সিজার হওয়ার পরবর্তীতে নরমাল ডেলিভারির উপকারিতা
অনেকেই সিজার হওয়ার মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে পারলেও পরবর্তীতে নরমাল ডেলিভারি করাতে চান না। এই আর্টিকেলটিতে তাই সিজারের পর নরমাল ডেলিভারির কিছু উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যার মাধ্যমে অনেকেই ভুলটা ধরতে পারবেন।

বলা হয়ে থাকে মাতৃত্বের অনুভূতি স্বর্গীয় অনুভূতির সমান। সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে নারী তার জীবনের পূর্ণতা পায়। তাই যারা গর্ভধারণ করতে পারে না, তারা অনেকেই নিজেদের অপরিপূর্ণ মনে করে থাকে। যদিও এখানে অপরিপূর্ণ মনে করার কোন কারণ নেই।
অন্যদিকে দীর্ঘ দশ মাস দশ দিন সন্তান গর্ভধারণের পর যখন প্রথমবারের মতো সন্তানের চেহারা দেখা হয়, তখন মা গত 10 মাস 10 দিনের কষ্ট ভুলে যায়। ভুলে যান তাঁর সকল শারীরিক সমস্যার কথা। তার জীবন উক্ত নবজাতক ও তার প্রাণ প্রিয় সন্তানের জীবনকে ঘিরে নতুন করে গড়ে উঠতে থাকে।
সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। এই ভালবাসার সাথে দুনিয়ার অন্য কোন ভালোবাসার তুলনা করা হয় না। মা ও সন্তানের ভালোবাসা পৃথিবীর সব থেকে পবিত্র ভালবাসার অন্তর্ভুক্ত। এই মাতৃত্ব অনুভব করার জন্য সকল নারীই যেন ছটফট করতে থাকে।
বর্তমান যুগ আধুনিক যুগ। চিকিৎসাশাস্ত্রের উন্নতি ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির আবিষ্কারের ফলে মায়ের গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব করা অনেক বেশি সহজ হয়ে গেছে। পূর্বে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিলেও এখন সিজার করে জন্মদানের সংখ্যা বেড়ে গেছে। পূর্বে মৃত্যুর হার অনেক বেশি ছিল বিধায় এই সিজারিয়ান প্রসবের উৎপত্তি বর্তমানে মা ও শিশু মৃত্যুর হার অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে বলে গবেষণায় জানা যায়। সিজার কিংবা নরমাল ডেলিভারির ওপর নির্ভর করে সন্তানের জরায়ুতে অবস্থানের ওপর।
চিকিৎসকরা উক্ত অবস্থান বুঝেই কোন নারীর নরমাল ডেলিভারি করেন, কিংবা সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান করেন। আজকের আর্টিকেলটির মূল বিষয় হলো, যদি কোন নারী পূর্বে সিজার এর মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিয়ে থাকেন এবং পরবর্তীতে তিনি নরমাল ডেলিভারি করে থাকেন সে ক্ষেত্রে কি কি উপকারিতা পেতে পারেন। তাহলে চলুন দেরী না করে শুরু করা যাক।
কখন সিজারের পর নরমাল ডেলিভারি সম্ভব?
অনেকেই হয়তো ধারণা করে থাকেন, সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান করলে পরবর্তীতে নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা থাকে না। আর নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা থাকলেও মা ও সন্তানের জীবন ঝুঁকির ভেতরে থাকে। প্রকৃতপক্ষে সন্তান জন্মদান কালীন সময়ে মা ও শিশুর যেকোনো কারনেই জীবনের ঝুঁকি থাকতে পারে। এর নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই। বলা যায় পুরো পদ্ধতিটি নির্ভর করে ভাগ্যের উপর। ভাগ্য ও সৃষ্টিকর্তার যা চায় তাই হয়।
আজকের আর্টিকেলটির আলোচনার বিষয় সিজারের পরবর্তীতে নরমাল ডেলিভারির কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় সেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো-
ভবিষ্যৎ গর্ভাবস্থার উপর প্রভাব পড়ে
ভ্যাজাইনাল বার্থ আফটার সিজারিয়ান বা ( ভি বি এ সি) আপনার ভবিষ্যতের গর্ভাবস্থার ওপর প্রভাব ফেলে। অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব না, ইতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে। এই ভ্যাজাইনাল বার্থ আফটার সিজারিয়ান আপনার একাধিক সিজারিয়ান প্রসবের বিভিন্ন মারাত্মক ঝুঁকি এড়াতে সহায়তা করে।
অস্ত্রোপাচারের ঝামেলা থাকে না
সিজারিয়ান সন্তান জন্মের সময় প্রচুর অস্ত্র পাচার, চিকিৎসক, নার্স, রক্তের ডোনার ইত্যাদির বেশি প্রয়োজন পরে। দেখা যায় যে, শুধুমাত্র সিজার করার জন্যই অপারেশন থিয়েটারে অনেক বেশি মানুষের আনাগোনা থাকে। এর কারণটা স্বাভাবিক। যেহেতু জরায়ু ছেদ করে সন্তান বের করা হচ্ছে, তাই অনেক বেশি পরিমাণে রক্ত মায়ের শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে রক্তাল্পতায় মৃত্যু ঘটাও স্বাভাবিক। সময়মতো রক্তের জন্য ডোনার রাখা জরুরী।
তাছাড়া অতিরিক্ত রক্ত শরীর থেকে বেরিয়ে গেলে মায়ের হৃদযন্ত্র ও ফুসফুস লিভার ইত্যাদি অঙ্গে প্রেসার পরে। মা বুকে চাপ অনুভব করেন। যে সকল নারীদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি রয়েছে তারা অনেকেই সিজারিয়ান সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় অতিরিক্ত রক্তপাতে মৃত্যুবরণ করতে পারেন। তাই বলা যায় যে, এই নরমাল ডেলিভারির সময় অস্ত্রোপাচার এর মধ্যে উক্ত জটিলতার ঝুঁকিগুলো কম থাকে। শুধু মাকে একটু প্রসববেদনা সহ্য করতে হয়, বিধায় বাকি সব প্রকৃতিগতভাবেই হয়ে থাকে।
ফলে ভ্যাজাইনাল বার্থ আফটার সিজারিয়ান শরীরের এক বা একাধিক গভীর শিরায় বিভিন্ন সংক্রমণ, অত্যাধিক রক্তপাত এবং রক্ত জমাট বাঁধার নিম্নহার এর সাথে সম্পর্কিত। তথা আপনার নরমাল ডেলিভারি যদি সফল ভাবে সম্পন্ন হয় তবে অতিরিক্ত রক্তপাত, সংক্রমণ কিংবা রক্ত জমাট বাঁধার মতো সমস্যা দেখা গেলেও পরিমাণে কম হবে। এছাড়াও ভ্যাজাইনাল বার্থ আফটার সিজারিয়ান সাধারণত জরায়ু সার্জিক্যাল অপারেশন এবং মূত্রাশয় বা বিভিন্ন অঙ্গের মতো পেটের অঙ্গগুলোতে আঘাতের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
এর অর্থ হল, সিজারিয়ানের সময় জরায়ুর সাথে সাথে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আঘাতের সম্মুখীন হতে পারে, কিন্তু নরমাল ডেলিভারিতে জরায়ু কিংবা পেটের অন্যান্য অঙ্গ মূত্রাশয় আঘাতের তেমন একটা আশঙ্কা থাকে না। সুতরাং শরীরও সুস্থ থাকে।
আরও পড়ুনঃ সুস্থ নবজাতক চেনার উপায় - মা বাবার জানা দরকার
অল্প সময়ের ভেতর মায়ের সুস্থতা
সাধারণত সিজার করার ফলে মায়ের সুস্থ হতে অনেক বেশি সময় লাগে। মা যদি কর্মজীবি হয়ে থাকেন তবে তিনি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তার কর্মস্থলে যেতে পারেন না। কেননা তার জরায়ুর সেলাই যেকোনো মুহূর্তে ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেরিয়ে আসার মত ঝুঁকি থাকে।
সুতরাং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হয়। অন্তত যতদিন পর্যন্ত সেলাই শুকিয়ে না যায়। তাছাড়া জরায়ুর ক্ষত ঠিক হতেও অনেক সময় লাগে। সুতরাং ঝুঁকির মাঝে নারী অনেক কিছুই করতে পারে না। অন্যদিকে নরমাল ডেলিভারির পর অল্প সময়ের মধ্যে মা পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। যেহেতু তার শরীরে তেমন একটা কাটাছেঁড়া হয়নি, তাই তার সুস্থ হতে খুব বেশি একটা সময় লাগে না।
সুপ্রিয় পাঠক, আশা করি বুঝতে পারছেন সিজারের তুলনায় নরমাল ডেলিভারির উপকারিতা অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, সিজারের পর নরমাল ডেলিভারি করলেও উক্ত উপকারিতা গুলো পেয়ে থাকেন। আজকের আর্টিকেলটি তাহলে এখানেই শেষ করছি, ধন্যবাদ।