বৃদ্ধ জলপরীর সূক্ষ্ম কৌশল: একটি ভৌতিক গল্প
একটি চালাক জলপুরী চালাকি করে টুম্পা নামে এক কিশোরী মেয়েকে তার জালে বন্দী করে ফেলে এবং ওই কিশোরী মেয়েকে সে পুরির রূপে রূপান্তরিত করে।

গ্রামের পুকুরে এক জলপুরী বাস করত। সে গ্রামেই বসবাস করত টুম্পা নামের এক মেয়ে। তার একটা ছোট ভাই ছিল নাম রাহুল। তার মা তাকে ছোট রেখেই পরপারে পারি জমান।
তার পিতা কৃষি কাজ করতো, কৃষি কাজ করে যা রোযগার করতো তা দিয়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে ভালই চলতে থাকল।
টুম্পার বাবা টুম্পাকে কোন দিন মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি. তিনি বাবা হয়েও ছেলে মেয়েকে মায়ের মতো করে আগলে রাখতেন যাতে সন্তানরা বুঝত না পারে আমাদের মা নেই। টুম্পার বাবা খুব কর্মট ছিল রোয সকাল লাঙ্গল কোদাল নিয়ে বের হয়ে যেত প্রায় সন্ধায় ফিরত।
একদিনের ঘটনা টুম্পার বাবা কৃষি কাজে চলে গেল তার ভাইও বন্ধুদের সাথে খেলার জন্য বের হয়ে গেল। অমনি ঐ বৃদ্ধ জলপুরী পুকুর থেকে উঠে এসে টুম্পাদের বাড়ির কোনে বসে তার মায়ের বলা গান গাইতেছে আর এই টুম্পা এই টুম্পা বলে ডাকতেছে।
টুম্পা ঘর থেকে বের হয়ে দেখে এক বৃদ্ধ বুড়ি বসে আছে কিন্তু কে জানত এই বুড়ি রুপের ভিতরে যে কালো আত্মা বসে আছে।
টুম্পা বলল এই বুড়ি আমার মায়ের গান তুমি কোথায় পেয়েছ যে আমার মায়ের সুরেঁই গাইতেছ? জলপুরী বলল আগেতো জল দাও পরে সব বলছি। এই বলে সে টুম্পাদের ঘরে ডুকে পড়ল। টুম্পা পানি নিয়ে আসল কিন্তু জলপুরী কি আর খাবে জল?
পুরা পানিই হাওয়ায় মিশে গেল। টুম্পা এবার বলল আচ্ছা বুড়ি মা এবার বলতো তুমি কে আমার মায়ের গান পেয়েছ কোথায়।
এবার বুড়ি তাকে আদরের সুরে বলল টুম্পা আমি তোমাদের সবাইকে চিনি তুমি টুম্পা তোমার ভাই রাহুল ততক্ষনে জলপুরী তার আসল চেহারা বের করে বলল টুম্পা তুমি কি জলপুরীর দেশে যেতে চাও?
মা হারা মেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলল জলপুরীর দেশ কোথায় বুড়ি মা। জলপরী বলল তুমি যদি জলপুরীর দেশে যেতে চাও তাহলে আমার সাথে চলো।
নাচতে নাচতে টুম্পা বুড়ির সাথে চলিল কিন্তু কে জানত ঐ অভিশপ্ত দেশ থেকে যে আর ফিরে আসা যাবেনা। বুড়ি বলল তোমাকে একটা কাজ করতে হবে ঐ গাছের নিচে দেখবে একটা সোনার পুতুল আছে। এটা এনে আমার হাতে দাও আমি তোমাকে পুরীর দেশে নিয়ে যাব।
যেই কথা সেই কাজ টুম্পা দৌড়ে গিয়ে পুতুল তুলে বুড়ির হাতে দিল কিন্তু কে জানত আজই টুম্পার শেষ দিন। এটা যে জাদুর পুতুল যা পুরীরা নিজ হাতে তুলতে পারেনা কিন্তু কেউ হাতে নিয়ে কাউকে দিলে রুপ পরিবর্তন হয়ে যায়। যা হওয়ার তাতো হয়েই গেলো।
টুম্পা তৎক্ষনাত পুরীর মত উড়তে শুরু করলো আর এদিকে বুড়ি তার রুপ যৌবন ফিরে পেয়ে চলে গেলো। হয়তো এটাই ছিলো টুম্পার নিয়তি।
এদিকে টুম্পার ভাই ও বাবা বাড়ি ফিরে টুম্পাকে খোজতেছে। কোথাও খুজে না পেয়ে টুম্পা বাড়ি ফিরার আশায় গালে হাত রেখে আকাশ পানে চেয়ে আছে কিন্তু এটা যে বিধাতার লেখা।
মা হারা মেয়েটি কোথায় চলে গেলো কে তাকে লোকমা দিয়ে খাইয়ে দিবে. কে শোনাবে মায়ের গান. কে তাকে গোসল দিয়ে দিবে! এই ভেবে টুম্পার বাবার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়তে পড়তে চোখের কোনে ঘা হয়ে গেল কিন্তু টুম্পার আর ফিরা হল না।
রাহুল বেশ বড় হয়েছে বিয়ে করেছে তার এখন সন্তানও আছে একটাই অভাব কিন্তু সে অভাব কি আর পূরন হবে? টুম্পা কি আর ফিরবে রাহুলের মুখে হাসি ফুটাতে এবং বৃদ্ধ বাবার মুখে হাসি দেখতে।
টুম্পাও পুরীর দেশে চলে গেল সেখানে সে খুবি সুখে ছিল সারাদিন রনে বনে উড়ত রাতে পুরীর দেশে চলে যেত। সে যে একসময় মানুষ ছিল এটা তার মনেই পড়তনা কিন্তু সে মানুষকে খুব ভালবাসতো রাস্তায় কেউ বিপদে পড়লে সে উড়ে এসে উপকার করতো।
কোনদিন সে কাউকে ক্ষতি করেনি অন্যপুরীদের মত। কারন সেওতো মানুষই হয়তো এটা তার মনে পড়েনা।
এভাবেই চলতে থাকল টুম্পার জীবন। একদিন সে গভীর ঘুমে তার মায়ের সাথে কথা বলতেছে তার মা বলল টুম্পা তুই দেশে চলে যা।
টুম্পা: কোন দেশে?
টুম্পার মা: তর মায়ের দেশে যে দেশে মানুষেরা বাস করে...
টুম্পা: আমি মানুষের দেশে যাব কেন আমিতো পরী।
টুম্পার মাঃ তুই মনে করে দেখ ঐ দেশে তর বাবা আছে ভাই আছে। তর বাবা ভিষন অসুস্থ। মনে হয় আর বাচবেনা তুই গিয়ে তর বাবাকে দেখে আয়।ত
এই কথা বলেই তার মা উধাও হয়ে গেল। টুম্পা সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবতে লাগল সত্যিই কি আমার বাবা ও ভাই আছে? এই ভাবতে ভাবতে টুম্পা রওয়ানা হয়ে গেল।
ঐ গাছের নিচে চলে আসল। সেখানে সে তার মায়ের আকৃতির ছায়া দেখতে পেল। ছায়াটি বলতেছে দাঁড়াও আমি পুতুলটা এনে দিচ্ছি এই বলে সে পুতুল টা টুম্পার হাতে দিল সাথে সাথে টুম্পা তার আসল আকৃতিতে ফিরে এলো। ছায়াটিও উধাও। টুম্পার মনে পড়ে গেল আরে আমিতো এক বুড়ির সাথে এখানে এসেছি।
হয়তো বাবা বাড়ি ফিরেছে বাবাকে খাওয়াতে হবে বলে সে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো কিন্তু সে ভাবতে পাড়লনা এর মাঝে যে কয়েক যোগ চলে গেছে।
টুম্পা কি বাড়িতে গিয়ে তার বাবার সাথে দেখা করতে পারবে? কারন সে যে দেরি করে ফেলেছে। টুম্পা বাড়িতে গিয়ে দেখল আগের ঘর বাড়ি আর নেই এখন বড় বড় দালান হয়ে হয়ে গেছে।
সেখানে সে মধ্যবয়সী এক পুরুষকে দেখতে পেল। গিয়ে বলল আমার বাবা ও ভাই কোথায়। লোকটা বলল তোমার বাবা ও ভাই কে। সে বলল আমার ভাই রাহুল এই কথা বলা মাত্রই লোকটা টুম্পাকে বুকে জরিয়ে ধরে বলল টুম্পা বোন আমার তুই এতদিনে ফিরে এসেছিস।
কয়ছিলি এত দিন। টুম্পা বলল আগে বলো বাবা কোথায়। রাহুল বলল বাবাতো আমাদের ছেড়ে মায়ের সাথে দেখা করতে চলে গেছেল। এই কথা শুনা মাত্রই টুম্পা জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।
জ্ঞান ফিরার পর ভাই বোন মিলে সব ঘটনা একে অপরকে বলল। তারপর থেকে ভাইবোন একসাথেই থাকতে শুরু করলো। এভাবেই চলতেছে তাদের জীবন।
আরও পড়ুনঃ ক্যানভাসঃ আমার রঙ তুলিতে তুমি