ব্রণ থেকে বাচার কিছু লাভবান উপায়
ব্রণ অতিপরিচিত একটি চর্মরোগ, যা অধিকাংশ মানুষের জীবনে কোনো না কোনো সময়ে ত্বকে কম-বেশি হয়ে হয়ে থাকে। আবার অনেক মানুষের হয়ও না। ব্রণ বা পিম্পলস বা একিন ভালগারিজ দীর্ঘমেয়াদি দাগ ও উৎপাদনকারী ত্বকের সমস্যা, যা হালকা থেকে গাঢ় হয়ে থাকে এবং মুখমণ্ডলসহ পিঠ, কাঁধ ও বুকের ত্বকেও দেখা দেয়। ব্রণ সাধারণত ১২ বছরের পর এবং ৩০ বছরের আগ পর্যন্ত বেশি দেখা যায়। তবে ৩০ বছরের পরও মাঝে মাঝে অনেক মানুষের ত্বকে ব্রণ হয়, কিন্তু তাদের সংখ্যা খুবই কম।

মুখে গোটা বা ব্রণ হওয়াটা খুবই বিরক্তিকর একটা বিষয়। কিন্তু যখন এই সমস্যা হয়, তখন জীবন অস্বস্তিকর ও অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। বয়ঃসন্ধির সময় তো বটেই নানা বয়সেই এই সমস্যা হতে পারে। লোমকূপের তলায় তৈলনিঃসরণ গ্রন্থি এবং মৃত কোষের জুগলবন্দিতে এই সমস্যা হয়।
ব্রণ বেরোলে অনেকেই দৌড়ান চিকিৎসকের কাছে। আবার অনেকেই দামি ক্রিম বা ওষুধ ব্যবহার করতে শুরু করে দেন। কিন্তু বাড়িতে হাতের কাছেই রয়েছে এমন অনেক ঔষধি উপাদান, যা দিয়ে অতি সহজে সমাধান করা যায় এই সমস্যার। দুই ধরণের ব্রণের চিকিৎসা করা যেতে পারে, তা হলো প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্থায়ী চিকিৎসা।
প্রাথমিক চিকিৎসা
কারো ব্রণ বা গোটা যদি সবেমাত্র শুরু হয় বা প্রাথমিক অবস্থায় হয় তাহলে সরাসরি ডাক্তারে সরাণাপন্ন হয়ে কঠিন চিকিৎসার প্রয়োন নেই। সেক্ষেত্রে আপনি ঘরে বসেই নিজের চিকিৎসা নিজেই করতে পারবেন।
যদি ঘরোয়া টিপস আপনার কোনো কাজে না আসে, তাহলে এর পরবর্তী কঠোর চিকিৎসা নিচের স্টেপে বলা হবে। বলাবাহুল্য যে, শুরুতেই এন্টিবায়োটিকের সাহায্য না নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করুন, এতে অনেকেই সুফল পেয়েছে।
শসা
শসা কেবল খাদ্যগুণই নয়, বরং শসার নানা গুণও রয়েছে। তার মধ্যে একটা হলো ত্বকের কাজে লাগা। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি এবং ই। এর প্রতিটিই ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। শসা থেঁতো করে বা বেটে মুখে লাগিয়ে রাখবেন।
কমপক্ষে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে নিন। এভাবে ১৫-২০ দিন পর্যন্ত চর্চা করলে প্রাথমিকের ব্রণ বা গোটা ভালো হয়ে যায়। এছাড়াও শসাকে অন্যভাবে ব্যবহার করতে পারেন। শসা গোল গোল করে কেটে অন্তত একঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর সেই পানি কিছু খেয়ে নিবেন পারেন, বা ওই পানি দিয়ে মুখও ধুয়ে নিতে পারেন।
টুথপেস্ট
ফেসপ্যাকের মতো করে ব্যবহার করতে পারেন টুথপেস্ট। মুখের অতিরিক্ত তেল টেনে নেওয়ার ক্ষমতা আছে এই পেস্টের। ফলে তৈলাক্ত ত্বকের কারণে যাদের মুখে ব্রণ বা গোটা বের হয়, তারা টুথপেস্ট ব্যবহার করে উপকার পেতে পারেন। তবে বেশি নয়, খুব অল্প পরিমাণে ব্যবহার করুন শুধু ব্রণের জায়গায়। সমস্যা না হলে পরিমাণ বাড়ান।
গ্রিন টি
গ্রিন টি গোটা বা ব্রণের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকরী। গরম পানি দিয়ে গ্রিন টি বানান। তারপর সেই গ্রিন টি একদম ঠাণ্ডা করে ব্রণ বা গোটার জায়গায় ব্যবহার করুন। তুলায় ভিজিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভালো করে ত্বকের ওপর মিশতে পারবে চায়ের মিশ্রণটি। যদি টি ব্যাগ থেকে গ্রিন টি বানান, তাহলে ঠাণ্ডা গ্রিন টি ব্যাগটিও রাখতে পারেন ত্বকের ওপর। মিনিট ২০ রাখার পর ধুয়ে ফেলুন।
অ্যাসপিরিন
অ্যাসপিরিন শুধু মাত্র খাওয়ার ওষুধ হিসেবেই ব্যবহার হয় তা নয়, বরং ব্রণ বা গোটা সারাতেও এই ঔষধের জুড়ি নেই। এতে থাকা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ব্রণকে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে দেয়। চার-পাঁচটা ট্যাবলেট প্রথমে গুঁড়িয়ে নিন।
তারপর সেগুলো অল্প পানির সঙ্গে মেশান। এমনভাবে মেশাবেন, যাতে একটা পেস্ট তৈরি হয়। রাতে শুতে যাওয়ার আগে আক্রান্ত জায়গায় পেস্টগুলো লাগান। সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক খুব স্পর্শকাতর হলে, কয়েক মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে নিতে পারেন।
রসুন
রসুন ব্রণের জন্য এক বিরাট শত্রু। এটি ব্যবহার করাও খুব সহজ। এক-দুই কোয়া রসুন দুই টুকরো করে কেটে নিন। তারপর ব্রণের জায়গায় রসটা লাগান। মিনট পাঁচেক পরে ধুয়ে ফেলুন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে এভাবে করলে পরদিন সকালে ত্বকের উন্নতি টের পাবেন।
লেবুর রস
তুলায় করে লেবুর রস ব্রণের জায়গায় লাগিয়ে নিতে পারেন। লেবুর রসের সঙ্গে দারুচিনির মিশ্রণ তৈরি করে, রাতে শুতে যাওয়ার আগে সেটা ব্রণের ওপর লাগিয়ে রাখতে পারেন। সকালে হালকা উষ্ণ পানিতে ধুয়ে নেবেন। এইভাবে আপনি ১৫-২০ দিন চর্চা করলে ব্রণ চলে যাবে।
প্রাথমিক চিকিৎসায় যদি ব্রণ ভালো না হয় তাহলে কি করণীয়?
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জনেরই ব্রণের সমস্যা ১১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যেই শুরু হয়েছে। এখন আসা যাক ব্রণ আমাদের ত্বকে কীভাবে তৈরি হয়। সেরাম নামক একটি প্রাকৃতিক তেল আমাদের ত্বকের গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়, যা আমাদের ত্বককে শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা করে।
আমাদের লোমকূপে যখন এই সেরাম ও ত্বকের মৃত কোষ জমা হয়, তখন লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়, যা দেখতে কালো রঙের হয়। একে ব্ল্যাকহেডস বলে।
এই ব্ল্যাকহেডস একসময় ফুলে যায় এবং সাদা গুটির মতো তৈরি করে। অনেক সময় প্রোপিওনো ব্যাকটেরিয়ায় একিনস নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণেও ব্রণ ফুলে প্রদাহজনক ক্ষত ও দাগ সৃষ্টি হয়। নানাবিধ কারণে ব্রণ হতে পারে যেমন—অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বক, বংশগত বা হেরডিটারি ফ্যাক্টর, অতিরিক্ত অন্ড্রোজেন হরমোন, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, ঘুম কম হওয়া, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি।
এছাড়া কিছু শারীরিক সমস্যা যেমন—কুশিং সিনড্রম, হাইপোথাইরয়েডিসম, পলিসিসটিক ওভারিয়ান সিন্ড্রম ইত্যাদি কারণে ত্বকে ব্রণ দেখা দিতে পারে। আবার অনেক সময় গর্ভাবস্থায় মহিলাদের হালকা ব্রণ দেখা যায়। কিন্তু এসময় ব্রণের চিকিত্সার জন্য কোনো ওষুধ সেবন বা ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রসবের পর অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্রণ নিজে থেকে সেরে যায়।
তবে ব্রণ ভালো হয়ে যাওয়ার পর ব্রণের দাগ বা গর্ত বা যে ক্ষত তৈরি হয়, তা সৌন্দর্যকে ব্যাহত করে, যা নিয়ে অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। কিন্তু এই মানসিক চিন্তা ব্রণের সমস্যাকে আরো জটিল করে তোলে। তাই যখন ব্রণ হবে, তা নিয়ে চিন্তা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আজকাল ব্রণের অনেক ধরনের ভালো চিকিত্সা রয়েছে। পাশাপাশি লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে ব্রণের দাগ বা ক্ষত অনেক অংশই নিরাময় করা সম্ভব।
যাদের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বক, তাদের ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। তাই ওয়েল কন্ট্রল সাবান বা ফেসওয়াশ দিয়ে সব সময় মুখ পরিষ্কার করতে হবে। চিকিৎসার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান, নিয়মিত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, ধূমপান ত্যাগ করা, ভালো মানের প্রসাধনী ব্যবহার করা, নিয়মিত জীবন যাপনের মাধ্যমে ব্রণের সমস্যা থেকে ত্বককে সুস্থ রাখা সম্ভব।
এখন আসুন কি কারণে ব্রণ হয় , প্রধানত দুই কারণে ব্রণ হয় এক, বয়সন্ধির কারণে , দুই, ব্যাকটেরিয়ার কারণে। এক, বয়সন্ধির কারণে যে ব্রণ হয় তা প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমেই সেরে যায়।
দুই, এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে, যার আধিক্য বেশি থাকে। আমরা যদি দেখি ব্যাকটেরিয়াগুলো রয়েছে, তখন আমরা অ্যান্টিবায়োটিক দেই। আমরা ব্রণকে দুই ভাগে ভাগ করি। একটি হলো, ব্রণ পেকে গেছে, লাল হয়ে রয়েছে, ব্যথা রয়েছে— এ ধরনের। সে ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করি, অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করার জন্য।
আর যেগুলো পাকেনি অথচ শক্ত দানার মতো, একে সাধারণ ভাষায় ব্লেক হেডস বলে। এর জন্য ভিন্ন চিকিৎসা। এখানে অ্যান্টিবায়োটিক না দিয়ে অন্য যেসব চিকিৎসায় ব্লেক হেড সেরে যায় সেগুলো দিতে হবে। সাধারণত ত্বকে লাগানোর ওষুধ দিতে হয়। এগুলো দিয়ে ব্ল্যাক হেডসগুলো আগে সরানোর চেষ্টা করি। তখন দেখা যায়, ব্রণ নিজে থেকে ভালো হয়। তবে এ ক্ষেত্রে আমরা লোকাল অর্থাৎ লাগানোর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে থাকি। সিলিন্ডামাইসিন জাতীয় ওষুধ। এরোথ্রিমাইসিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক আমরা ব্যবহার করে থাকি।
বিঃদঃ এখানে শুধুমাত্র আপনাকে একটা ধারণা দেওয়া হয়েছে , তাই আপনি আরো ভালো চিকিৎসার জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
৪ টি এমন প্রশ্ন যেগুলো করলে মেয়েদের সহজেই ইম্প্রেস করতে পারবেন