শরীরের মধ্যে ধীরে ধীরে বাড়িয়ে তুলুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
সুস্থ জীবনযাপন এবং সুন্দর একটা খাদ্যাভ্যাস আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেবে কয়েক গুণ। তার জন্য আপনাকে কিছু বিষয়ের উপর খেয়াল তো রাখতেই হবে।

সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন কে না চায় বলুন। ছোটখাটো রোগ তো এমনিতেই শরীরে দেখা দিতেই পারে। তবে সে ক্ষেত্রে যদি শরীরের মধ্যে থাকা অ্যান্টিবডি রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদেরকে সুস্থ করে তোলে, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। খেতে হচ্ছে না কোন ওষুধ, না যেতে হচ্ছে ডাক্তারের কাছে, শরীরও সুস্থ, সবদিক থেকেই ভালো, তাই না। তবে এ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমাদের কিন্তু কিছু নিয়ম মেনে চলা দরকার। তবেই না শরীরের মধ্যেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে অনেকটাই।
জানা যায় যে মানব শরীরের মধ্যেই বিভিন্ন রোগের অ্যান্টিবডি আগে থেকেই তৈরী থাকে। সেই সব রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, কোন মেডিসিন ছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সেই রোগগুলোকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে। তবে তার জন্য তো শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন, তাই না। শরীরে যত বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে ততোই রোগবালাই কাছে আসবেনা।
দীর্ঘদিন করোনার সাথে লড়াই করে মানুষ আজ ক্লান্ত। আর এই লড়াই নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পরও আতঙ্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ে না। বিশেষ করে কোন আতঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এতটাই কমিয়ে দেয় যে, রোগ সেরে গেলেও আবার সেই রোগের আতঙ্ক শরীরে থেকে যায়। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর থেকে এর প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে বাড়িয়ে তুলতে হবে।
এ ক্ষেত্রে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ জনিত কোনো রোগ থাকলে সে ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর দিকটা বিশেষ করে খেয়াল রাখাটা জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী একটা রুটিন তৈরি করুন। তাছাড়া এই করোনা পরিস্থিতি কাটার পর সুস্থ স্বাভাবিক জীবন পেতে গেলে কিছু নিয়ম মেনে চলা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক সেই কিছু বিশেষ নিয়ম সম্পর্কে -
১. পরিমিত বিশ্রাম নিন :
করোনা পরিস্থিতিতে পরিবেশে ভাইরাসের প্রকোপ বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে ভালোভাবে নিঃশ্বাস নেওয়ারও পরিবেশ নেই। এর মধ্যে থাকতে থাকতে মানুষের শরীরে অনেক রকম শক্তির অবনতি ঘটেছে। তার কারণে জোর করে অতিরিক্ত পরিশ্রম না করাটাই ভালো।
পরিমিত বিশ্রাম অবশ্যই জরুরি শরীরকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে। কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রাম নিন, ভালো করে টানা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। সুস্থ স্বাভাবিক জীবন দ্রুত ফিরে পেতে বিশ্রাম এর জুড়ি মেলা ভার। তাই শারীরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি বিশ্রামের দিকটা বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
২. পুষ্টিকর খাবার খাওয়া :
এটা আর নতুন কিছু নয়, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর খাবারের কতখানি ভূমিকা, সে সম্পর্কে কমবেশি সকলেই ধারণা আছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে এই ধরনের অনেক রকম নানা তথ্য পেতে পারেন আপনি।
যদি কোন রোগ দীর্ঘদিন শরীরে বাসা বেঁধে থাকে তাহলে পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী নিজের একটা হেলদি ডায়েট প্লান করে ফেলতে পারেন যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব। প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি খাওয়ার প্রয়োজন আছে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য। তবে হ্যাঁ, আর একটা কথা, পর্যাপ্ত পরিমান জল খেতে ভুলবেন না যেন।
৩. শরীরচর্চা বা ব্যায়াম :
জিমে গিয়ে জিম করাটা সকলের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনা। ঘরেতেই খালি হাতে স্বাভাবিক কিছু ব্যায়াম নিয়মিত করার ক্ষেত্রে শরীরে অনেক রকম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন অন্তত আধ ঘন্টা সময় নিজের জন্য বের করে এই ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি। শরীরে বল পেতে এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের মধ্যে সুখ অনুভূতি পূর্ণ এক হরমোনের নিঃসরণ ঘটে, তার ফলে মন থাকে ফুরফুরে।
তবে সব ব্যায়াম সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। নিজের শরীর বুঝে ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। শরীর দুর্বল লাগলে, খুব বেশি ক্লান্ত লাগলে, মাথা ঘোরার মত এমন সব কিছু হলে আরো বেশি বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করুন। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস জনিত যে ধরনের ব্যায়াম গুলো আছে, সেই ব্যায়ামগুলো করতে পারেন নিয়মিত। এর ফলে আপনার শরীরের মধ্যে রক্ত চলাচল ক্ষমতা স্বাভাবিক হবে।
৪. রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে মাপা :
করোণা পরিস্থিতিতে যারা করোনাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন তারা এটা খেয়াল করে দেখবেন হঠাৎ করে করোনা থেকে সেরে ওঠার পর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করে।
তাই রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নেওয়াটা বিশেষ জরুরী। করোনার পর ফুসফুসে যদি বেশি পরিমাণে ক্ষতি হয় তখনই রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে থাকে।
৫. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার খেলা :
কথায় আছে ব্রেনকে যত বেশি চাপ দেওয়া হয়, ব্রেন ততবেশি কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই একেবারে ব্রেইনকে শুধুমাত্র স্বাভাবিক কাজে ব্যবহৃত না করে, এমন কিছু কাজে ব্যস্ত রাখুন যাতে আপনার স্মৃতিশক্তি এবং বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি পায়।
পাজল অথবা ছোটদের অনেক রকম শব্দ ছক, গেম, ধাঁধার সমাধান, খেলতে পারেন স্মৃতিশক্তিকে আরো বেশি শক্তিশালী করে। মস্তিষ্ক যাতে সুস্থ থাকে সেই দিকটা খেয়াল রাখাটা জরুরি।
৬. পজিটিভ মাইন্ডসট :
পজিটিভ বা ইতিবাচক চিন্তাভাবনা অনেক ক্ষেত্রে কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। অনেকেই হয়তো ভাববেন যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ক্ষেত্রে পজিটিভ মাইন্ডে এমন কি ভূমিকা! অনেক ভূমিকা আছে। শরীরে ৭৫ % রোগ মানুষের মানসিক চিন্তা ভাবনার উপর নির্ভর করে জন্ম নেয় শরীরের মধ্যেই।
যেমন অনেককেই বলতে শোনা যায় যে, "যে বেশি শুয়ে বসে থাকলে রোগ চেপে ধরে।" এটা কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক। মনে সাহস যুগিয়ে সব সময় ইতিবাচক বা পজিটিভ চিন্তা-ভাবনা করলে অনেক ক্ষেত্রে অনেক নেগেটিভ জিনিস জীবন থেকে এমনকি শরীর থেকেও অনেক দূরে সরে যায়।
শরীরে কোন রোগ বাধা বাসা বাধলে সে বিষয়ে বেশি চিন্তাভাবনা করে রোগকে না বাড়িয়ে পজেটিভ ভাবনা ভেবে, যে ছোটখাটো কোনো কিছু। পরে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে এতে যা কিছু করার সব কিছু করতে রাজি আছেন আপনি। দেখবেন রোগটা অতটা বড় মনে হবে না আপনার।
আতঙ্কের বসে অনেকেই রোগের শিকার হয়ে থাকেন। এই করোনা পরিস্থিতি তেই দেখুন না, প্রথম যখন করোনা পৃথিবীতে আসে তখন অনেকেই আতঙ্কের বসে হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছেন। আদৌ তাদের শরীরের মধ্যে কোনরকম করোনা পজিটিভ ছিল না। এরকম উল্টোপাল্টা চিন্তা ভাবনা অনেক সময় শরীরে বিষক্রিয়া ঘটিয়ে থাকে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যেগুলো মেনে চলা দরকার, সেগুলো মেনে নিজের জীবনকে আরো সুন্দর করে তোলা যায়। কি বলেন আপনারা!