ভিটামিন সি আমাদের শরীরকে কত ভাবে সুস্থ্য রাখে জেনে রাখা দরকার

প্রতিটি ভিটামিন মানব শরীরে কিছু না কিছু উপকার করে, তাই সমস্ত ফল, সবজী খাওয়া দরকার। সব ভিটামিন একটা ফল বা সবজী তে পাওয়া যায় না। শরীরকে সুস্থ্য রাখতে যেমন সাস্থ্যকর খাবারের প্রয়োজন হয় তেমনি ভিটামিন সি আমাদের শরীরকে কত ভাবে সুস্থ্য থাকতে সাহায্য করে তা হয়তো অনেকেরই অজানা। 

ভিটামিন সি আমাদের শরীরকে কত ভাবে সুস্থ্য রাখে জেনে রাখা দরকার
ভিটামিন সি আমাদের শরীরকে কত ভাবে সুস্থ্য রাখে জেনে রাখা দরকার


ভিটামিন সি সবথেকে নিরাপদ নিউট্রিয়েন্টস ডাক্তাররাও বলে থাকেন। চোখের প্রবলেম, দাঁত, ত্বক, এমনকি শরীরের ভিতর লুকিয়ে থাকা রোগকেও সারাতে পারে ভিটামিন সি। 


প্রথমে জানা যাক শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতির ফলে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে -

খাওয়া দাওয়া তো সবই ঠিক আছে তবুও শরীরের কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় যা থেকে বোঝা যায় যে শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব আছে, কি সেই লক্ষণ -


1.
শরীর এ ক্লান্ত ভাব কিছুতেই কাটবে না, ঝিমিয়ে আসতে থাকবে, হঠাৎ করে বসে থেকে উঠে দাঁড়ালে চোখ এ অন্ধকার নেমে আসবে আর মাথা ঘুরবে।


2.
দাঁত দিয়ে রক্ত পড়বে, ব্রাশ করতে গেলে বেশি রক্ত ঝরবে, আর এমন চলতে থাকলে অসময়ে দাঁত পড়েও যেতে পারে।


3.
চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে আসবে, চোখের স্বাস্থ্য ধীরে ধীরে অবনতির দিকে যাবে।


4.
ত্বকে নানা রকমের সমস্যা দেখা দেবে, ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যাবে।

তাছাড়া মাথা ঘোরা, ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়া, অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যাওয়া, অতিরিক্ত চুল পড়ার সম্ভাবনাও হতে পারে।


ভিটামিন সি, যাকে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ও বলা হয়, যা আমাদের শরীরের সমস্ত কোষ কে সুস্থ্য ও কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, তাতে সহজেই অসুস্থ হওয়ার থেকে বাঁচা যায়। 


কোন কোন খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায় চলুন দেখে নেওয়া যাক - 

1. পালং শাক : প্রতিটি সবুজ শাক সবজি তে ভিটামিন সি পাওয়া যায়, তবে পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যদি সিদ্ধ করে বা অল্প তেলে ভেজে খাওয়া যায় তবে বেশি উপকার পাওয়া যায়। 


2.
ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, লেটুস পাতা, কাঁচা রসুন, যতরকম সবুজ সবজী তে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। 


3.
রঙিন ফলমূল, আপেল, আঙুর, পিয়ারা, কিউবি, বিভিন্ন মৌসুমী ফল। 


4.
তবে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায় নানারকম লেবু ও টক জাতীয় ফলে, যেখানে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড গোটা ফল জুড়ে থাকে। 


5.
বাতাবি লেবু, মৌসাম্বি, কমলা লেবু, গন্ধরাজ লেবু, পাতি লেবু, লাইম, যত রকমের সিট্রাস ফল আছে তা সবই ভিটামিন সি এর ভান্ডার। 


ভিটামিন সি এর ভূমিকা কতটা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে - 

ত্বকের কোলাজেন এর মাত্রা ঠিক রাখে তার ফলে ত্বক সুস্থ্য ও সুন্দর থাকে। ইমুওনো সিস্টেম টা বজায় রাখে, হার্ট কে সুস্থ্য রাখে, ক্যান্সার এর মতো রোগকে প্রতিরোধ করতে, সক্ষম ভিটামিন সি। দাঁত কে সুস্থ্য রাখে।


1. অতিরিক্ত চিন্তা :
ব্যস্ত জীবন মানে মানসিক চাপ টাও অনেক বেশি, মানসিক চাপ কমাতে ভিটামিন সি এর ভূমিকা অনেক, এমন কি নেশা থেকে যে ক্ষতি হয় তা পুনরায় পুরন করতে পারে। মস্তিষ্কের ভিতর উত্তেজিত স্নায়ু গুলোকে আরাম দিতে পারে। কাজের চাপ অনায়াসে কাটিয়ে ওঠা যায়। 


2. ঠাণ্ডা লাগা :
শরীর যখন দুর্বল থাকে তখন যেকোনো ছোট খাটো অসুখ ও শরীরে প্রবেশ করতে পারে ভিটামিন সি এর অভাবে এটা হয়ে থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি শরীরে থাকলে সহজে ঠান্ডা লাগতে পারে না, জ্বর সর্দি কাশি সব কাছেও আসতে পারবে না। ইমিউনিটি পাওয়ার যার যত বেশি সে তত বেশি সুস্থ্য সবল। 


3. স্ট্রোক :
এই রোগ এখন কোনো বয়স মানে না,অতিরিক্ত চিন্তা থেকেই জন্ম নেয় স্ট্রোক। উচ্চ রক্তচাপ থেকেও হতে পারে, নিয়মিত ভিটামিন সি এর অভাবে এটা বড় আকার ধারন করে। ভিটামিন সি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে মস্তিষ্ক কে আরাম প্রদান করতে পারে, তাই স্ট্রোক থেকে বাঁচতে ভিটামিন সি নিয়মিত নেওয়া জরুরী। 


4. ত্বকের বয়স :
বয়স যাই হোক না কেন আপনার ত্বক বলে দেবে আপনি কতটা সুস্থ্য ও কতটা সুন্দর। ভিটামিন সি শরীরের ভিতর থেকে কাজ করে ত্বকের প্রতিটি কোষে রক্ত পৌঁছাতে সাহায্য করে, ত্বক থাকে প্রানোবন্ত।



কোনো দাগ, ব্রন ত্বকে আসতে পারে না। সহজেই ত্বকের বয়স ধরে রাখা যায়। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ৪০ এর ত্বক দেখলে মনে হবে ২৫ এর। বয়সটাকে কমিয়ে রাখে তিনগুণ। 


5. ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমায় :
শরীরে প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো কোষ উৎপন্ন হয়, বেশিরভাগ টাই ভালো কোষ তবে কোনো কোনো কোষ অবাঞ্ছিত যা পরে ক্যান্সার এর রুপ নেয়। ভিটামিন সি এই অবাঞ্ছিত ক্যান্সার কোষ গুলোকে ধ্বংস করতে পারে। 


কতটা পরিমান ভিটামিন সি প্রতিদিন নেওয়া শরীরের পক্ষে ঠিক হবে - 

সবজী ও ফলের মাধ্যমে শরীরের ভিটামিন সি প্রবেশ করলেও যাঁরা সাপ্লিমেন্টস এর সাহায্য নিয়ে থাকেন তাঁদের দিনে কমপক্ষে ৭০ থেকে ৯০ মিলিগ্ৰাম সাধারণত চলে, আবার প্রাপ্তবয়স্ক দের দিনে ৫০০ মিলিগ্ৰাম ঠিক আছে। এর বেশি হলে ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে। প্রত্যেকটা জিনিসের সীমা থাকে, তা অতিক্রম করলে অসুবিধা হতেই পারে। 


আর কি কি ভাবে ভিটামিন সি পেতে পারেন চলুন জেনে নেওয়া যাক - 

1. প্রতিদিন কাঁচা সবজির স্যলাট খেতে পারেন, লেটুস, শশা, বাঁধাকপি, পিঁয়াজ, লেবুর রস, টমেটো ইত্যাদি দিয়ে বানাতে পারেন। 


2.
ফল গুলোকে তার খোসা সমেত খাওয়ার চেষ্টা করুন, চাইলে কেটে কেটে খেতে পারেন। 


3.
লেবু বা কোনো ফল ফ্রিজে পুরোপুরি বরফ করে নিন তার পর কেটে অথবা গ্রেড করে খেতে পারেন। 


4.
টমেটো, ব্রকলি, লেটুস পাতা দিয়ে স্যান্ডউইচ বানিয়ে নিতে পারেন, তবে ব্রকলি টা অর্ধেক সিদ্ধ করে নিতে পারেন। 


5.
বিভিন্ন ধরনের বেরি জাতীয় ফল খেতে পারেন, স্টবেরি, ব্লুবেরি, ব্লাকবেরি, মালবেরি ইত্যাদি। চেরি তেও ভিটামিন সি পাওয়া যায়, কালো জাম একধরনের বেরি বলতে পারেন, এতেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। 


6.
শুকনো ফল যেমন, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, কিশমিশ, খেজুর ইত্যাদি। 


7.
সবজী অথবা ফলের রস খেতে পারেন, গাজরের রস, পালংশাক সিদ্ধ করা জল ভীষণ উপকারী। 


প্রতিদিন এতকিছু হয়তো রুটিন মেনে চলতে পারেন না অনেকেই তাই তাঁরা সাপ্লিমেন্টের উপরেই ভরসা করেন। অন্যান্য ভিটামিন এর তুলনায় ভিটামিন সি অনেক দিক দিয়ে মানব শরীরকে উপকৃত করে।


অতিরিক্ত ভিটামিন সি এর অভাবে মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে পারে, সবদিক দিয়েই সুস্থ্য ও সুন্দর থাকতে সময় থাকতে সাবধান হন। খেয়াল করুন আপনার শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি হচ্ছে নাতো! সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরী, সুস্থ্য থাকুন সুন্দর থাকুন।