যেসব কারণে বন্ধ হতে পারে আপনার ইউটিউব চ্যানেলটি, জেনে নিন
আপনারা অনেকেই ইউটিউব চ্যানেল চালান এবং সেখানে বিভিন্ন রকমের কন্টেন্ট পাবলিশ করে থাকেন। তবে অনেক সময় আমাদের চ্যানেল নষ্ট হয়ে যায় বা ব্যান করা হয়। এর কারণ কি? কীভাবে এই সমস্যা হতে বাঁচা যায়? জানতে চান? তাহলে দেরি না করে আমাদের আজকের পোস্ট এখনি পড়ে ফেলুন।

ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়নের জেরে এখন আমরা খুব কমই টিভি দেখি। এখন নাটক, সিরিয়াল, খেলা, মুভি, নিউজ, প্র্যাংক, রোস্ট ভিডিও, গান, কার্টুন, সবকিছুই ইউটিউবে বিভিন্ন চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করেই দেখি আমরা।
আর এজন্য ইউটিউবে প্রচুর চ্যানেল রয়েছে যারা নির্দিষ্ট কন্টেন্ট এর উপর ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে আপলোড করে যা আমরা ভিউ করে থাকি।
নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ভিডিও আপলোড করলে এবং দশ হাজার ফলোয়ার, ৪০০০ ঘন্টা ভিউ থাকলে ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজ হয়ে যায়, তখন ভিডিওগুলোতে গুগল অ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাড প্রচার করা হয়।
আর এগুলো যত ভিউ হয় ততই ভিডিও ক্রিয়েটর তার একাউন্টে অর্থ পেতে থাকেন। এই অর্থের পরিমাণ বিজ্ঞাপনের ভিউ থেকে আয়ের ৬০%।
কিন্তু আপনার চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার মানেই কিন্তু চ্যানেলটি আজীবন টিকে যাওয়া নয়। নিয়ম লঙ্ঘন করলেই হারাতে হতে পারে চ্যানেলটি।
আজ আমাদের আয়োজনে থাকছে যেসব কারণে ইউটিউব চ্যানেল হারাতে হতে পারে তার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
যেসব কারণে বন্ধ হতে পারে আপনার ইউটিউব চ্যানেলটি :
১. কপিরাইট লঙ্ঘন করা হলে
যেকোন মৌলিক ছবি, সিরিয়াল, অনুষ্ঠান বা ভিডিও ক্লিপের যদি কপিরাইট করা থাকে, এবং কেউ বিনা অনুমতিতে সেসব ভিডিও, গান, বা কোন অংশ অন্য কোন ভিডিও বা কন্টেন্ট তৈরিতে ব্যবহার করে এবং কোন প্রকার ক্রেডিট না দেয় তাহলে সেই কন্টেন্ট বানানো এবং ঐরকম কন্টেন্টের ভিডিও নিয়মিত আপলোড করা সাইবার অপরাধ বলে গণ্য হবে।
এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ বা কপিরাইটের মালিক যদি অভিযোগ করে তবে তার ভিত্তিতে ভিডিও এবং যদি ঐ চ্যানেলে সব এ ধরনের ভিডিও থেকে থাকে তাহলে চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
২. সহিংসতা এবং জাতিগত বিদ্বেষ
যেসব চ্যানেলের ভিডিওতে সরাসরি সহিংসতা দেখানো হয়, যা সব বয়সের মানুষ দেখতে পারবেনা বা দেখা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এ ধরনের ভিডিও তৈরি করা হলে ঐ ভিডিওগুলি ইউটিউব চ্যানেল হতে ইউটিউবের নীতিমালা অনুযায়ী ডিলিট করে দেয়া হয়।
যেসব চ্যানেলে হিংসা, সহিংসতা, জাতিগত বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া হয় যা দেখে জনগণের কোন বিশেষ ইস্যুতে ক্ষোভ বাড়তে পারে এ ধরনের চ্যানেলের ভিডিওগুলিও ডিলিট করে দেয়া হয়।
এবং অপরাধ এবং নীতিমালা লংঘনের গুরুত্ব বুঝে চ্যানেলগুলোও ডিলিট করা হতে পারে।
৩. পর্ণোগ্রাফী দেখানো হলে
সরাসরি পর্ণোগ্রাফী প্রদর্শন এবং কোনরকম সতর্কতা বা ১৮+ এলার্ট না দিয়ে অযাচিত পর্ণোগ্রাফী প্রদর্শন দেশের তরুন সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
সবসময় বিকৃত যৌন ক্রিয়াকলাপকে উৎসাহ প্রদানকারী ভিডিওগুলো তাদের নৈতিক চরিত্র ধ্বংসের কারণ হতে পারে।
এজন্য বিকৃত যৌনাচার, প্রকাশ্য পর্নোগ্রাফি এবং এ ব্যাপারে উৎসাহ প্রদানকারী ভিডিওগুলো ডিলিট করে দেয়া হয়।
চ্যানেলে এ ধরনের ভিডিও সংখ্যা বেশী হলে বা ভিডিও ডিলিটের পরেও সতর্ক না হলে ইউটিউবের পক্ষ থেকে চ্যানেলটি ডিলিট করে দেওয়া হয়।
৪. প্রচুর রিপোর্ট করা হলে
ইউটিউবের চ্যানেলের সিকিউরিটি অন্যান্য স্যোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের চেয়ে শক্তিশালী। তাই এখানে কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আপনার চ্যানেলে কিছু রিপোর্ট করলেই তা বন্ধ হবেনা।
অনেক মানুষ প্রায় ১৫০০+ মানুষ যদি লাগাতার একটি চ্যানেলের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে এবং তাদের বিরুদ্ধে ভিউয়ারদের অনেক অভিযোগ থেকে থাকে তাহলে ইউটিউব অবশ্যই এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।
তারা বিষয়টি যাচাই করে রিপোর্টের মাধ্যমে তারা ইউটিউব চ্যানেলটি ডিলিট করে দিতে পারে।
৫. এবিউজিং ভিডিও তৈরি করা হলে
ইউটিউব একটি স্যোশাল প্ল্যাটফর্ম। আগে যেমন টেলিভিশনে মুভি বা সিরিয়াল দেখে বাচ্চারা সেগুলো নকল করত, এখনো বিভিন্ন বয়সের মানুষ তাদের রুচি, বয়স অনুযায়ী ইউটিউব ভিডিও থেকে অনেক কিছু অনুসরণ করে থাকেন।
সেক্ষেত্রে কোন ধরনের এবিউজিং ভিডিওতে দেখানো যাবেনা। যেমন পোষা প্রানীদের নিয়ে বিভিন্ন ভিডিও ক্রিয়েটর চ্যানেল আছে, সেখানে পোষা প্রাণী পালনের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন, তাদের ভেট, ভ্যাক্সিন, ট্রিটমেন্ট, ট্রেন আপ করানোর বিভিন্ন বিষয় থাকে।
এগুলো করা হয় দর্শকদের দেখানোর জন্য, জানানোর জন্য। কিন্তু এসবের মাধ্যমে যদি আইন লঙ্ঘন হয় এমন কিছু জানানো হয়ে থাকে তাহলে ইউটিউবের নিয়ম অনুযায়ী ভিডিও ডিলিট করা হবে।
বারবার একই কাজের পুনরাবৃত্তি হলে চ্যানেল ডিলিট করে দেয়া হতে পারে।
এরকম শুধু প্রাণী নয়, কোন গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা অন্য কোন কিছু এবিউজ করা বা সেগুলোকে সমর্থন করে ভিডিও তৈরি করে জনমত গড়ার চেষ্টা করা হলে ডিলিট করা হতে পারে আপনার ইউটিউব চ্যানেলটি।
৬. মানহানিকর ভিডিও তৈরি
আমাদের সমাজে এখন এক ধরনের ধারণা গড়ে উঠেছে, যেহেতু আমাদের সবারই এখন মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে সেহেতু আমরা যেকোন কিছু বলতে পারি।
এজন্য ভিডিওর থাম্বনেইলে যেকোন এডিটেড ছবি বা ক্যাপশন দেওয়া, বা ভিডিওতে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ কথা বলা, ব্যক্তিগত আক্রমণ, অপপ্রচার, এগুলো করা আইনত সাইবার বুলিংয়ের পর্যায়ে পড়ে।
কারো অনুমতি ব্যতীত তাকে নিয়ে রোস্টার ভিডিও বানানো, অত্যন্ত অশ্লীল ছবি এডিট করা, ভিউ বাড়ানোর জন্য থাম্বনেইলে এডিটেড ছবি, বা ক্যাপশন দেওয়া যার ফলে কোন ব্যক্তি ব্যাপক সমালোচনা, গালিগালাজ বা বুলিংয়ের শিকার হলে এ ধরনের ভিডিও রিপোর্ট করা হলে বা ইউটিউবের নিয়মের বাইরে হলে তা ডিলিট করা হবে।
এ ধরনের ভিডিও বারবার আপলোড করা হলে উক্ত চ্যানেলটি ডিলিট করা হতে পারে।
৭. প্রতারণা করা হলে
ভিডিওর মাধ্যমে কোন মিথ্যা তথ্য ও সংবাদ প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হলে, তাদের আর্থিক, মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করা হলে সেই ভিডিও ইউটিউবের নিয়ম অনুযায়ী ডিলিট করা হয়।
যেমন কারো মৃত্যু সংবাদ, কারো নির্বাচনে জয়লাভ, কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ, কোন সাম্প্রদায়িক ঘটনা ইত্যাদি।
যেকোন ইস্যুতে মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে ভিউ বাড়ানোর জন্য ভিডিও তৈরি করা হলে এবং নিয়মিত এই কাজটি করলে আপনার চ্যানেলে অ্যাডও আসবে না এবং আপনার চ্যানেলটি ইউটিউব কতৃপক্ষ ডিলিট করে দেবে।
তাই ভিডিও তৈরির সময় অবশ্যই এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
শেষ কথা
ইউটিউব এখন শুধু বিনোদনের মাধ্যমই নয়, শিক্ষারও মাধ্যম। এখানে অনেক শিক্ষনীয় চ্যানেলও রয়েছে। এখন আমরা যেকোন বিষয় জানার জন্যই ইউটিউবে সার্চ দিয়ে থাকি।
আর এজন্যই নিজেদের চ্যানেলের ভিউয়ার বাড়ানোর জন্য, অনেকেই কন্টেন্টের মাধ্যমে ইউটিউবের নীতিমালা ভঙ্গ করে ভিডিও তৈরি করে থাকে।
এ ধরনের কাজ বার বার করা হলে ইউটিউব তাদের সতর্ক করার পর কারণ দর্শিয়ে এসব ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করে দেয়।
তবে কোন চ্যানেল হ্যাক হলে বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে কারো চ্যানেল দিয়ে এ ধরনের কিছু অন্য কেউ ঘটালে চাইলে চ্যানেলের ক্রিয়েটর এ বিষয়ে পুনঃবিবেচনার আবেদন জানাতে পারেন ইউটিউবের কাছে।
আশা করি ইউটিউব চ্যানেল বন্ধের কারণসমূহ সম্পর্কে জানাতে সফল হয়েছি। সুপ্রিয় পাঠক পোস্টটি পড়ে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না।
এরপর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমরা পরবর্তীতে সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।
আরও পড়ুনঃ সেকেন্ডহ্যান্ড মোবাইল কেনার সময় যেসব বিষয়ে দেখে কিনবেন