মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার এই উপায় গুলি মেনে চলুন, দেখবেন জীবন কত সুন্দর
চাইলেই সম্ভব, মানসিক স্বাস্থ্য এর নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে সাথে শারীরিক সুস্থতার ভূমিকা পালন করে। নিত্যদিনের কিছু উপায় অবলম্বন করলেই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

শারীরিক সুস্থতার তুলনায় আমরা মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল দিতে ভুলে যাই, অনেকেই জানেন না যে মানসিক স্বাস্থ্য কাকে বলে? শারীরিক সুস্থতা এই মানসিক স্বাস্থ্যের উপর অনেকটা নির্ভর করে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে আপনি সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবেন। প্রতিদিনের কাজ গুছিয়ে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন। তাছাড়াও নিজের জন্য সময় বার করতে পারবেন, পরিবারকে সময় দিতে পারবেন।
হঠাৎ কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে ভয় পাওয়ার বদলে আপনি সাহস টাই বেশি পাবেন, সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে। মনোবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী এমন কিছু উপায় মেনে চলা প্রয়োজন মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য।
কাজকে এতটাই গুরুত্ব দিয়ে ফেলা হচ্ছে, নিজের পৃথিবীটা ভুলে যেতে বসেছে সবাই। নিজেকেও সময় দেওয়ার প্রয়োজন আছে, তার সাথে পরিবারেরও। আরে মানসিক স্বাস্থ্য এর অবনতির কারণ আমাদের বেপরোয়া জীবনযাপন। যেগুলো স্বাভাবিকভাবে আমাদের মেনে চলা উচিত, সেগুলো কে আমরা উপেক্ষা করে কর্ম জীবনে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটা গুরুত্বই দিই না।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় গুলি কি, চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক-
১. রুটিন মেনে চলা:
প্রতিদিনের একটি রুটিন তৈরি করুন সেই রুটিন অনুযায়ী প্রত্যেক দিন অতিবাহিত করুন। রুটিন অনুযায়ী জীবন যাপন করলে আপনি আপনার জন্যে একটু হলেও সময় বের করতে পারবেন।
যা কিনা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে অক্সিজেনের যোগান দেবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে আর রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত রুটিন মেনে চলতে পারলে আপনার জীবন অনেকটা সহজ হয়ে উঠবে।
যারা নিয়মিত রুটিন অনুযায়ী জীবন-যাপন করেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং শারীরিক স্বাস্থ্য দুটোই ভালো থাকে। রুটিন অনুযায়ী চললে আপনার প্রতিদিনের কাজ আপনি প্রতিদিন কমপ্লিট করতে পারবেন। আর তাতে আপনার কাজের চাপ অনেকটাই কমে যাবে। নিজেকে ফ্রি মনে হবে। প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে পারবেন, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপযোগী।
২. নিয়মিত ব্যায়াম করা :
আমাদের শরীর চলাফেরার মাধ্যমে সচল থাকে, তাই এখনকার সময় দু পা হাটতে গেলে মানুষের দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা, গাড়ি ছাড়া কেউ চলতেই পারে না। তাই নিয়ম করে শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক সুস্থতার দিকে নজর রেখে বাড়িতে একটু হলেও ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। নিয়মিত ব্যায়াম করা অনেক রোগ বালাই কে কাছে ঘেষতে দেয়না। প্রতিদিন কমপক্ষে আধ ঘন্টা হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
সেটা আপনার ঘরের কাজ করার ক্ষেত্রে হোক বা কোথাও যাওয়ার ক্ষেত্রে। সপ্তাহে হয়তো প্রতিদিন সম্ভব হবেনা ব্যায়াম করা, তবুও অন্ততপক্ষে চার থেকে পাঁচ দিন ব্যায়াম করুন সপ্তাহে। ব্যায়াম হলো শারীরিকভাবে সক্রিয়তা ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার চাবিকাঠি। কারণ হলো, যে কোন ধরনের শরীরচর্চা মানবদেহে সুখের অনুভূতি সৃষ্টিকারী হরমোনের নিঃসরণ ঘটায়।
৩. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস :
প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন, আপনার একটা রুটিন এর মধ্যে থাকতে হবে। প্রতিদিন সবুজ শাক সবজির পাশাপাশি রঙিন ফলমূল কে আপন করে নিন।
প্রতিদিন সবুজ শাক সবজির পাশাপাশি ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ডাবের জল, কলা, পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, যা মন মেজাজ ভালো রাখতে সহায়তা করে। এর সাথে সাথে ডার্ক চকলেট মুড ভালো রাখতে বিশেষ উপযোগী।
৪. নিজের পছন্দ ও শখ কে গুরুত্ব দিন :
অনেকেরই নিজস্ব কোন পছন্দ বা শখ থাকে। কাজের চাপে সব ভুলে গিয়ে নিজের জন্য সময় বার করাটাই হয়ে ওঠে না। কিন্তু তা বললে তো হবে না, মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে আপনার পছন্দ বা শখকে গুরুত্ব দিতেই হবে।
সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন এর মধ্যে কিছু সময় বের করুন আপনার শখ পুরনে, বা আপনার পছন্দমত কিছু করতে। সে আপনার অনেক রকম শখ হতেই পারে, অবসর সময় একটু গান শোনা, ঘরটাকে সুন্দর করে সাজানো, নিজের হাতে কিছু তৈরী করা, নিজের যত্ন নেওয়া, নিজের পছন্দের কোন বই পড়া, অথবা সিনেমা দেখা।
এগুলিতে আপনার মন অনেকটা ফ্রি হবে, যাতে মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পাবেন খুব তাড়াতাড়ি। এগুলোতে আপনার মনের মধ্যে আনন্দের অনুভূতি এনে দেয়, যার ফলে সমস্ত দুশ্চিন্তা ভুলে যেতে আপনার সময় লাগবে না। তাই নিজের জন্য এটুকু সময় বের করতেই পারেন, আপনি যদি চান তাহলেই সম্ভব।
৫. পছন্দের মানুষগুলোর সাথে গুণমানসম্পন্ন সময় কাটানো :
এটা তো অনেকেই জানেন পরিবেশ মানুষের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার একমাত্র কারণ। আপনার আশেপাশে মানুষগুলোই আপনার বন্ধু-বান্ধব, পরিবার ও আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী, তাদের সাথে কথা বলুন, তাদের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন রাখুন।
এটা প্রমাণিত যে কারো মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকাটা নির্ভর করে পুরোপুরি তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক গুলোর গুণগত মানের উপর। যেমন মানসিকতার মানুষের সাথে আপনি মিশবেন আপনার মানসিক স্বাস্থ্য তেমনি থাকবে।
৬. প্রযুক্তির ব্যবহার :
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে মানুষ টিভি, ল্যাপটপ, মোবাইল ছাড়া চলেই না। ৯০ দশকের আগের থেকে এসব কিছু ছিলনা, তাই মানুষ একটা নিয়ম শৃংলার মধ্যে জীবন যাপন করত। ভোরে ঘুম থেকে উঠে ভোরের হাওয়া গায়ে লাগানো, রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে-দেয়ে ঘুমিয়ে পড়া, সারাদিনে শারীরিক পরিশ্রম করে কাজ করা, খেলাধুলা, আনন্দ, উৎসব, সবকিছুই ছিল অন্য মাত্রায়।
কিন্তু এখন মানুষের চোখ আটকে পড়েছে মোবাইল, ল্যাপটপের স্ক্রিনে। যার কারণে বেড়েছে অনিদ্রাজনিত রোগ, দুশ্চিন্তা, ও মানসিক স্বাস্থ্যের দফারফা। তবুও নেশা হয়ে গিয়েছে এতটাই যে, এগুলো ছাড়া চলেই না। আর এগুলোই মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তরায়।
সারাক্ষণ ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া, ল্যাপটপ, ফোন, নিয়ে থাকতে থাকতে মানুষ ডিপ্রেশনের মত অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে। সারাক্ষণ এসবের মধ্যে ব্যস্ত থাকলে আশেপাশে কি হচ্ছে খেয়াল থাকে না। কেউ কোন কথা বললে সেটা শোনার মত মানসিকতা থাকে না। এতে একটা সামাজিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
কারো সাথে মতবিনিময়, আলাপ-আলোচনা, কথাবার্তার, মত সময় বের করা হয়ে ওঠে না। আর এগুলি সারা দিনে আমাদের জেগে থাকার বেশিরভাগ সময়টাই নষ্ট করে দেয়। সেই সময়টা হয়তো অন্য কোন ভাল কাজে ব্যবহার করা যেত।
তাই অন্তত ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘন্টা আগে এইসব প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে বিরত থাকা দরকার। পরিবারের সাথে সময় কাটানো, পরিবারের মানুষজনদের সুবিধা-অসুবিধা জানার সময়টুকু বার করা প্রয়োজন।
শুধু রাত্রে নয় দিনের বেলাতেও প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত রাখা জরুরি। অনেকেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক কাজ করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে সময়সীমা টাও মাথায় রাখা প্রয়োজন, কেননা মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে যে।