মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে এই খাবারগুলির ভূমিকা জানেন?

এই খাবারগুলি মস্তিষ্ককে সুস্থ সবল ও অ্যাক্টিভ রাখতে সাহায্য করে। আপনার খাদ্যাভ্যাসে একটু বদল করে নিজের মস্তিষ্ককে আরো বেশি সতেজ করে তুলুন।

মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে এই খাবারগুলির ভূমিকা জানেন?
মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে এই খাবারগুলির ভূমিকা জানেন?


আমাদের সমস্ত শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া হয় একমাত্র মস্তিষ্কের কথায় বলা যায়। আমাদের পুরো শরীরের কর্তা মস্তিষ্ক, সবাই জানেন এটা। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা অনেক ক্ষেত্রে লোপ পায়। তার সাথে সাথে শরীরের কার্যক্ষমতাও কমতে থাকে। তবে এমন কিছু খাবার আছে, যা এই সমস্যাটাকে দমিয়ে রাখতে পারে।


একদল গবেষকদের দাবি যে, আমরা চাইলেই একটু যত্নের সাথে  মস্তিষ্ককে অনেকদিন পর্যন্ত সুস্থ-সবল রাখতে পারি।


অনেকদিন হেলদি ব্রেন ও হেলদি বডি পেতে চান সকলেই, তবে তো জানতে হবে যে কিভাবে এটা করা সম্ভব, চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু নিয়ম ও খাদ্যাভ্যাস যা আমাদেরকে স্ট্রং বানাবে- 


১. ভিটামিন ই :

শরীরের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সুস্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন-ই একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর উপাদান। যে সব খাবারের মধ্যে ভিটামিন ই থাকে সেইসব খাবারের মধ্যেও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে যা বাড়ায় দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিশক্তি এবং বয়সের সাথে শরীরের বিভিন্ন অংশের ক্ষয় কে রোধ করে।


যেমন ধরুন, অলিভ অয়েল, সূর্যমুখী, অ্যাভোকাডো, কুমড়োর বীজ এবং সব ধরনের বাদামে এ ভিটামিন ই প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।


২. সবুজ শাক :

ফোলাট এর মূল উৎস হল সবুজ শাক, যা রক্তে হিমোসিস্টিইন নামক অ্যামিনো এসিডের মাত্রা কমায়। তবে জেনে রাখা ভালো হিমোসিস্টিন মস্তিষ্কের স্নায়ুকে ধ্বংস করে।


তাই কার্যত এই এসিড কমানো আমাদের ভীষন জরুরী। প্রচুর পরিমাণে ব্রোকলি, পালং শাক, এবং সবুজ শাকসবজি খেলে এই মস্তিষ্কে স্নায়ুকে ধ্বংস করার হাত থেকে বাঁচাতে পারব আমরা।


৩. জাম অথবা চেরি জাতীয় ফল :

কালোজাম তো সচরাচর সবাই খেয়ে থাকেন কিন্তু এর যে স্বাস্থ্যগুণ কতটা তা হয়তো অনেকেরই অজানা, কালোজাম ও নানা জাতীয় চেরি জাতীয় ফল যেমন ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, স্ট্রবেরি, শরীরের বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে সাহায্য করে।


বোস্টনে অনুষ্ঠিত আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি ন্যাশনাল মিটিং এ এই তথ্য জানানো হয়। আরো জানা যায় যে, এই বিষাক্ত আমিষ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার জন্য দায়ী।


এই ফলগুলি উপস্থিত বুদ্ধি বাড়াতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। কোন কাজের ক্ষেত্রে ব্রেন সবচেয়ে ভালো পরামর্শটি আপনাকে দান করবে।


৪. ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড :

বলাই বাহুল্য যে 'ওমেগা থ্রি  ফ্যাটি এসিড' মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এগুলো নিউরন এর কার্যক্ষমতা এবং শারীরিক কার্যক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ উপকারী।


তবে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড এর প্রধান উৎস হলো মাছ। তবে যারা নিরামিষাশী মাছ খান না তারা এই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিডের উৎস হিসেবে বেছে নিতে পারেন ভোজ্য শৈবাল, সামুদ্রিক শৈবাল, এবং সামুদ্রিক সবজি।


৫. প্রচুর পরিমাণে জল পান :

এক কথায় বলা যায় কোথাও যদি জল জমা করে রাখা হয় তাহলে দুদিন পর সেই জল নষ্ট হতে শুরু করে, আবার অন্যদিকে নদীর জল যেখানে কিনা সারাক্ষণ বয়ে চলেছে সেখানে জল স্বচ্ছ সুন্দর। মানেটা হল আমাদের শরীরে থেকে নির্গত যে টক্সিন, তা শরীরের মধ্যেই থেকে যায় বাইরে বেরোনোর রাস্তা একমাত্র মলমূত্র ত্যাগ করা। তবে বেশির ভাগটাই মূত্র দ্বারা নির্গত হয়।


প্রচুর পরিমাণে জল পান করলে শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন, বর্জ্য পদার্থ বলতে পারেন, তা শরীর থেকে বের হয়ে যেতে সুবিধা হয়। তার ফলে কিডনি থেকে সমস্ত শরীর সুস্থ থাকে। এর সাথে সাথে ব্রেনকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।


বিশেষ করে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে যদি কারো দু গ্লাস জল খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে সেটা তো সোনায় সোহাগা। সারারাত ঘুমের পর আমাদের ব্রেন পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়না। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে খালি পেটে দু গ্লাস জল খেলে ব্রেনে রক্তসঞ্চালন হতে সুবিধা হয়। ব্রেন আবার আগের কর্ম ক্ষমতায় ফিরে যেতে পারে। এমনকি গ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।


তবে মাত্রাতিরিক্ত জলপান শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সবকিছুরই একটা সীমা থাকে। সীমা পার করলে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মিলবেই। আপনার বয়স ও শরীরের তুলনায় জল পান করুন। সাধারণত প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার একটা মানুষের শরীর ভালোভাবে নিতে পারে। গরমের দিনে এক লিটার বাড়ালেও ক্ষতি নেই।


সুস্বাস্থ্যের জন্য অনেক কিছুই করা হয়, তবে একটু বাড়তি খেয়াল আপনার শরীর ও মস্তিষ্ককে সারাক্ষণ একটিভ রাখতে সাহায্য করবে। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস একটু একটু করে বদলাতে থাকলে শরীরে এবং মস্তিষ্কে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য।


স্বাস্থ্যই সম্পদ এর থেকে বড় সম্পদ হয় তো আর হয়না। একবার অসুস্থ হলে লাখ টাকা একদিনেও খরচ হয়ে যেতে পারে। তাই বেশিদিন শরীরকে ও মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে এটুকু করা যেতেই পারে। হাসপাতালে চক্কর কাটা ও কষ্ট করে উপার্জন করা টাকা খরচ করার থেকে এটা হয়তো অনেক বেশি ভালো। বেশি পরিমাণে এই খাবারগুলো খান, সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন।