শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ঃ অর্জন ও প্রত্যাশা

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল নেতৃত্বের অগ্রভাগে। এখান থেকেই আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছিল সারাদেশে।১৯২১ সালের পহেলা জুলাই অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক চেতনা বিকাশের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ধুলিকণা এক একটি অপরাজেয় সংগ্রামী ইতিহাসের সাক্ষী। বাঙালী জাতির ইতিহাস আর এই বিশ্ববিদ্যালয় যেন একই সূত্রে গাঁথা। বাঙালীর মুক্তির সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র্র করেই যার সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভিশনটাই সফল শত আন্দোলন সংগ্রামের জ্বালানি হিসেবে কাজ করেছে। শতবছরের এ মহিরুহ তার ধারাবাহিক সফলতার ১০০ বছর পূরণ করেছে এ বছরের পহেলা জুলাই। এক শ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশকে যা দিয়েছে তা অনিঃশেষ কলমে লিখে রাখার মতো।

শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ঃ অর্জন ও প্রত্যাশা
শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: অর্জন ও প্রত্যাশা


‘শতবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকচর্চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা


সূচনাঃ

শতাব্দীর সেরা শতবর্ষী মহীরুহের নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।যার আরেক নাম দেয়া যেতে পারে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক, গনতান্ত্রিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকচর্চার সূতিকাগার যা অফুরন্ত আলোর ঝর্ণাধারায় উৎসারিত জ্ঞানার্জনের তীর্থভূমি, মুক্তচিন্তার পাদপীঠ।


যদিও অনেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে থাকেন কিন্তু আমি ঠিক এই জায়গাটাতেই দ্বিমত পোষণ করি এই জন্য যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোন তুলনীয় বস্তু নয় বরং নিজেই আপন মহিমায় জ্বাজ্জল্যমান একক সত্তা যা সম্ভবত পৃথিবীর অন্য কোন বিশ্ব বিদ্যালয়ের নেই যার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে এক বিশাল জনগোষ্ঠীর আবেগ,পরিচিতির স্বীকৃতি, ও অধিকার আদায়ের সংকল্প জড়িয়ে আছে এবং শুধু শিক্ষাই নয় বরং রাজনীতি থেকে নিয়ে অর্থনীতি,সংস্কৃতি থেকে সামাজিক চুক্তি সব ক্ষেত্রেই একটা পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের ভূমি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে প্রধান শক্তিকেন্দ্র হিসেবে কাজ করে এক লাল সবুজ পতাকার স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছে শতবর্ষী এই মহিরুহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যা পৃথিবীর সমস্ত বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে স্বতন্ত্র।


এমনকি যে অক্সফোর্ডের সাথে তুলনা করা নিয়ে আমার দ্বিমত সে বিশ্ববিদ্যালয়েরও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে একটি স্বাধীন জাতী উপহার দেয়ার ইতিহাস নেই যা রয়েছে আমার প্রাণ-প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এ কারণেই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্যের সাথে তুলনা করা নয় বরং অন্যকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তুলনা করতে পছন্দ করি কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয় বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন -সংগ্রাম আর সাংস্কৃতিক চেতনার আরেক নাম। এর প্রমাণ অতীতের সোনালী ইতিহাস।


বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল নেতৃত্বের অগ্রভাগে। এখান থেকেই আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছিল সারাদেশে।১৯২১ সালের পহেলা জুলাই অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক চেতনা বিকাশের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ধুলিকণা এক একটি অপরাজেয় সংগ্রামী ইতিহাসের সাক্ষী।


বাঙালী জাতির ইতিহাস আর এই বিশ্ববিদ্যালয় যেন একই সূত্রে গাঁথা। বাঙালীর মুক্তির সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র্র করেই যার সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভিশনটাই সফল শত আন্দোলন সংগ্রামের জ্বালানি হিসেবে কাজ করেছে। শতবছরের এ মহিরুহ তার ধারাবাহিক সফলতার ১০০ বছর পূরণ করেছে এ বছরের পহেলা জুলাই। এক শ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশকে যা দিয়েছে তা অনিঃশেষ কলমে লিখে রাখার মতো।


বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার আতুড়ঘর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টির পিছনে কালজয়ী ইতিহাস
:

১৯২১ সালের ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তিনটি অনুষদ, ১২টি বিভাগ এবং ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার এই দিনটি প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বাঙালির অন্যসব অর্জনের মতো প্রতিকূলতার ইতিহাস।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার বীজ বপন হয়েছিল ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের ঘটনার মধ্য দিয়ে।বঙ্গভঙ্গ রদের ঘটনায় পূর্ব বাংলার মুসলিম জনগণ ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ ও আশাহত হন।


ঢাকার তৎকালীন নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে একদল মুসলিম জনপ্রতিনিধি, যার মধ্যে ‘বাংলার বাঘ’ খ্যাত এ কে ফজলুল হক ও সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী অন্যতম, বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান সর্বপ্রথম ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি। এরই ধারাবাহিকতায় একই বছরের ৪ এপ্রিল বাংলার রাজ্য সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়।


এ লক্ষ্যে ২৭ মে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হয় স্যার রবার্ট নাথানিয়েলের নেতৃত্বে, যা ‘নাথান কমিটি’ নামে পরিচিত। এ কমিটি দ্রুততার সঙ্গে রিপোর্ট প্রদান করে ১৯১২ সালের শেষ দিকে। ১৯১৭ সালে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের আইন সভা Imperial Legislative Council-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও নিবন্ধনের জন্য আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি বিল উত্থাপন করেন। পরে এটি পাস হয় ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯২০’ নামে, যার অধীনে পূর্ব বাংলার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে আজ থেকে ১০০ বছর আগে ১৯২১ সালের ১ জুলাই। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নিজস্ব স্বাধীন প্রতিবাদী চিন্তা ধারা তৈরি করে।


বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুমিকা:

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জ্ঞানের প্রদ্বীপ জ্বেলে চলেছে ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি। তৈরি করেছে অসংখ্য জ্ঞানী ব্যক্তি। ঢাবির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমাজসেবক-রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের গবেষক সংখ্যা প্রচুর। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে কর্মরতদের প্রায় অর্ধেকের বেশি ঢাবির শিক্ষার্থী। সূচনালগ্নে বিভিন্ন প্রথিতযশা বৃত্তিধারী ও বিজ্ঞানীদের দ্বারা কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রিত হবার প্রেক্ষাপটে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে স্বীকৃতি পায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


বিশ্ববিদ্যালয় হলো সৃজনশীলতার ভিত্তিভূমি ও মেধা চর্চার কেন্দ্রভূমি। নতুন চিন্তা-ভাবনা তৈরির মহান প্রতিষ্ঠান। আমরা জাতীয় জীবনের যেসব অর্জনকে নিয়ে গর্ববোধ করি তার সাথে ঢাবির প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। জাতীয় জীবনে সমৃদ্ধি আনয়ন ও অগ্রবর্তী চিন্তার প্রসারে এই প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা তুলনাবিহীন। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে প্রতিবাদী চেতনার বিকাশ ঘটতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের সমাজ-সংস্কৃতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটতে থাকে।


১৯২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে গঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ। ছাত্র সংসদ ভূমিকা রাখে ছাত্রদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামকে সংগঠিত করতে। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে কার্জন হল প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ জানায়। ভাষা আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপদান করতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের অগ্রণী ভূমিকা দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করে। ভাষা আন্দোলনকে সংগঠিত করতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অনস্বীকার্য।


মুলত পঞ্চাশের দশক থেকেই এ দেশের রাজনীতি আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় সমার্থক হয়ে ওঠে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে এরশাদ স্বৈরাচারের পতন পর্যন্ত অধিকার আদায়ের প্রতিটি গণ-আন্দোলনে অগ্রবর্তী ভূমিকা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের। এর মূল শক্তি ছিল অশুভ, অসত্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারুণ্যের স্বভাবজাত দ্রোহের আগুন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টিশীল বুদ্ধিবৃত্তিক সাংস্কৃতিক চার্চা। বিগত ১০০ বছরে বাংলাদেশের রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সমাজ বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনবদ্য অবদান রেখেছে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য কৃতি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করেছেন, তন্মধ্যে রয়েছেন ১৩ জন রাষ্ট্রপতি, ৭ জন প্রধানমন্ত্রী এবং একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান এখানে পড়াশোনা করেছেন এবং বাংলাদেশ স্বাধীন করতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশেষ অবদান ছিল।ঢাবির শিক্ষকবৃন্দ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি পদক লাভ করেছেন যারা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও সাংস্কৃতিক চর্চার ধারক ও বাহক।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি প্রত্যাশা:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বাঙালি ও বাঙালিরই ইতিহাস।বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ের সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয় জড়িত। তাই স্বাভাবিকভাবেই দেশের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে এই বিশ্ববিদ্যালয়ই সবার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।


দেশের ইতিহাস, সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি—প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনস্বীকার্য অবদান রেখেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। এখনো প্রতিবছর দেশের সর্বাধিক গ্র্যাজুয়েট এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তৈরি হয়। প্রতিবছর লক্ষাধীক শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে উন্মুখ হয়ে অধীর আগ্রহে আকুলতা প্রকাশ করে।


''তেমনি এক ভর্তিচ্ছুশিক্ষার্থীর ঢাবির প্রতি কাব্যিক সুরে আকুলতা "

"কবিতা লেখা শুরু করলাম এই প্রহরের শেষে,

তোমার রাজ্যে আসতে চাই তোমায় ভালোবেসে।

হীন আমি, নীচ আমি কবি আমি নহে,

কবিতাটি লিখলাম শুধু,তোমার ভালোবাসার রাহে।

একটু খানি ভুল হলে হেসো না'ক কভু,

ভুল কিন্তু সকলি করে, করে না শুধু প্রভু।

তুমি যে ফুটন্ত ফুল, আমি যে মৌমাছি,

হৃদয়ে মোর আকুলতা মধু আহরণে আছি।

দিওনা বিমুখ করে, একটু তব রস বিলাও মম তরে,

একটু নির্যাস নিতে চাই মম তরে,কি আসে যায় তাতে?

তোমার ঘটতি হবে না তাহাতে, মম প্রাণ বাঁচিবে যাহাতে।।

মধুময় জ্ঞানের রাজ্যে ঠাই চাই পীঠস্থানে,

কতো শত সন্তান হয়েছে ধন্য তোমার মধু পানে।।

তিমির কুন্তলার ভয়াবহ বাণে,জীবন তরীর ছোট পালে,

দিগ্বিদিক খুঁজে পেয়েছি তব সন্ধান যেতে চাই তোমার কোলে।।

মৌমাছি হয়ে আসতে চাই জ্ঞান আহরণের তরে,

ফুলমালি যেন বিমুখ করে ফিরাইয়া না দেয় মোরে।।

আলোক ছাড়া আঁধার রাতে পথ পাওয়া যায় কি খুজে? তুমি হও মোর আলোকবর্তিকা পথ নিতে চাই বুঝে।।"


আগামী সকল সফল আন্দোলন সংগ্রাম ও ইতিবাচকতার নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশের সুখ সমৃদ্ধি ও মুক্তবুদ্ধিচর্চা - সাংস্কৃতিক চর্চায় বরাবরের মতো বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখুক এমনটাই জাতির প্রত্যাশা এ শতবর্ষী মহীরুহের কাছে।


অতীতের সকল অর্জন কোন ভাবেই যেন ম্লান হয়ে না যায়, অতীত গৌরব যেন যুগযুগ ধরে বহাল থাকে এমনটাই জাতীর প্রত্যাশা। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি,, ক্ষমতার পদলেহন এবং উর্ধ্বমহলকে খুশি করাই যেন জাতীর এ মাস্তুলসদৃশ কান্ডারীর লক্ষ্য না হয়, কোন ভাবেই যেন এর গায়ে কোন কালিমা লেপন না হয়ে বরং দেশ ও জাতীকে ধর্ম,মত, বর্ণ, রাজনৈতিক মতাদর্শের উর্ধ্বে গিয়ে জাতীর যে কোন ক্রান্তিলগ্নে একাত্তরের মতো আবারো দিকপালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শতবর্ষী এ তারুণ্য প্রদীপ্ত মহীরুহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিক এমনটাই শতবর্ষে ঢাবির প্রতি দেশ,জাতি ও জনসাধারণের প্রত্যাশা।


উত্তরোত্তর শিক্ষার মান,বিশ্ব র্যাংকিংএ ভালো অবস্থান, গবেষণা, দক্ষ জনসম্পদ,হালের তুখোড় রাজনীতিবীদ,সমাজসংস্কারক, বিশ্ব মানের উদ্যোক্তা তৈরিসহ বর্তমানের কিছুটা ক্রমহ্রাসমান নেতিবাচকতা কাটিয়ে উঠে বিশ্ব মানের পীঠস্থান হিসেবে বিশ্বের সামনের সারির বিশ্ব বিদ্যালয়গুলোর সাথে প্রতিযোগিতাকরে টিকে থাকুক যুগ থেকে যুগ ধরে।জ্ঞানের আলো বিলিয়ে যাক এ আলোর বাতিঘর নিজ সীমানা পেরিয়ে বহির্বিশ্বে। 


উপসংহার
:

এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ।


প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত নানা সমস্যা ও সংকট পেরিয়ে এ প্রতিষ্ঠান এ দেশের মানুষের সামনে খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। সাফল্যের সঙ্গেই আজ এই বিশ্ববিদ্যালয় পার করছে প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ।

পরিশেষে বলবো;

"ওহে ঢাবি, তুমি বাংলার প্রথম ও শেষ রবি,

তোমার গর্ভে জন্ম নিয়েছে শত সহস্র কবি।

তুমি শতবছরেও তারণ্যে-শক্তির প্রতিচ্ছবি,

তোমার পৃষ্ঠেই প্রতিফলন হয়েছে একাত্তরের রবি।।

তুমি আগামীর ঝান্ডাধারী, ফররুখের পাঞ্জেরি,

নজরুলের সেই কাঙ্ক্ষিত কান্ডারী তুমি পুষ্প মাঞ্জুরী।

তোমার ছায়াতলে, মুক্তডানা মিলে খিলখিলিয়ে হাসি, প্রাণের ঢাবি, ভালোবাসি তোমায়, বড্ড ভালোবাসি।।