শিক্ষা লোন কি? এই লোন এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যোগ্যতা এবং সুবিধা সমূহ জেনে নিন

কর্মজীবনকে সমৃদ্ধ করে তোলার জন্য গতানুগতিক ডিগ্রির পাশাপাশি উন্নত ও উচ্চপর্যায়ে বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জন করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন৷ বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক সহজ শর্তে ছাত্রদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিয়ে থাকে৷আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দিতে যে ঋণ দেওয়া হয় তাই শিক্ষা ঋণ নামে পরিচিত।

শিক্ষা লোন কি? এই লোন এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যোগ্যতা এবং সুবিধা সমূহ জেনে নিন

শিক্ষা ঋণ বা উচ্চশিক্ষা ঋণ কিংবা শিক্ষার্থী ঋণ—যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, এটির মূল উদ্দেশ্য ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের আয় থেকে পরিশোধ করার শর্তে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ব্যয়ভারের একাংশ সরকার বা বিশেষায়িত কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করা।


উন্নয়নশীল দেশগুলোর নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারে সন্তানদের উচ্চশিক্ষাই আর্থিক অবস্থা উন্নয়নের সহজতম উপায় বলে গণ্য করা হয়। কারণ, আর্থিক অবস্থা উন্নয়নের যে বিকল্প পন্থা ব্যবসা, সেটি শুরু করা বা চালু রাখার মতো অর্থনৈতিক সক্ষমতা খুব কম ক্ষেত্রেই তারা অর্জন করতে পারে। উপযুক্ত কর্মসংস্থানের একমাত্র চাবিকাঠি হচ্ছে উচ্চশিক্ষা। কিন্তু এই সব পরিবারের অন্যান্য মৌলিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্তানের উচ্চশিক্ষার খরচ জোগানো তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে।


এসব পরিবারের বহু প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার ব্যয় নির্বাহের অক্ষমতায় হারিয়ে গেছেন। আমাদের দেশে মুষ্টিমেয় কিছু প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্বের জীবনী থেকে জানা যায়, আচমকা কোনো সহৃদয় পৃষ্ঠপোষক না পেলে কখনোই ওপরে উঠে আসতে পারতেন না তাঁরা। এই শ্রেণিভুক্ত নন এমন অনেক প্রতিভা লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে অপচয়িত হয়েছেন আমাদের অপ্রতুল রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার কারণে।



শিক্ষা ঋণ এর সুবিধা সমূহ:

শিক্ষা ঋণ যে কেবল অসচ্ছল পরিবারের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজন তা নয়, সরকারি ব্যয়ের ওপর চাপ কমানোর জন্য অনেক দেশে (ক্ষেত্র বিশেষে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে) উচ্চশিক্ষার ব্যয় নির্বাহে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্যও শিক্ষা ঋণের বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা ও পাঠদানের মানোন্নয়নের জন্য ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে উচ্চশিক্ষায় সরকারি ব্যয় কমানোর প্রয়াসের একটা উপায় হিসেবেও শিক্ষা ঋণ উৎসাহিত করা হয়ে থাকে। সরকারি অনুদান, বৃত্তি কিংবা বিনা মূল্যে শিক্ষা ইত্যাদির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে শিক্ষার ব্যয়কে আরও সুষমভাবে বণ্টন করে নেওয়া এবং সর্বোপরি মানসম্পন্ন সর্বজনীন উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করাও শিক্ষা ঋণের মুখ্য উদ্দেশ্য।



বাংলাদেশে শিক্ষা ঋণ কার্যকরভাবে চালু না হলেও ১৯৮০-র দশকে সোনালী ব্যাংকের তদানীন্তন প্রধান নির্বাহী লুত্ফর রহমান সরকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার শেষে তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে চালু করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্মসংস্থান প্রকল্প, ‘বিকল্প’। কোনো জামানত ছাড়া কেবল শিক্ষা সনদ জমা রেখে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার যুগান্তকারী এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ৩৮টি খাতে ঋণ বিতরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। কেবল উচ্চশিক্ষিত তরুণদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিই এটির উদ্দেশ্য ছিল না, কর্মজীবনে প্রবেশ করা তরুণদের মধ্যে শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করাও ছিল এই প্রকল্পের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।


আজ থেকে ৩৩ বছর আগে চালু হওয়া প্রকল্পটি একসময় বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু এই প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৩০০ সফল উদ্যোগের মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, এই প্রতিশ্রুতিশীল তরুণেরা আজ প্রতিষ্ঠিত সফল উদ্যোক্তা। প্রকল্পটি বন্ধ হওয়ার পেছনে বহু কারণ দেখানো যেতে পারে, কিন্তু যেসব কারণে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়, সেই দুর্বলতাগুলোর সমাধান বর্তমান সময়ের নিবিড় নিয়ন্ত্রণ এবং পরিপালন সংস্কৃতিতে বহুলাংশে নিশ্চিত করা যেত।



প্রতি বছর আমাদের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে পৌঁছান লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। ২০১৬ সালে ১২ লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার। আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেই মোট আসনসংখ্যা ৪৫ হাজার। আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের হিসাবে ২০১২ সালে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার, পরবর্তী বছরগুলোতে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। অন্য হিসাবে দেখা যায়, ২০১৬ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গেছেন ৪৫ থেকে ৫১ হাজার শিক্ষার্থী।


উৎপাত্তগুলো থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে, এই বিশাল সংখ্যক উচ্চশিক্ষার্থীর মধ্যে শিক্ষা ঋণ গ্রহণে ইচ্ছুক এবং যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যাও হবে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু আর্থিক খাতে নানা নামে বিভিন্ন সেবাপণ্য সংযোজন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং, স্কুল ব্যাংকিং ইত্যাদি চালু করা হলেও শিক্ষা ঋণ খাতে ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত।


ঋণ দিচ্ছে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান :

দেশের অর্থনৈতিক মন্দা এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণদানের খাতসমূহকে সন্কুচিত করে দিলেও বিশেষ সেবা প্রদান কর্মসূচির আওতায় দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠান ছাত্রঋণ দিয়ে থাকে৷ এর প্রধান উদ্দেশ্য, উচ্চবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও যেন উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়৷ কিছু কিছু ব্যাংক একে ক্যারিয়ার লোন বলে আবার কিছু ব্যাংক একে সরাসরি স্টুডেন্ট লোন বা শিক্ষা ঋণ নামে অভিহিত করে৷ সাধারণত অভিভাবক অথবা সরাসরি শিক্ষার্থীদেরও এ ধরনের ঋণ দেওয়া হয়৷ তবে এ ক্ষেত্রে অভিভাবক অথবা শিক্ষার্থীদের ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কিছু শর্ত মেনে ঋণ নিতে হয়৷


ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের নাম: 

• এইচএসবিসি ব্যাংক
• ব্র্যাক ব্যাংক
• প্রাইম ব্যাংক
• ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
• উত্তরা ব্যাংক
• গ্রামীন ব্যাংক



ঋণ উঠানোর যোগ্যতা:

ঋণ পরিশোধে সক্ষম বিবেচিত যে কেউ এই ব্যাংকগুলো থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে ঋণ নিতে পারে৷ সাধারণত সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে যাদের বেতন ১২-১৮ হাজার টাকা তারাই এ লোনের সুবিধা পেয়ে থাকেন৷ ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে আয়ের প্রমাণ সাপেক্ষে মাসিক আয় অবশ্যই ৫০ হাজার টাকা হতে হবে৷ ২৫ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সের যে কেউ যোগ্যতা অনুসারে ঋণ নিতে পারবেন৷



ঋণ নেওয়ার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

অভিভাবকরা যদি তাদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা নিতে আগ্রহী হন, তবে যেসব ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে সেগুলোর যেকোনো শাখায় গিয়ে মার্কেটিং/ক্রেডিট বিভাগে যোগাযোগ করতে হবে৷ সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাই আপনাকে বিস্তারিত জানিয়ে দেবেন৷ তবে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ও ডকুমেন্ট যেমন- আয়ের প্রমাণপত্র, কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সনদ ও ছাত্রছাত্রীর সম্মতিপত্র জমা দিতে হবে৷ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে নূন্যতম সময়ে আপনার শিক্ষাগত ঋণ দিয়ে দেবে৷