ভারতে নিষিদ্ধ WeChat এবং WeMeet App এর ৫ টি বিকল্প অ্যাপ সম্পর্কে জেনে নিন
রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে ভারতে চীনের তৈরি অনেক অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু যেসব ব্যবহারকারীগণ এসব অ্যাপ ব্যবহার করতেন তারা নতুন করে অন্য বিকল্প অ্যাপ নিয়ে বিড়ম্বিত হচ্ছেন। একটি অ্যাপ ব্যবহার করে অভ্যস্ত হলে নতুন বিকল্প এবং সবদিক দিয়ে সুবিধাজনক অ্যাপ খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ বিষ। এর এজন্যই আমাদের আজকের আয়োজন সাজানো হয়েছে উইচ্যাট এবং উইমিটের বিকল্প ৫ টি অ্যাপ সম্পর্কে।

স্মার্টফোনের ব্যাপারে একটি বিষয় নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে মেসেজিং অ্যাপগুলিই স্মার্টফোনের সর্বাধিক ব্যবহৃত অ্যাপগুলির মধ্যে অন্যতম। এই অ্যাপগুলোর মাধ্যমে প্রিয়জনদের সাথে দুরত্ব অনেকটাই কমানো যায়। ইন্সট্যান্ট মেসেজিং, ভিডিও কলিং, স্ক্রিন শেয়ারের মাধ্যমে চাইলেই প্রিয়জনদের অনেকটা কাছাকাছি থাকা সম্ভব হয়। এজন্য আমাদের সবারই রিসেন্ট ইউজড অ্যাপলিস্টে আগে প্রায়শই মেসেজিং অ্যাপগুলোই থাকে। উইচ্যাট এবং উইমিট উভয়ই এখন ভারতে নিষিদ্ধ অ্যাপ।
এজন্য যেসব ব্যবহারহারকারীগণ আগে এই অ্যাপসমূহ ব্যবহার করতেন তারা অবশ্যই এই অ্যাপগুলির বিকল্প খুঁজছেন। একবার কোন একটি অ্যাপ ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তা বাদে অন্য অ্যাপে অভ্যস্ত হতে আসলেই সময় লাগে। আর এই অসুবিধার কথা মাথায় রেখে আপনাকে এমন অ্যাপ বেছে নিতে হবে যা আপনার পরিচিতজনরা ব্যবহার করছেন অথবা যা,সবার জন্যই সুবিধাজনক।
যে অ্যাপের জনপ্রিয়তা, সহজে ব্যবহার সুবিধা, দারুণ ফ্রি ফিচার এবং শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে এমন অ্যাপই বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা উচিত। বিকল্প খুঁজে পেতে আপনাকে অনেক কিছুই বিবেচনা করতে হবে। আর এজন্যই আমাদের আজকের আয়োজন সাজানো হয়েছে উইচ্যাট এবং উইমিটের ৫ টি জনপ্রিয় বিকল্প অ্যাপ নিয়ে। চলুন দেরী না করে জেনে নেওয়া যাক বিকল্প অ্যাপগুলো সম্পর্কে।
ভারতে নিষিদ্ধ উইচ্যাট এবং উইমিট - এর ৫ টি বিকল্প অ্যাপ:
১. হোয়াটসঅ্যাপ
বিশ্বব্যাপী অন্যতম জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ হওয়ায় আপনার বন্ধু-কলিগ সবাই ই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছে। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি টেক্সট মেসেজ (সয়ংক্রিয়ভাবে ডিলিট হবে) ফটো, ডকুমেন্ট, এবং ভয়েস বা ভিডিও কল করতে পারবেন। এই সব ফিচারগুলো সম্পূর্ন বিনা মূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রাহকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে দ্রুত গতিতে নতুন ফিচার চালু করে চলেছে।
যার মধ্যে রয়েছে লোকেশন শেয়ারিং, একাধিক আইডিতে একবারে ব্রডকাস্ট মেসেজ পাঠানো এবং আরও অনেক কিছু। এখন আপনি , আপনার কম্পিউটারেও হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব ব্যবহার করতে পারবেন।
হোয়াটসঅ্যাপ সিকিউরিটি নিয়ে কিছুদিন পূর্বে সমালোচনা শুরু হলেও পরবর্তীতে এ সমস্যার সমাধান হিসেবে কোম্পানি থেকে জানানো হয় যে গ্রাহকদের তথ্যের নিরাপত্তা কখনোই বিঘ্নিত হবে না। তাই আবারও আগের মতই এই অ্যাপের জনপ্রিয়তা বহাল রয়েছে।
২. ভাইবার (অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস)
ভাইবার ইন্সট্যান্ট মেসেজিং এর একটি জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত অ্যাপ। এটি একটি জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ, বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোতে। এটি কয়েক বছর আগে একটি ভিওআইপি অ্যাপ হিসাবে এদের যাত্রা শুরু করেছিল, এই অ্যাপ ব্যবহারকারীদের ব্যবহারকারীদের ভয়েস এবং ভিডিও কল করার ফিচার ছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, নতুন অনেক ফিচার যুক্ত করা হয়েছে।
আপনি এখন ভাইবার গ্রুপ তৈরি করতে পারেন, সাশ্রয়ী মূল্যে ল্যান্ডলাইন কল করতে পারেন, এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সহ অতি-সুরক্ষিত মেসেজিং গ্রুপ তৈরি করতে পারেন, সয়ংক্রিয়ভাবে ডিলিট হয়ে যাবে এমন মেসেজ পাঠাতে পারেন এবং আরও অনেক নতুন ফিচার পাবেন। তাই উইচ্যাটের পরিবর্তে ভাইবার ব্যবহার করলে তেমন কোন পার্থক্য অনুভব করবেন না।
৩. লাইন (অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস)
লাইন আরেকটি চমৎকার মেসেজিং অ্যাপ। এই অ্যাপের সাথে হোয়াটসঅ্যাপ এবং ভাইবারের সাথে বেশ মিল রয়েছে। তবে অন্যান্য ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপের সাথে ফিচারের দিক দিয়ে এবং বৈশিষ্টে লাইন অ্যাপটি কিছুটা আলাদা। লাইন অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোনে ইন্সটল করা যাবে।
যাইহোক, এটি একটু ভিন্ন কোণ থেকে এই পুরো ধারণার দিকে এগিয়ে যায়। আরো স্পষ্টভাবে, লাইন অ্যাপ বন্ধুদের সাথে চ্যাট করার জন্য এবং সর্বশেষ তথ্য আদান-প্রদান করে আপডেটেড থাকার জন্য একটি চমৎকার এপ্লিকেশন। অ্যাপটিকে ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন হিসাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
এর মাধ্যমে আপনি মেসেজ বা ক্ষুদে বার্তা পাঠাতে পারেন, ফটো এবং ডকুমেন্টের মতো সব ধরণের ডেটা, এবং ভয়েস ফাইল পাঠাতে পারবেন এবং ভিডিও কলও করতে পারবেন। যার জন্য ফোনের ব্যালেন্স নয় ডেটা খরচ হবে। লাইন মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে ২০০ জন ব্যক্তির সাথে একসাথে বা একই সময়ে চ্যাট করতে পারবেন।
লাইন অ্যাপের মাধ্যমে আপনি সেলিব্রিটিদের ফলো বা অনুসরণ করতে পারবেন করতে পারেন এবং এক্সটেনশন ব্যবহারের মাধ্যমে অ্যাপের আরও দারুণ সব ফিচারসমূহ উপভোগ করতে পারবেন।
৪. ফেসবুক মেসেঞ্জার
ইন্টারনেট বা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এমন সকলের কাছেই ফেসবুক অতি পরিচিত একটি শব্দ। ফেসবুক ব্যবহারকারী অধিকাংশই মেসেঞ্জার ব্যবহার করে থাকেন। মেসেঞ্জার ফেসবুকের মাধ্যমেই কানেক্ট করা যায়।
ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে ইন্সট্যান্ট চ্যাটিং, ভিডিও কলিং, অডিও কলিং, ভয়েস রেকর্ড, লিংক, বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে অ্যাড করা যায়। যারা গোপনীয়তা পছন্দ করেন তারা সিক্রেট চ্যাট করতে পারেন, কোন আইডি থেকে ম্যাসেজ আসছে তা দেখার জন্য চ্যাট হেড অপশন চালু করতে পারেন।
ম্যাসেঞ্জার আপনাকে অনেক বেশী ফিচার দেবে এবং এর মাধ্যমে অনেক বেশী মানুষের সাথে একইসাথে কানেক্টেড থাকতে পারবেন। কারো মেসেজ যদি ইগনোর করতে চান, বা মিউট করে রাখতে চান, ফেসবুকে ফ্রেন্ড করে রেখে যদি শুধু মেসেঞ্জারে ব্লক দিতে চান তাহলে সেটাও সম্ভব।
এছাড়া স্টিকার, ইমোজি, জিআইএফ, ভয়েস রেকর্ড ইত্যাদি সুবিধা তো থাকছেই। মূলত মেসেঞ্জার হচ্ছে একের ভিতর সব সুবিধার একটি দারূন প্যাকেজ। আর তাই উইচ্যাট এবং উইমিট এর সেরা বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে পারেন ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার। ভারতের পাশাপাশি এশিয়ার দেশগুলোতে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।
আপনার পরিচিত ব্যক্তিদের ম্যাসেঞ্জারে খুঁজে পেতে তাই কোন সমস্যাই ভোগ করতে হবে না আপনাকে। আইওএস এবং এন্ড্রয়েড দুই ধরনের ফোনেই এই অ্যাপটি ইন্সটল করতে পারবেন। এবং তাও আবার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে!
৫. ইনস্টাগ্রাম
ইনস্টাগ্রাম আমাদের সবার কাছেই পরিচিত একটি স্যোশাল মিডিয়া এবং মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম। এটা ফেসবুকের মালিকানাধীন এবং বিশেষভাবে প্রতিদিন স্টাইলিশ ছবি আপলোডের জন্য জনপ্রিয়। এখানে আপনাকে অন্যরা এবং আপনি অন্যদের ফলো বা অনুসরণ করতে পারবেন। যাদেরকে ফলো করবেন তাদের পোস্ট নিয়মিত দেখতে পাবেন।
যাদের অনেক বেশী ফলোয়ার রয়েছে তারা চাইলে বিভিন্ন অনলাইন বিজনেস প্রোমোট করতে পারেন, অথবা বিভিন্ন বিজ্ঞাপন জাতীয় ভিডিও আপলোড করে অর্থ আয় করতে পারেন। ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে ছবি আপলোড, স্টোরি আপলোড ছাড়াও মেসেজিং করতে পারবেন।
ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পাওয়া সহজ আর সেই সাথে মেসেজিং সুবিধা সবসময় আপনাকে ফলোয়ার এবং ফ্রেন্ডসদের সাথে সংযুক্ত রাখতে সাহায্য করে। তাই উইচ্যাট এবং উইমিটের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ইন্সটাগ্রাম এবং সর্বদা নতুন ট্রেন্ডের ছবি এবং ভিডিও আপলোড করে পেতে পারেন প্রচুর ফলোয়ার।
ভারতে ইন্সটাগ্রামের জনপ্রিয়তা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের চেয়ে কম হলেও এখানে নিরাপত্তা বেশী এবং অন্যান্য অসুবিধা অনেক কম।
শেষ কথা
বিভিন্ন নিরাপত্তাজনিত এবং রাজনৈতিক কারণে চীনের বিভিন্ন অ্যাপ ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এসব অ্যাপের ব্যবহারহারকারীগণ চাইলেই খুব সহজে অন্যান্য বিকল্প অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। যদিও প্রাথমিকভাবে ব্যবহৃত অ্যাপ হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে নতুন কোন অ্যাপে অভ্যস্ত হওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
তবে সেই অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই আমরা এমন কিছু অ্যাপ নিয়ে আলোচনা করেছি যা প্রায় সকলের কাছেই পরিচিত, ব্যবহারে সহজ, এবং অধিক ফিচার ও নিরাপত্তা প্রদান করে। এই অ্যাপগুলো আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড সকল ফোনেই ব্যবহার করা যাবে এবং প্লে স্টোর থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে।
আশা করছি উইচ্যাট এবং উইমিটের সেরা বিকল্প হিসেবে এই ৫ টি অ্যাপ আপনাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। সুপ্রিয় পাঠক আর্টিকেলটি পড়ে আপনার মূল্যবান মতামত জানাতে ভুলবেন না। পরবর্তীতে আরও নতুন কোন বিষয় নিয়ে হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।