মাতৃ দিবস পালনের তাৎপর্য ও ইতিহাস জানুন

মাতৃ দিবসে মাকে রানীর মত করে রাখতে এই মাদার্স ডে পালিত হওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্মান, জানাতে এই দিনটি শুধু মায়েদেরকে উৎসর্গ করা।

মাতৃ দিবস পালনের তাৎপর্য ও ইতিহাস জানুন
মাতৃ দিবস পালনের তাৎপর্য ও ইতিহাস জানুন


আমাদের সকলের জীবনে মায়ের ভূমিকা কোনদিনও অন্য কেউ পালন করতে পারবে না। প্রতিটি মানুষের জীবনে মাঝে কতখানি জায়গা জুড়ে থাকে, তা যাদের মা নেই বা যারা অনাথ তারাই একমাত্র ভালোভাবে বুঝতে পারে।


একজন মা একটা সন্তানের জীবনে অন্য সবার জায়গা দখল করে নিতে পারে কিন্তু সেই মায়ের জায়গা কেউ কোনদিনও দখল করতে পারে না। এ কথাতো সমাজে হামেশাই শুনতে পাওয়া যায়। সকলে এই কথাটার কদরও করে। সত্যিই তো, সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে মা-ই তো একমাত্র সন্তানকে আগলে রাখে। সুন্দর করে বড় করে তোলে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে।


সন্তান প্রসব করার পর থেকে আর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত একজন মা তার সন্তানের জন্যই বেঁচে থাকেন। তার প্রথম খাবার খাওয়া, তার প্রথম হাঁটতে শেখা, তার প্রথম শিক্ষক হিসেবে মায়ের ভূমিকা সীমাহীন। মায়ের জীবনে কোনো ছুটি নেই। সারা জীবন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর মেলেনা কোন বেতন। সকাল থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত অবিরাম বিনা বেতনে হাসিমুখে কাজ করে চলেছেন। তার উপরে এমন ও পরিবার আছে এই কৃতজ্ঞতাস্বীকার টুকুও করে না।


আর তাই মাতৃ দিবস পালনের মধ্যে দিয়ে আমরা সেই অসাধারণ, আশ্চর্যজনক, নিঃস্বার্থ, ব্যক্তিটিকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই। যারা আমাদের অতি যত্নে রেখেছে। প্রতি বছর মে মাসে দ্বিতীয় রবিবার ভারতে মাতৃ দিবস পালিত হয়।


মাতৃ দিবসের ইতিহাস 

১৯০৮ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মাতৃ দিবস পালিত হয়। নিজের জন্মদাত্রী মা অ্যান রিসে জারভিসের স্মৃতির উদ্দেশ্যে অ্যানা জারভিস নামক এক মহিলা মাতৃ দিবস কে একটা ছুটির দিন হিসেবে পালন করার পক্ষে কথা বলেন।অ্যান রিসে জারভিস ছিলেন একজন শান্তি কর্মী এবং তিন বছর আগে মারা যান।


পশ্চিম ভার্জিনিয়ার সেন্ট অ্যান্ড্রুস মেথডিস্ট চার্চ এ নিজের মায়ের একটি মেমোরিয়াল রাখেন অ্যানা। বর্তমানে এটি আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস শ্রাইন। অ্যানা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন যে মা-ই এমন একজন ব্যক্তি যে নিজের সন্তানের জন্য পৃথিবীর অন্য কোনো ব্যক্তির তুলনায় অনেক বেশি অবদান দিয়ে থাকেন।


মাতৃ দিবসের তারিখ

ভারতে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মাতৃ দিবস পালিত হলেও বিশ্বের নানান দেশে বিভিন্ন দিনে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ইউকে-তে মার্চের চতুর্থ রবিবার মাতৃ দিবস পালিত হয়। আবার অন্যদিকে গ্রীকরা ২ ফেব্রুয়ারি মাতৃ দিবস পালন করে থাকেন। 


সেলিব্রেশন বা  উদযাপন
 

সোশ্যাল মিডিয়াতে এই দিনটিতে মায়ের প্রতি ভালোবাসা জানাতে একের পর এক ছবি পোস্ট করে মায়ের প্রতি ভালোবাসা কতটা, সবাইকে জানাতে অনেকেই পছন্দ করেন। অথচ সংসারের কাজে মায়ের হাতে হাতে সাহায্য করা অনেকের মানসিকতায় আসেনা। মাকে ভালোবাসা মানে মাকে একটু স্বস্তি প্রদান করা যেতে পারে।


মায়ের কষ্ট  না বাড়িয়ে মায়ের হাতে হাতে কাজ করে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। সেটা বছরে একদিন কেন, প্রায় দিনই করা যায়। যেটা থেকে একটু হলেও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা যে পরিবারের জন্য মা কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করে, নিজের জন্য সময় টুকুও বের করেন না, নিজের সবটুকু দিয়ে পরিবারকে আগলে রাখেন।


এটুকু তো স্বীকার করতেই হয়, সবার ভালো মন্দ, অসুখ-বিসুখ, খাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ, পরিপাটি করে রাখতে মায়ের ভূমিকা কে নিতে পারে বলুন! সে ক্ষেত্রে তাকে প্রশংসা করা যেতেই পারে, তাই না। এতে নিজেদেরও আনন্দ আর মাকেও খুশি করা যায় খুব তাড়াতাড়ি। আবার নতুন এক আনন্দে পরিবারের সকলকে আগলে রাখতে সাহস ও শক্তি যোগান পাবে মা।


এই বিশেষ দিনটি প্রতিটি সন্তানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একদিন। এই দিনে মাকে খুশি করার জন্য সন্তানরা গিফট বা উপহার কিনে থাকেন। অনেকে অনেক বড় অনুষ্ঠান বা পার্টি রাখেন। মায়ের প্রতি নিজের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্মান, প্রশংসা, ব্যক্ত করার জন্য অনেকেই অনেক কিছু করে থাকেন। এই বিশেষ দিনটিতে সংসারের সমস্ত কাজকর্ম থেকে মায়েদের ছুটি দেয়া হয়। আর এই দায়িত্ব সংসারের অন্যান্য সদস্যরা পালন করে থাকেন।


সারাক্ষণ ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য বাইরে বেরোনোর সময় টুকু হয় না, কোথাও ঘুরতে যাওয়াটা অনেক দূরের কথা। তাই এই বিশেষ দিনে তাকে তার পছন্দের কোন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, বাইরে কোথাও খাওয়া-দাওয়া, একটু সময় কাটানো, তাকে অনেকটা প্রশান্তি এনে দেবে। এই বিশেষ দিনে বিশেষ ভাবে উপহার দিতে অনেক সন্তানরা অনেকভাবে প্রয়াস করে থাকেন। অন্তত একঘেয়েমি জীবন যাপন থেকে প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে পারবে।


আবার তো তাকে ফিরে যেতে হবে সেই একঘেয়েমি জীবনযাত্রায়। আমরা সবাই নানান কাজে নানান প্রয়োজনে বাইরে বেড়ানোর সুযোগ পাই, তবে মায়েদের ক্ষেত্রে সেটা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই মাকে একটু মানসিক দিক থেকে শান্তি দিতে, শুধু মাতৃ দিবসে নয় অন্য দিনেও কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়া যেতেই পারে।


বর্তমানে লকডাউনে সবাই ঘরে বসে থাকলেও মায়ের কাজ কিন্তু আগের থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। তবে সারাক্ষণ কাজে ব্যস্ত থাকা মাকে এই বিশেষ দিনে রানীর মত করে রাখা যেতেই পারে, কি বলেন আপনারা!