সন্তানের জন্মের পর নারীরা যেভাবে অতিরিক্ত ওজন থেকে মুক্তি পাবেন
সন্তান জন্ম দেওয়ার পর অনেক নারীরাই মোটা হয়ে যান। উক্ত মোটা হওয়া থেকে কীভাবে পূর্বের ন্যায় ফিগার পাওয়া যায় তা নিয়েই আজকের আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে।

গর্ভধারণের পর প্রত্যেক নারীকে দেখা যায় পূর্বের তুলনায় ওজন কিছুটা বেড়ে গিয়েছে। এর কারণ হলো দীর্ঘ নয় মাস সন্তানকে গর্ভে ধারণ করা হয়। সন্তানের ওজন নিজের ওজনের সাথে মিশিয়ে ফেলা হয়।
তাছাড়া সন্তান মায়ের দেহ থেকে পুষ্টি গ্রহণ করার ফলে মাকে অনেক বেশি পরিমাণে খাবার খেতে হয়। উক্ত বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়ার কারণে দেখা যায় মায়ের ওজন অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। যা সন্তান ভূমিষ্ঠ করার পরেও থেকে যায়।
বিশেষ করে তলপেটের মেদ নারীদের যেন কমতেই চায় না। নরমাল ডেলিভারিতে তাও মায়ের আকার-আকৃতি কিছুটা সাধারণ থাকলেও যদি সিজারিয়ান ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে দেখা যায় কিছুসময়ের মধ্যেই নারী অনেক বেশি মোটা হয়ে যান।
খেয়াল করে দেখে থাকবেন নারীরা অনেক কম বয়স থেকেই তাদের নিজেদের ফিগার নিয়ে অনেক বেশি সচেতন থাকে। খুব সহজে তারা মোটা হতে চান না। তারা সব সময় আকর্ষণীয় ফিগারের অধিকারী হিসেবে থাকতে চান।
কিন্তু সন্তান জন্ম দেওয়ার পরেই সব যত রকমের বাধা বিপত্তি ঘটে। অবশ্য আপনারা খেয়াল করে দেখে থাকবেন যে বলিউড সিনেমার নায়িকারা বিশেষ করে কারিনা কাইফ দু দুজন সন্তানের জননী হলেও তার শারীরিক ফিগার কিন্তু আগের থেকে মোটেও বৃদ্ধি পায়নি। বরং তিনি যেরকম ছিলে সেরকমই আছেন।
আপনার প্রশ্ন হতে পারে যে কিভাবে সন্তান জন্মদান করার পরেও একজন নারী পূর্বের মতো স্লিম ফিগারের অধিকারী হতে পারে। আসলেই কি এটা সম্ভব সম্ভব হলে কিভাবে?
আজকের আর্টিকেলটিতে আপনাদের এই সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
আজকের আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হবে কিভাবে সন্তান জন্মদান করার পরেও নারীরা পূর্বের তুলনায় নিজেদের স্লিম ফিগার ফেরত পাবেন। তাহলে চলুন আমরা আর দেরি না করে আর্টিকেলটির মূল অংশে প্রবেশ করে ফেলি।
সন্তান জন্মদান করার পর অতিরিক্ত মেদ ঝরানোর চেষ্টা সকল নারীই করে থাকেন। কিন্তু সঠিক পদ্ধতিতে এই সকল কাজ না করার কারণে অনেকেই সময়মতো সুফল পান না।
আজকের আর্টিকেলটিতে ভালো মতো পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেওয়া হবে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর নারীরা কিভাবে তাদের নিজেদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সক্ষম হবেন।
করণীয় নং ১
অনেকেই ভেবে থাকেন ওজন কমানোর জন্য খাবারের পরিমাণ কমানোর অনেক বেশি কার্যকর।অবশ্যই ওজন কমানোর জন্য খাবারের পরিমাণ কমানোর পদ্ধতি অনেক বেশি পরিমাণে কার্যকর।
কিন্তু সন্তান জন্ম দেওয়ার পরপরই নারীরা এই কাজ করতে পারবেন না। কেননা আপনি মাত্রই আপনার শরীরের একটা অংশ কে পৃথিবীতে এনেছেন। আর আপনার এই সময় ভালোমতো খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন।
আপনার শরীরে পুষ্টি ও সকল রকমের উপাদান অনেক প্রয়োজন। সুতরাং কখনোই এই অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য সন্তান জন্ম নেওয়ার পরপরই খাবার পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করবেন না।
প্রয়োজনে দিনে তিন বেলা অধিক পরিমাণে খাওয়ার চেয়ে অল্প অল্প করে পাঁচ-ছয়বার খাবার খান। তবুও খাবারের পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করবেন না।
করণীয় নং ২
যে খাবারে খান না কেন, চেষ্টা করবেন সর্বক্ষণ স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার। কোন রকমের অস্বাস্থ্যকর বাসি পচা খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকুন। সেই সাথে সকল রকমের জাঙ্কফুড, ফাস্টফুড, স্ট্রিটফুড ইত্যাদি খাওয়া বন্ধ করুন।
কেননা জাঙ্ক ফুডের মতন খাবারে সকল রকমের তেল-চিনি মসলা অতিরিক্ত পরিমাণে থাকে যা আপনার ওজন দ্রুত বৃদ্ধি করতে সহায়ক। তাই সন্তান জন্মদানের পর যদি আপনি আপনার অতিরিক্ত মেদ থেকে রক্ষা পেতে চান সেই ক্ষেত্রে আপনার উচিত সর্বখন স্বাস্থ্যকর খাবারের উপর দিয়ে থাকা।
কোনো রকমের অস্বাস্থ্যকর খাবার এর ধারে কাছেও না যাওয়া। এই সময়টায় আপনি বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল, দুধ, ডিম খেতে পারেন। কিন্তু বার্গার, পিজা, পাস্তা ইত্যাদির মতো লোভনীয় জাঙ্কফুড খাওয়া থেকে দূরে থাকুন।
করণীয় নং ৩
শরীরের মেদ, অতিরিক্ত চর্বি কমানোর জন্য জিম করা কিংবা ভারী ব্যায়াম করার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও আপনার এই সময়টায় এই সকল কাজ করা যাবে না।
অর্থাৎ শিশু জন্ম হওয়ার পরপরই যদি আপনি আপনার ওজন কমানো নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং ডায়েট করা শুরু করার সাথে সাথে জিমে ভর্তি হয়ে যান তবে তা আপনার শরীরের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। শুধু আপনার জন্যই ক্ষতিকর নয় আপনার শিশুর জন্য অনেক ক্ষতিকর।
মনে রাখবেন শিশুর বয়স দুই মাস বয়স না হওয়া পর্যন্ত আপনি কোন কিছু করতে পারবেন না। কেননা অতিরিক্ত ভারী ব্যায়াম কিংবা স্ট্রীক্ট ডায়েট করার কারণে শুধু যে আপনার শারীরিক ক্ষতি হবে তা নয়। আপনার সন্তানও পরিমাণমতো দুধ খেতে পারবে না।
মনে রাখবেন আপনার সন্তানের সুস্থ ভাবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য আপনার বুকের দুধের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।
তাই কখনো বাহ্যিক সৌন্দর্য নিজের ভেতর আনার জন্য এমন কাজ করতে যাবেন না যা আপনার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, সেই সাথে আপনার নবজাতকেরও একই পরিমান ক্ষতি করে ফেলে।
করণীয় নং ৪
আপনি হালকা শরীরচর্চার উপর দিয়ে থাকতে পারেন। এতে করে যদি আপনি শরীর চর্চা করেন নিয়মমতো তবে আপনার শরীরের অতিরিক্ত থলথলে ভাবটা কেটে যাবে এবং আপনার শরীর পূর্বের মতন টাইট হয়ে যাবে।
তাই ভারী ওজন থেকে অর্থাৎ অতিরিক্ত মেদ চর্বি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেক বেশি ভারি পরিশ্রম না হলেও হালকা ব্যায়ামের উপর দিয়ে যদি আপনি যেতে থাকেন তবেও কিন্তু আপনি ভালো ফলাফল পাবেন।
করণীয় নং ৫
প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন। আপনার অবগতির জন্য জানানো হচ্ছে যে, আপনি যত বেশি পরিমাণে জল পান করবেন তত বেশি আপনার শরীর থেকে টক্সিন উপাদান গুলো বের হয়ে যাবে।
একই সাথে আপনাকে বলে রাখা ভালো শরীরের ভেতরকার টক্সিন উপাদানগুলো আপনার মেদবৃদ্ধি তে অনেক বেশি সহায়তা করে থাকে।
সুতরাং বেশি বেশি পরিমাণে জল খাওয়ার কারণে আপনার শরীরের মেদ বৃদ্ধি হওয়া এবং অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে ও সহায়তা পেয়ে থাকবেন।
করণীয় নং ৬
প্রচুর পরিমাণে আপনার সন্তানকে ব্রেস্টফিডিং করাতে হবে। একটা কথা মনে রাখবেন আপনার সন্তানের বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু পরিমাণে দুধের প্রয়োজন ঠিক ততটুকু পরিমাণ দুধ সৃষ্টিকর্তা আপনার স্তনে দিয়ে দিয়েছেন।
সুতরাং কখনো মনে করবেন না যে আপনি আপনার সন্তানকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বুকের দুধ খাইয়ে ভুল করছেন বা কিছু। আপনি মোটেও এরকম কিছু করছেন না। বরং আপনার বুকের দুধ আপনার সন্তানের জন্য অনেক বড় আশীর্বাদ।
মায়ের শালদুধ যে সন্তান দীর্ঘ সময় পর্যন্ত খেয়ে থাকে সেই দেখা যায় অনন্য সাধারণ সন্তানের তুলনায় মেধাগত দিক দিয়ে অধিক বিকাশ প্রাপ্ত হয়। এছাড়াও শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে অন্যান্য সন্তানদের থেকে এগিয়ে থাকে।
কথা শুধু তাই নয় আপনি যদি আপনার সন্তানকে প্রতিনিয়ত ব্রেস্টফিডিং করিয়ে থাকেন তবে আপনার শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি পুড়ে যাবে।
তাই অতিরিক্ত ওজন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আপনি অবশ্যই নিয়মিত আপনার সন্তানকে ব্রেস্টফিডিং করাবেন। এই দায়িত্ব কখনো অবহেলা করবেন না।
সুপ্রিয় পাঠক, আশা করা যায় আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে উপভোগ্য ছিল। আজ তাহলে এখানেই ইতি টানছি, ধন্যবাদ।