ভারতের এই কেল্লাগুলিতে অদ্ভুত কিছু রহস্য আছে যা জানলে অবাক হবেন

এই আর্টিকেলটিতে ভারতের অদ্ভুত দুটো কেল্লা কূম্ভল্গড় এবং রাইসেন দূর্গ নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে যা সম্পর্কে জানলে অবাক হবেন আপনিও।

ভারতের এই কেল্লাগুলিতে অদ্ভুত কিছু রহস্য আছে যা জানলে অবাক হবেন
ফটো গ্রহণ করা হয়েছে viator.com থেকে

ভারতে অবস্থিত বিভিন্ন কেল্লা নিয়ে বিভিন্ন রকমের রহস্য সম্পর্কিত কথা লোকমুখে শোনা যায়। প্রত্যেকটি রহস্য একেকভাবে দর্শনার্থীদের গায়ে কাঁটা দিয়ে দিতে বাধ্য করে।


গত পর্বের একটি আর্টিকেলে ভারতের দুটো দুর্গ সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা হয়েছিল এবং সেই দুর্গের সাথে প্রচলিত থাকা মিথ সম্পর্কেও পাঠকদের ধারণা দেওয়া হয়েছিল।


আজকের আর্টিকেলটিতে থাকছে ভারতের আরও দুটো কেল্লা সম্পর্কে আকর্ষণীয় তথ্য যা চমকে দিবে আপনাকেও।


তো পাঠক, আপনারা তৈরি তো? তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক আজকের আর্টিকেলটিতে কোন দুটো কেল্লা থাকছে এবং এই দুটো কেল্লার আসল কাহিনী কি।


১. কুম্ভলগড় দূর্গ (Kumbhalgarh Fort)

এই কেল্লাটিও ভারতের রাজস্থানে অন্তর্গত যতগুলো কেল্লা রয়েছে তাদের মধ্যে একটি। এই কেল্লাটি সেইকালে নির্মাণ করেছিলেন মহারান কুম্ভ। প্রায় পঞ্চদশ শতকে এই কেল্লাটি নির্মাণ করা হয়েছিল।


অতি সুন্দর ও আকর্ষণীয় কেল্লাটির বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে, চীনের দীর্ঘতম প্রাচীর তথা দ্য গ্রেট ওয়াল অফ চায়নার পর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাচীর হচ্ছে এই কেল্লাটির।


এই কেল্লাতে মহারান কুম্ভ প্রায় তিনশ ষাটটি থেকেও অধিক মন্দির প্রতিস্থাপন করেছিলেন। যার মধ্যে কিনা 300 টি প্রাচীন জৈন ধর্মের মন্দির আর বাকি গুলোর মধ্যে রয়েছে হিন্দুদের বিভিন্ন দেবদেবীর মন্দির।


সেই পঞ্চদশ শতক থেকেই এই কেল্লাটি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে শত্রুরা কখনোই নিজেদের গায়ের শক্তির জোরে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি।


অভেদ্য এই কেল্লাটি ভেদ করা এতটা সহজ নয়। কেল্লাটির সবথেকে উঁচু স্থানে দেখা যায় মন্দির, সাধারণ ঘরবাড়ি এবং মহল তৈরি করতে।


আর আশেপাশের সকল সমতলভূমি যেগুলো দেখা যায় সেগুলোর ব্যবহার ছিল চাষজমির জন্য। বোঝাই যাচ্ছে রাজা কতটা সৌখিন ছিলেন।


বাদ বাকি সমতলভূমি গুলোতে বিভিন্ন জলাধার খনন করে এমন একটি অবস্থা সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন তিনি যে এই কেল্লা সবসময় স্বনির্ভর হয়ে থাকে।


২. রাইসেন দূর্গ (Raisen Fort)

এই কেল্লাটি মধ্যপ্রদেশের ভোপাল জেলায় রাইসেন রাজ্যে অবস্থিত। কেল্লাটি ভোপাল থেকে কম হলেও 25 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।


এখন পর্যন্ত কেল্লাটিকে নিয়ে নানা ধরনের কথা শোনা যায় বলা হয়ে থাকে। এই কেল্লাটির সাথে জড়িয়ে আছে নানা ধরনের রহস্য। যেই রহস্য গুলোর সমাধান এখন পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি।


পরশ পাথরের নাম তো শুনেছেন নিশ্চয়ই আপনারা তাই না? অন্তত এতোটুকু তো জানেন যে পরশপাথরের ছোঁয়ায় সাধারণ পাথর সোনা হয়ে যায়।


সত্যিকারের পরশপাথরের দেখা অনেকেই পাননি। দেখা পাওয়া তো দূরের কথা অনেকেই জানেন না পরশপাথর আসলে দেখতে কেরকম এবং আজও কি এর কোনো এক্সিস্টেন্স আছে কিনা।


তো যাই হোক না কেন, রাইসেন কেল্লাটিকে নিয়ে যত রকমের কথা শোনা যায় তার মধ্যে একটি হচ্ছে এই কেল্লাতে পরশপাথর রয়েছে যা কিনা কেল্লার ভিতরে সংরক্ষিত রয়েছে এবং একে কোন মানুষ রক্ষণাবেক্ষণ করে না। বরং জিনের দ্বারা পাথরটি সংরক্ষণ করা হচ্ছে।


প্রায় 800 বছর পুরনো এই কেল্লাটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত। সম্পূর্ণ কেল্লাটি পাথর দ্বারা নির্মিত। কিভাবে এতগুলো বছর পার হওয়া সত্বেও কেল্লাটি  ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সেটাই দর্শনার্থীদের প্রশ্ন।


লোকমুখে কাহিনী প্রচলিত হয়ে আছে যে এইখানকার যিনি রাজা ছিলেন তার কাছে পরশ পাথর ছিল। তবে এটা কতটুকু সত্য কে জানে।


রাজার কাছে বিদ্যমান পরশপাথরটি কেড়ে নেওয়ার জন্য অনেক ধরনের যুদ্ধই হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজা হেরে যান।


তবুও তার কাছ থেকে পরশপাথর হাতছাড়া হয়ে যায় না। কারণ যুদ্ধের শেষ যতই ঘনিয়ে আসে রাজা বুঝতে পারেন তার পরাজিত নিশ্চিত এবং তখনই সে পরশপাথরটি কেল্লার সামনে থাকা হ্রদে ফেলে দেন।


তারপর থেকেই পরশপাথরের দেখা আজও পাওয়া যায়নি। রাজার সাথেসাথে পরশপাথর চলে যায় অন্য কোথাও। আমরা কি তবে বিশ্বাস করব যে পরশপাথরের অস্তিত্ব আসলেই ছিল এবং এটি কোন রকমের রূপকথা নয়?


যাই হোক না কেন ওখানকার কিছু লোক এখনো বিশ্বাস করে যে কেল্লার ভেতরেই কোন এক দুর্গম জায়গায় একটি জিন আজও পরশপাথরকে পাহারা দিয়ে যাচ্ছে।


কিছু মানুষ সেই জিনের কাছ থেকে পাথর নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত পাগলামি করে যাচ্ছিল। কিন্তু জিন তাদের এই প্রচেষ্টাকে সফল হতে দেয়নি।


শোনা যায় যে, যারাই জিনটির কাছ থেকে এই পাথরটি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য সেই কেল্লায় প্রবেশ করে তারাই নানাভাবে তাদের নিজেদের ব্রেইনের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।


কিছু কিছু মানুষজন তান্ত্রিকদের সহায়তায় জিনকে বশ করে পরশপাথর হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু দুঃখের কথা এটাই কেউ সফল হতে পারেনি।


পরশ পাথরের এই বিষয়টার সত্যতা কতটুকু কে জানে। কোন শিক্ষিত ব্যক্তি এসব কাহিনী তো অবশ্যই বিশ্বাস করবে না।


তবুও রাইসেন রাজ্যে যদি কখনো দর্শনার্থী হিসেবে ভ্রমণ করতে চান তবে সেখানকার লোকমুখে প্রচলিত কথাগুলা শুনে অবাক হতে বাধ্য হবেন।


সুপ্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলটি কেমন লেগেছে আমাদের জানাতে ভুলবেন না।  পরবর্তীতে আপনাদের জন্য নিয়ে হাজির হব আরও দুটো কেল্লা সম্পর্কে দুর্দান্ত তথ্য। ততদিন পর্যন্ত ভালো থাকুন। আজ এখানে  ইতি টানছি ধন্যবাদ।


আরও পড়ুনঃ ভারতের কিছু অদ্ভুত ও রহস্যে ঘেরা কেল্লা যেখানে হয় আদ্ভত কাণ্ড