মেয়েদের বার্থলিন সিস্ট সম্পর্কে সচেতনতা ও চিকিৎসা
মেয়েদের বার্থলিন সিস্ট সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিই আজকের আলোচ্য বিষয়

কথায় আছে স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। তাই প্রত্যেকটা মানুষ সুস্থ থাকতে চায়।এজন্য আমাদের কর্মময় জীবনে স্বাস্থ্যের দিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত। বিশেষ করে নারীদের তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত। কারণ প্রত্যেকটা নারীর উপর নির্ভর করে পুরো পরিবারের স্বাস্থ্য। তাই মেয়ে দের সুস্থ থাকা ও সুস্থ রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের দেশের নারীরা অগ্রগতির পাশাপাশি নানা রোগ ব্যাধিতে ভুগছে।
এই যেমন :স্তন ক্যান্সার,জরায়ু ক্যান্সার,স্তন টিউমার, জরায়ু টিউমার, বিভিন্ন ধরনের সিস্ট ইত্যাদি। যা আমাদের দেশের অধিকাংশ নারী অবহেলা করে।ফলে এসব রোগ -ব্যাধি নারীদের অনেকের অজানা। নারীদের বার্থলিন সিস্ট সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে আজকের আমার আর্টিকেলটি।
বার্থলিন সিস্ট :বার্থলিন সিস্ট হলো একটি বার্থলিন গ্রন্থি যা একটি তরল দিয়ে ফোলা।বার্থলিন গ্রন্থিগুলো যোনি খোলার প্রতিটি পাশে ল্যাবিয়ার ঠোঁট রয়েছে।তারা যোনি তৈলাক্ত তরল সঞ্চার করে। বার্থলিন গ্রন্থি চ্যানেলে বাধা থাকলে বা বাধা পড়লে বার্থলিন সিস্ট তৈরি হয়।
বিভিন্ন সংক্রমণের কারণে বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে বার্থলিন গ্রন্থিতে জমে থাকা তরল পদার্থটি সংক্রমিত হয়।ফলে গ্রন্থিটি ফুলতে থাকে যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় বার্থলিন সিস্ট। সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৫০-১০০জন নারী এ রোগে আক্রান্ত হয়।
বার্থলিন নিয়ে আমাদের ভুল ধারণা :
বার্থলিন সিস্ট বাংলাদেশের প্রায় ২শতাংশ মেয়ের বিশেষত ২০-২৯ বছরের মেয়েদের মধ্যে হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ মেয়েদের বার্থলিন সিস্ট সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই।যখন এই সিস্টে আক্রান্ত হয় তখন একটি ফোড়া হিসেবেই দেখা যায়। ফলে এই রোগকে অনেকে শুধুমাত্র ফোড়া বা বিষফোড়া মনে করে এবং ফোড়া ভেবে ফোড়ার চিকিৎসা করা হয়।সঠিক চিকিৎসা না হলে এই রোগ বারবার হয়ে থাকে।
আসুন জেনে নিই এর কারণ ও লক্ষণ সমূহ -
বার্থলিন সিস্ট হওয়ার কারণ :
- বার্থলিন গ্রন্থির চ্যানেলে বাধা পড়লে তা সিস্টে পরিণত হয়।
- বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে এর সংক্রমণ হতে পারে।
- যৌনাঙ্গ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখা।
- গনোরিয়া এবং ক্লামিডিয়ার মতো যৌন রোগে সংক্রমণ।
- ইকোলি ব্যাকটেরিয়ার কারণে যা অনেক সময় ডায়রিয়া বা খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য হতে পারে।
- ভলভোভার্জিনাল সার্জারির কারণেও হতে পারে।
- ঘনঘন গর্ভাবস্থায় উদ্বোধন ঘনীভূত।
জরায়ু জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হলে কীভাবে বুঝবেন? মহিলাদের জন্য জরুরী
বার্থলিন সিস্টের লক্ষণঃ
বার্থলিন সিস্ট শুরুতে মটর বা মার্বেল আকারের হতে পারে। ছোট বার্থলিন সিস্টের তেমন কোন লক্ষণ দেখা যায় না বা অনুভব করা যায় না।তাই অনেক মেয়ে বুঝতে পারে না যে তার ছোট বার্থলিন সিস্ট হয়েছে। এটি সাধারণত ধীরে ধীরে বেড়ে যায়।যখন লক্ষণ দেখা যায় তখন নিমোক্ত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়-
- সাধারণত দুটি গ্রন্থির মধ্যে একটি আক্রান্ত হয়।
- যোনি খোলার কাছে সিস্টটি হয়।
- স্থানটি ফোলা লালভাব দেখা যায়।
- হাঁটা-চলা,বসা,শোয়া বা যৌনমিলনে অস্বস্তি হয়।
- যদি বার্থলিন সিস্ট বেশি আক্রান্ত হয় তবে সিস্টগুলি নরম ও বেদনাদায়ক হয়।
- পুজ জমে যায়।
- জ্বর আসার সম্ভাবনা।
- ঠান্ডা অনুভূতি হওয়া।
- ফোলা স্থানটি গরম হয়ে যায়।
- বমি বমি ভাব হতে পারে।
- বারবার হওয়ার আশংকা থাকে।
- মহিলাদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়।
রোগ নির্ণয় :
এক্ষেত্রে চিকিৎসক রোগীর ইতিহাস মূল্যায়ন করে। তারপরে শারীরিক পরীক্ষা করে।যদি সিস্টটি সংক্রমিত হয় তবে যৌন সংক্রমণ (এস টি আই) উপস্থিত কিনা তা নির্ধারণের জন্য যোনি স্রাবের নমুনা পরীক্ষা করে।
এছাড়া রোগী যদি ৪০বছরের বেশি হয়ে থাকে তবে ডাক্তার ক্যান্সারজনিত কোষগুলি পরীক্ষা করে। শ্রোণী অঞ্চলের রুটিন চেক করা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত যদি রোগের নির্ণয়,নির্ধারণের জন্য লক্ষণ প্রকাশ না পায়। এছাড়া বিবাহিত হলে স্বামীর এস টি ডি পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে।
বার্থলিন চিকিৎসা :
হোম কেয়ার :প্রাথমিক অবস্থায় বার্থলিন সিস্ট হলে ঘরের চিকিৎসায় এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ছোট বার্থলিন সিস্টের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ৩-৪ বার ১০-১৫ মিনিটের জন্য উষ্ণ গরম জলে স্টিজ বাথ নিতে হবে অথবা উষ্ণ তোয়ালে সিস্ট যেখানে অবস্থিত সেখানে সংকুচিত করতে ব্যাবহার করা যেতে পারে।ব্যাথানাশক ঔষধ খাওয়া যেতে পারে।
কমপক্ষে ৩-৪ দিন এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে সিস্ট অনেকাংশে কমে যায়। চিকিৎসা :-হোম কেয়ারের পরও যদি বার্থলিন সিস্ট নিজে থেকে না যায় তবে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। কারণ এটি সংক্রমিত হয়ে জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এক্ষেত্রে ডাক্তাররা সার্জিক্যাল ড্রেন করতে পারে। অস্বস্তিকর বার্থলিন সিস্টকে চিকিৎসার জন্য এটি সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
বার্থলিন ফুলে তরল জমে গেলে তরল নিষ্কাশনের জন্য সিস্টে একটি কাটা তৈরি করে।পদ্ধতিটির ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত একটি স্থানে রেখে সিস্টে ক্যাথেটার প্রবেশ করান।ক্যাথেটারটি সিস্ট খোলা রেখে বাকি জমে থাকা তরলটি নিষ্কাশন করতে সাহায্য করে। সিস্টটি খোলা রেখে ক্যাথেটার আরও তরল তৈরিতে বাধা দেয়।এইভাবে প্রাকৃতিক নিরাময় করা যায়।
এরপরে অ্যান্টি বায়োটিক গ্রহণ করুন যাতে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়।যদি কোন ব্যাক্তির অনেকবার পুনরায় বার্থলিন সিস্ট হয়ে থাকে যা কোন চিকিৎসার দ্বারা ভালো সাড়া দেয় না, তবে ডাক্তার বার্থলিন গ্রন্থি সম্পূর্ণরুপে অপসারণের পরামর্শ দিতে পারেন।
প্রতিরোধ :
বার্থলিন সিস্টের কারণ সম্পর্কে চিকিৎসকরা এখন অনিশ্চিত। তাই বার্থলিন সিস্ট রোধ করার জন্য খুব বেশি সুপারিশ নেই। তারপরও চিকিৎসকরা নিমোক্ত নিয়ম অনুসরণ করতে বলে :- ★যৌন কার্যকলাপের সময় কনডম ব্যবহার করা।
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা।
- ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করা।
- জনসচেতনতা সৃষ্টি।
গর্ভাবস্থায় বার্থলিন বিপদজনক কি:অনেকের বার্থলিন গ্রন্থি গর্ভাবস্থায় বিকাশ লাভ করে। এই রোগের কারণে ভ্রুণের ক্ষতি সাধন হতে পারে। পঞ্চম দিন এবং তেরো সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বিপদজনক সংক্রমণ।এই সময়ে প্যাথোজেন ভ্রুণের মৃত্যুও হতে পারে। অতএব গর্ভাবস্থায় বার্থলিন উপস্থিতি লক্ষ করলেই অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
তো প্রিয় বন্ধুরা,আশাকরি আজকের আর্টিকেলটি থেকে মেয়েদের বার্থলিন রোগটি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলেন। আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।