বৃদ্ধাশ্রমঃ সমাজের বাস্তবিক গল্প
সামাজিক জীবনে অনেক কিছু ঘটে আর এই সমাজের এমন কিছু অংশ নিয়ে তুলে ধরা হয়েছে এই গল্পে।

কৃতি-নূরি শোনো, জীবনটা হলো গভীর সাগর! এখানে ঢেউ থাকবে'ই।
কিছু পাওয়া, না পাওয়া, হারিয়ে যাওয়া নিয়ে স্মৃতিচারণ বাস্তবিক একটি অধ্যায়। নূরি-হুম।
-নিজের যত্ন নিও বুঝলে? আমাদের খোকাখুকি যাই আসুক, তাকে সুস্থ রাখার উপায় কিন্তু তুমি? তাই নো টেনশন, ডু ফূর্তি!
-এই হলো তোমার স্বভাব! কথা পেলে ছাড় নেই।
-আহা! শোনো আমরা ফেলে আসা সব কথা ভাববো, যখন আমাদের কালচে চুলের ফাঁকে ধবল আভাস আসবে। তখন, বুঝলেন ম্যাডাম?
-আচ্ছা গো ক্ষেন্ত দেও ? ঘুম পাচ্ছে।
-হাহাহা! আচ্ছা...
হঠাৎ দরজা ধাক্কা!
-শুনছেন? আর কতখন ঘুমাবেন? অফিসে যেতে হবে তো নাকি!
শালটা গায়ে জড়িয়ে উঠে বসল।
শৈলি (তাঁর পূত্রবঁধূ)
-আজ তো সকালে খেতেও পারলাম না!
জ্বর বাঁধালেন কি করে?
-নিজের খেয়াল রাখতে পারেন না !
-বলছিলাম...
-আপনার সব কথা আপনার ছেলেকে বলবেন, পূর্ণতাকে দেখে রাখবেন। চললাম...
এইদিন দেখার কথা ছিলো? আজ যদি...থাকুক সে কথা!
আকাশ-তোমাকে বলেছিলাম মায়ের ঔষধ শেষ, এনেছিলে ?
শৈলি-আনবোনা কেনো? রাখি বুঝলে বস ডাকছে।
-আচ্ছা শোনো, আমার ফিরতে আর দু'দিন দেড়ি হবে।
-সত্যি!
-খুশি হলে মনে হচ্ছে?
-অদ্ভুত কথা বলো! কত মিস করি তা জানো?
-জানি...
-আচ্ছা রাখছি, ভালোথেকো।
শৈলি-আসবো স্যার? ফিরোজ ইসলাম-আজকাল তুমিও অনুমতি নিচ্ছো ? শৈলি-হাহাহা!
-হাসছো যে?
-খুশির খবর খুশি খুশি না বললে ভালো শোনায়?
-তা কি খবর বলো?
-আকাশ আজকেও ফিরবেনা, অফিসের কাজে আটকা পড়েছে
-বাহ! তাহলে তো হয়ে'ই গেলো? রাতে তাহলে
-তাহলে...(মুচকি হেসে)
-just enjoy darling! just enjoy!
-yes, I'm always ready for you!
কাঁপা কাঁপা হাতে খাবারের থালা হাতে
-পূর্ণতা কোথায়রে তুই? খেয়ে নে...
পূর্ণতা নূরি রহমানের নাতনি, তাঁর বয়স তিনবছর। ভাঙা-ভাঙা কথার শেষ নেই!
পূর্ণতা-মা আসবে কখন? আজকে আমার বেড়াতে ইচ্ছে করছে
-ঠিক আছে খাওয়া শেষ করো তোমার বাবাকে বলবো।
-তাড়াতাড়ি খেয়ে নেই? তাড়াতাড়ি নিয়ে যাবে?
-ঠিক আছে।
নূরি রহমানের মনে পড়ে যায়, ফেলে আসা টুকরো স্মৃতি...এমন'ই ছিলো তাঁর ছেলে আকাশ। এক সময় তাঁর ইচ্ছে জাগলো সমুদ্দুর দেখতে যাবে।
সময়টা শীতের শেষ বসন্তের শুরু...আকাশ
তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ইতোমধ্যে সমুদ্র নিয়ে গল্পও পড়েছে তাই আকাঙ্খা আকাশ ছোঁয়া !
-নূরি শুনছো?
শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এলো...
-বলো কি বলবে?
-আমি ছুটি নিয়েছি,
আগামী চার দিনের জন্য।
-কোথায় যাবে?
-আকাশ বাবা এতোবার করে বলছে, যেনো সমুদ্র দেখাতে নিয়ে যাই।
আকাশ দৌঁড়ে এসে!
-সত্যি বলছো? আমরা সমুদ্র তীরে যাবো! বাবা আমি সারাদিন সাঁতার কাটবো!
নূরি-না বাবা! (কথা শেষ না করতেই)
কৃতি রহমান চোখের ইশারায় না করলেন নূরি চুপ হয়ে গেলো।
আকাশ ওঠ বাবা !
হাত মুখ ধুঁয়ে নাস্তা করে নে ? আট্টায় বাস।
সাতটা বেজে গেছে।
আকাশ হুড়মুড়িয়ে লাফিয়ে উঠল, সময় ৭টাবেজে ৪৫মিনিট...
বাস এসে থামলো, বাসে বসতে'ই ছুটে চলেছে ধুলো জড়ানো পথে...
সাড়ি-সাড়ি গাছ পথের
দু'পাশে, সোনালি আলোর সকাল ফুরফুরে বাতাস।
খুব রোমাঞ্চিত লাগছে!
নানান বিষয়ে কথা বলতে-বলতে হালকা খাবার খেয়ে নিলো।
বাস তখন আপন পথে ছুটেছে...
আকাশ-বাবা আমরা এখন কোথায়?
-আমরা এখন গোমতি কালুর ঘাটে আছি। (ব্রীজে)
-বাবা তুমি কত কিছু জানো! এর আগেও এসেছিলে বুঝি ?
-নারে বাবা সুযোগ হয়নি গুগল ম্যাপে সার্চ করে পেয়েছি।
-কি মজার তাইনা?
-হ্যাঁ।
গোঁধূলির রঙ আকাশ ছুঁয়েছে কালচে পনায়, তখন বাস থামলো।
রিক্সা করে চলে গেলো
"সায়মান বিচ রিসোর্টে"। সেদিন আর ক্লান্ত শরীরে কোথাও যাওয়া হয়নি।
সোনালি আলো ছড়াচ্ছে মিষ্টি আলো, মৃদু বাতাস... সকাল দশটা বেজে গেছে কলাতলি বীচ এ পৌঁচ্ছোতে।
লোকসংখ্যা কম, কয়েজন তরুণ-তরুণী, কিছু ফেরিওয়ালা আর একটি চায়ের দোকান।
যা ছিঁটে ফোঁটা লোকজন তাও যে যার মতো করে ছবি তুলছে, হাঁটছে, কথা বলছে।
কৃতি সাগর পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখছে, বেলাভূমির গায়ে ঝিঁনুক টেউয়ের সাথে তালমিলিয়ে ফুলের কলি সেজে বেলাভূমির গায় এঁটে আছে।
আকাশও ভীষণ খুশি ফটোগ্রাফি করছে আর নূরি দূর দিগন্তে তাকিয়ে...
নূরি-কৃত্রি শুনছো?
-বলো ?
-কি ভাবছো এতো গভীর চাহনি নিয়ে ?
-ভাবছি, এখানে আবার আসবো। এতো নির্জনতায় ঘেরা সৌন্দর্য ভাবা যায়?
-হুম! (কাঁধে মাথা রেখে)
-কপালটা দাও তো?
-নেকামি করছো !
-আহা !
-রাগ করোনা! কপালটা তোমার ঠোঁটের স্পর্শ চাইছে দেখো?
-ভালোবাসি(চুমু খেয়ে)
আকাশ হাজির
-মা বাবা দেখো কি সুন্দর ঝিঁনুক?
-আকাশ তোমার ভালোলেগেছে ?
-হ্যাঁ বাবা, অনেক বেশি!
-বাবা ফিরতে হবে যে?
-এখুনি?
-আবার আসবো। চল...
তোমার খালাবাড়ি যাবো তিনি অপেক্ষা করছেন।
-আসসালামু ওয়ালাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম কেমন অছো বাবা?
-অনেক ভালো আছি
-সবাই ফ্রেশ হয়ে নেও তারপর সব গল্প হবে।
খাবার টেবিলে বসে কতো কথা হলো
নূরি-তিন্নি এখন কিসে পড়ে?
-ভেবেছি আগামী বছর ভর্তি করাব
-তাই ভালো হবে
খাওয়া শেষ গল্প শেষে চলে গেলো শোবার রুমে আকাশ চলো আজ আমাদের সাথে থাকবে। খালা বলছে। ভূতের মন্ত্র লেখক হূমায়ুন আহমেদ এর লিখা মজার গল্প। গল্প শুনে সে কি অট্টহাসি! কেটে গেলো হাসিখুশিতে সে রাত--
-বাসের সিটে বসতে বসতে আকাশের বাবা বললো চলি আবার দেখা হবে।
-আসলেন আর গেলেন
-পরের বার সময় করে আসবো কথা বলতে বলতে বাস ছেড়ে দিল ওরাও হাত নেড়ে বিদায় দিল।
গাড়ি চলছে মেঘনা ব্রীজের ওপর দিয়ে হাস্যজ্জ্বল দিন হাস্যজ্জ্বল সব যাত্রী কেউবা ফোনালাপে ব্যস্ত কেউ বই হাতে...
হঠাৎ খুব শব্দ হলো বাসটার ডানপাশ থেকে ট্রাক চলে গেলো। হাহ-কার আর্তনাথ চিৎকার। বাঁচার তাড়না বাঁচানোর চেষ্টা। চোখ খুলে আবিষ্কার করলো হাসপাতালের ফ্লোরে একটি চাদরের উপর চোখ মেলেও উঠে বসাও যেনো অসাধ্য সাধনের কাজ! হাতে পিঠে পায়ে কাল হয়ে আছে। কোনো রকমে ওঠে বসেছে তাও কষ্টকর। কথা বলতে চাইলেও জোর পাচ্ছেনা। কেউ নেই কথা শোনার মতো। পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে সবাই ব্যস্ত পথে। হঠাৎ মাথায় প্রচন্ড ব্যথা শুরু হলো। কোলাহল চিৎকার সব অসহ্য---
-মা চোখ খুলেছে !
নূরি ঝাপসা চোখে ধীরে ধীরে সব স্পষ্ট দেখতে পেলো। তার বোন পাশে দাঁড়িয়ে, তার দুলাভাই, মেয়ে আর আকাশ। কিন্তু কৃতি কোথাও? উঠে বসতেই
-আরে করছিস কি? ডাক্তার উঠতে মানা করেছে।
-কৃতি কোথায়? তাকে দেখছিনা যে...
-তোকে ভর্তি করিয়ে ঢাকা গিয়েছে খুব দরকারে।
-মা বাবা...
-আকাশ ডাক্তার বেশি কথা বলতে বারণ করেছে।
-হুম।
কিছুদিন পর ঢাকাতে চলে আসে।
-কি ব্যাপার কৃতি কোথায়? তোমরা কথা বলছো না কেনো?
-আকাশ ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে(নূরির বুঝতে বাকি রইলনা)
-মা বাবাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুরো হাসপাতাল তল্লাশি করেছে পায়নি, বাবা ত সাঁতারও জানেনা! -নূরির হৃদয় ভাঙা চিৎকার...!
হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ, হকচকিয়ে উঠেছে! পূর্ণতা ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পরেছে কোলে মাথা রেখে। এলো কে ? হয়ত শেলি...
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত সাড়ে দশটা বেজে গেছে। দরজা খুলতেই দেখে আকাশ দাঁড়িয়ে, হাতে অনেক কিছু হাসি হাসি মুখ !
-বাবা কেমন আছিস ?
ভালো আছি। তোমার জ্বর কমেছে?
-অনেকটা
-শৈলি কোথায় মা ?
-সকাশে বেড়িয়েছে এখনো ফেরেনি হয়তো অফিসে বেশি কাজ পরেছে।
তাই বলে এতো রাত হবার কথা নয়!
আকাশ অনবরত কল করেই যাচ্ছে ফোন সুইচ অফ! বসের ফোনও ধরছেনা। অথচ আজ ভেবেছিল শৈলিকে জন্মদিনের উপহার দিবে... রাতে কেউ ঘুমায়নি পূর্ণতা ছাড়া।