ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানকে। তবে গত বছর ২০২০ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম ছিল "সেলিব্রিটি বায়োডাইভারসিটি"।
বর্তমানে এখন এমন অবস্থা, আগের মতো প্রাকৃতিক পরিবেশ হয়তো ফিরিয়ে আনা যাবে না, সুন্দর সেই স্বচ্ছ সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে হুবহু ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে আমরা প্রকৃতি ও তার সাথে নিজেদেরকে ভালোবসে গাছ লাগাতে পারি কিন্তু।
আমাদের আশেপাশের পরিবেশ থেকে শহর, সবুজ করে তুলতে আমাদের ছোট ছোট পদক্ষেপ কিন্তু অনেকটা ভূমিকা পালন করে। এই করোনাকালের ভয়াল পরিস্থিতিতে একেবারে উদ্বিগ্নের মত না হয়ে, সবাই মিলে সুন্দর একটা উদ্যোগে হাত মেলাতে পারি।
পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব
এই পৃথিবীতে প্রাণ ও মানুষের অস্তিত্বের পিছনে বড় অবদান এই প্রকৃতির। এই প্রকৃতির অবদান সবার মনে আবার নতুন করে জাগিয়ে তোলার জন্য এই দিনটিকে পালন করা হয়ে থাকে। গাছ লাগানোর গুরুত্ব, গাছপালার গুরুত্ব, সবকিছু বোঝার জন্য এই দিনটিকে বিশেষভাবে আয়োজিত করা হয়। এই প্রকৃতি ও পরিবেশ কিভাবে আমাদের সবদিক থেকে রক্ষা করছে তা দেশবাসীকে বোঝানোর জন্য এই দিনটি পালন করা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করা হয়।
আর তাছাড়া আমরা প্রকৃতি থেকে শুধুই নিয়েছি, তাকে ফিরিয়ে দিতে পারিনি কিছুই। তার পরিবর্তে প্রকৃতিকে রক্ষা করা হলো আমাদের বড় কর্তব্য। আর সেই সম্পর্কে সচেতন করা হয় জনসাধারণকে। তবে শুধু জনসাধারণ নয়, এই বিশেষ দিনটিতে বিশেষ ভাবে উদ্যোগ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও চলে বিশেষ আয়োজন।
করোনা আবহে মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে এখনও। তবে এটা শুধু মানুষ নয় প্রকৃতির ওপর এর প্রভাব ফেলেছে দারুণভাবে। লকডাউন এর ফলে যানবাহনের দূষণে থেকে পরিবেশ দূষণ অনেক মাত্রায় কমে গিয়েছে। সেই সুযোগে গাছপালা ও সেজে উঠেছে রঙিন ফল ও ফুলে। তারা যেন প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে দূষণ হীন পরিবেশ থেকে।
গবেষকদের মতামত অনুযায়ী, বিশ্ব এ বেশিরভাগ দেশ এ গত দুই বছর ধরে যানবাহন চলাচল হয়নি। তার ফলে বায়ু দূষণ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা অনেকটাই কমেছে। কিন্তু অন্যদিকে করোনাকালে ব্যবহৃত মাস্ক বা অন্যান্য সামগ্রী যথাস্থানে না ফেলার কারণে পরিবেশ দূষণ হয়েছে।
পরিবেশকে সকলেই খুব ভালোবাসে, কিন্তু এই দৈনন্দিন জীবনে চলতে গেলে অনেক সময় অনেক কিছু পরিবেশের বিরুদ্ধে যেতে হয়, আমরা খেয়াল করলে, একটু যত্ন নিলে, পরিবেশের যত্ন নিতে পারি। সবাই যদি এই উদ্যোগে অংশগ্রহণ করে তাহলে পরিবেশ এর আবার সুন্দরভাবে সেজে উঠতে বেশি দিন লাগবে না।
শুধু পরিবেশ দিবসই কেন! অন্যান্য দিনের মতো পরিবেশের যত্ন নেওয়া যায়, প্রকৃতির অবদান, কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাকে আবার নতুন করে সাজিয়ে, উপহার হিসাবে ফিরিয়ে দেওয়া যেতেই পারে, কি বলেন আপনারা!