ভিন্ন মতবাদ এবং শ্রদ্ধা

বিশ্বের প্রতিটা মানুষ ভিন্নরকম। যখন এক জনের থেকে অন্য জন দেখতে আলাদা, গলার স্বর আলাদা, কথা বলা, চলাফেরা আলাদা তখন এটাও স্বাভাবিক প্রত্যেকের চিন্তা ভাবনাও আলাদা। আমি এক জিনিস চিন্তা করছি তো অন্য ব্যাক্তি একই বিষয় অন্য ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

ভিন্ন মতবাদ এবং শ্রদ্ধা
ভিন্ন মতবাদ এবং শ্রদ্ধা


অন্যের  বিশ্বাসকে সমর্থন দিতে না পারলেও অসম্মান করতে আমার মন সায় দেয় না। এমন অনেক সংস্কার আছে যে গুলোর বিরুদ্ধে যাওয়ার চিন্তা আমার বহু আগে থেকেই হয়েছে কিন্তু আমি সে সংস্কার গুলোকে অপমান বা অভক্তি করতে সাহস করি নি। কেনো?

বিশ্বের প্রতিটা মানুষ ভিন্নরকম। যখন এক জনের থেকে অন্য জন দেখতে আলাদা, গলার স্বর আলাদা, কথা বলা, চলাফেরা আলাদা তখন এটাও স্বাভাবিক প্রত্যেকের চিন্তা ভাবনাও আলাদা। আমি এক জিনিস চিন্তা করছি তো অন্য ব্যাক্তি একই বিষয় অন্য ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এখন কেউ যদি বলেন এই চিন্তাভাবনার মধ্যে দোষটা কোথায়? দোষ ততক্ষণ না যতক্ষণ ওই চিন্তাটুকু  সে প্রকাশ করছে।


ধরুন আপনি বিবাহের কোনো একটা রীতি নিয়ে সারারাত ধরে অনেক ভাবলেন। ভাবার পরে আপনি সেই রীতিটিকে বাতিল যোগ্য ঘোষণা করে দিলেন জনসম্মুখে। একই সাথে আরো একজন ওই একই রীতির পক্ষে দাড়ালেন। এখন কথা হলো এই যে দুই ব্যাক্তি একই বিষয়ের পরে রায় দিলেন এবং ভিন্ন রায় দিলেন সেক্ষেত্রে কি করা যেতে পারে? বিচক্ষণ বিচারক প্রথমে দুই জন ব্যাক্তির পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি গুলো শুনবেন এবং পরবর্তীতে তিনি সিদ্ধান্ত নিবেন কার টা সঠিক আর কে ভুল।


প্রয়োজনবোধে তিনি বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিবেন। কিন্তু এই সহজ পন্থা নিয়ে তো আলোচনা করতে আমি এইটা লিখছি না । প্রত্যেক দেশের আদালত এই বিষয়ে অনেক আইনের সহায়তায় এইসব সমস্যার সমাধান করে থাকেন।


কিন্তু কথা হলো আমাদের ভিতরে বসবাসকারী বিচারক কি বলে, আমাদের নিজেদের আদালতে আমরা প্রতিটা বিষয় কিভাবে বিচার করি তার উপরে নির্ভর করে একজন ব্যাক্তি কতটা উদার মানসিকতার বা কতটা কল্যাণকর হতে পারেন। 

যে প্রশ্নগুলো আপনার ব্যক্তিত্ব নষ্ট করে!

ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে যে কাজগুলো করা অন্যায়

ভিশনারি বনাম মেশিনারি ব্যক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত

জাতীয়তাবাদ কি? জাতীয়তাবাদের গুরুত্ব


যেমনটা আমি সর্বদা মনে করি প্রতিটা জিনিসেরই দুই বা ততোধিক দিক আছে আমাদের সব সময় সেই দুটো দিক বা তার বেশি দিকগুলো বিবেচনা করতে হবে। আমি যেভাবে চিন্তা করছি সেটাও দেখতে হবে আর অন্যজনে কি ভাবছে সেটাও দেখতে হবে তারপর দুটো মতবাদের মধ্যে নিজেই তুলনা করে ঠিক করতে হবে আমি কোন দিকে যাব।


এইবার কথা হলো দুইটি মতবাদ  বিশ্লেষণ করতে যেয়ে আমাদের যেকোনো একটি মতবাদ মেনে নিতে হলে আমরা কি করবো? সাধারণ পাঠক উত্তর দিবেন যেটা সঠিক সেটাই বেছে নিবো। কিন্তু যদি সেই মতবাদ প্রবর্তক অন্যের মতবাদ মানতে রাজি না হয়? যদি সে নিজেরটা ভুল বা নিজেরটা সঠিক পন্থা নয় জেনেও কিংবা দুই জনেরই সঠিক কিন্তু আলাদা জেনেও  অন্যের মতবাদকে অপমান করে তখন কি করবেন? 


এখানেই আসে প্রকৃত চিন্তক এর ভূমিকা। প্রকৃত ব্যাক্তি কখনোই নিজের মতবাদকে উগ্র পন্থায় প্রকাশ করে না। কেনো? আপনি যদি বলেন মানুষ মাত্রই শক্তির পূজারী। যার শক্তি বেশি সবাই তার প্রতিষ্ঠিত ভাবনাকেই মেনে চলতে হবে এটা কখনোই উচিত নয়। 


আমি আর আমার বন্ধু যদি একই বিষয়ে দুইটি ভিন্ন মত প্রকাশ করি তবে কি আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে ? এটাকে প্রতিষ্ঠাতা বলে না এটাকে আলোচনা শব্দে সম্ভাষণ করলে তবেই সবার মতবাদকে সঠিক পর্যালোচনা করা হবে। আপনি যতই জানুন না কেনো যে অমুক ব্যাক্তি ভুল বলছে তাই বলে তার চিন্তাকে আঘাত করবেন না । সম্মান করুন , গুরুত্ব দিন । রাষ্ট্রে সরকার দলীয় কর্মকর্তাদের মতামত যেমন জরুরি তেমন বিরোধীদলীয় কর্মকর্তাদেরও জরুরি কারণ দুই দল মিলেই এক দেশ আর দেশ দলের থেকে উপরে। 


সম্মান করুন, দ্বিমত পোষন করুন , সমালোচনা করুন কিন্তু গঠনমূলক, আর কখনো কখনো হারতে শিখুন। 


আমার এমনও মনে হয়েছে কিছু কিছু সংস্কারকে গুঁড়িয়ে ফেলতে। কিন্তু কথা হলো আমি যেটা বিশ্বাস করছি না অন্যরা সেটা করছে। হতে পারে আমি একমত না কিন্তু তাদের বিশ্বাসে আঘাত করে আমার কি লাভ? বিশ্বাস যেটা সবার ভিতর থেকে আসে সেটা দুরকম হতেই পারে, চিন্তাভাবনা যেটা যুক্তি থেকে আসে সেটা দুরকম হতে পারে কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই যে শব্দটি বিরাজমান সেটি হলো শ্রদ্ধা । ভিন্ন মতবাদ এবং শ্রদ্ধাই পারে বিবেক জাগ্রত করতে।