ভারতের কিছু অদ্ভুত ও রহস্যে ঘেরা কেল্লা, যেখানে হয় আদ্ভত কাণ্ড
ভারতের বিভিন্ন কেল্লা বিদ্যমান। একই সাথে বিদ্যমান কেল্লাগুলোকে নিয়ে গড়ে ওঠা কাহিনি। এখন থেকে পরপর কয়েকটি আর্টিকেলে ভারতের বিভিন্ন কেল্লার রহস্য নিয়ে দূর্দান্ত কিছু তথ্য দেয়া হবে। হ্যাপি রিডিং।

ভারত, এই দেশটি এমন এক দেশ যেখানে ইতিহাসের শেষ নেই। রাজা মহারাজা থেকে শুরু করে ব্রিটিশ সকলেই এই ভারতবর্ষে নিজেদের শাসনকার্য অব্যাহত রেখেছিল।
এই ভারতে পা ফেলার সাথে সাথেই দেখতে পাবেন বিভিন্ন রকমের ঐতিহাসিক নিদর্শন। এক একটি নিদর্শন যতই না মনকাড়া, ততোই রহস্যে ঘেরা।
আজকে আমরা ভারতের এরকমই দুটি কেল্লা সম্পর্কে জানব যেগুলোর সাথে ঐতিহাসিক কাহিনীর সঙ্গে রহস্যের বেড়াজালে আটকে আছে। তাহলে চলুন আমরা দেরি না করে আর্টিকেলটি শুরু করে দেই।
প্রবলগদ দূর্গ (Prabalgad Fort)
Image Source: pune365.com
মানুষ স্বভাবতই অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়। তবে কিছু কিছু মানুষের অ্যাডভেঞ্চার এর প্রতি আসক্ত হওয়ার ব্যাপারটা আকাশচুম্বী। তারা অ্যাডভেঞ্চার করার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় নেমে পড়তে মোটেও ভয় পায় না।
আর সেরকম একটি ঝুঁকিপূর্ণ দুর্গ হচ্ছে প্রবলগদ দূর্গ। এই দুর্গটি ভারতের মহারাষ্ট্র মাথেরান এবং পানবেলের মধ্যে অবস্থিত। দুর্গটি তার অন্তর্গত ভয়ঙ্কর এবং বিপদসংকুল রাস্তাটির জন্য সবথেকে বেশি পরিচিত।
2300 ফুট খাড়া পাহাড়ের মাথায় এই কেল্লাটি অবস্থিত। আন্দাজ করতে পারছেন কি, কতটা ভয়ানক এই দুর্গ? এই দুর্গটিতে প্রাচীনকালে ওঠা সম্ভব না হলেও বর্তমানে পাহাড়ের শিলা কেটে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।
তবুও সেই রাস্তা অনেক বেশী বিপদজনক। এমনকি এখানে রাস্তা পাড়ি দিতে গেলে আপনি কোন রকমের দড়ি কিংবা রেলিং কিছুই পাবেন না।
একবার যদি মনোযোগ ছিন্ন হয়ে যায় কিংবা এক মুহূর্তের জন্য সাবধানতার অভাব হয় আপনার তবে মৃত্যু নিশ্চিত।
যেহেতু এখানে বিদ্যুতের কোন যোগসূত্র নেই তাই সন্ধ্যা হয়ে গেলেই এই দুর্গটি ভয়ঙ্কর এবং রহস্যময় আকৃতিতে নিজেকে উপস্থাপন করে।
যে সকল দর্শনার্থী এই দুর্গ ভ্রমণ করতে চান তারা সকলেই সন্ধ্যার পূর্বে নেমে আসেন। বলা হয়ে থাকে অক্টোবর মাসেতে এখানে সব থেকে বেশি দর্শনার্থী দেখা যায়।
কেননা এই মাসটাই এই দুর্গের চড়ার শ্রেষ্ঠ সময়। অন্যদিকে যখন বর্ষা মৌসুম আসে তখন বৃষ্টির জল, কাদার কারণে রাস্তায় প্রচুর পরিমাণে বিপদসংকুল হয়ে যায়।
বিধায় দর্শনার্থীদের এই রাস্তায় ভ্রমণ করতে দেওয়া হয় না। বর্ষাকালে ভুলক্রমে হলেও কেউ যদি এ বিপদসংকুল রাস্তায় নেমে পড়ে তার জন্য প্রাণের বিনাশ ছাড়া কিছুই অপেক্ষা করে না।
এই কেল্লার উচ্চতা এত বেশী যে আপনি এখানে দাড়িয়ে খুব সহজেই চানদেবী মানিকগড় ইত্যাদি আরো অনেক কেল্লা খুব সহজেই দেখতে পাবেন।
চিত্তরগাড় দূর্গ (Chittorgarh Fort)
Image Source: timesofindia.indiatimes.com
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রাচীন কালের শাসক মহারাজেরা নির্মাণ করে গেছেন বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান। যাদের পদচিহ্ন আজও তাদের তৈরি স্থানগুলোতে লেগে আছে।
ভারতের রাজস্থান জায়গাটিকে আমরা সকলেই চিনি। এটি ভারতের এমন একটি জায়গা যেখানে রয়েছে অনেক ধরনের প্রাচীন ঐতিহাসিক কেল্লা।
এই স্থানে যতগুলো কেল্লা রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম কেল্লা হচ্ছে চিত্তর্গড় কেল্লা। এই কেল্লার সবথেকে বড় বিস্ময় হচ্ছে সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথেই এই কেল্লা হয়ে পড়ে একদম শুনশান, জনমানবহীন।
একটা প্রাণের সাড়াও পাওয়া যায় না। এই কেল্লা সম্পর্কে কিছু মিথ রয়েছে যেগুলো মানুষ প্রাচীনকাল থেকে বিশ্বাস করে আসছেন।
আর এমনই একটি মিথ হলো, দীপাবলির সময় মাঝরাতে এই কেল্লায় যত রকমের প্রেতাত্মার আনাগোনা দেখা দেয়। যেখানে ভারতের বিভিন্ন যুদ্ধে শহীদ হওয়া রাজা মহারাজা সৈন্য-সামন্ত সকলেই হাজির হয়।
শুধুমাত্র এরকম একটি মিথ প্রচলন থাকার কারণে প্রায় সারাবছরই অনেক দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এই দুর্গ দেখার জন্য ভারতের রাজস্থানে ছুটে চলে আসে।
তবে এই কেল্লার সৌন্দর্য বিদেশিদেরও কম আকৃষ্ট করে তা নয়। এতই বেশি সৌন্দর্য দিয়ে ঘেরা এই কেল্লা যে এর প্রত্যেকটা অংশ দেখার জন্য দর্শনার্থীরা ভিড় করে থাকে।
এই কেল্লার ভেতরেই এমন এক অদ্ভুত জায়গা রয়েছে যেটা সম্বন্ধে শুনলে আপনিও সাহস দেখাবেন না এখানে যাওয়ার। জায়গাটার নাম হলো জহুর কুন্ড।
এই জহুর কুন্দের ভেতর মানুষ যাবে তা চিন্তা করতেই রীতিমতো হাত-পা কেপে উঠে সবার। আজ পর্যন্ত যারা এই জায়গাটিতে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তারা কেউই শেষপর্যন্ত সফল হতে পারেনি।
অনেকটা হন্টেড প্লেস এ যা হয় তাই আর কি। নেতিবাচক শক্তিতে বিশ্বাস করে থাকলে আপনার প্রতি অনুরোধ থাকল কখনো এই কেল্লা পরিদর্শন করতে গেলেও এই জহুর কুন্দের আশেপাশে যাবেন না।
রানী পদ্মাবতীকে কে না চেনে? তিনি এই চিত্তর্গড় কেল্লার জহুর কুন্দে আত্মত্যাগ করেছিলেন। আপনার মনে প্রশ্ন হতে পারে জওহর কুন্দ কেন সবথেকে বেশি হন্টেড প্লেস?
আসলে সেইকালে জহুর কোন ছিল সতীদাহ প্রথার মত এক নির্মম সংস্কৃতির সাক্ষী। সেইকালে রাজারা যখন কোনো যুদ্ধে শহীদ হয়ে পরাজয় বরণ করতেন তখন সেই রাজমহলের প্রত্যেক স্ত্রীরা নিজেদের মান সম্মান বাঁচানোর জন্য এই জোহর কুন্দে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতেন।
রানী পদ্মাবতীও এভাবে একই কারণে নিজের সম্মান বাঁচানোর কারণে জহুরে লাভ দিয়েছিলেন এবং তিনি যে স্থানে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন সেই রাস্তা আজও প্রচুর বিপদসংকুল হয়ে থাকে। আজ পর্যন্ত যারা সেই রাস্তাটি ভ্রমণের জন্য ছিল তারা বেশ নেতিবাচক অনুভূতির কথা বিবৃতি করেছেন।
তারপর বলুন প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলটি ইন্টারেস্টিং লেগেছে কি? আপনাদের জন্য আরো কয়েকটি ভারতের রহস্যময় কেল্লা সম্পর্কে লেখা প্রকাশ করা হবে খুব শীঘ্রই। ততদিন পর্যন্ত ধৈর্য ধরুন ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন ধন্যবাদ।
আরও পড়ুনঃ মুসোলিনির ফ্যাসিবাদ থেকে ইতালির স্বৈরশাসক হয়ে ওঠার গল্প