ভারতের রাজস্থান ও হায়দারাবাদের যত অদ্ভুত কেল্লায় লুকিয়ে আছে রহস্য

ভারতের একুল অকুল সর্বত্র ছড়িয়ে আছে ইতিহাসের চিহ্ন। সেই ইতিহাসের সাথেই আবার মাখামাখি হয়ে দাঁড়িয়েছে রহস্য এবং গা ছমছম করা মিথ। এই আর্টিকেলটি এরকমই দুটো ভারতের ঐতিহাসিক কেল্লা নিয়ে লেখা হয়েছে।

ভারতের রাজস্থান ও হায়দারাবাদের যত অদ্ভুত কেল্লায় লুকিয়ে আছে রহস্য
ভারতের রাজস্থান ও হায়দারাবাদের যত অদ্ভুত কেল্লয় লুকিয়ে আছে রহস্য

গত দুটি পর্বে ভারতের চারটি অদ্ভুত কেল্লা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখা প্রকাশিত হয়েছিল। আজকের আর্টিকেলটিতে আরো দুটো অসাধারণ এবং রহস্যময় কেল্লা সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা হবে।


তাহলে চলুন, প্রিয় পাঠক আর বেশি ভূমিকা না করে সরাসরি আর্টিকেল এর মূল অংশে প্রবেশ করে ফেলি।


1. আমের ফোর্ট (Amer Fort)

 

Image Source: india.com


ভারতের রাজস্থানের অন্তর্গত আরো একটি কেল্লা নিয়ে কথা বলছি এখন। এটি রাজস্থানের জয়কুর থেকে মাত্র 11 কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।


রাজা মানসিংহ এই কেল্লাটি নির্মাণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত জয়কুরে যতগুলো কেল্লা রয়েছে তার মধ্যে এই আমের ফোর্ট বা আমের কেল্লাকে সবথেকে বেশি জনপ্রিয় মনে করা হয়।


শুধুমাত্র এই অধিক জনপ্রিয়তা পাওয়ার কারণে দেশ-বিদেশ থেকে অনেক সংখ্যক দর্শনার্থী নিয়মিত এই কেল্লা ঘুরে আসেন।


সম্পূর্ণ কেল্লাটি লাল রঙের বেলে পাথর এবং মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি করা যা হিন্দু এবং রাজপুতদের ভাস্কর্যের এক অন্যতম অনিন্দ্যসুন্দর নিদর্শন।


এই কেল্লার সবথেকে সুন্দর বিষয়টি হচ্ছে সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় কেল্লার প্রতিচ্ছবি সামনে থাকা হ্রদে প্রতিফলিত হয়।


সূর্য অস্তমিত যেতে গেলে কেল্লার প্রতিচ্ছবি নানা রঙের হ্রদের জলের ওপর রিফ্লেক্ট করে। বিশ্বাস করুন আর না করুন, সেই রিফ্লেকশন এর দৃশ্যটা এতো বেশি সুন্দর হয়ে যায় যে তা দেখলে যে কারো মন ভরে যাবে।


মনমুগ্ধকর এই কেল্লাটি যদি আপনি বাহিরে থেকে দেখেন তবে আপনার কাছে বেশ সাধারণ কিছু বলে মনে হতে পারে।


কিন্তু আপনি ধীরে ধীরে দুর্গের ভেতরে প্রবেশ করে থাকবেন ততই আপনার ভুল ভাঙতে থাকবেন। ভেতরকার প্রত্যেক শৈল্পিক নিদর্শন, ডিজাইন, রেখা, কারুকাজ সবকিছু আপনার মনে দাগ কাটতে বাধ্য হবে।


আপনি শুধু ভেবে বসবেন এত বছর পূর্বের এই জিনিস কারা করলো কিভাবে করলো ইত্যাদি। এখানে দেখতে পাবেন কেল্লার ভিতরে গেলে অবস্থিত রাজকীয় কায়দায় তৈরি করা জৈন মন্দির মযেটা কিনা সেকালের রাজাদের শৌখিনতার পরিচয় প্রকাশ করার সাথে সাথে ধর্মের প্রতি ভালবাসাটাও প্রকাশ করে।


আরও দেখতে পাবেন শিশমহল। শীশমহল নামের একটি স্থান রয়েছে যেটা কিনা আমের ফোর্টের মূল আকর্ষণ হয়ে থাকে সকল রকমের দর্শনার্থীদের।


আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে কেন এত আকর্ষণ এই শীশমহল। আসলে এর ভেতর কতগুলো দর্পণ ঘর তৈরি করা হয়েছে আর যখনই এই ঘরটার ভেতরে সূর্যের আলো প্রবেশ করে তখন তা কাচের আয়না গুলোর মাধ্যমে ভেতরকার মহলে পৌঁছে যায়।


একবার ভেবে নিন তো দৃশ্যটা কতটা মনোরমার সুন্দর হতে পারে! সূর্যের সোনালী আলোয় সমগ্র মহল যখন ঝকমক করে তখন কার না মন ভালো হয়ে যায়। মূলত এরকম একটা পরিবেশ তৈরি করার জন্যই শিশমহল দর্পণ ঘরের এত আয়োজন।


2. গলকন্ডা দূর্গ (Golconda Fort)

 

Image Source: flynote.com


আপনারা হয়ত ইতোমধ্যে ধারণা পেয়ে গিয়েছেন যে কেল্লা যত বেশি পুরনো হয় ততবেশি এর সাথে রহস্যজনক ঘটনা জড়িয়ে থাকে।


এখন যেই গোলকুণ্ডা কেল্লার কথা বলছি সেটাও বেশ প্রাচীন একটি কেল্লা এবং এর সাথে রয়েছে রহস্যের মাখামাখি সকল ঘটনা।


ভয়ঙ্কর সকল ঘটনাগুলো যেন এই কেল্লাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। যা সম্পর্কের শুনতে গেলেও হাতে পায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।


এই কেল্লার দোতালার যে basement অবস্থিত সেখানে লোকদের মতে, এত বেশি পরিমাণে ধন সম্পদ রয়েছে যা একবার বের করা সম্ভব হলে সমগ্র ভারত ধনী দেশে পরিণত হয়ে যাবে রাতারাতি।


ভারতের হায়দারাবাদ এর পশ্চিম দিকে এই গোলকুণ্ডা কেল্লাটা অবস্থিত। যদিও এর নির্মাণকাল এবং নির্মাতার পরিচয় জানা যায়নি।


ধারণা করা হয় দ্বাদশ শতাব্দীতে এই কেল্লা তৈরি করা হয়েছে এবং এটি পাঁচ তলা বিশিষ্ট যার মধ্যে দুটো তলাই কিনা মাটির নিচে। শুনতে কেমন অদ্ভুত শোনায় না?


এই কেল্লাতে বিভিন্ন রাজবংশের রাজাদের শাসন করার কথা শোনা যায়। বিভিন্ন সময়ে তারা তাদের জমানায় শাসনকার্য চালিয়েছিল।


আগেই বলেছিলাম এই কেল্লার সাথে জড়িয়ে আছে অনেক ধরনের রহস্য। শোনা যায় যে বেশ কিছু বছর আগে এই কেল্লার ইমিডিয়েট পাশে যে গ্রাম ছিল সেখানে এক বিয়ে উপলক্ষে বরযাত্রী এসেছিল।


তারা কেল্লা সম্পর্কে ছিল অজ্ঞার এবং কেল্লা সম্পর্কে জানার পর এখানে ঘুরতে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করে এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই তারা ঘুরতে ঘুরতে এই কেল্লাটির বেজমেন্টের দিকে চলে যায়। তারপর সেই বরযাত্রীদের আর কোথাও দেখা যায়নি।


কোথায় হারিয়ে গেল সেই 50 থেকে 60 জন মানুষ, যারা কিনা শুধুমাত্র বেজমেন্টের ভিতর কৌতূহল মেটানোর জন্য গিয়েছিল।


শোনা যায় যে, এই ধরনের ঘটনা ঘটার পর সেখানে আরো কিছু ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে। ফলে আজ সেই কেল্লার বেজমেন্টে যাওয়ার সকল রকমের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।


দর্শনার্থীদের সেখানে যেতে দেওয়া হয় না। সম্পূর্ণ ধাধার মতো এই কেল্লাতে আপনি প্রবেশ করতে গেলে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন নিজের কাছে।


আর হ্যাঁ যদি কখনো কেল্লার ভিতরে প্রবেশ করতে চান তবে বুঝে শুনে করবেন। কেননা একবার বাইরে বের হওয়ার রাস্তা ভুলে গেলে কখনই কেল্লা থেকে বের হতে পারবেন না।


বিদ্যুৎ এর যোগসুত্র না থাকার কারণে সন্ধ্যারাতে তো কেল্লা ভয়ঙ্কর হয়ে যা-ই এমনকি দিনের বেলাতেও এর ভেতর থাকে প্রচুর অন্ধকার। গুপ্তধনের কথা তো আগেই বলেছি।


লোভে পড়ে যারা এই গুপ্তধন সন্ধান করতে এসেছিল তারা প্রত্যেকেই এমন সব ঘটনার শিকার হয়েছে যা লিখে বলা সম্ভব না।


ঐতিহাসিকদের মতে এই কেল্লাটি প্রচুর পরিমাণে প্রসিদ্ধ এবং ধন-সম্পদে ভরপুর কেল্লা। কিন্তু এর সাথেও জড়িয়ে রয়েছে অতিপ্রাকৃত জিনিসপত্রের নাম।


এই কেল্লাতে যেসকল রাজারা শাসন করে গিয়েছিলেন তাদের কাছে কখনোই ধন-সম্পদের কোন কমতি ছিল না।


আর এ কারণে বিদেশি শক্তিরা কম আক্রমণ করেনি। কেল্লাটির নিচের দুটো তলাতেই গুপ্তধনের সকল রহস্য লুকিয়ে রয়েছে বলে লোকমুখে শোনা যায়।


সুপ্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলটি কেমন লেগেছে জানাতে ভুলবেন না যেন। আজ এখানেই ইতি টানছি, ধন্যবাদ।


আরও পড়ুনঃ ভারতের এই কেল্লাগুলিতে অদ্ভুত কিছু রহস্য আছে যা জানলে অবাক হবেন