সে আসবে বলে - অনুপমা তোমার জন্য

অনুপমা রাস্তার মাঝখানে আসার পর বিকট এক শব্দ রুদ্র হঠাৎ চেয়ে দেখে অনুপমা নেই!  সামনে চোখ পড়তেই রক্ত মাখা শরীর দেখতে পায় রুদ্র। গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে অনুপমার শরীর। রুদ্র বই আর ফুলগুলো ফেলে দিয়ে দৌড়ে অনুপমার কাছে ছুটে আসে। রুদ্র নিস্তব্ধ, কোন নড়াচড়া নেই। চোখের পাতা পড়তেও দেখা যায়নি। দু’চোখে শুধুই জল ঝড়তে থাকলো। তার হৃদপিণ্ডে রক্ত শুকিয়ে গেছে, পাজরটা মনে হচ্ছে ভেঙে গেছে। অনুপমাকে কোলে নিয়ে চিৎকার করে বলতে দেখা যায়নি, কি হয়েছে তোমার?

সে আসবে বলে - অনুপমা তোমার জন্য
সে আসবে বলে - অনুপমা তোমার জন্য

রুদ্র


সবে মাত্র কলেজে পা রেখেছে, দেখতে বেশ লম্বা। গোল গাল মুখ একটু খানি ফর্সা থাকায় তার সমস্ত মুখটায় লাল লাল হয়ে গেছে। মাঝে মাঝেই তার এমন পরিস্থিতি পার কর‍তে হয়।


তবে কোন কারণ ছাড়া এমন হয় না। আজ নতুন স্থান তাকে এই চক্রে আহ্বান করছে। তার মায়ের অনেক ইচ্ছে ছিল ছেলে তার ইঞ্জিনিয়ার হবে। তাই রুদ্রের অমতেই এখানে পাঠানো হয়েছে। এজন্যই খুব নিরানন্দেই পার হয়ে গেলো এখানকার দিনগুলো।


এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই কলেজের পরিবেশটা তার মন জয় করলেও পুরো ব্যাপারটা সে মেনে নিতে পারছে না। এখানে তাকে ৪ বছর পড়াশোনা করতে হবে ভাবতেই রুদ্রের রীতিমতো গা-কাঁটা দিয়ে উঠেছে। তার ইচ্ছা ছিলো সে ঢাকা শহরের কোন ভালো কলেজে লেখাপড়া করবে কিন্তু ভাগ্য তাকে এখানে নিয়ে এলো।


কিছুই ভালো লাগছে না তার। আর আজ কেন জানি ঘরে তার মন কিছুতেই বসছে না, বাইরে থেকে একটু ঘুরে এলে কেমন হয়? সে হাটতে হাটতে কলেজের ক্যাম্পাসে চলে এলো, প্রথম দিনই তার কলেজ খুব ভালো লেগেছিল আর তাই হয়তো ঘুরতে ইচ্ছা করার সাথে সাথেই সে এখানে চলে এলো।


কলেজর গেটের ভেতর দিয়ে সে এগিয়ে গেল। সামনে সুন্দর একটা রাস্তা, দুই পাশে লম্বা লম্বা গাছ!  দেখে মনে হচ্ছে এগুলো দারোয়ান রাস্তাটা  পাহারা দিচ্ছে!


আবার কখনো মনে হচ্ছে সে এখানে আসায় তাকে দারোয়ান গুলো গা হেলিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে, ঠিক সামনেই কলেজের দেওয়াল ঘেঁষে আছে ছোট্ট একটি ফুলের বাগান, চারপাশটা ছোট ছোট ফুলের গাছে ভরা আর ভেতরটা বড় বড় গোলাপ গাছে পরিপূর্ণ।


অনেক ফুলও দেখা যাচ্ছে। অনেক ভালো লাগছে তার, কত দিন হয়ে গেলো তার ফুলের বাগান দেখার সৌভাগ্য হয়নি সেই কবে তার একটি বাগান ছিলো কিন্তু ঘর মেরামত করার সময় জায়গার জন্য বাবা সব গাছ কেটে সাফ করে দিয়েছিল।


হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেলো সেই ঘটনাগুলো। সেসব খুব একটা ভালোও ছিলো না। তবুও এখন অনেক ভালো লাগছে। এমন অনেক আশ্চর্য ঘটনা থাকে যে গুলো আমাদের দুঃখ দিয়ে থাকে কিন্তু সেই ঘটনা গুলো মনে হলে কষ্ট হয় না আর আজ হয়ত ঠিক তেমনই একটা ঘটনা তার মনে পড়ে গেছে এটা নিয়ে সে আর বেশি ভাবছে না।


সে অবাক  হয়ে দেখছে বাগান টি, বাগানের দুটি ফুল একজন আরেকজন এর দিকে হেলে পড়েছে, মনে হচ্ছে তাদের কথোপকথন চলছে! রুদ্র ভাবসে সেও এখন কারো সাথে কথা বললে খুব ভালো হত কিন্তু কার সাথে বলবে?


মার সাথে ফোনে কথা বললে কেমন হত?  খুব ভালো হত কিন্তু তা সম্ভব না। রাতেই তার মায়ের সাথে অনেক কথা কাটা কাটি হয়েছে এখন ফোন করলে আবার একই কথা গুলো বলবে, যে বাবা কিছু দিন থাক সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু রুদ্র জানে এটা কখনো ঠিক হবে না!


ফোন হাতে নিতেই না, না মাকে ফোন করা যাবে না। আকাশ তখন কালো রঙের অবকাশ নিয়ে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছিলো, তখন সন্ধা নয়!  মেঘ করেছে বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছে! বৃষ্টিতে  ভিজতে পারলে ভালোই হত কিন্তু এখানে সে নতুন তাই এই দুঃসাহস কর‍তে পারলো না।


তাই গেট থেকে বের হয়ে একটা রিক্সা নিয়ে মেসে রওনা দিলো। রুদ্র তার রিক্সা ভাড়া সেরে রিক্সা থেকে  নামতেই শুরু হলো অঝর বৃষ্টি। ইচ্ছে করছে না, রুমে যেতে। তার ইচ্ছে করছে কিছুটা সময় সে ভিজবে, আহ...!


সেই তো কিছু দিন আগের কথা রবিন আর রুদ্র বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরছিলো খুব মজা হয়েছিল, রাস্তার চার পাশের গাছ থেকে থপ থপে নিংরানো জলের কণা তাদের  দুজনার যেমন আনন্দ দিচ্ছিল ঠিক ততটাই হিমেল কন কনে ঠান্ডা যেন  চুপসে নিয়ে ছিল তাদের দেহ…!


আর সেই অবস্থাতেও তাদের ফূর্তির ইমেজ কমে নাই। কত দিন তারা এক সাথে ভিজেছে। আজ সব কথা মনে পড়ছে, ইচ্ছে করছে এখনো রবিনের সাথে ভিজতে! কিন্তু সেটা সম্ভব না।


সেই থমে থমে বৃষ্টির জল থাকলেও আজ রবিন তার কাছে নেই। রুমে ঢুকে রুদ্র দেখতে পেলো জানালটা খোলা বাইরে থেকে হিমেল হাওয়া এসে জানালার কাপড় টা উড়ে নিতে চেষ্টা করছে কিন্তু জানালার রেলিং বাঁধা দেওয়ার জন্য তার কাজ এত টুকুতেই শেষ।


বইয়ের পাতাগুলো নিজে নিজেই উল্টে যাচ্ছে। শো… শো… হওয়া এখন অনেকটাই ঠান্ডা হয়ে আসছে, বাতাসের সাথে কিছুটা জলের তীব্রতা আরো বাড়িয়ে তুলছে। রুম মেট আসিফ রুমে থাকার কথা।


কিন্তু নেই, তার এই জায়গাটা অনেক আগের পরিচিত। তাই সে মাঝে মাঝে একাই ঘুরতে বের হয়, তবে প্রতি বার যাবার আগে রুদ্রকে জিজ্ঞেস করে সে যাবে…? কি না!


কিন্ত রুদ্র আজ  রুমে ছিল না তাই হয়তো বলতে পারে নি! কিছুক্ষন পর ভেজা ভেজা কাপড়ে আসিফ রুমে চলে এল, সাথে একটি ব্যাগ, সেটা রেখেই আসিফ চলে গেলো বাথ রুমে। রুদ্রও আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।


তবে রুদ্রের ইচ্ছে ছিল তাকে জিজ্ঞস করবে কোথায় গিয়েছিল সে?  কিন্তু তার আগেই সে চলে যায়। এখান কার সব কিছুই যেন নিষ্ঠুর। বাইরে প্রচন্ড ঝড় মাঝে মাঝে  বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, রুমের এক কোণে পরে আছে টেবিলের অন্য দিকে খাট


মাঝখানে রুদ্র অধমের মত দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্রের লাল সাদা চাদরটা এই ঝড়ে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে। সে ভাবছে তার জীবন এতদিন এমনি সুন্দর ছিলো। কিন্ত হঠাৎ এমন হলো কেন? সে বুঝতেছে না।


এখানকার অনেক কিছুই ভালো  তবে সব কিছুই যেন প্রাণহীন নিরব। এখানকার পরিবেশ রুদ্র মেনে নিতে পারেনি। একা একা তার এখানে মন বসছে না। মা যতই যা বলুক আর বুঝাক সে এখানে থাকবে না, এখান থেকে তাকে কাটতেই হবে কিন্তু তার আগে তার মামার সাথে সে কথা বলবে কারন তার মামা অনেক জ্ঞানীগুনি মানুষ তার কাছে কিছু ভালো সাজেশন থাকতে পারে।


রুদ্র তার মামা কে ফোন করল বলল সে কিছুতেই এখানে ৪ বছর থাকতে পারবে না। তাকে ঢাকাই নিয়ে যেতে হবে আর সেখানেই একটা কলেজে পড়বে।  কিন্তু সেটা অনেক ঝামেলা।


কারন  পুরাতন কলেজের টিসি নতুন কলেজের পারমিশন ইত্যাদি অনেক ঝামেলা। আর তাছড়া এখন ভর্তির মেয়াদ ও শেষ। মামা বলল, “তোমার মা আমাকে সব বলেছে। ঠিক আছে তোমার যখন এতই খারাপ লাগছে তুমি এইবার ভালো করে পড়ে পরিক্ষা দাও। তারপর নাহয় টিসি নিয়ে ঢাকাই চলে এসো”।


কিন্ত টিসি নিয়ে ঢাকায় যেতে হলে ভালো রেজাল্ট থাকতে হবে যে সেমিস্টার থেকে সে বদলি হবে। তায় সমস্ত কিছু রুদ্রের মা তাকে বুঝিয়ে বলল আর রুদ্র ও এতে রাজি হলো। এখন খুব কষ্ট করে ছয় মাস, এক বছর থাকতে পারলেই তার কাজ শেষ তাই রুদ্র কিছুটা স্বস্তি পেল।


এত ক্ষনে বাইরেও ঝড় অনেকটায় কমে গেছে রাস্তায় দুই এক জন ছাতা নিয়ে দেখা যাচ্ছে! তবে মনে হচ্ছে না রাত ৮ টার আগে থামবে এই সিপ সিপ বৃষ্টি!  এরকম বৃষ্টি হলে  রান্নার খালা আজ নাও আসতে পারে।


কিছু একটা করা দরকার… কিন্তু কি করবে? শুধু চাল আছে এখনো বাজার করা হয়নি। বাইরে থেকে খেয়ে আসা লাগবে হয়ত আজ। তবে বৃষ্টি থামলে কারন রুদ্রের ছাতাটা আসার সময় ভুলে গাড়িতে রেখে এসেছে। এর জন্য রুদ্রর অনেক কষ্টও হয়েছে কারন ছাতা টা তার মা তাকে উপহার দিয়েছিলো।


সন্ধা নেমে রাত হলো ক্ষুধা লেগেছে কিছু খাওয়া দরকার আসিফ নাকি খাবে না সে একটু আগেই খেয়ে এসেছে কারন বুয়া তাকে আগেই বলে দিয়েছিল সে আজ যেতে পারবে না, তার মেয়ের ভীষন জ্বর।


রুদ্র কে বলা হয়নি কারন তার ফোন নাম্বার টা ছিল না। রুদ্র আসিফকে বলল, “আমি খেতে যাচ্ছি তুমিও চল!”


আসিফ কাথার নিচ থেকে বলল তুমি যাও আমার শরিরটাও খুব একটা ভালো নেই বৃষ্টিতে ভিজে। তাই রুদ্র ও আর জোর করল না। হোটেল থেকে খাবার শেষে বের হবে এমন সময় একটা রুদ্রের বোনের বয়সে একটা গরিব মেয়ে তার কাছে কিছু টাকা চাইল ভাত খাবে বলে হোটেলের ওয়েটার রুদ্রকে ইশরা দিয়ে বলল, “না, টাকা দিয়েন না”।


রুদ্র বুঝতে পারল না। কিসের জন্য সে না করল? মেয়ে টা গরিব হলেও দেখতে প্রায় রুদ্রের বোনের মত ছিল তাই রুদ্রের মায়া অনেক বেড়ে গিয়ে ছিল। রুদ্র শুধু খাওয়ার টাকাটা নিয়ে গেছে, ওর কাছে বেশি টাকা নেই।


বিল শেষ ৪০ টাকা ছিল ১০ টাকা গাড়ি ভাড়া রেখে তাকে ৩০ টাকা দিল যদিও ইচ্ছা ছিল তাকে আজ পেট পুরে খাওয়ানোর  কিন্ত টাকা না আনার জন্য পারল না। আর তাকে টাকা দেওয়ার পর রুদ্র দেখতে পেল, সে টাকা নিয়ে দ্রুত চলে যেতে থাকল আর তার কাছে থাকা বাকি টাকা বের করে হিসাব করতে করতে চলে যাচ্ছে, তার কোন ক্ষুধা নেই।


খাবার খাওয়ার কোন ইঙ্গিত দেখা গেলো না তার। রুদ্র ওয়েটার এর দিকে তাকাতেই ওয়েটার একটা ফিকে হাসি দিয়ে বলল, “আমি আগেই বলে ছিলাম স্যার! টাকা দিয়েন না”।


রুদ্র বুঝতে পারল মানুষ চেনা অনেক কঠিন কাজ।  যা তার পক্ষে হয়ত  অসম্ভব! এমন করে একটা মানুষ, কোন মানুষ কে ফাঁকি দিতে পারে রুদ্র কখনো ভাবেনি তাও আবার টাকার জন্য। একটু অবাক হয়ে রুদ্র হোটেল থেকে বের হয়ে রাস্তা ধরে আসতে থাকল।


আজ শুক্রবার গাড়ি কোথাও একটা দেখা যাচ্ছে না আর এমনিতে কিছুক্ষন আগেই বৃষ্টি ছিল। মনে হচ্ছে আজ তাকে ২ কি.মি. হেঁটেই যেতে হবে, রুদ্র ভাবল ভালোই হলো অনেক দিন ধরে সে এতটা পথ হাঁটেই না।


আজ একটু এই হাঁটার মজা অনুভব করবে। অবশ্য রাতের বেলা একটু ভয়ও থাকে কিন্তু রুদ্রের কাছে তেমন কিছু নেই যা কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে। রুদ্র হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ পারি দিলো, এখন আর ভালো লাগছে না।


এতক্ষন চারপাশের পরিবেশটা অনেক উত্তেজনায় যেন ভরপুর ছিল আর এখন মনে হচ্ছে চারপাশটা নির্জিব হয়ে গেছে, কারন তার শারীরিক ক্লান্তি শেষে মানসিক ক্লান্তিও এসে গেছে।


মানুষের শরীর আর মনের যে একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে রুদ্র তা আজ বুঝতে পারছে। তবুও ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও অন্ধকারে দুলে দুলে চলতে থাকে। এখানে এসে এখনো ক্লাস শুরু করেনি রুদ্র। কাল ক্লাস করতে হবে, এত এত নতুন বন্ধু, বান্ধবী, শিক্ষক সবাই তার কাছে নতুন হবে।


রুদ্রও তাদের কাছে নতুন।


সমস্যা নেই আসিফ তো তার একটু চেনা, তার সাথেই কাটানো যাবে কলেজের সেই নতুন মূহুর্তগুলো। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে রাতের কথা মতই রুদ্র আসিফ এর সাথে কলেজে যায়, গল্প, পরিচিতি, বন্ধুত্ব যতটা কঠিন ছিলো। আসিফ তার সব টুকুই সহজ করে দিয়েছে।


আসলে আসিফ খুব ভালো মনের মানুষ কিন্ত রুদ্র এতদিন তা বুঝতে পারেনি। কয়েক মাস পর রুদ্র আর আসিফ এতটাই ক্লোজ হয়ে যায় যে, তারা এখন কেউ কাউকে ছাড়া কনো কাজই করে না। এইতো সেদিন রুদ্র মার্কেট থেকে একটি শার্ট পছন্দ করল কিন্তু আসিফের পছন্দ নয় বলে সেটা আর কেনেনি।


ছোট বড় সব বিষয়ে এখন তারা শেয়ার করে। কলেজেও রুদ্রের এখন অনেক বন্ধু। সবার সাথে কথা বলা শুরু করে দিয়েছে। তবুও তার মনে হচ্ছে না সে এখানে ৪ বছর থাকতে পারবে। রুদ্রের মা, আর মামার মনে হয়েছিল সে কিছুদিন সেখানে থাকলেই তার মন বসে যাবে।


কিন্তু রুদ্র সে ভাবনার পুরোটাই উল্টা। রুদ্রের পড়াশোনা বেশ ভালোই চলছে, তবে তার ক্লাসে সাব্রিনা বরাবর অনেক ভালো একটি মেয়ে আর ছাত্রীও বটে। দেখে মনে হয় কিচ্ছু জানেনা। কিন্তু আসলে অনেক কিছুই জানে। রুদ্র বুঝতে পারে আসলে মানুষকে উপর থেকে দেখে কিছুই বোঝা যায় না, না তার ভালো আর না তার মন্দ।


মানুষের ভালো-মন্দ হলো তার মনে, আর তা প্রকাশ পায় তার ব্যবহারে, আর চরিত্রের মাধ্যমে। মেয়েটি ভালো সহজ সরল, আর সহজ সরল মানুষ রুদ্রের খুব ভালোলাগে। তাই রুদ্র সাব্রিনার সাথে নিঃসন্দেহে বন্ধুত্ব করে ফেলল। এখন রুদ্রের কলেজে অনেক বন্ধু, আসিফ, সাব্রিনা, আয়েশা, রাহুন, মিতি, হাফসা, জুয়েল আরও অনেক।


ভালোই কাটছে তাদের দিন গুলো মাঝে মাঝে আসিফ আর রাহুন তাদের ঘুরতে নিয়ে যায়। তবে রুদ্রের এই সব ঘোরাঘুরি একদম ভালো লাগে না। তবে আসিফ আছে বলেই তাকে যেতে হয়। কলেজের পড়াশোনা তেমন একটা হচ্ছে না, কোন দিন ক্লাস হয় আবার কোনো দিন হয় না। আবার কোন দিন বা স্যার দেরিতে আসে, আসলে সরকারি কলেজ বলে কথা।


যা পড়ার নিজেদের পরে নিতে হয়। টেস্ট পরিক্ষা হলো রুদ্র আর সাব্রিনা পাশাপাশি নাম্বার পেলো। সাব্রিনার উপর কেও নাম্বার পায়নি। কিন্তু রুদ্রের এতে কোন কষ্ট নেই কষ্ট আসিফের জন্য আসিফ এক সাবজেক্টে ফেল করেছে।তবে ফেল করাতে আসিফের ভালোই হয়েছে কারন এখন আসিফ আগের থেকে পড়াশোনা বেশি করে।


রুদ্র বই হাতে নিলেই কোথা থেকে যে আসিফ এসে পড়তে বসে বোঝাই মুশকিল। যাকে বলে সাপে-নেউলে লড়াই। তাদের মাঝে এখন প্রতিযোগিতার মত কাজ করে, তবে রুদ্র যতটা সময় না কলেজের পড়া পরে তার চেয়ে বেশি পরে অন্য বইগুলো।


রুদ্রের ইচ্ছা আসে সে বড় হলে তার গ্রামে একটি লাইবেরি তৈরী করবে। যেখানে সবাই এসে বই পড়বে, বই এর প্রতি কেমন যেন সবার ঝোঁক টা কমে যাচ্ছে। তবে রুদ্র খুব খুশি যে, তার বই এর প্রতি ঝোঁকটা এখনো কমেনি।


রুদ্রের এখনো কোন উপন্যাস পড়লে মনে হয় সে হারিয়ে যাই স্বপ্নের সেই রাজকন্যার দেশে, কখনো কষ্টের নিপাতনে সিদ্ধ হয় রুদ্রের স্পস্টভাষী হ্রদয়। হুমায়ুন আহমেদের লেখা উপন্যাস “অপেক্ষা” সুরাইয়া মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। মনে হচ্ছে কি ঘটছে তিনি বুঝতে পারছেন না।


সুপ্রভা বলল আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তুমি আমার গায়ে হাত বুলিয়ে দাও। সুরাইয়া মেয়ের গায়ে হাত রাখলেন। সুপ্রভা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল বড় মামা যদি আমার গায়ে হাত বুলিয়ে দেয় তাহলে আমার ব্যাথা কমবে। বলার পর পরই সুপ্রভা মারা গেল।


মিতু ছুটে গেল কড়িডোরের দিকে কড়িডোর শূন্য। সেখানে কেউ নেই। কড়িডোরের এক কোণায় ইমন টুলে বসে আছে। মিতু ইমনের কাছে গেল। শান্ত স্বরে বলল এই ভাবে চুপ থাকবি না। চিৎকার করে কাঁদ, আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদ। কে কি ভাববে এইসব কিচ্ছু ভাবার দরকার নেই।


ইমন উঠে মিতুকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠলো। অভিমানী ছোট্ট মেয়েটি জানলোও না তার জন্য এই পৃথিবীতে কতই না ভালোবাসা জমা ছিল। ছোট্ট সুপ্রভা তোমার প্রসঙ্গ অপেক্ষা উপন্যাসে আর আসবে না। কারন তোমার জন্য কেউ অপেক্ষা করবে না। মৃত মানুষের জন্য আমরা অপেক্ষা করি না। আমাদের সমস্ত অপেক্ষা জীবিতদের জন্য।


এই চরম সত্যিটি তুমি না জেনেই তুমি হারিয়ে গেলে। রুদ্র আর চোখের জল ধরে রাখতে পারছে না। ভেতর থেকে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত ভাঙা পাজর বেয়ে যেন রক্ত ঝরছে। দু’হাতে চোখ মুছতেই আসিফ বলে উঠলো, কি হয়েছে তোমার? তুমি মনে হয় কাঁদছো?


রুদ্র কথা না বলে বই এর দিকে তাকিয়ে আছে। গম্ভির ভাবে তাকিয়ে আছে। আসিফ বুঝতে পারছে সে কোন ইমোশনাল বই পড়ছে, তাই অট্টহাসি হেসে বলল কাঁদো বেশি করে কাঁদো। কারন এর আগেও অনেক বার তার এমন কান্ড দেখেছে। ততক্ষনে রুদ্র বুঝতে পারল সে একটু বেশিই ইমোশনাল হয়ে পড়েছে।


তাই সে মুচকি একটা হাসি দিয়ে ব্যাপারটাকে এখানেই শেষ করে দিল। গতকাল আসিফের বড় ভাই বিদেশ থেকে এসেছে তাই সে বাসায় যাবে। রুদ্র কে বলল তার সাথে যেতে কিন্তু রুদ্র যেতে চাইছে না কারন তার এখন ঘোরাঘুরি করতে ভালো লাগছে না।


রুদ্র আসিফ কে স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসছে। আসার সময় তার কলেজ গেটে নেমে গেল, ইচ্ছে করছে ভেতরে ঢোকতে কিন্ত তার আগেই দেখা সাব্রিনার সাথে দেখা। সাব্রিনা তার বড় আপুদের সাথে এখানে ঘুরতে এসেছে। সাব্রিনা বলল তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে? আর এই দিকে কোথাই গিয়েছিলে?


রুদ্র শান্ত গলায় বলল, “পড়াশোনা ভালো আর এক দিকে গিয়েছিলাম আসিফ কে গাড়িতে তুলে দিতে আসার পথে ইচ্ছে হলো তাই নামলাম। রুদ্রের ইচ্ছা হল তাকে জিজ্ঞেস করবে সে কেন এসেছে?”


কিন্ত রুদ্র কথা বলার আগেই সাব্রিনা বলল, সে এবার এক্সাম এর পর টিসি নিবে। সে তার বাবার সাথে কথা বলেছে। সাব্রিনা রুদ্রকে খুব বুঝিয়ে বলছে, “দেখো আমি তো মেয়ে। ঢাকায় একা একা থাকতে পারব না। একজন চেনা বন্ধু হলে অবশ্য থাকতে পারতাম। কোন সাহায্য সহযোগিতা তো অবশ্যই লাগবে তুমিও নাকি শুনলাম টিসি নিবে ভালই হবে”।


রুদ্র বলল, হুম আমি আগে থেকেই এই চিন্তায় করে রেখেছি। রুদ্র তার সব কারন বলল। তারা দুজনে পরিক্ষার পর টিসি নিবে যদি ভালো রেজাল্ট হয়। সাব্রিনা সহজ সরল মেয়ে, তার শর্ত, “যদি কেউ চেনা পরিচিত টিসি নিয়ে ঢাকায় যায় তবেই সে টিসি নিবে, না হলে না”।


তবে রুদ্রের একটু কষ্ট হবে সবাইকে ছেড়ে যাওয়ার সময়, কিন্ত রুদ্র মনে মনে ভেবে রেখেছে মাঝে মাঝে সে এখানে অবশ্যই আসবে। তবে রুদ্র যে টিসি নিবে সেটা এখনো কাউকে জানায়নি।


আর সাব্রিনা কেউ বিষয়টা গোপন রাখতে বলে সেখান থেকে প্রস্থান করল রুদ্র। কারন রুদ্র কোন কাজ করার নিশ্চিত না হয়ে কাউকে জানানোটা বোকামি মনে করে। যখন রুদ্রের টিসি নিশ্চিত হবে কেবল তখনি সবাইকে বলবে। সাব্রিনা যে কি করে জানতে পারল সেটা রুদ্র বুঝতে পারছে না।


শুধু আসিফ জানত বিষয়টা। তাহলে কি আসিফ বলেছে?  সেটা নিয়ে রুদ্রের এখব মাথা ঘামাতে ভালো লাগছে না। তবে সাব্রিনা জেনে রুদ্রের ভালোই হয়েছে কারন দু’জনে কাজ গুলো সহজেই করতে পারবে। কোথায় যেতে হবে? কি করতে হবে?


আজ রাস্তায় অনেক ধুলাবালি রুদ্রের শরীর ঝিমঝিম করছে। ইচ্ছে করছে এখনি সব কাপড় খুলে ফেলতে, যেমনটা সে ছোট বেলায় করত। এখন বয়স হয়েছে আগের সেই ছোট্ট রুদ্র আর নেই এখন সে অনেক বড়। মানুষ যত বড় হয় তার মান-সম্মান তত বড় হয় আর তাকে ততই বেশি ভদ্রতার সাথে চলতে হয়।


কারন বাচ্চারা পাগলামি করলে তাকে বলে দুষ্ট আর বুড়োরা পাগলামি করলে তাকে বলে ভীমরুতি। তবে রুদ্রের এখনো ভীমরুতির বয়স হয়নি। রুদ্রের চোখ পড়তেই দেখতে পেলো জীর্ণশীর্ণ একটি মহিলা গাছের নিচে বসে আছে আর আর তার কোলে একটি আদরের শীর'মণি।


তার বয়স বোধ হয় তিন বা চার হবে। তাকে নিয়ে চুপ চাপ ভাবে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে। রাস্তার অনবরত গাড়ির ধুলোই চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। আর চেহেরাটা একদম ফ্যাকাসে। হাতে একটি জলের বোতল, প্রথমে নিজে একটু জল খেয়ে নিল তার পর সেই ছোট্ট বাচ্চাটাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে।


একটু খানি খাওয়ার পর আর খেতে চাচ্ছে না। আসলে ক্ষুধা নিবারন কি আর শুধু পানি দিয়ে হয়? রুদ্র এগিয়ে গেলো। নিম্ন স্বরে মহিলা কে জিজ্ঞেস করল, “কিছু খেয়েছেন?”


মহিলার বয়স পঞ্চাশঊর্ধ হবে। শরীরে খুব একটা শক্তি নেই মনে হচ্ছে। কিছু বলছে না শুধু বাচ্চাটার দিকে তাকাচ্ছে। রুদ্র আবার জিজ্ঞেস করল বাচ্চাটা কি হয় আপনার। মহিলাটা যেন এখন একটু ভয় পেলো বাচ্চাটা কে বুকে নিয়ে জড়িয়ে ধরেছে। রুদ্র বুঝতে পারল না কিসের ভয়! হয়ত হারানোর ভয়।


হারানোর ভয় অনেক কঠিন হয়। যত দিন পর্যন্ত কেউ সাথে থাকে ঠিক ততদিন পর্যন্ত এই ভয়টা থাকে। মানুষটা হারিয়ে গেলে এই ভয়টা আর কাজ করে না তখন চলে আসে অপেক্ষা আর অপেক্ষা শেষেও যখন তাকে খুজে পাওয়া যায়না তখনি শুরু হয় কষ্ট। এ কষ্ট অনেক গভীর।


বাচ্চাটি তার নিষ্পাপ দুটি ঝলঝল চোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। আহ্! কি তাহার চাহনি!


এ যেন জলে ফোটা পদ্ম পাতার ঝলসানো জল। এই চাহনি তে একটা মায়া আছে। রুদ্রের ক্ষমতা নেই এই মায়া কাটাবার। রুদ্রের শরীর যেন ধীরে ধীরে অবশ হয়ে আসছে, বাচ্চাটার প্রতি তার খুব মায়া হচ্ছে। আহা! কত দিন ধরে না জানি এই ভাবে শুধু জল খেয়ে আসছে।


এখন যদি রুদ্রের সামনে কিছু খেত তাহলে রুদ্রের অনেক শান্তি লাগত। কিন্ত আশেপাশে কোন দোকান নেই। রুদ্র জিজ্ঞেস করলো, “বাচ্চাটাকে কিছু খাওয়াইছেন?”


তিনি বললেন, আজ তিনদিন ধরে সে কোন কিছুই মুখে দেননি আর বাচ্চাটা সকালে একটা রুটি খেয়েছে। রুটিটা রাস্তায় পড়ে ছিল হঠাৎ কোথায় থেকে যে একটা কুকুর এসে রুটিটা খপ করে নিয়ে গেল। তবে তিনি পিছু ছাড়েননি, অবশেষে তিনি রুটিটা কুকুর মুখ থেকে উদ্ধার করেছিলেন।


তিনদিন ধরে উপোষ করা একজন মানুষের সাথে বেশি কথা না বলায় ভালো। রুদ্র তাকে কিছু টাকা দিয়ে বাজারের দিকে পথটা দেখিয়ে দিয়ে বললেন, “যাবার পথে কিছু খেয়ে নিবেন ঠিক আছে?”


তার চোখ দুটো ঝলমলিয়ে উঠল, কি খুশি! এত খুশি রুদ্র কাউকে কোন দিন দেখেনি। এই সামান্য কিছু টাকা দিয়ে যে এতটা খুশি পাওয়া যায় রুদ্রের তা আগে জানা ছিল না।


বন্ধু বান্ধবদের সাথে নিয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করে পার্টি দিয়েও তাদের ভ্যাংচানো মুখ সোজা করা যায় না অথচ এই সব গরীব অসহায়দের একটু সাহায্য করলেই এরা কত খুশি হয়। আর তখন এই খুশিটিই মনে হয় পৃথিবীতে শ্রেষ্ট উপহার।


রুদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মহিলা টি বলল তুমি অনেক বড় হবে বাবা আমি দোআ করি। বলেই সেখান থেকে উঠে বাজারের দিকে চলে গেল। রুদ্র বুঝতে পারল তাদের ক্ষুধার তীব্রতা অনেক বেশি। রুদ্র কিছুক্ষন পথের দিকে চেয়ে রইল, গাড়ির শব্দ আর ধুলোই আবছা দৃষ্টি তাদের আর ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছে না।


রুদ্র ভাবল এবার যাওয়া দরকার। আজ আসিফ নেই রাতের সময় কাটানো একটু কঠিন হতে পারে। রুদ্র জানালা খুলে তাকিয়ে আছে, আজ জ্যোৎস্নাটা যেন অনেক কাছে এসে গেছে, দিব দিব আলোতে পুরো ঘরটায় আলোকিত হয়েছে।


রদ্র খাটের এক পাশে শুয়ে আছে অন্য পাশে আসিফ এর বালিশটা পড়ে আছে। কি অদ্ভুদ দেখাচ্ছে মনে হচ্ছে হাত পা ছাড়া একটা মানুষ শুয়ে আছে তার পাশে। রুদ্র ভাবল সত্যি কি এমন কোন মানুষ আছে? তাদের না জানি কত কষ্ট। রুদ্র হাত বড়িয়ে আসিফ এর বালিশটা কাছে টেনে নিল আর নিজেকে বাস্তবতায় ফিরেয়ে আনতে চেষ্টা করছে।


কিছু দিন পর রুদ্রের ফাইনাল সেমিস্টার পরিক্ষা যে ভাবেই হোক তাকে ভালো রেজাল্ট করতেই হবে তা না হলে যে তার টিসি নেওয়া বন্ধ৷ রুদ্র পরিক্ষার জন্য খুব ভালো প্রিপারেশন নিয়েছে কিন্তু তার তবুও কেন একটু ভয় ভয় করে। তবে তার নিজের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস আছে।


আর এই বিশ্বাস রাখার জন্যই সে নিজেকে ভালো ভাবে প্রস্তুত করে রাখছে। সাব্রিনা তার ব্যাগটা গুছিয়ে টেবিলে আলতো করে রাখল। তার হাত দুটো এখনো ঝিমঝিম করছে। অনেক দিন ধরে মাছগুলো ফ্রিজের ড্রিপে, ফ্রোজেন করে রাখা ছিল। আর সেগুলো সাব্রিনাকে কিছুক্ষন খালি হাতে ধরে থাকতে হয়েছে।


সাব্রিনার বড় আপু ললিতা বলল কিছুক্ষন হাতে হাত ঘষতে তাহলে নাকি একটু আরাম পাবে। ললিতা বসে আছে খাটের মাঝখানে আর এক পাশে বসে আছে আলিয়া। আলিয়া সাব্রিনার ক্লাস মেট। আলিয়া ফোনে কিছু করছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।


সেই অবস্থাতেই সাব্রিনা কে জিজ্ঞেস করলো, “কিরে? ক্যাম্পাসে কার সাথে কি নিয়ে কথা বললি রে?”


সাব্রিনা বলল, “কে?”


আলিয়া একটু অবাক হয়ে, “আচ্ছা। তুই আজ কতজনার সাথে কথা বলেছিস রে?”


সাব্রিনা: বাজে বকিস নাতো!  ভালো করে বল কার কথা বলছিস।


আলিয়া এবার বিরক্ত হয়ে বলল, “আমি রুদ্রের কথা বলছি!”


সাব্রিনা বুঝতে পারল, এখন তাকে কিছু মিথ্যা বলতে হবে কারন রুদ্র তাকে সত্যি কথাটা গোপন রাখতে বলেছে। মানুষ অনেক সময় একটা কথা রাখতে গিয়ে মিথ্যা বলে থাকে, এতে দোষের কিছু নেই। সাব্রিনাও রুদ্রের কথা রাখতে গিয়ে আজ মিথ্যা বলবে। সাব্রিনা স্পষ্ট গলায় বলল, “আরে কিছু না। এই ত কোথায় গিয়েছিল সেটায় শুনলাম আর কি জানি সব বললাম মনে নেই”।


আলিয়া বলল, “বাবাহ্! আজকাল দেখি তুই সব কিছুই ভুলে যাচ্ছিস। মাছ কোথায় রাখিস কবে রাখিস কিচ্ছু মনে থাকে না আজ আবার দেখছি কিছুক্ষন আগের ঘটনাটা-ই তোর মনে নেই। কি সব ব্যাপার বুঝি না আমি”।


সাব্রিনা বলল, “কেন রে তর কি আমাকে সন্দেহ মনে হয়? আরে না না কি বলছিস তুই আমি কেন তকে সন্দেহ করব! আমি তো এমনি জিজ্ঞেস করলাম”।


সাব্রিনা বুঝতে পারল সে যে মিথ্যা বলেছে আলিয়া তা বুঝতে পেরে গেছে কিন্ত আসলে আলিয়া যা ভাবছে বিষয়টা কিন্ত তাও নয়। কিন্তু সাব্রিনার করার কিচ্ছু নেই যা ভাবার সে ভাবুক। সাব্রিনা আর কথা না বাড়িয়ে তার হাত ঘষতে ঘষতে চলে গেল বারান্দায়।


আলিয়াকে কেউ ফোন করেছে এখন সেও ফোন নিয়ে ব্যস্ত। মাঝখানে ললিতা অবাক হয়ে তাদের চরিত্রের পরিবেশন প্রদর্শন করছে কিন্তু কিচ্ছু বলছে না। আলিয়া একটু লফাং লফাং টাইপের বেশি কথা বলতে পছন্দ করে বিশেষ করে ছেলেদের সাথে।


আর সাব্রিনা ভদ্র টাইপের সবার সাথে কম কথা বলে। ললিতার সাব্রিনা কে খুব ভালো লাগে ছোট বোন হিসেবে সে ঠিক করছে এবার পরিক্ষার সামনে তাকে একটা জামা কিনে উপহার দিবে। কিন্তু এখন বলা যাবে না।


ভাবতে ভাবতে তাদের মেসের বাড়ি ওয়ালার মেয়ে আসল ঘরে নাম তার সুস্মিতা। ললিতার সাথে সে মাঝে মাঝেই গল্প করতে আসে ললিতারও বেশ ভালোই লাগে তার সাথে গল্প করতে। তাদের গল্প চলবেই একাধারে মাঝখানে ললিতা রুমের এই কোণ থেকে অন্য কোণে যাওয়া আসা করতে দেখা যাবে।


পরের দিন রুদ্রের মা রুদ্রের মা কে ফোন করে জানিয়ে দিলেন কিছু দিন পর রুদ্রের সেমিস্টার ফাইনাল পরিক্ষা। রুদ্রর মা কিছু টাকা পাঠিয়ে দিলেন কিছু নতুন জামা কাপড় কেনার জন্য।


কিন্ত রুদ্র পরিক্ষার সাথে নতুন জামা কাপড়ের কোন সম্পর্ক খুজে পায় না। নতুন জামা কাপড় পড়ে গেলে পরিক্ষা ভালো হয় নাকি সহজ হয় সেটা তার মা-ই ভালো বলতে পারবে।


তবে মায়ের কথা অমান্য করবে এমন সাহস রুদ্রের এখনো হয়নি। রুদ্র এই সব ভাবনা বাদ দিয়ে টেবিলে পড়তে বসবে বলে এগিয়ে গেল। বই নিয়ে পড়তে শুরু করল। ঠিক তখনি ঠকঠক শব্দে দরজা টা মনে হচ্ছে ভেঙে যাচ্ছে, কে হতে পারে যে তার রুমে এত জোর দিয়ে দরজা ধাক্কা দিতে পারে?  নিশ্চয় আসিফ!


কারণ আসিফ সারা এই দরজায় এত জোরে ধাক্কা দেওয়ার সাহস কারো নেই। রুদ্র টেবিল থেকে উঠে দরজা খুলে দিল। আরে কেমন আছো আসিফ? কিছু না বলেই চলে আসলে যে?


আসিফ রেগে তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল, “এখন থেকে তোমাকে আর জানাবও না। রুদ্র ভুরু কুচকে আসিফ এর দিকে হা করে তাকিয়ে আসে। আজ হঠাৎ এমন কি কাজ করল? যার জন্য আসিফ এমন করে কথা বলছে?


আসিফ বিছানায় বসে পড়ল। দেখ তো তোমায় ফোনে কত বার কল দিয়েছ? আর কয়টা মেসেজ করেছি? রুদ্রের মনে হল তাই তো, আজ সারা দিন ফোনটা এক বারো হাতে নেওয়া হয়নি।


রুদ্র ফোনটা খুঁজে বের করে দেখল ১৫ টা মিসড্ কল আর ৫ টা মেসেজ। লাস্ট মেসেজে লেখা ছিল, “আমি যাচ্ছি তুমি আমার মিলটা দিও রাতের”। কিন্তু রুদ্র এসব কিছুই দেখেনি। আর এখন রাতের মিলও হয়ে গেছে। রুদ্র নিম্ন স্বরে আসিফ কে বলল, “সরি বন্ধু! আসলে আমি আজ ফোনটার দিকে লক্ষই করিনি”।


তবে রাতের খাওয়া নিয়ে তোমাকে একদম চিন্তা করতে হবে না। আজকাল আন্টি এত ভাত রান্না করে যে, প্রতিদিন নষ্ট হয় দুজনেই খাওয়া যাবে সমস্যা নেই। আসিফ বলল, “আমি খেয়েই এসেছি তার আর দরকার হবে না”। রুদ্র বলল, “বাইরে থেকে খেয়ে এলে কেন?”


আসিফ উচ্চ স্বরে বলল, ফোন ধরো না তাহলে আমি কি করতাম! রুদ্র আর কিছু বলল না। এখন বাইরে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে, চারপাশে অসম্ভব নিরবতা!  জানালা দিয়ে একটু আধটু হাওয়া বইছে। আর অদুরে ঝলমলে জোনাকি পোকাড় আলোতে মনে হচ্ছে আজ আকাশটায় মাটিতে নেমে এসেছে।


মিট মিট করে তারা জ্বলছে মাটিতে। জানালা দিয়ে উঁকি দিলে দেখা যায় রাস্তার চার পাশে স্ট্যান্ড লাম্পের আলো আর গাড়ির হেড লাইট সব মিলিয়ে মনে হয় এটা একটা চলন্ত শুষ্ক নদী! যার কোনো প্রাণ নেই। কিন্তু মাঝখানের চলন্ত গাড়ি গুলোকে মনে হচ্ছে লঞ্চ আর স্টিমার।


মাঝে মাঝে পিপ পিপ বাঁশিতে ভাবনাটা আবার পাল্টে যায়। মরীচিকার আবরণে পড়ে কতবার যে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় পার হয়েছে রুদ্রের জানা নেই। চোখের সামনে সাহিত্যের স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায় রুদ্রকে কিন্ত সে কিছুই করতে পারে না। ঢেউ এর মত দুলে দুলে চলতে থাকে সেই প্রবান্তক গদ্য পাঠ আর এদিকে রুদ্রের বইয়ের পাতা।


কিছুদিন যাবত রুদ্র তার পরিক্ষা নিয়েই ব্যস্ত আছে তাই গল্প কবিতা, উপন্যাস কিচ্ছু পড়া হচ্ছে না। এখন আসিফ এসে তাদের দুজনার পড়ার চাহিদা আরও বেড়ে গেলো। দুজনেই খুব ভালো ভাবে প্রিপারেশন নিচ্ছে পরিক্ষার জন্য। পরিক্ষা শেষে রেজাল্ট এর জন্য ব্যকুল হয়ে আছে সবাই।


কবে রেজাল্ট দিবে? রেজাল্ট দিতে এখনো অনেক দেরি আসিফ এই লম্বা সময়টাতে কিছু করতে চায়। রুদ্র জিজ্ঞেস করল, “কি করতে চাও? তুমি যাই কর এই কয়টা দিন আমি শুয়ে বসে হুমায়ুন আহমদের হিমু সিরিজের সব গুলো বই পড়তে চাই।


আসিফ একটু চরা সুরে বলল, “অন্যের বই পড়ে কি করবে নিজেই একটা লেখক হয়ে যাও না? তুমি ঠিক কোন জগৎ এর মানুষ মাঝে মাঝে আমার বুঝতেও কষ্ট হয়”।


আসিফ খুব মন্দ বলে নি তবে লেখক হতে হলে অনেক পড়াশোনা করতে হয় অনেক কিছু জানতে হয়। রুদ্র ছোট বেলায় অনেক কবিতা, গল্প, আর নাটক লিখত আবার ভালো হত না ভেবে নিজেই সে গুলো নষ্ট করে দিত। এখন আর লেখা হয় না। আসিফ এর কথায় রুদ্র তার শৈশবের কিছুটা স্মৃতি মনে করতে পেড়েছে তাই মনে মনে তাকে ধন্যবাদ দিল।


কিন্তু মুখে নম্র ভাষায় বলল, “হুম হব! লেখক হব! তুমি পড়বে তো বই গুলো আমার?”


আসিফ বলল, “আচ্ছা ভাই সব পড়ব কিন্ত এই কয়টা দিন চলো কোথাও থেকে ঘুরে আসি প্লিজ!”


ঘোরাঘুরিটা রুদ্রের একদম ভালো লাগে না কিন্ত কোথাও মানে'র মত একটা নতুন জায়গা হলে মন্দ হয় না।রুদ্র একটি বইয়ে পড়েছে ভ্রমন থেকেও জ্ঞান অর্জন সম্ভব।


আর এই ফ্রি সময়টা বন্ধুদের সাথে কাটাবে সেটাও মন্দ না। তা তোমারা কে কে যাবে? আর কোথায় যেতে চাচ্ছো? আসিফ এবার একটু মিষ্টি হেসে বলল, তা তোমার কোনো পছন্দের জায়গা আছে না কি? থাকলে বলো?


আমরা না হয় সেখানেই যাব। রুদ্র, “আরে না না…!  আর আমার যে কোনো পছন্দের জায়গা নেই কথাটা ঠিক তেমন না। তোমারা যেখানে যেতে চাও যাও আমিও যাব। আর আমার পছন্দের জায়গায় আমি একা যাব না যখন আমার লাইফে কেউ আসবে তখন তাকে নিয়েই সেই সব জায়গায় যাবো”।


আসিফ একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, কেন?


কারণ কিছু কিছু পছন্দের জিনিস থাকে যে গুলো পছন্দের মানুষের সাথেই উপভোগ করতে হয়। তাহলে সে উপভোগটা হবে রহস্যময় আর স্নিগ্ধাতায় পরিপূর্ণ। কিন্তু সেটা যদি পূর্ব পরিচিত হয় তাহলে সেটা অগ্রাধিকার পাবে না, বিশেষ করে আমার কাছে।


আর এজন্য আমি আমার সেই সব পছন্দের জায়গাগুলোতে আমি এখনো যাই নাই। আসিফ ভ্রু কুঁচকে বলল, তুমি যেমন তোমার বেপার গুলোও ঠিক তেমন। তোমাকে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় তোমার জীবনটায় রহস্যময়। আবার মাঝে মাঝে মনে হয় কবিতার পঙতিমালার মত সাজানো তোমার জীবন যা বোঝার জন্যও অনেক কিছু জানা দরকার।


রুদ্র আসিফের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আসিফ আজকাল অনেক সুন্দর ভাবে কথা বলতে শিখেছে। কি সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করছে তার বক্তব্য!


আচ্ছা আমি তাহলে সবার কাছ থেকে শুনে তোমাকে জানাচ্ছি কোথায় যাওয়া যায় এই বলে আসিফ সেখান থেকে প্রস্থান করল।


পর দিন সকালে রুদ্র বসে আছে রুমে


সেদিন ছিল রুদ্রের একটা বড় রকমের আনন্দের দিন। কয়েক সপ্তাহ আগে সে একটি যৌথ বই এ ৪টি কবিতা দিয়েছে আজ তাতে তার নাম বের হয়েছে কিন্তু তবুও মন খারাপ ছিল কিছুটা। কারন একটি কবিতা গ্রহণযোগ্য ছিলো না। তাই তিনটাই বইয়ে লিখিত হবে। তবুও কেন জানি না তার আনন্দের কোন সীমা নেই।সব আনন্দ আজ যেন ছুটে চলে আসছে রুদ্রের কাছে।


সে মনে মনে ভাবছে আজ বাড়িতে থাকলে হয়ত ভালো হত মাকে জড়িয়ে ধরে বলা যেত। খুব ভালো লাগত কিন্তু তা আজ সম্ভব না। এখানেও একজন আছে যাকে বার বার জড়িয়ে ধরে তার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে কিন্তু তাও সম্ভব না।


রুদ্র ভাবছে আচ্ছা সব অসম্ভব কি আমার কাছেই আসে শুধু? না, তবে সময় এক দিন হয়ত অবশ্যই সব সম্ভব করে দিবে। আমিও সেই অপেক্ষায় থাকি, অপেক্ষা করা ভালো লক্ষণ।


অপেক্ষার ফল সব সময় ভালো না হলেও অনেক সময় ভালোও হয়। আজ সে ফোনে তার মাকে জানবে যে সে কবিতা লিখেছে তা কিছু দিন পর বের হতে চলেছে। আর কাকে বলা যায়? রুদ্র শুধু ভাবছে অনুপমা কে? তাকে কি বলবে? না থাক, সে তাকে ব্লক করে রেখেছে।


সে এক অদ্ভুদ ঘটনা সানি আহমেদ নামে এক ছেলে তাকে অনেক বিরক্ত করত ও কে ব্লক করতে যেয়ে সে ভুল করে রুদ্রকে ব্লক করে ফেলেছে। অনেক দিন পর বিষয়টা সে বুঝতে পারে আর সরিও বলে।


কিন্ত আজ এই দিনে ব্লক লিষ্টে এখনো পড়ে আছে। আর সে ইচ্ছা করে কোন দিনও ব্লক খুলতে বলবে না, কারন এতে তার কোন দোষ ছিলো না। আর যাইহোক তাকে এই বিষয়ে এখন বলাটাও ঠিক হবে না। যদি আরও রেগে যায়, সে তো এমনিতেই অনেক রেগে যায়, আর রাগলে তার অনেক ভালোও লাগে তাই মাঝে মাঝে সে ইচ্ছে করেই রাগাতো কিন্ত এখন তা করা ঠিক হবে না।


এখন কি করবে? ভেবেও পাচ্ছে না অনেক ক্ষুধা লেগেছে, আসিফ তুমি কি খেয়েছো? আসিফ দিনে অনেক ঘোরাঘুরি করলেও রাত জাগে না। তারাতাড়ি ঘুমিয়ে যায়। এখনো হয়ত ঘুমিয়ে গেছে অনেকক্ষন ধরে ছটফট করছে তবুও কোন সাড়া শব্দ নেই।


লম্বা দেহের পা দুটো বেড থেকেও লম্বা হয়ে ঝুলে আছে। সেও তার প্রায় সমান তাহলে কি সেও যখন ঘুমায় তার পা দুটোও কি এরকম ভাবে থাকে? থাকলেও সমস্যা নেই যদি বউ থাকত তাহলে হয়ত তার বান্ধবীদের কে বলত আর হাসত কিন্তু এখানে আসিফ আর রুদ্র ছাড়া কেও থাকে না আর ছেলেরা এসব ছোট ছোট ব্যাপার নিয়ে বেশি মাথাও ঘামায় না মেয়েদের মত।


তাই তার পা গুলো এভাবে থাকলেও কোন সমস্যা নেই। তাই কোন সন্দেহ ছাড়াই রুদ্র খেতে গেল। খাওয়া শেষে রুমে এসেই চোখ পড়ল টেবিলে, খুব বাজে অবস্থা। মোবাইলটা পড়ে আছে হাতে নিয়ে একটু অনলাইনে যাওয়া দরকার। অনেক দিন বাড়িতেও কথা হয় না রুদ্রের ডাটা অন কর‍তেই পিং পং নটিফিকেশন শুরু। চেক করল অনুপমা একটি পোস্ট করেছে, দেখা দরকার।


পোস্ট দেখে তার সব আনন্দ মাটি হয়ে গেলো। তার পোস্ট পরে বুঝতে পারলো, সে কোন কারণ বসত আর কবিতা লিখবে না! কেন লিখবে না? কিছুই জানতে পারলো না। হঠাৎ কি হল তার?


অনুপমা খুব ভালো কবিতা লেখে, রুদ্র তার কাছ থেকেই একটু আধটু শিখে লিখত। ভুল হত সে ভুল ধরে আবার ঠিকও করে দিত তার এতে বেশ ভালোই লাগত তখন। আবার কখনো ইচ্ছে করেই ভুল করত তার সাথে একটু কথা বলার জন্য। তার অনেক বড় স্বপ্ন কবি হবে।


রুদ্রেও ইচ্ছা সে অনেক বড় কবি হোক! কিন্ত এখন এমনটা কেন করতে চাচ্ছে? খুব কষ্ট করে যতটুকু জানতে পারল সেটা হল তার লেখা নিয়ে তার নিজেরি কনফিউজড লাগছে।


তাই সে আর এসব লিখবে না। তার মনবল নষ্ট হয়ে গেছে বুঝতে আর বাকি রইল না। অবশ্য মনবল নষ্ট হওয়ার কারনটাও রুদ্রের জানা ছিলো। মানুষের মনবল নষ্ট হলে মানুষ বেশি দুর এগিয়ে যেতে পারেনা, তাই মনবল ঠিক রাখা খুব প্রয়োজন।


কিন্ত কি করা যায়? যার জন্য তার মনবল ফিরিয়ে আসবে? রুদ্র অনেকক্ষন ভাবল, কিন্তু কিছু বুঝতে পারল না। এখন শরীরটা খুব খারাপ লাগছে চোখে ঘুম ঘুম অবস্থা। ইচ্ছে করছে ঘুমিয়ে যেতে কিন্ত ঘুমাতেও পারছে না। অনেক সময় মানুষের নিজের কষ্টের চেয়েও তার প্রিয়জনের কষ্ট বেশি কাঁদায় আবার কারো বেলায় তা সব সময় হয়।


রুদ্রের বেলায় হয়তো তাই। এখন খুব কষ্ট হচ্ছে। রুদ্র ভাবছে, আচ্ছা কেন কষ্ট হচ্ছে? ভাবতেই অবাক লাগছে যে সে ইচ্ছা করেই টো এই সব করতেছে তাহলে কেন এত খারাপ লাগতেছে? সেকি আসলেও মন থেকে ব্যাপারটা মুছে ফেলতে চায় না কি? ইচ্ছার বিরুদ্ধে? রুদ্র কিচ্ছু বুঝতে পারছে না, কিচ্ছু না।


তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছে তার কিছু করা দরকার। কিন্তু কি করবে তার জানা ছিলো না। চার পাশ একদম নিশ্চুপ কোন সারা শব্দ নেই রুমে এক পাশে ঘুমিয়ে আছে রুদ্রের রুমমেট। তার মনে হচ্ছে সেও ঘুমিয়েই গেছে, কিন্ত তাহলে সে বুঝতেছে কীভাবে এত সব?


তাহলে কি সে ঘুমায়নি? হুম হয়ত তাই। এইসব ভাবছে রুদ্র তবে নিরব থাকাতে তার একটু ভালোই লাগছিলো। মনে হচ্ছে কিছুক্ষন পর ঘুমিয়েই যাবে, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাত ১২টা ৪৫মিনিট। এখন খুব শব্দ আসছে কিসের শব্দ বুঝতে পারছে না।


ঘুম ঘুম চোখে একটু মাথা উঁচু করে দেখতে পেল তার ফোনে কেউ একজন ফোন করেছে নাম্বারটা সেইভ করা কিন্তু ভালো ভাবে বুঝা যাচ্ছে না।


হাতে নিতেই দেখে রুদ্রের মা ফোন করেছে। কিন্ত এত রাতে মা তো কোনদিনও রুদ্রেকে ফোন করে না। তাহলে আজ কেন করল? কোন খারাপ কিছু হয়নি তো তাদের সাথৎ?


রুদ্র মনে মনে বলছে, “আমি এসব কি ভাবছি? এসব আমার মনের ভুল”। সব কিছুই ঠিক আছে কিচ্ছু হয়নি তবুও রুদ্র ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করলো। কীরে ঘুমিয়ে গেছিছ নাকি জেগে আছিস। রুদ্র আবার ভাবছে যেহেতু ফোনটা রিসিভ করেছি তাই মায়ের এটা বুঝার দরকার ছিল যে, “আমি এখনো জেগে আছি, কিন্তু তারপরও কেন জিজ্ঞেস করল?”


আমি কি এটা প্রশ্ন করব? কেন? তবুও জিজ্ঞেস করল?  এখন এসব ভাবতে একদম ভালো লাগছে না তার। যা বলতে চাই আগে শুনে নেয়া যাক। হ্যাঁ, জেগে আছি। খাওয়া দাওয়া করেছিস?


হুম করেছি। বাবা কেমন আছে? হুম, ভালো আছে। আচ্ছা তুই কি কয়েক দিনের জন্য বাসায় আসতে পারবি? আসলে বাড়িতে অনেক মেহমান আসবে। পরিবারের সবাইকে পরিচয় করাতে হবে, ওরা নাকি তোর বাবাকে বলেছে। আর তাছাড়া অনেক কাজও করতে হবে তুই থাকলে একটু ভালো হত।


আমার এখানেও অনেক কাজ কথাটা কি মাকে বলব নাকি এমনিতেই মিথ্যা বলে কাটিয়ে দিবো? মাকে কখনো মিথ্যা বলিনি আজ কি বলবো? অনেক সময় মানুষ নিজেদের সুবিধার জন্য মিথ্যা বলে আমিও কি তাদের দলে?


আমিও কি আজ তাই বলবো? কোন কাজের বাহানা দিয়ে কি বলবো যে, “আমি যেতে পারবো না। এসব ভাবতে ভাবতে রুদ্র বলেই দিল, আমি যেতে পারবা না। তার মাও আর কিছু জিজ্ঞেস করল না।


রুদ্র মনে মনে ভাবছে, আমি মনে হয় অনেক বেঁচে গেলাম কারন যে মিথ্যাটা বলতে চেয়েছিলাম সেটা আর বলতে হল না।


রুদ্রের মা: ওহ্ আচ্ছা। ঠিক আছে তাহলে আমি তোর ভাইয়ের সাথে কথা বলে দেখি অন্য কাউকে ম্যানেজ করতে পারে কি না কাজের জন্য। কাল সকালে আবার ফোন দেবো। এখন রাখ তাহলে।


ফোন করা শেষ হলো এখন রুদ্রের চোখে আর ঘুম নেই, ঘুম চলে গেছে। তার একবার ঘুম চলে গেলে সারা রাত অনেকক্ষন জেগে থাকতে পারে। আর তখন রুদ্র সারারাত অনুপমা কে নিয়ে নানান ধরনের কথা লিখে তার ডায়েরিতে।


খুব অদ্ভুদ ধরনের কথা, যেগুলো পড়লে যে কেউ পাগলও ভাবতে পারে। আবার ভালোও ভাবতে পাড়ে কারণ সমাজে মানুষ দুই ধরনের। রুদ্র একটা কথা বুঝতে পারল ঘুম মানুষ কে চিন্তা থেকে মুক্ত রাখে এতক্ষন ঘুম ঘুম ছিল তাই কোনো চিন্তা ছিল না এখন ঘুম নেই সব চিন্তা আবার আগের মতই তাকে ঘিরে ধরেছে। অনুপমার চিন্তা, কি করবে সে ভাবতে পারছে না।


তার কবিতার বই বের হতে চলেছে। সেই বই তে যদি অনুপমার কবিতা প্রকাশ করে তার কি এটা দেখে একটু মনবল ফিরে পাবে? হুম পেতে পারে। তবে নাও পেতে পারে কারণ এর আগেও রুদ্র অনেক বার অনুপমাকে তার কবিতা প্রকাশের কথা বলেছিল কিন্তু অনুপমা রাজি হয়নি সে বিশ্বাস করে তার কবিতা ভালো হলে এমনিতেই কাগজে প্রকাশ পাবে।


তাই রুদ্রও ভয় নিয়ে তাকে কিছু বলার সাহস পায় না। আজ সব ভয় বাদ দিয়ে রুদ্র ফোন করল প্রকাশনীতে। প্রকাশনীতে যে ভাই কাজ করত সে রুদ্রকে দাদা বলে ডাকত। তার ও তাকে তার বড় ভাই এর মতই লাগত।


সেও তাকে দাদা বলেই ডাকত। রুদ্রের খোঁজ-খবরও রাখে নিয়মিত। দাদা বলে ডাকলেই যে হিন্দু হয় তা নয়। মানব ধর্ম, প্রকৃত ধর্ম। এটা সে বুঝেছে। অনুপমা যখন তার ভাইকে দাদা ভাই বলে ডাকত তখন।


এক বার ফোন রিং হলো কিন্ত কেউ রিসিভ করলো না। রুদ্র ভাবছে তাহলে কি দাদা ঘুমিয়ে গেছে? রুদ্রের মনে অনেক চিন্তা তাই সে ঘুমাতে পারছে না কিন্ত তাদের তো কোনো চিন্তা নেই তাই হয়ত তারা ঘুমিয়ে গেছে। চিন্তা মানুষের ঘুমের অন্তরায়।


আর এক বার ফোন দিলে কেমন হয়?  রুদ্র কোনদিন কাউকে দুই বারের বেশি এক সাথে ফোন দেইনি, একজন আছে যাকে ২৫-৩০ বারও দিয়েছে, অনুপমাকে! শুধু তাকেই রুদ্র বার বার ফোন কর‍ত রিসিভ না করা পর্যন্ত। খুব চিন্তা হত ফোন না ধরলে।


আর অন্য কেউ ২/১ বার ফোন না ধরলে তাকে একদমই ব্লক করে রেখে দিত। সবার এত বরাই ভালো লাগে না তার।


আবার রিং হচ্ছে… এবার আর বেশিক্ষণ রিং হলো না তার আগেই ওপাশ থেকে শুনতে পেল দাদা কেমন আছেন?  ভালো নেই তবুও মিথ্যা বলতেই হয়। হুম ভালো আছি। রুদ্র যখনি মনে মনে ওয়াদা করে যে, সে আর মিথ্যা বলবে না ঠিক তখনি কেউ এসে জিজ্ঞেস করবে কেমন আছো? আর তাকে মিথ্যা বলতে হয়। এটা নাকি তার অনেকবার প্রমানিত হয়েছে।


আর তখনি শুরু হয় মিথ্যা, আর যে কাজ গুলো শুরুই হয় মিথ্যা দিয়ে সেই কাজ গুলোতে কখনো সফল হওয়া যায় না। আর এজন্য অনুপমাকে রুদ্র শুরু কিংবা মাঝখানে কখনো মিথ্যা বলে না কারন তার ভয় হয় যদি তাকে এই মিথ্যার জন্যই হারিয়ে ফেলে সে নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না।


হ্যাঁ দাদা কি জন্য এত রাতে ফোন করলেন বলছেন না যে?  হুম বলব শুনুন। আমার এক খুব কাছের একজন লেখক আছে খুব ভালো লেখে আমি তার কাছ থেকেই একটু আধটু লেখা শিখেছি। তার কিছু কবিতা নিতে হবে। রুদ্র বুঝতে পারছিল নেগেটিভ কিছু আসবে, কারন তাদের লেখার মাঝখানে অনেকের লেখাই বাদ দেওয়া হয়েছিল কারন সেগুলো মানম্মত ছিল না।


তাই রুদ্র জানত কিছু খারাপ খবর আসবে কিন্তু তারা যদি অনুপমার কবিতা একবার পড়ত তাহলে অবশ্যই নিত। কিন্ত খারাপ খবরটাই আসল, দাদা আমাদের বই গুলো এখন প্রেসে চলে গেছে আর যেমন তেমন লেখা তো আমরা গ্রহন কর‍তে পারব না।


দাদা অনুপমার লেখা গুলো যেমন তেমন নয়। আমার চেয়ে ও বেশি ভালো লেখে। রুদ্র ওপাশ থেকে আবার শুনতে পেল, তা না হয় বুঝলাম দাদা! কিন্ত আমাদের বই এত দিনে তো প্রেসে চলে গেছে আর আমাদের শর্তও পূরন হয়ে গেছে আর লেখা নেওয়া যাচ্ছে না দাদা।


ওহ্ আচ্ছা। এখন রুদ্র কি বলবে বুঝতে পারছে না। মাথা শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে, রুদ্র আর কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। এই সামান্য একটি ব্যাপার নিয়ে তার এত কষ্ট লাগছে কেন?


অনুপমার স্বপ্ন নষ্ট হবে আর তার বুক যেন ফেটে যাবে এরকম অবস্থা। রুদ্র বুঝতে পারল এটা কোন সাধারণ ব্যাপার না। আর এই স্বপ্ন নষ্ট হলে অনুপমাও সত্যি অনেক কষ্ট পাবে। মানুষের অনেক কষ্টের মাঝে একটি বড় কষ্ট হল তার স্বপ্ন নষ্ট হওয়া।


কাজেই তার কষ্ট রুদ্রের ও সহ্য হবে না। কেন হয় না! এটা কেউ যদি রুদ্রকে জিজ্ঞেস করে সে কখনই বলতে পারবে না আর এজন্য আজও বল হলো না। রুদ্র অনেকক্ষন রিকুয়েষ্ট করল কিন্ত দাদা কোনো ভাবেই তার কথা রাখতে পারছেন না। রুদ্র পরক্ষণে চিন্তা করল সে তো এমনি শখের বসে লেখাসলেখি করে আর যেটুকই লেখে অনুপমাকেই কেন্দ্র করে।


তার কোন কোন স্বপ্ন নেই কবি হওয়ার। আর থাকলেই বা কি রুদ্রের সকল স্বপ্নের বিনিময়ে যদি অনুপমার স্বপ্নটাকে দাঁড় করানো যায় সে তাই করবে। আর তাই কোন উপায় না পেয়ে রুদ্র তার দাদা কে বলল, দাদা আপনি তাহলে যে নামের লিষ্ট গুলো প্রকাশ করেছেন সেটা একটু চেঞ্জ করে রুদ্র এর জায়গায় অনুপমা করে দিন। মানে আমার নামের বদলে অন্য নাম।


দাদা ভাই এটা সম্ভব না!


কেন সম্ভব না দাদা?


আমাদের প্রকাশনী থেকে কবিগণের নাম সাইন করে দেওয়া হয়েছে এটা চেঞ্জ করতে অনেক ঝামেলা। রুদ্র একটু আশা নিয়ে বলল যত ঝামেলা হয় হোক তবুও নাম টা চেঞ্জ করুন দাদা। অনেক বলার পরও তিনি রাজি হলেন না। রুদ্র বিষয়টা তাকে খুলে বলল, কিন্তু কোনো লাভ হলো না।


যদিও দাদার কোন দোষ ছিল না এখানে। অবশেষে যখন রুদ্র বলল টাকা যত লাগে লাগবে দাদা তবুও আপনি কাজ টা করে দেন। আচ্ছা ঠিক আছে আমি কাল সকালে দেখছি কি করা যায়। তবে নিশ্চিত নয় দাদা। রুদ্র বুঝতে পারল এই টাকার অনেক মূল্য বটে!


রুদ্র অনুপমার সামনে যদি কোনদিন টাকা নিয়ে কিছু বলত বা জোর করে কিছু কিনত তখন অনুপমা খুব বকা দিত আর বলত, আপনার টাকার গরম হয়ছে তাই না? রুদ্র নাকি টাকার গরম দেখায়।


কিন্ত এই সব তার একদম ভালো লাগে না। বাবার পরিচয়ে চললে এতদিন সে অনেক কিছুই করতে পারত কিন্তু সে খুব সাধারণ ভাবে চলতে ভালোবাসে। তবে সেটা যে অনুপমাকে জানতেই হবে তা নয়।


রুদ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবতে লাগল যাক অবশেষে একটা সমাধান আসল! যদিও কাল সকালে জানা যাবে কি হবে তবুও এখন কম পক্ষে একটা শান্তির ঘুম দেওয়া যাবে।


যদিও খুব ভালো একটা ঘুম হওয়ার কথা কিন্ত সারা রাত রুদ্র ঘুমাতে পারল না অনুপমার কথা চিন্তা করে। এত চিন্তা কি ভাবে আর কোথায় থেকে আসে রুদ্রের জানা নেই।


জানা থাকলে হয়্তো রুদ্র নিজেই একটু ঘুরে আসত তাদের ওখান থেকে। কিছু কিছু গন্তব্য মানুষের অজানা থাকে আর এই অজানার জন্যই মানুষ তার সেই গন্তব্যে কখনোই পৌঁছতে পারে না কখনোই না!


আর রুদ্র ও হয়ত এই জন্যই চিন্তার জগৎ এ কখনোই পৌঁছতে পারবে না। এই সব ভাবতে ভাবতে রাত পেরিয়ে ভোর হলো আর তখনি রুদ্রের চোখে একটু ঘুম আসলো, মানুষের জীবনের ঘটনাগুলো চক্রের মত চলতে থাকে!


আপনার নিজের জীবনের ঘটনা অথচ আপনি ঘুমিয়ে থাকবেন তবুও দেখবেন আপনার ঘটনা গুলো থেমে থাকবে না চলবেই! এটা কখনো থামে না। সকালে দাদা ঠিক তার কথা মত ফোন দিল। তার ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। ফোন রিসিভ করল, দাদা বলুন।


দাদা! আপনার কাজটা হবে কিন্ত তার জন্য আপনাকে যে একটু কষ্ট করতে হবে। অনুপমার জন্য সে সব কষ্ট সহ্য করতে পারব কিন্তু এটা দাদা কে বলা এক দম ঠিক হবে না!  কারন কিছু কিছু কথা থাকে যেগুলো নির্দিষ্ট কিছু মানুষের জন্যই তাই রুদ্র শুধু বলল, কি করতে হবে বলুন দাদা?


বেশি কিছু করতে হলো না শুধু তার পরের দিন ঢাকায় গেল আর তার পরের দিন চলে এল। আর অনুপমার একটা ফটো আর কবি পরিচিত পরের দিন তারা চেয়ে নিল রুদ্রের কাছ থেকে।


আর ঠিক তার কিছু দিন পর নামের লিষ্ট ঠিক চেইঞ্জ করে তার নাম এসেছে তখন এর থেকে ভালো কিছু রুদ্রের কাছে আর অন্য কিছু ছিলো না। সব কিছু ঠিক কিন্তু রুদ্র জানে অনুপমা তবুও এতে যতটা মনবল ফিরে পাবে আর আনন্দিত হবে, তার থেকে বেশি তার উপর রাগ করবে।


এর দুটো কারণ, এক, এটা তার নিজের লেখা নয়। দুই, তাকে না জানিয়ে এই সব করা। কিন্ত রুদ্রের কিছু করার ছিল না কারণ, সেই সময়টাই রুদ্র ছিল তার ব্লক লিষ্টে। ব্লক লিষ্টে থেকেও তার প্রতি রুদ্রের কোন রাগ, অভিমান ছিল না। কারন অনুপমার প্রতি তার খুব কম সময় রাগ হত।


অনেক সময় যেমন জোর করেও ইচ্ছে করে হাসা যায় না, কান্নাই বের হয়। ঠিক তেমনি অনুপমার প্রতি রুদ্র ইচ্ছে করেও জোর করে রেগে যেতে পারে না । তারপর কিছু দিন রুদ্র অসুস্থ হয়ে পরে তাই কিছু মনে করতে পারছে না। প্রচন্ড জ্বর তবুও বাড়িতে কিছু জানাইনি। রুদ্রের রুমমেট, মাথায় পানি দেওয়া সহ সব আনুসাঙ্গিক কাজ করে।


এদিকে পরিক্ষাও খুব কাছে চলে এলো রুদ্রও ধিরে ধিরে সুস্থ হয়ে গেল। করিডোরে রুদ্র চুপ করে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আসিফ দেখ তো আজ কত তাঁরা আকাশ!


আসিফ কার সাথে যেন এস. এম. এস. করছে, তাই কোন মনোযোগ নেই রুদ্রের দিকে। বলছে, তুমি দেখ! দেখে গুনে আমাকে জানাও কতটি হয়। আমার সময় নেই। কার সাথে এস. এম. এস. করছে রুদ্র সেটা জানে তাই আর বিরক্ত করলো না।


চুপ করেই বসে আছে। এখন আর ভালো লাগছে না। কারণ রাতে এখনো খাওয়া হয়নি তাই হয়তো ভালো লাগছে না। হঠাৎ ফোন! কে ফোন করেছে?  ফোন হাতে নিল রুদ্রের মোবাইলের স্ক্রিনে একটি জন্মদিনের কেক দিয়ে ঢাকা, তার মাঝখানে কাগজে সুন্দর করে ইংলিশে লেখা অনুপমা। লেখাটা বোধহয় খুব চেনা কারণ এটা রুদ্র নিজেই লিখেছিল।


কারন সেই দিন অনুপমার জন্ম দিনে তাকে উইশ করার জন কেক আনতে গিয়েছিল। কিন্ত সুগন্ধা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে সব কেক আগে থেকে অর্ডার করা। আর এখন যদি অর্ডার করে তাহলে দেরি কর‍তে হবে। আর রুদ্রের দরকার ছিলো আজ রাতে কারণ রুদ্র নিজে কেক কেটে ভিডিও কলে তাকে উইশ করবে।


বাড়িতে যাওয়া কিংবা সরাসরি উইশ করা রুদ্রের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কেক তাকে পেতেই হবে তাও আবার আজ এখনি। দোকানদার তাকে অন্য একটি দোকানের কথা বললেন সেখানে কেক পেল কিন্ত তারা নাম লিখে দিতে পারল না। তাই এই ঘরোয়া পদ্ধতিতে নাম লিখা।


সেই কেকটাই ছবি তুলে অনুপমার নম্বরে সেইভ করা ছিল। আর সেই নাম দেখে রুদ্রের বুঝতে একটুও দেরি হল না যে, কে ফোন করেছে। প্রথমে ভাবল ফোন ধরবে না কিন্ত ফোন না ধরে আর থাকতে পারল না। ফোন ধরার সাথেই বলল, কেমন আছেন?


রুদ্র ভালো ছিলা না কিন্ত তার ফোন এসেই ভালো হয়ে গিয়েছে। মিথ্যা না বলে বলেই দিল, “ভালো আছি। আপনি?”


সেও ভালো। রুদ্র আর অনুপমার সম্পর্ক তখনো আপনা আপনিতেই ছিল, এখন অবশ্য তুমি করেই বলে। কি ব্যাপার আপনার ফেসবুক আইডি কি হয়েছে?  মেসেজ দিচ্ছি যাচ্ছে না কেন?


রুদ্র অনেকক্ষণ চুপ করে থাকল সে আবার জিজ্ঞেস করার আগেই বলল, ডিয়েক্টিভ করেছি। কেন করেছে জানতে চাইলে রুদ্র বলল, আমাকে ব্লক করেছেন সেজন্য। ফেসবুকে রুদ্রের একটাই কাজ ছিল অনুপমার সাথে কথা বলা মেসেজে।


পরক্ষণে সে বুঝতে পারল যে, সে রুদ্রকে ব্লক করেছে আর তখনি সেই ব্লক দেওয়ার সব ঘটনা খুলে বলল। আর সাথে ছোট্ট একটা “সরি”। রুদ্রের সাথে কেও ভুল করে কখনো সরি বলেনি। সরি বলার আগেই পানিশমেন্ট দিত। এই প্রথম অনু তাকে সরি বলল তাও আবার ফোনে।


রুদ্র কি বলবে বুঝতে পারছে না এই দিকে মনে মনে একটু অভিমানও ছিল কিন্ত যত কিছুই থাক আজ সব কিছু ভুলে গেছে রদ্র।কিন্ত রুদ্র এখন কি বলব বুঝতে পারছে না তাই কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল ঠিক আছে সমস্যা নেই। অনেক দিন পর কথা তাই কিছুক্ষন কথা হলো। বেশ ভালোই লাগল রুদ্রের। তার পর আসল ফেসবুকের কথা। রুদ্রকে অনুপমা জিজ্ঞেস করল, তাহলে আর কি ফেসবুকে আসবেন না? রুদ্র বলল আজ না তবে কাল থেকে যাব।


সে আবার হেসে মজা করে বলল, “থাক না, আসার কি দরকার? হুম?”


রুদ্র বুঝতে পারাল মজা করে বলল। তাই রুদ্র নিজেও বলল ঠিক আছে যাব না। কথা শেষ করে আর ভালো লাগছে না। কাল ফেসবুকে যাওয়ার কথা কিন্ত রুদ্র তখনি আইডি এক্টিভ করে নিল, ফেসবুকে। কথা হল অনেক রাত অবধি। রুদ্র ভাবতেছে আজ কি বলবে যে, তোমার লেখা বের হবে? নাকি আজ বলবে না।


শুনেছি তাড়াতাড়ি কোনো কিছু করতে চাইলে নাকি সেটা ভালো হয় না। তাহলে আমার কথাতেও অনুপমা এখন রেগে যাবে?


এই সব ভাবতে ভাবতে রুদ্র দেখল অনুপমা এতক্ষনে অফ লাইনে চলে গেছে। অনেক রাত হয়ত ঘুমিয়ে গেছে না হয় খেতে গেছে। এমনিতেই সে অনেক রাত অবধি জেগে থাকে এটা তার অভ্যাস। রুদ্র ভাবল থাহলে থাক আজ আর কিছু বলবে না কালকেই সব কিছু বলবে ফোনে। রুদ্র এত রাত জাগত না যেদিন অনুপমার সাথে কথা হয় সেদিনি শুধু রাত জাগত!


অনুপমা ঘুমিয়ে গেছে আর রুদ্র তাদের ১ম দিনের পরিচয় এর কথা নিয়ে ভাবতেছে এই তো কয়েক মাস আগের কথা তার সাথে রাস্তার ধারে তেঁতুল গাছটার নিচে দেখা ১ম দেখাতেই রুদ্রর চোখ ফেরাতে পারেনি এত সুন্দর মানুষ হয়তো সে আর আগে কখনো দেখেনি কুৎসিত আচরণ মানুষের মুখের সমস্ত সৌন্দর্য কেড়ে নেয় আর অনুপমার আচরণ এতটায় কোমল ছিলো যে, তাকে আরো বেশি মায়াবি মনে হয়েছিল!


সে দিন থেকেই রুদ্র তাকে ভালোবেসে ফেলেছে কিন্তু সরাসরি এখনো বলা হয়নি। রুদ্রের ধারনা ভালোবাসি বলার কোন প্রয়োজন নেই, ভালোবাসি তো ভালোই বাসি। রাত্রে যে কথা টা রুদ্র অনুপমাকে বলতে চেয়েছিল সে কথাটাও আর বলা হলো না।


ভাবলো কিছুদিন পর তার হাতে তার লেখা বই তুলে দিয়ে সারপ্রাইজ দিবে তাই সে কথা টাও গোপন রাখল। কিছু দিন পর রুদ্রের আবার রেজাল্ট বের হয়। সাব্রিনা এবং রুদ্র দুজনেরই ভালো রেজাল্ট। সাব্রিনা ঢাকায় টিসি নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু রুদ্র এবার আর টিসি নিতে চাচ্ছে না। কারন সে অনুপমা কে দুরে রেখে ঢাকায় যাবে না।


এদিকে তার মামা, মা দুজনেই বার বার ফোন দিতেছে টিসির ব্যাপারে কিন্তু রুদ্রের এমন আচরণে তারা কিছুই বুঝতে পারছে না। যে ছেলে এখানে থাকবে না বলে বার বার বায়না ধরত আজ এমন কি হলো যে যার জন্য সে এখানেই থেকে যেতে চাইছে।


সাব্রিনা টিসি নিয়ে চলে গেল কিন্তু রুদ্র গেল না সে অনুপমাকে না দেখে থাকতে পারবে না বলে। কিন্তু এই কথা গুলো এখনো অনুপমার অজানা!


১৫ দিন পর


আজ অনুপমার লেখা কবিতার বইগুলো এসেছে। রুদ্র ভাবছে আজ অনুপমাকে বইগুলো দিয়ে তাক লাগিয়ে দিবে আর আজ সব কথা খুলে বলবে। ফোন করে রুদ্র অনুপমাকে সেই রাস্তার ধারে সেই তেঁতুল গাছটার কাছে আসতে বলল। রুদ্র তার বই গুলো আর কিছু গোলাপ ফুল নিয়ে তার কাছে আসল।


রাস্তার দুই পাশে দুই জন রুদ্র তেঁতুল গাছের নিচে আর অনুপমা অন্যদিকে। রুদ্র বলল, তুমি থাকো আমি আসতেছি কিন্তু অনুপমা সেই তেঁতুল গাছটার নিচেই কথা বলতে চাইলো। আজ তারা দুজনেই অনেক খুশি। চোখে চোখ রেখে অনেক কিছুই হয়ে যাচ্ছে এত খুশি অনুপমাকে রুদ্র আগে কখনো দেখেনি আজ হয়তো বইগুলো দেখার পর আরো বেশি খুশি হবে!


অনুপমা রাস্তার মাঝখানে আসার পর বিকট এক শব্দ রুদ্র হঠাৎ চেয়ে দেখে অনুপমা নেই!  সামনে চোখ পড়তেই রক্ত মাখা শরীর দেখতে পায় রুদ্র। গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে অনুপমার শরীর। রুদ্র বই আর ফুলগুলো ফেলে দিয়ে দৌড়ে অনুপমার কাছে ছুটে আসে। রুদ্র নিস্তব্ধ, কোন নড়াচড়া নেই। চোখের পাতা পড়তেও দেখা যায়নি।


দু’চোখে শুধুই জল ঝড়তে থাকলো। তার হৃদপিণ্ডে রক্ত শুকিয়ে গেছে, পাজরটা মনে হচ্ছে ভেঙে গেছে। অনুপমাকে কোলে নিয়ে চিৎকার করে বলতে দেখা যায়নি, কি হয়েছে তোমার?


শুধু রুদ্রের অনুপমার সেই হাসি মুখ টা বার বার ভেসে উঠছে। কিছুক্ষণ পর লোকজন জমা হলো এম্বুল্যান্স কে খবর দেওয়া হলো মেডিক্যাল ছিল পাশেই, সাথে সাথে ডাক্তার ও আসলো কিন্তু তারা অনুপমাকে বাঁচাতে পারেনি তার আগেই সে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে অনেক দূরে, যেখান থেকে আর কেউ ফিরে আসতে পারে না।


ফুলগুলো পরে আছে রাস্তায়, অনুপমাকে দেওয়া হলো না। ভালোবাসি কথাটাও বলা হল না, অনুপমাকে কে যে এই পৃথিবীতে তার নিজের থেকেও কেউ একজন বেশি ভালোবাসত, এই প্রিয় সত্যিটা না জেনেই সে মরে গেল!


রুদ্রের কেবলি মনে হতে লাগল এই সব কিছুর জন্য দায়ি সে। রুদ্র নিজেকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবে না। রুদ্রের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে কোন কথা বলতে পারছে না। অনুপমাকে গাড়িতে করে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে বাধা দেওয়ার শত ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও পারছে না কিছু বলতে।


বুকের চামড়া ফুটো হয়ে হৃদপিণ্ডে যেন রক্ত ঝড়ছে, চখের পাতা অবশ হয়ে আসছে, সব কিছুই ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। রুদ্র পাগলের মত মাথায় আঘাত দিতে থাকে মাটিতে, চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে ভালোবাসি তোমাকে অনুপমা। এবার সে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেছে।


অনুপমার কবি হওয়ার স্বপ্ন আজ ভেঙে গেছে। অনুপমা কোন দিন জানতেও পাড়বে না তার নাম এখন কবিতার বইয়ে ছাপা হয়েছে। জানতে পারবে না সেও একজন কবি। শুধুই কবি হওয়ার আশা নিয়ে সে চলে গেলো স্বপ্নের দেশে। এদিকে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।


কিন্তু রুদ্র এখনো সেখানেই বসে আছে। আর অনুপমার কথা ভাবছে তার চোখের জল সব শুকিয়ে গেছে, কাঁদতে পারছে না।


অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর, রুদ্র আজ পাথর হয়ে গেছে। অন্ধকার নেমে গেছে রুদ্র বসেই আছে, রাত গভীর হলে রুদ্র সেখানেই শুয়ে পড়ে।


৩ বছর পর


আজ সেই শনিবার। যেদিন অনুপমা রুদ্রের কাছ থেকে না জানিয়ে চির দিনের জন্য বিদায় নেয়। সেই জায়গা, সেই রাস্তা, রাস্তার ধারে তেঁতুল গাছের নিচে রুদ্র দাঁড়িয়ে। হালকা হাওয়ায় গাছের পাতা ঝির ঝির শব্দে দোল খাচ্ছে, হালকা চাদরটা বাতাস এর শক্তি আর মেনে নিতে না পেরে রুদ্রের শরীর থেকে নেমে পড়ার জন্য তৈরী হচ্ছে।


কিন্ত শেষ নিংরানো শক্তিটুকু তাতে বাধার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই তো জায়গা আহা! কত তৃষ্ণা আর মাধূর্য মিশে আছে এখানে। বর্ষার দিনকে রাত্রি করা এবং জ্যোৎস্নার রাতকে দিন করে তোলা, শ্রান্তি এবং অবসাদকে গায়ের জোরে দূর করে দেয়া।


পরস্পরকে এমন করিয়া অভ্যাস করা যে, যখন অসাড় চিত্তে আনন্দ দিচ্ছে না তখনো ক্ষণকালের জন্য মিলন পাশ হইতে মুক্তি ভয়াবহ মনে হয় - সম্ভোগসুখ ভস্মাচ্ছন্ন, অথচ কর্মান্তেরে যেতেও পা ওঠে না।


ভোগসুখের এই ভয়ংকর অভিশাপ যে সুখ অধিক দিন থাকে না, কিন্ত বন্ধন ছিন্ন হয়ে ওঠে।


আজ সবি নিছক মিথ্যা, কিন্ত স্মৃতির চাদরে ঢেকে গেছে পূরো শহর। আসলে কি আপন বলতে কেউ হয়, এমন একজন, যে শুধু আপনি হয়? হয়তো হয় আবার হয়তো বা না!


এই ব্রহ্মাণ্ডে আপন বলতে কেউ নেই। যে আপন ভাবে সেই আপন!  যে পর বলিয়া জানে সে আপন হলেও পর।


তারপরও কে যেন থেকে গেছিলো যার জন্য রুদ্রের বুকে উগ্র ব্যাথা গুলো বার বার অতিবেগে জাগ্রত হচ্ছে! আর শোষিত করে নিচ্ছে জীবন প্রণয়ের সর্বসুখ। প্রণয় হাওয়া ধিরে ধিরে কমে এসেছে। চুপচাপ সব কিছু শুধু রুদ্রের বুকে তুলপার চলছে।


ধূসর কালো মেঘে ঘন হিমেল কণার অস্পষ্ট দানা ঝরে যাচ্ছে। রুদ্রের হৃদয়ে বৃষ্টি হচ্ছে চোখের বৃষ্টি। সেই অস্রুশিক্ত চোখের জল আর দৃশ্যমান নেই। আজ বোঝাপড়া হবে অনুপমার সাথে। ওপারের মানুষের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের কোন মাধ্যম নেই।


হাতে একটা চিঠি। চিঠিতে লেখা--------


প্রিয়তম, যাহাকে ভুলিবার জন্য চলিয়া গেছ, এ লেখা তাহাকে স্বরণ করাইবে কেন।যে লতাকে ছিঁড়িয়া মাটিতে ফেলিয়া দিলে,সে আবার কোন লজ্জায় জড়াইয়া উপরে উঠিতে চেষ্টা করে। সে কেন মাটির সঙ্গে মাটি হইয়া মিশিয়া গেল না!


"কিন্তু এতটুকুতে কী ক্ষতি হইবে প্রিয়!না হয় ক্ষণকালের জন্য মনে পড়িলই বা। মনে তাহাতে কতটুকু বাজিবে। আর তোমার অবহেলা যে কাটার মত আমার পাজরের ভিতরে প্রবেশ করিয়া রহিল। সকল দিন,সকল রাত,সকল কাজ,সকল চিন্তার মধ্যে,যে দিকে ফিরি সেদিকেই যে আমাকে বিধিঁতে লাগিল।


তুমি কেমন করিয়া ভুলিলে আমাকে তেমনি করিয়া ভুলিবার একটা উপায় বলিয়া দাও! প্রিয় তুমি যে আমাকে ভালোবাসিয়াছিলে, সে কি আমারই অপরাধ?  আমি কি স্বপ্নেও এতো সৌভাগ্য প্রত্যাশা করিয়াছিলাম।আমি কোথায় হয়তে আসিলাম,কোথায় ছিলাম।


আমাকে কে জানিত! আমাকে যদি না চাহিয়া দেখিতে, না ভালোবাসিতে। আমাকে যদি একাকার নিশ্ব নৈশ্বথ্যে, হা-হা কার মরুর ত্রিব্র ঝড়ে না ফেলিয়া বুকের দহনে পুরড়িয়া পুরড়িয়া মারিতে। তখনও আমি কি তোমায় দোষ দিতে পারিতাম প্রিয়! তুমি নিজেই আমার কোন গুনে ভুলিলে প্রিয়তম,কি দেখিয়া আমার এত আদর বাড়াইলে।


আর আজ বিনা মেঘে যদি বজ্রপাতই হইল তবে সে বজ্র কেবল দগ্ধ করিল কেন। একেবারে দেহমন কেন ছাই করিয়া দিল না। এই কয়টা দিন অনেক সহ্য করিলাম, অনেক ভাবিলাম কিন্তু একটা কথা বুঝিতে পারিলাম না। বাচিঁয়া থাকিয়াও কি তুমি আমাকে ফেলিতে পারিতে না।


আমার জন্যও কি তোমার এই জগৎ ছাড়িয়া চলিয়া যাওয়ার কোন প্রয়োজন ছিল..? আমি কি তোমার এতখানি জুরিয়া আছি।আমাকে তোমার মনের কোণে, তোমার হিয়ার দ্বারের বাহিরে রাখিলেও কি আমি তোমার চোখে পরিতাম! তায় যদি হয় তুমি কেন গেলে, আমার কি কোথাও যাইবার পথ ছিল না।


ভাসিয়া আসিয়াছি ভাসিয়া যাইতাম।আমি প্রতি দিন নিয়ম করে ঠিক এখানেই আসি, যে খানে তোমার শেষ সৃতি টুকু নিস্তব্ধ নিরবতায় অতলতায় অতিভীষ্মো। আমি জানি যে বন দেখিয়াছে তাহকে আজীবনের জন্য বনবাশ দেওয়া এ বড় কঠিন দন্ড..." 


তার পরও প্রতি দিন আসি।  হাজারও পথচারী,সতস্র প্রিয়জন বলে তুমি নাকি আর কোন দিনও ফিরিবে না! তবে কি  তায় সত্যি। 
তুমি কি তাহলে সত্যিই আর ফিরে আসিবে না।


যখন বেচেঁ থেকে আমায়  কস্ট দিতেও ছিল এত অবাঞ্চিত অনিহা,তবে কেন শেষ বিদায়ে  এই অনিশ্চত অপেক্ষা....!


আমি এখনো তোমারি জন্য  অপেক্ষা করি আমার বিশ্বাস তুমি   ফিরে আসবে!  তুমি ফিরে আসবেই 


আরও পড়ুনঃ নিকটে - একটি ভিন্নধর্মী থ্রিলার ছোটগল্প