মিউচুয়াল ফান্ড শুরু করতে চান? তাহলে বিনিয়োগ করার আগে জেনে নিন এর নিয়ম গুলো

আপনি কি মিউচুয়াল ফান্ড শুরু করার কথা ভাবছেন কিন্তু বিনিয়োগ কিভাবে করবেন এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে চান। মিউচুয়াল ফান্ড কি ? মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার নিয়মাবলী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা, যা আপনাকে এই সম্পর্কে বুঝে নিতে সাহায্য করবে।

মিউচুয়াল ফান্ড শুরু করতে চান? তাহলে বিনিয়োগ করার আগে জেনে নিন এর নিয়ম গুলো
মিউচুয়াল ফান্ড শুরু করতে চান? তাহলে আগে জেনে নিন

মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে একটি ট্রাস্ট বা একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি হিসেবে কাজ করে। এই অর্থ তাঁরা বিভিন্ন ধরনের কিছু নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক লক্ষ্য পূরণের জন্য বিনিয়োগ করে।
 
অন্য ভাবে বলা যায়, মিউচুয়াল ফান্ড একটা ট্রাস্ট হিসেবে কাজ করে যেটা বিনিয়োগকারিদের সঞ্চয়ের সমন্বয় সাধন করে সেই অর্থ  পুনরায় বিনিয়োগ করে লাভ অর্জনের জন্য  তারপর লাভকৃত অর্থ বিনিয়োগকারিদের মধ্যে বণ্টন করে । বদৌলতে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিএই কাজের জন্য একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা তাঁদের সার্ভিস চার্জ হিসেবে ধার্য করে।


প্রত্যেক মিউচুয়াল ফান্ড সাধারনত একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে এবং বিনিয়োগকারীগন একই উদ্দেশ্য সাধনে এই বিশেষ প্রকল্পে বিনিয়োগ করে থাকেন। প্রত্যেকটা প্রকল্প একজন ফান্ড ম্যানেজার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়  যিনি আর্থিক বিশ্লেষকের সাহায্যে বাজার কর্মক্ষমতার ওপর নজর রাখেন এবং সে অনুসারে বিনিয়োগ করেন।অর্থ সঞ্চয়ের নানান উপায় আমরা জানি। সেভিংস অ্যাকাউন্ট ( Savings Bank Account), ফিক্সড ডিপোসিট ( Fixed Deposit ), রেকারিং ডিপোসিট (Recurring Deposit) এই সব পথেই তো আমরা টাকা জমিয়ে থাকি। কিন্তু যদি আমরা একটু অন্যভাবে টাকা সঞ্চয় করতে চাই বা বাড়াতে চাই, তাহলে কিন্তু নিঃসন্দেহে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ ( Investment in a Mutual Fund ) করা উচিত। এক্ষেত্রে ব্যাপারটা খুবই সোজা।

এর সঙ্গে শেয়ার বাজারের (Stock Market) যোগ আছে। ধরুন আপনি একটি নির্দিষ্ট কোম্পানীকে টাকা দিলেন। এটা ‘ইউনিট’ কেনা নামে পরিচিত। এইরকম আরও অনেকে ধরুন টাকা দিলেন। এই কোম্পানী এবার টাকাটা খাটাবে। এবং যে টাকাটা আসবে সেটা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে এবং আপনি সেই টাকাটাই পাবেন সেটার বর্তমান বাজার মূল্য আছে।ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগ কোনো বড় কোম্পানীর মারফতে যখন শেয়ার বাজারে খাটতে থাকে, আর তার থেকে যে টাকা পাওয়া যায়, এই সম্পূর্ণ পদ্ধতিটাই হল মিউচুয়াল ফান্ড স্কিম। অর্থাৎ আপনি শেয়ার বাজার, স্টক মার্কেট এইসব সম্বন্ধে বিশেষ কিছু না জানলেও নির্দিষ্ট কোম্পানীর সাহায্যে টাকা খাটিয়ে বেশি রিটার্ন পেয়ে গেলেন।


আর আমাদের মনে রাখতে হবে যে সব মিউচাল ফান্ড নথিভুক্ত হয় SEBI* র কাছে। মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করে থাকে AMC বা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী। আর এই AMC’কে অবশ্যই তথ্য নথিভুক্ত করাতে হয় SEBI’র কাছে। যদিও কোম্পানীগুলোর প্ল্যান আলাদা আলাদা হয়, তাও সবচেয়ে কম ১০০০টাকা মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য রাখতেই হয়।
মিউচুয়াল ফান্ড অনেক রকমেরই হতে পারে। আসুন সেগুলো সম্বন্ধে জেনে নেওয়া যাক।



১. ইক্যুইটি ফান্ড (Equity Fund):

এইরকম মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ যদি শেয়ার বাজারে ধস নামে অর্থাৎ দাম যদি পড়ে যায়, তাহলে কিন্তু আপনার টাকা মার যেতে পারে। তাই খুব একটা এই স্কিমে টাকা না রাখাই ভালো।



২. ডেট ফান্ড (Debt Fund):

সরকারী, বেসরকারী কর্পোরেট ঋণপত্রের মাধ্যমে টাকা লগ্নি করা হয়। এখানে ততটা ঝুঁকি থাকে না। টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে এখানে অনেকটাই নিশ্চিন্তে থাকা যায়।



৩. ব্যালেন্সড ফান্ড (Balanced Fund):

ইক্যুইটি আর ডেট এই দুই ক্ষেত্রেই টাকা বিনিয়োগ করা যায় এই পদ্ধতিতে। বিনিয়োগকারীকে মোটা অঙ্কের টাকা ফেরত দেওয়াই এই ব্যবস্থার লক্ষ্য।



৪. মানি মার্কেট মিউচুয়াল ফান্ড (Money Market Mutual Fund):

স্বল্পমেয়াদের বিনিয়োগ করা হল এই ব্যবস্থার অন্যতম শর্ত। একে লিক্যুইড ফান্ডও বলা হয়। ট্রেজারি, কমার্শিয়াল পেপারে বিনিয়োগ হয়ে থাকে।



৫. গিল্ড ফান্ডস (Gilt Fund):

এখানে সরকারি সিকিউরিটিজে (Government Securities) টাকা ঢালা হয়। তাই আপনার টাকা সম্পূর্ণভাবে নিরাপদে এখানে রাখতে পারেন। এটাই সবচেয়ে নিরাপদ ফান্ড।



কিভাবে মিউচুয়াল ফান্ড আমাদের জন্য লাভজনক:

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ মানে ঝুঁকিপূর্ণ; নেই মুনাফা এবং অর্থের নিরাপত্তা -এমন ধারণা অনেকের। অতি সাধারণ এই বক্তব্য অনেকাংশে ভুল। অন্ধভাবে এবং অস্বচ্ছ ধারণা নিয়ে বিনিয়োগ মানেই লোকসানের সম্মুখীন হওয়া।

তাই ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ এবং নিশ্চিত মুনাফা লাভে চাই মিউচুয়াল ফান্ড। যেখানে আপনার অর্থের সুরক্ষা এবং মুনাফা নিশ্চিত করে একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি।আপনি শেয়ারবাজারে টাকা খাটাতে চান। অথচ কোন শেয়ারে কখন কত টাকা খাটাবেন, তা নিয়ে আপনার কোন ধারণা নেই। এ ক্ষেত্রে সোজা উপায় হল, মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা।বিনিয়োগের জন্য প্রথমেই ফর্ম পূরণ করতে হবে। আপনাকে বেশ কয়েকটি ফর্ম আগে ডাউনলোড করতে হবে। যেমন Common Mutual Fund application form, Mutual fund ECS mandate form, Risk profile form ইত্যাদি।


আপনার যদি KYC থাকে, তাহলে সেটাও দিতে হবে। আর যদি না থাকে, তাহলে দিতে হবে KYC indivisual form, ১টা পাসপোর্ট সাইজের ছবি, যে কোনো একটা পরিচয় পত্র যেমন প্যান কার্ড, আধার কার্ড, পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড ইত্যাদি। আর মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার জন্য আমরা যে প্রতিষ্ঠানের কাছে যাব, সেই সেই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিয়ম থাকে। তাই যে প্রতিষ্ঠানের থেকে মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কিনবেন, সেই প্রতিষ্ঠানের আবেদন করার পদ্ধতি দেখে নিন ভালোভাবে।



তাহলে এখন থেকে আর শুধু চিরাচরিত অর্থ সঞ্চয়ের পথ থেকে সরে এসে এভাবে ইনভেস্ট করে দেখুন। কম সময়ে এমন সহজ আর বিশ্বাসযোগ্য পথে টাকা রিটার্ন কিন্তু আর কোনো ভাবেই পাবেন না। হ্যা, যদি মাঝে মাঝে একটু ঝুঁকি নিতে হয়, আশা করি তা নেবেন। কারণ কথায় বলে না, নো রিস্ক, নো গেইন।


ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র অনেক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে টাকা তুলে সেই টাকায় প্রচুর শেয়ার কেনা হয়, তাকে বলে মিউচুয়াল ফান্ড। আরো সহজ করে বলা হলে- একটি সমিতি। সবার অর্থ গড়ে ওঠে একটি প্রতিষ্ঠান।

মিউচুয়াল ফান্ড কোন কোম্পানির শেয়ার নয়; বাজারে বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা অ্যাসেট ম্যানেজার (সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি) তার খরচ বাদ দিয়ে উদ্যোক্তা ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে বন্টক করে।আসলে মিউচুয়াল ফান্ড হলো পেশাদার ফান্ড ম্যানেজার দ্বারা নির্মিত এবং পরিচালিত। দক্ষ ব্যবস্থাপক দিয়ে নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যবস্থাপনা। যা ছোট ছোট বিনিয়োগকারীদের থেকে টাকা সংগ্রহ করে পোর্টফোলিও বানিয়ে বহু সেক্টরে বিনিয়োগ করে থাকে।তারা পরিসংখ্যান করে বিভিন্ন বিচারের নিরিখে নিকট ভবিষ্যৎ ও তার অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে পুরোপুরি স্পষ্ট হন। বিভিন্ন নিরিক্ষার মাধ্যমে আগামীর অর্থনৈতিক ছায়ালিপি তৈরি এবং বিনিয়োগের কৌশল নির্ধারণ করেন। যে কারণে বিনিয়োগকারীর ঝুঁকির পরিমাণ অনেকাংশেই হ্রাস পায় এবং বিনিয়োগের পথ সুগম করে তোলে।

আরো বলা যায়, মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে একটি ট্রাস্ট বা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি হিসেবে তা পরিচালনা করে। অতি সুচারুভাবে পরিচালানার পরে সঞ্চিত লভ্যাংশ বন্টন করে থাকে।
অবশেষে বলা যায় যে, মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন এর মধ্যে ঝুঁকি নেই বরং মিউচুয়াল ফান্ড আমাদের জন্য অনেক লাভজনক।