যে কথাগুলো বললে আপনি বিপদে পড়বেন
এদেশের মানুষের মুখে মুখে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে যে- “কথার কারনে কেউ পায় ফুলের মালা আবার কথার কারণেেই কারও ভাগ্যে জোটে জুতার মালা” বাস্তবে উক্তিটির যথার্থতা রয়েছে। আজকের আলোচনায় আপনদের সামনে এমনই কিছু কথাকে সামনে আনবো- যে কথাগুলো বললে আপনি নির্ঘাত বিপদে পড়ে যেতে পারেন। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় প্রবেশ করি-

শুরুকথা:
পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা কথার মাধ্যমে মনের সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু কথা যদি হিসাব মাফিক না হয় তবে এই কথাই আপনার বিপদের কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। তাই সব ধরনের কথা এবং অনর্থক কথা থেকে বেঁচে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আজ আমি আপনাদেরকে জানাবো এমন কিছু কথা সম্পর্কে যেগুলো মানুষকে বলে বেড়ালে আপনার বিপদ তৈরি হতে পারে। তাহেল চলুন কথাগুলো সম্পর্কে জানা যাক-
নিজের অভাবের কথা বলে বেড়ানো:
মানুষের সাথে নিজের অভাবের কথা বলে বেড়ানো উচিত নয়। কারণ অভাবের কথা বলে বেড়ালে ঘনিষ্ঠ বন্ধবান্ধব দূরে সড়ে যেতে থাকে। কারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই টাকার পিছনে ছুটে চলা পছন্দ করে। কিন্তু যার সাধারণত টাকা পয়সা থাকে না, সে অপরের কাছে টাকা ধার চাইবে এটাই স্বাভাবিক।
আর এটার ভয়েই মানুষজন আপনার থেকে দূরে সরে যেতে থাকবে। তাই সবার সাথে অভাবটা শেয়ার না করে শুধুমাত্র যার কাছে টাকা ধার করা যাবে বলে মনে করেন তার কাছেই বলুন। সবার সাথে বিষয়টি শেয়ার করার তো প্রয়োজনও নেই।
অযথা সবার সাথে অভাবের কথা বলতে থাকলে মানুষজন আপনাকে অবজ্ঞা করে চলতে পারে বা আপনার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াতে পারে।
নিজের স্বচ্ছলতার কথা বলে বেড়ানো:
আপনি হয়তো বলতে পারেন, স্বচ্ছলতার কথা বললে আবার সমস্যা কোথায়? কিন্তু বিষয়টি চিন্তা করলে বুঝতে পারবেন যে, এখানেও সমস্যা আছে। কারণ, আপনার স্বচ্ছলতার কথা জানতে পারলে সুসময়ের কোকিলদের আনাগুনা বেড়ে যেতে থাকবে।
কারণ প্রতিটি মানুষের বন্ধু তালিকায় কিছু সহযোগী মনোভাবের বন্ধু যেমন থাকে তেমনি কিছু সুসময়ের কোকিল মার্কা বন্ধুও থাকে। তাই আপনার স্বচ্ছলতার বিষয়ে জানতে পারলে সেই ধরনের বন্ধুরা এসে অযথা ভিড় করতে থাকবে এবং সময়ে অসময়ে টাকা ধার চেয়ে বসবে। তাই নিজের স্বচ্ছলতার কথা গুপন রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
গুপন অপরাধের কথা বন্ধুদেরকে বলা:
অধিকাংশ মানুষ একটা বড় ধরনের ভুল করে থাকে। তা হলো নিজের গুপন পাপ বা অপরাধের কথা কাউকে না কাউকে জানিয়ে দেয়। কিন্তু চিন্তা করে দেখলে বুঝতে পারবেন যে, এটার যেমন কোন প্রয়োজনই ছিল না, তেমনি এই ইনফরমেশন অন্যকে জানানোর ফলে আপনি যে কোন সময় বিপদের সম্মখীন হতে পারেন।
কেননা আজকের প্রাণপ্রিয় বন্ধু যে কাল শত্রুতে পরিণত হবে না, এই গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না। কাজেই কোন কারণে আপনার ও আপনার বন্ধুর মাঝে শত্রুতা দেখা দিলে দেখবেন- আপনার গুপন কথাগুলো প্রকাশ করে দিয়ে আপনাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।
তাই যে কাজ গুপনে করেছেন, তা গুপনই রেখে দিন। অযথা আলাপ করে নিজের কাধে এতবড় বিপদ ডেকে আনবেন না।
মিথ্যা কথা বলা:
মিথ্যা এমন একটা জিনিস, যা শেষ পর্যন্ত গুপন থাকে না। কিন্তু তবুও দেখা যায় হর হামেশাই অনেক মানুষ অপ্রয়োজনে মিথা কথা বলে থাকে। এর ফলে কি হচ্ছে? দিন দিন সে মানুষের বিশ্বস্ততা হারাচ্ছে। স্বভাবতই মানুষ চায় যে, মানুষ তাকে সম্মান করুক।
কিন্তু আপনি যদি কথায় কথায় মিথ্যা বলুন তাহলে কখনোই মানুষ আপনাকে মন থেকে সম্মান করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, আপনি চিন্তা করলে দেখবেন যে, যারা আপনার সাথে ইতিপূর্বে মিথ্যা কথা বলেছিল এবং তার মিথ্যার ব্যপপারে আপনি জেনে গেছেন তাকে কিন্তু আপনিও মন থেকে সম্মান করতে পারেন না।
তাহলে এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে, আপনি মিথ্যা বলবেন আর মানুষ আপনাকে সম্মান করবে। যদিও প্রয়োজনের তাকিদে এবং ঠেকে মানুষ আপনাকে কটু কথা বলবে না কিন্তু বিপদে পড়লে আপনি এই মিথ্যা বলার জন্য কোন সহযোগী পাবেন না। বাস্তবে এটাই ঘটে থাকে।
মানুষকে মন্দ নামে ডাকা:
আমরা অনেক সময় মজা করে বন্ধু বান্ধবকে মন্দ নামে ডাকি আর হাসাহাসি করি। হয়তো আপনার বন্ধুও সাময়িকভাবে তাল মিলাতে হাসাহাসি করে থাকে। কিন্তু মন থেকে আপনার প্রতি শ্রদ্ধা আর সম্মান দুটোই উঠে যায়।
অনেক সময় এই ছোট বিষয়টিই ঝগড়া এবং শত্রুতার কারণ হয়ে দাড়ায়। তাই মন্দ নামে ডাকা থেকে বিরত থাকুন। অজানা ও অনাকাংখিত অনেক বিপদ থেকে মুক্তি পাবেন। পক্ষান্তরে আপনি যদি চান যে মানুষ আপনাকে মন থেকে ভালবাসুক, তবে ছোটদের বা বন্ধুদের সম্পূর্ণ নাম সুন্দর করে ডাকুন। দেখবেন আপনার সম্মান বেড়ে গেছে।
সমাপনি:
প্রতিটি ধর্ম এবং সভ্যতাই মানুষকে সংযত এবং উদার হওয়ার শিক্ষা দেয়। তবুও আমরা অসংযত হয়ে বড় বড় বিপদ তৈরি করি এবং নিজেরাই এর ভুক্তভোগী হই। তাই অনাকাংখিত বিপদ থেকে বাঁচতে হলে আমাদেরকে কথায় এবং আচরণে সংযত হতে হবে।
তবেই সকলে মিলে একটি শান্তিপূর্ণ ও স্বস্তির পরিবেশ উপভোগ করা যাবে। লেখাটি ভালো লাগলে ফেসবুকে শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিন। শেষ পর্যন্ত লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই- অসংখ্য ধন্যবাদ।