সাইবার সিকিউরিটি - পর্ব ২ঃ ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকুন

ইন্টারনেটে আমাদের অবাধ ব্যবহারের নেশা থাকাটা স্বাভাবিক। তবে সাইবার সিকিউরিটির দিকেও আমাদের অবশ্যই নজর রাখা উচিত। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি কিভাবে করবো, তা আজকের পোস্টে আসুন জেনে নেয়া যাক।

সাইবার সিকিউরিটি - পর্ব ২ঃ ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকুন
সাইবার সিকিউরিটি - পর্ব ২ঃ ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকুন


সারা বিশ্বে ইন্টারনেট এবং অনলাইন জগতের আধিপত্য বিস্তারের সাথে সাথে, সাইবার সিকিউরিটি খুব দরকারী হয়ে পড়ছে। কেননা মানুষ এখন অনলাইন এর ভিত্তিতে নিজেদের অধিকাংশ প্রাতিষ্ঠানিক, ব্যক্তিগত কাজ সম্পাদন করে। সুতরাং এসব সংক্রান্ত সকল তথ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য অবশ্যই অনলাইন এ নিরাপদ থাকা প্রয়োজন। 


ইন্টারনেট হচ্ছে একটি চমৎকার এবং সার্বজনীন অনলাইন প্লেস, যেখানে আপনি হাজারো রকম কাজ, এবং মানুষের সাথে অনলাইন এর ভিত্তিতে যোগাযোগ করতে পারেন। এর যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি ভুল মানুষ বা সিস্টেম এর সাথে জড়িয়ে পড়লে আপনার বিভিন্ন বিপদও হতে পারে যেগুলো অবশ্যই অনলাইন এ থাকার জন্য আপনাকে নজরে রাখতে হবে। 


এমন অনেক বিষয়াবলী রয়েছে যেগুলো অনলাইন নিরাপত্তার সাথে জড়িত। তবে প্রাথমিকভাবে আপনাকে অনলাইন স্ক্যামার এবং হ্যাকারদের থেকে নিরাপদ থাকতে হবে। তবে শুধু এটুকুই অনলাইন নিরাপত্তার মূল বিষয়বস্তু নয়, আপনাকে অবশ্যই আপনার ব্যক্তিগত তথ্যও সুরক্ষিত রাখতে হবে, এবং নিজস্ব কোন তথ্যাবলি কারও সাথে শেয়ার করা যাবেনা, যেটা ব্যবহার করে কেউ অনলাইন এ আপনার ক্ষতি করতে পারে। এটা আসলে বুঝাচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে।


অনলাইন এ নিরাপদ থাকা বলতে আপনি কি শেয়ার করবেন, কার সাথে, কোথায় এগুলো সম্বন্ধে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ থাকা। এছাড়াও নিজের ব্যক্তিগত তথ্যাবলী সুরক্ষিত রাখা ও অনলাইন এর হুমকিগুলো থেকে নিজের অনলাইন মাধ্যমগুলো দূরে রাখাই অনলাইন এ নিরাপদ থাকার মূলকথা। 

এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ দেখানো হলো যেগুলো আপনাকে অনলাইন এ নিরাপদ থাকতে সহায়তা করবে:


সাইবার সিকিউরিটি বিধান করার উপায়সমূহঃ


১. আপনার ব্যক্তিগত সেটিংস নিয়ে অবহেলা করবেন না

অনলাইন এ বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং যোগাযোগ মাধ্যম এর টার্মস এবং কন্ডিশনগুলো পড়া মোটেই সহজ কাজ নয় বা আমরা পড়িনা, তবে ব্যক্তিগত সেটিংস বিষয়ে পড়া এবং সেগুলো নিজের মত সাজিয়ে নেয়া খুবই দরকারী একটি বিষয়। আপনার ব্যক্তিগত অনলাইন প্রোফাইল সবসময় প্রাইভেট করে রাখুন যাতে আপনি জানতে পারেন এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন আপনার কন্টেন্ট কারা দেখছে বা দেখবে।


তবে আপনি আপনার বিভিন্ন অনলাইন সাইট বা যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যক্তিগত সেটিংস অন্যরকম ভাবেও সাজাতে পারেন, যদি আপনি চান যে লোকজন আপনার তথ্যাবলি দেখতে পাক বা অবাধে যোগাযোগ করুক।


২. ভিপিএন ব্যবহার করুন

যদিও আপনার অনলাইন এ থাকার জন্য প্রাইভেট এবং সুরক্ষিত ইন্টারনেট কানেকশন থাকে, তবুও ভিপিএন ব্যবহার করে আপনি নিজের নিরাপত্তায় এক স্তরের অতিরিক্ত সুরক্ষা যুক্ত করতে পারেন। ভিপিএন আপনাকে কোন প্রকার তথ্য লিক হওয়া থেকে বাচাতে পারে এবং আপনি নিশ্চুপভাবে অনলাইন এ থাকতে বা কাজ করতে চাইলে ভিপিএন খুবই কাজের।


ভিপিএন এ কানেক্ট করা মানেই আপনি যেকোনো পাবলিক প্লেসের ওয়াইফাই, যেমন- হোটেল, কফি শপ ইত্যাদি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন। আপনার মোটেই পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করা উচিত নয় যখন আপনি কোনো দরকারী ও গোপনীয় লেনদেন করছেন, বা কোন দরকারী তথ্য, যেমন- ব্যাংকের কোন বিষয়াবলী নিয়ে কাজ করছেন। কারণ এসব ওয়াইফাই দিয়ে অনলাইন ব্যবহার করা মোটেই সুরক্ষিত নয়।


৩. সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে আপনার ধারণা প্রফেশনাল স্তরে উন্নীত করুন

আপনি যদি খুব ভালোভাবে অনলাইন নিরাপত্তা বিষয়ে জেনে যান, তাহলে আপনি তখন নিজের এবং নিজের প্রাতিষ্ঠানিক সকল অনলাইন ব্যবহার নিরাপদে করতে পারবেন এবং সকলকে অনলাইন নিরাপত্তা বিষয়ে সহায়তাও করতে পারবেন।


আপনি অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করলে, অনলাইন কম্পিউটার সাইন্স মাস্টারস ডিগ্রি এর মত কোয়ালিফাইডও হয়ে যেতে পারেন। এটা আপনাকে আপনার অনলাইন কাজকাম এবং তথ্যাবলী আরও সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করবে। 


৪. স্ক্যামারদের সম্বন্ধে ধারণা উন্নয়ন করুন

অনলাইন এ জাঙ্ক বা স্প্যাম ইমেইল চিহ্নিত করা খুবই সহজ ব্যাপার তবে যদি কখনও আপনি ব্যস্ত থাকেন, তাহলে আপনি খেয়াল নাও করতে পারেন। কারণ কখনো এমন হয় যে, স্ক্যামাররা অনেকটা পেশাদার ইমেইল এর মতোই স্প্যাম ইমেইল পাঠায় যার মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যাবলী হ্যাক হতে পারে। এসব স্ক্যামাররা অনলাইন এ আপনার ব্যাংক এর নামে বা ব্যবহৃত শপিং সাইট এর নাম ব্যবহার করে আপনাকে ইমেইল পাঠাতে পারে যা আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে।


তাই একটু সময় নিয়ে বুঝে নিন যে জাঙ্ক বা স্প্যাম ইমেইলগুলো আসলে কেমন হয় এবং কিভাবে এগুলো থেকে বাচা যায় ও এড়িয়ে চলা যায়।


এজন্য, অনলাইনে স্ক্যামারদের সম্বন্ধে ধারণা রাখুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। অনলাইন এ থাকা যেকোনো ব্যক্তিই চাইলে ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে যেকোনো অনলাইন প্রোফাইল বানাতে পারে। তাই অনলাইন এ কাউকে বিশ্বাস করে কোন তথ্য শেয়ার করার আগে, ভালো করে যাচাই বাছাই করে নিন।


৫. কখনো পাসওয়ার্ড সহজ দেবেন না

অনলাইন এর বিভিন্ন জায়গার পাসওয়ার্ড সাধারণভাবে মানুষজন সহজ কিছু দিয়ে থাকে যাতে সেটা মনে রাখতে পারে। তবে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে নিজের সকল একাউন্ট সুরক্ষিত রাখা খুবই প্রয়োজন। এরকম পাসওয়ার্ড হতে পারে অক্ষর, নাম্বার এবং বিশেষ ক্যারেক্টার গুলোর সমন্বয়ে।


তবে এমন কোন সহজ পাসওয়ার্ড দেবেন না যেটা আপনার সম্বন্ধীয় বা আপনি যেখানে থাকেন। সবসময় পাসওয়ার্ড এমন কিছু দেবেন যা আপনার সম্বন্ধীয় নয় আবার কঠিনও হবেনা কিন্তু আপনি মনেও রাখতে পারবেন। 


৬. অনলাইন এ যেকোনো পোস্ট সাবধানে করুন

অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেকোনো পোস্ট শেয়ার করা খুবই সহজ ব্যাপার, এবং মাত্র কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটেই অনলাইন এ পোস্ট করা যায় বা ছবি আপলোড করা যায়। কিন্তু কখনই খুব দ্রুত বা বারবার পোস্ট করবেন না বা ছবি আপলোড করবেন না। কারণ এমন তাড়াহুড়ার কার‍ণে এমন হতে পারে যে আপনি ভুলবশত এমন কিছু প্রোফাইলে শেয়ার করে ফেললেন যা আপনার করা উচিত ছিল না। যেমন - ধরুন আপনার আলমারির চাবি বা ব্যাংক কারড দেখা যাচ্ছে এমন কোন ছবি ভুল করে আপলোড দিলেন। এখন এটা আপনার জন্য বিপদজনক হলেও হতে পারে তাই সাবধান থাকাই মঙ্গলজনক।


আপনার বিভিন্ন ছবি এবং পোস্টগুলো হয়তো কোন সমস্যার সৃষ্টি নাও করতে পারে। তবে অন্য কেউ বা আপনার পরিবারের কেউই এই বিপদের স্বীকার হতে পারে। ধরুন আপনি ফেসবুকে আপনার কোন নিয়মিত অভ্যাস বা রুটিন বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলেন, এখানে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার প্রোফাইল যদি পাবলিক করা থাকে তাহলে এটা আপনার জন্য বিপদজনক হতেই পারে। আপনি কখন বাসায় থাকেন না, কখন ঘুমান এগুলো অপরাধীরা জেনে গেলে আপনার বাসায় চুরি ডাকাতি হওয়াও অবিশ্বাস্য কিছু নয়। 


সুতরাং অনলাইন এ কোন পাবলিক পোস্ট করার আগে অবশ্যই ভালোভাবে চেক করে নেবেন। 


উপসংহার

যদিও অনলাইন এ নিরাপদ থাকার জন্য অনেক প্রযুক্তিগত এবং অফিসিয়াল উপায় রয়েছে, যেমন- এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার, ভিপিএন, প্রাইভেসি সেটিংস ইত্যাদি, তবুও আপনার নিজের সাবধান থাকা অনলাইন এ সুরক্ষিত থাকার আরও বড়, বরং সবচেয়ে বড় উপায়। আপনার নিজেকেই বুঝতে হবে আপনার তথ্য কাউকে শেয়ার করা বা পাবলিক করা আপনার জন্য সুরক্ষিত কিনা। আজকের এখানেই শেষ করছি। আপনাদের যেকোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন। 

সবাইকে শুভকামনা!