যৌবন ও বয়স ধরে রাখার রহস্য

কিছু কিছু মানুষের বয়স বাড়লেও শরীরে সব সময় বার্ধক্যের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কেন পায় না জানেন কি? কারণ তারা তরুণ বয়সে কিছু বিষয় মেনে চলে থাকে যার কারণে বার্ধক্য তাদের হাতছানি দেয় না। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক বয়স ধরে রাখার রহস্যগুলো কি কি।

যৌবন ও বয়স ধরে রাখার রহস্য
যৌবন ও বয়স ধরে রাখার রহস্য


যদিও বর্তমান প্রজন্মে বয়সকে একটি সংখ্যা ছাড়া আর কোনো রকমের মূল্য দেওয়া হয় না। তবুও বার্ধক্য কিন্তু আমরা কেউই পছন্দ করি না। নারী হোক কিংবা পুরুষ হোক যেই হোক না কেন কখনোই চাবেন না বৃদ্ধ-বৃদ্ধা হয়ে যেতে।


আসলে বার্ধক্য জিনিসটাকে কেউ পছন্দ করে না। প্রত্যেক নারী-পুরুষই ইয়ং ম্যান ইয়ং লেডি হিসেবে সব জায়গায় পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। এভারগ্রীন নামক একটি বিশেষ শব্দ তারা তাদের বয়সের সাথে তুলনা করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে।


প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদেরকে চিরসবুজ তথা সব সময় যুবক যুবতীদের সাথে তুলনা করতে চায়।

 


কিন্তু যতই আপনি নিজেকে ইয়াং লেডি/ ম্যান হিসেবে দুনিয়ার সামনে প্রকাশ করুন না কেন সময় কিন্তু আপনার জন্য থেমে থাকছে না। সময় ঠিকই তার নিজ গতিতে এগিয়ে চলছে। সেই সাথে বাড়িয়ে দিচ্ছে আপনার বয়সটাকেও।


আর এই বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার শরীরে চলে আসে নানা রকমের বার্ধক্যের লক্ষণ। যেমন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দুর্বল হয়ে যাওয়া, চুলের রং সাদা হয়ে যাওয়া, হাঁটতে কষ্ট হওয়া, কোমরের বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়া অথবা আরো নানারকম সমস্যা যেমন দাঁত পড়ে যাওয়া ইত্যাদি।


এ সকল বিষয়ই প্রকৃতপক্ষে বার্ধক্যের লক্ষণ। এই সকল বিষয় যখন কোন মানুষের ভেতরে প্রকাশ পায় বুঝতে হবে তার বয়স হয়ে যাচ্ছে। খুব দ্রুতই তিনি বৃদ্ধ নামক একটি দুয়ারে হাতছানি দিতে চলেছে। যদিও আপনি আপনার বয়সকে আটকে রাখতে পারবেন না।


সময় আপনার বয়সের সংখ্যাটাকে ক্রমাগত বাড়িয়ে নিয়ে নিজ গতিতে চলতে থাকবে। কিন্তু যুবক বা যুবতী বয়সে আপনারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ মেইনটেইন করতে পারেন যা করলে শরীরে বার্ধক্যের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া থেকে রক্ষা পাবেন।


আজকের আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হবে আপনার বার্ধক্য এড়াতে এবং বয়স ধরে রাখতে কি কি পদ্ধতি বা কি কি বিষয় লাইফ স্টাইল এর সাথে যুক্ত করতে পারেন। তাহলে চলুন আমরা আর দেরি না করে আর্টিকেলটির মূল অংশে প্রবেশ করে ফেলি। 


আরও পড়ুনঃ প্রাকৃতিক উপায়ে মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর করুন



প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল পান

বার্ধক্য হয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণ হচ্ছে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দুর্বল হয়ে যাওয়া। আর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তখনই দুর্বল হয় যখন শরীরের বিভিন্ন কোষগুলো মরে যেতে শুরু করে।


তথা প্রোটোপ্লাজমে জলের ঘাটতির কারণে যখন কোষগুলো মরে যেতে শুরু করে তখনই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শরীরের সকল অঙ্গ প্রতঙ্গের পচন ধরে যায় এবং তা দুর্বল হয়ে আসে। আর এটাই বার্ধক্যের মূল কারণ।


তাহলে প্রিয় পাঠক আশা করি বুঝতে পেরেছেন শরীরের বার্ধক্য ধরে রাখার জন্য আপনাকে প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হবে। আপনি যত বেশি পরিমাণে জল পান করবেন তত বেশি আপনার প্রোটোপ্লাজম সজীব থাকবে।


আর প্রোটোপ্লাজম সজীব থাকা মানে আপনার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিক থাকবে। যার কারনে আপনার শরীর খুব সহজে দুর্বল হয়ে পড়বে না এবং আপনি খুব সহজে বার্ধক্য এড়াতে পারবেন। 


আরও পড়ুনঃ চুল পড়া রোধ করতে কলার ব্যবহার




খাদ্যাভ্যাস ঠিক করা

শরীরকে ঠিক রাখার জন্য এমন সকল খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন যা স্বাস্থ্যকর সুষম এবং শরীরের জন্য ভালো। যেমন শাকসবজি ফলমূল শর্করাজাতীয় বিভিন্ন ফসল অথবা মাছ মাংস থেকে প্রাপ্ত ইত্যাদি।


এখন আপনি যদি এই সকল খাদ্য গ্রহণ করে ফাস্টফুড জাংক ফুড ইত্যাদি খাবারকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেন তবে সেটা আপনার শরীরের জন্য হানিকর। কেননা ঐ সকল খাদ্য উপাদানে বেশি পরিমাণে চিনি তেল স্নেহ জাতীয় পদার্থ থাকে যা শরীরের জন্য ভালো নয়।


সেই খাবারগুলো খেলে ফুড পয়জনিং থেকে শুরু করে শরীরের নানা রকম ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। আর এ কারণেই শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য আপনার খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে।


বেশি বেশি পরিমাণে ফাস্টফুড জাঙ্কফুড ইত্যাদি খাবার খাওয়া যাবে না। সবসময় সুষম খাদ্য গ্রহণ করার অভ্যাস করতে হবে। এভাবে খাদ্যভ্যাস যদি আপনি বদলাতে পারেন তবে আপনার বার্ধক্য এড়াতে কেউ বাধা দিতে পারবে না। 


আরও পড়ুনঃ গরমে ত্বকের যত্নের পরিপূর্ন টিপস জেনে নিন



পরিছন্নতা মেইনটেইন করুন 

বার্ধক্য এড়াতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে পরিচ্ছনতা মেনে চলা। আমাদের আশেপাশে নানা রকমের ধুলাবালি রোগজীবাণু রয়েছে। যা শরীরের ভেতর গিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কে দুর্বল করে দিতে পারে।


আর অঙ্গপ্রতঙ্গকে দুর্বল করে দেওয়াও কিন্তু বার্ধক্যের লক্ষণ এর ভেতরেই পরে। দেখা যায় যে আপনার বয়স এত বেশিও হয়নি কিন্তু আপনি খুবই দুর্বল বয়স্কদের মতো হাঁটতে পারেন না। বিভিন্ন কাজ করলেই খুব দ্রুত হাঁপিয়ে যান। এগুলো মূলত বয়স বাড়ার লক্ষণ।


তাই আপনাকে উক্ত রোগ জীবাণু ধুলাবালি সবকিছু থেকে বেঁচে থাকার জন্য পরিষ্কার পরিছন্নতা মেইনটেইন করতে হবে। প্রতিদিন আপনাকে স্নান করতে হবে। বাইরে থেকে এসে হাত ভালোভাবে ধুতে হবে।


প্রতিদিনের কাপড় প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে। 


আরও পড়ুনঃ চুলের যত্নে ডিমের দারুন কিছু ব্যবহার ও প্যাক



নির্বিঘ্নে ঘুম

ঘুমের অভাব শরীরের বয়সকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। দেখা যায় যে যারা রাতে ভালোমতো ঘুমাতে পারেন না তারা অনেক ফিট বয়স্কদের তুলনায় খুব বেশি দুর্বল হয়ে থাকে৷ এর কারণ হলো আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য মস্তিষ্কের সিগনাল পাওয়া অনেক বেশি প্রয়োজন।


কিন্তু এই মস্তিষ্ককে ঠিক রাখার জন্য বিশ্রাম দেওয়া প্রয়োজন। যেহেতু মস্তিষ্ককে মানবদেহের কম্পিউটার স্বরুপ বলা হয়ে থাকে। তাছাড়া মস্তিষ্ক একটি মাংসপেশির মতো। একে যত বেশি ব্যবহার করা হবে ততো বেশি এটি অক্ষত থাকবে।


কিন্তু শুধু ব্যবহার করলেই হবে না, মাংসপেশিকে আমরা যেরকম বিশ্রাম দিয়ে থাকি সেরকম মস্তিষ্ক বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। আর মস্তিষ্কের বিশ্রাম হচ্ছে গিয়ে ঘুম। বার্ধক্য এড়াতে আপনার ঘুমের প্রয়োজন অনেক বেশি।


সুতরাং রাত না জেগে কিংবা উল্টাপাল্টা সময় না ঘুমিয়ে রাতের বেলা দীর্ঘ টানা ৭/৮ ঘণ্টার জন্য ঘুম দিন এবং শরীরকে সুস্থ রাখুন। বার্ধক্য থেকে রক্ষা পান। 



নিয়মিত শরীরচর্চা

নিয়মিত শরীরচর্চা করার মাধ্যমে শরীর ফিট থাকে। আর শরীর ফিট থাকা বার্ধক্য এড়ানোর জন্য সব থেকে বড় সহযোগী। তাই বার্ধক্য এড়াতে আপনার প্রতিদিন শরীরচর্চা করা উচিত। সম্ভব হলে প্রতিদিন সকালে জগিং করতে বেরিয়ে যান।


বিকালবেলা এক্সারসাইজ করুন। এভাবে শরীরকে প্রতিনিয়ত ফিট রাখার চেষ্টা করুন দেখবেন আপনি বার্ধক্য এড়াতে পারবেন এবং যখন আপনার খুব বেশি বয়স হয়ে যাবে তখনও আপনি কর্মক্ষম থাকবেন। 


আরও পড়ুনঃ চুলের যত্নে ডিমের দারুন কিছু ব্যবহার ও প্যাক



কোন রকমের ড্রাগ সেবন করা যাবে না

আপনার যদি মাদকদ্রব্য বা ধূমপানের অভ্যাস থাকে তবে সেটা এখনই পরিত্যাগ করুন। কেননা অ্যালকোহল বা ধূমপান আপনার বার্ধক্য তৈরি করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


আপনি অবশ্যই আপনার শরীরের বার্ধক্য দেখতে চান না। সবসময় শরীরকে ভালো রাখতে চান। তাই চেষ্টা করবেন ড্রাগ কিংবা মাদক ধূমপানের অভ্যাস থাকলে সেটি দূর করে দেওয়ার। 




উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো গ্রহন করলে আপনার বয়স হয়তো সাময়িকভাবে বেড়ে যাবে কিন্তু আপনার শরীরের বয়স ক্রমাগত কমতে থাকবে। এভাবে শরীরের যত্ন নিন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন, ধন্যবাদ।