বি টি এস : নো বডি টু লেজন্ড - এর শুরুর গল্প

কেনো এতো বিটিএস জনপ্রিয়? কোন বয়সের মানুষ বি টি এস কে পছন্দ করেন? কীভাবে অন্য দেশী ভাষায় গাওয়া গান এতো জনপ্রিয়তা পেলো?

বি টি এস : নো বডি টু লেজন্ড - এর শুরুর গল্প
ফটো গ্রহণ করা হয়েছে parapuan.co থেকে

বি টি এস (BTS)

বি টি এস নিয়ে মানুষের আগ্রহের যেনো অন্ত নেই। অন্য অনেক দেশের মতোই বি টি এস বাংলাদেশে ও অনেক জনপ্রিয়। কীভাবে ছোট্ট একটা বয় ব্যান্ড পুরো বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সেটা কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার।


বি টি এস এর যাত্রা

বি টি এস এর শুরুটা কিন্তু অনেক কঠিন ছিলো। গল্প টা যে রূপকথার গল্পের মতো সাজানো ছিলো তা নয়। ২০১০ সাল। দক্ষিণ কোরিয়ার ছোট্ট একটা কোম্পানি "বিগ হিট এন্টারটেইনমেন্ট " চিন্তা করলো তারা একটা কেপপ ব্যান্ড তৈরি করবে।


এখন ব্যান্ড তৈরি করতে হলে দরকার সদস্য। শুরু হলো অডিশন, একে একে ৭ জন সাধারণ অল্প বয়সী ছেলে নিয়ে শুরু হলো নতুন এই দল বি টি এস। ৭ জন সদস্য হলো কিম নামজুন, কিম সেওকজিন, মিন ইয়ঙ্গি, জো হোসেওক, পার্ক জিমিন, কিম তেহিয়ং, জিওন জাংকুক।


কিম নামজুন : বি টি এস এর প্রথম সদস্য নামজুন। যাকে সবাই র‌্যাপ মনস্টার নামেই চিনে। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় থেকেই নোট বুকের পেছনে র‌্যাপ লিখত।


বাবা মা মনে করলো গানের জন্য নামজুনের পড়ার ক্ষতি হচ্ছে যার কারণে তারা ল্যাপটপের মাইক্রোফোন টাও ভেঙে দিয়েছিলো। পড়ে দেখা গেলো সেই ছেলেটি ক্লাসে ফার্স্ট হয়।


বি টি এস যার জন্য এই পর্যন্ত এসেছে তার অনেক ক্রেডিট এই ছেলেটির। বি টি এস এর লিডার হলো কিম নামজুন।


কিম সেওকজিন : কোরিয়ার ধনী পরিবারের ছোট আদুরে ছেলে ও মাম্মাস বয় কিম সেওকজিন। নামকরা বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে সে স্বপ্ন দেখত একজন অভিনেতা হবে। ভাগ্যের ফেরেই হয়ে গেলো একজন ট্রেইনি এবং ৬ জনের বড় ভাই।


মিন ইয়ংগি : যদি কখনো কোনো শক্ত মনের কঠিন পরিশ্রমী মানুষ দেখতে চান তাহলে বলবো মিন ইয়ংগি হলো তার বড় উদাহরণ। যে সবার কাছে সুগা নামে পরিচিত।


তার সুগা নামের কারণ হলো তার হাসি মিষ্টির মতো চমৎকার। কিন্তু তার এই সুন্দর হাসি সবসময় দেখা যায় না। তার কারণ হলো সুগার অতীত।


সুগা ছিলো একটি গরীব পরিবারের একজন সন্তান। যার স্বপ্ন সে র‌্যাপ গান গাইবে। কিন্তু বাবা মায়ের শাষন গান বাজনা হবে না। তাই সে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। এরপর ডেলিভারি বয় এর কাজ ও করে। অডিশনে চান্স পেয়ে সে হলো একজন ট্রেইনি।


জো হোসেওক : যদি বলা হয় বি টি এস এর বেস্ট ভান্স্ার এর নাম বলতে কোনো দ্বিধা ছাড়াই যার নাম আসবে সে হলো জো হোসেওক বা জে-হোপ


স্কুল এর শিক্ষক তার নাচ দেখে তাকে বলে অডিশন দিতে। তারপর সে দিলো অডিশন তারপর নতুন জার্নি।


পার্ক জিমিন : ছোট বেলায় যেই ছেলেটা কে পাশের বাসার আন্টি রা মোটা, খারাপ চেহারা বলতো সেই ছেলেটি হলো জিমিন। যার গান, নাচ আর লুক এর জন্য মেয়েরা পাগল।


কিম তেহিয়ং : দরিদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে কিম তেহিয়ং। যে ছোটো বেলায় ভাবতো একজন কৃষক হবে। বন্ধু কে সাহায্য করতে সে এসেছিল অডিশন এ।


একজন তাকে দেখে বলে অডিশন দিতে। বাবার থেকে পারমিশন নিয়ে সে অডিশন দেয়। মজার ব্যাপার হলো সেই বার দেগু‌‌ শহর থেকে একমাত্র সিলেক্ট হয় তেহিয়ং যার স্টেজ নাম ভি।


জিওন জাংকুক : লাস্ট বাট নট দা লিস্ট হল বি টি এস এর মাকনে, বি টি এস এর বেবি বলা হয় যাকে তিনি হলো জিওন জাংকুক।


১৫ বছর বয়সে যে যুক্ত হয় বি টি এস দলে। প্রথমে সে একটা অডিশন দিয়েছিলো। যেখানে তাকে বাদ দেয়া হয়। তারপর আরো ৭ টা ছোট বড় কোম্পানির অফার আসে কিন্তু নামজুন কে দেখে জিওন জাংকুক সিদ্ধান্ত নেয় যে সে বিগ হিট এ আসবে।


এই হলো ৭ টা সাধারণ ছেলে। ২০১৩ সালে তারা নো মোর ড্রিম দিয়ে শুরু করে। তখন ২৪ ঘন্টায় ভিউ হয়েছিলো মাত্র ১৩ হাজার। তাঁরা মোটামোটি খুশি।


তারপর তারা শুরু করলো কঠিন পরিশ্রম। দিন রাত তারা পরিশ্রম করেছে। ছোটো একটা রুম এ থাকতো। যেখানে একটাই বাথরুম। টাকা কম থাকায় গ্যারাজ কে বানিয়েছে মিউজিক রেকর্ডিং রুম।


মিউজিক ভিডিও এর জন্য ধার নিয়েছে কোম্পানি ম্যানেজার এর গাড়ি। আমেরিকান শো তে পারফরম্যান্স করার জন্য ফ্রি টিকিট বিক্রি করেছে।


নিজেদের নাম লিখা জামা পড়তো যেনো মানুষ চিনতে পারে । প্রথম ২০০-৩০০ ফ্যান নিয়ে শুরু করেছে। শুনেছে অনেক মানুষের খারাপ কথা কিন্তু তারা হাল ছাড়েনি। সব বাধা পার করে তারা আজকে এই জায়গায়।


তারা প্রমাণ করেছে সময় বদলায়। দুঃখের পরে সুখ আসবেই। সেই ছোট্ট বিগ হিট আজকে বিশাল হাইবি। সেই ১৫, ১৬, ১৭ বছরের নাম না জানা ছেলে গুলো আজকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় বয় ব্যান্ড।


প্রথম ২৪ ঘন্টায় ১৩ হাজার ভিউ থেকে আজকে ২৪ ঘন্টায় ১০১ মিলিয়ন ভিউ পাওয়া তাদের মিউজিক ভিডিও। ১০০ ফ্যান থেকে মিলিয়ন ফ্যান তাদের। দে আর নো বডি টু লেজন্ড।


যাদের কথা না বললে হয়তো শেষ টা হবে না তারা হলো বি টি এস আর্মি। যারা প্রথম থেকে বি টি এস কে সাহস দিয়েছে, আর বি টি এস আর্মি দের দিয়েছে প্রতি নিয়ত খুশি থাকার উপায়।


বি টি এস আর্মি একদম ছোটো থেকে বড় মানুষরাও। মেয়ে ছেলে সবাই। সব বয়সের। অনেকেই বলে ওদের গান কি শুনব ভাষা বুঝি না। ওই গুলা নাচ হলো নাকি। ওরা মেকআপ করে মেয়েদের মতো। ওরা থার্ড জেন্ডার আরো অনেক কিছু।


বি টি এস প্রমাণ করেছে গানের ভাষা হয় না। ভাষা বুঝি না ইউটিউব এ সাব টাইটেল অন করে দেখুন। ওদের ভালো লাগে না ওদের গান এর কালার কোড এ গিয়ে গান শুনো ওদের সাজ, মেকআপ নিয়ে অনেক কথা শুনা যায়।


শুধু ওরা না পৃথিবীর সব নায়ক রা মেকআপ করে। বি টি এস প্রমাণ করেছে সাজার কোনো লিঙ্গ হয় না। আর ওদের নাচ আয়নার সামনে সারাদিন দাঁড়িয়ে ও যদি প্র্যাক্টিস করো তাহলে ওদের মতো নিখুঁত নাচতে পারবেন না।


যারা বি টি এস এর গান শুনে ও তাদের পছন্দ করেন না এটা সম্পূর্ণ আপনাদের ব্যাপার। কারণ সবার পছন্দ এক না। কিন্তু যারা গান না শুনেই বি টি এস হেটার তারা কিছু গান শুনতে পারেন। সাব টাইটেল অন করে শুনবেন।


1. Spring day

2. Life goes on

3. Mikrokosmos

4. Magic Shop

5. Epiphany

6. Permission To Dance

7. You never walk alone

8. Young Forever

9. We are bulletproof pt 1

10. The Stars


আরও পড়ুনঃ বিশ্বের সেরা ৫জন ক্ষমতাধর ব্যক্তি সম্পর্কে জানুন