সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর নির্দেশনাঃ কি করা উচিত আর কি নয়?

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বর্তমান যুগের ব্যবসায়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই সাবধানতার সাথে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ব্যবহার করা খুবই প্রয়োজন। আর এজন্যই কিছু দরকারী নির্দেশনা নিয়ে আমাদের আজকের পোস্ট।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর নির্দেশনাঃ কি করা উচিত আর কি নয়?
সোশাল মিডিয়া মার্কেটিংঃ কি করা উচিত আর কি নয়?


প্রযুক্তির এই ক্রমশ উন্নয়নের সাথে সাথে, সোশ্যাল মিডিয়া ধীরেধীরে আমাদের বন্ধু হয়ে উঠছে। সবাই যেকোনো একটি বা একাধিক বা প্রায় সব সোশ্যাল মিডিয়া   তে সক্রিয় থাকছেন। অনেক ব্যবসায়ী বা ব্লগাররা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচারণার কৌশল ব্যবহার করে বেশ ভালো ফলাফল পাচ্ছেন। এগুলো বেশ ভালো গ্রাহক আকর্ষণ তৈরি করে এবং গ্রাহকদের কাছে পন্য বা সেবার একটি সুন্দর ধারণা উপস্থাপন করে। 


আমরা জানি বেশি গ্রাহক মানেই বেশি মুনাফা বা ব্যবসায় লাভজনক হচ্ছে। এছাড়াও যদি গ্রাহকের কাছে ভালো ইমেজ বানানো যায় তাহলে পরে পণ্য বা সেবার মূল্য বাড়ালেও তারা পণ্য বা সেবা কিনতে অসন্তুষ্ট বোধ করেনা। আর এতে ব্যবসায়ের মুনাফা বৃদ্ধি পায়। 


সোশ্যাল মিডিয়া সম্বন্ধে আপনার সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকলে আপনি এসব কৌশল কাজে লাগিয়ে অনেক কিছু শেখা ও এখান থেকে ভালো সুবিধা পেতে পারেন।


শুনে খুব সাধারণ মনে হলেও, আসলে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এত সহজ ব্যাপার নয়। এখানে ফলাফল ইতিবাচক পেতে আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। এখানে অনেক কিছু আপনাকে মাথা ঠান্ডা রেখে বিবেচনা করতে হবে। এখানে বিভিন্ন কাজ করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। সেগুলো বাছাই করার ক্ষেত্রে সবসময় সাবধান থাকতে হয়। আসুন দেখা যাক সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এ কি করা উচিত আর কি নয়:



যেগুলি করা উচিত নয়

১.লিংকগুলো যুক্ত করতে ভুলবেন না

সবসময় আপনার ব্যবসায়িক পেজের লিংক নিজস্ব সকল ওয়েবসাইট, শপিং পেজ, ব্লগ পেজ অথবা কন্ট্যাক্ট  পেজ এ দিতে ভুলবেন না। একটি ক্লিকই পারে একজন গ্রাহককে আপনার কাস্টমার বানাতে, কারণ ওই ক্লিক থেকেই তারা পণ্য সম্বন্ধে জানতে পারবে এবং অর্ডার করতে পারবে।


২. আগেই সাধারণ পোস্ট করায় মনোযোগ দেবেন না

প্রথমে জেনে নিন আপনি কে, আপনি কোন ব্র‍্যান্ড অনলাইনে প্রচার করতে চান, আপনার টার্গেট মার্কেট কোনটি, এবং আরও সকল কিছু যা নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। আপনার ব্যবসায় হলো একজন মানুষের মত। আপনার প্রথম পোস্টেই সবাই আপনার উপর ধারণা আনবে এবং সিদ্ধান্ত নেবে যে আপনার পেজ ফলো করবে কি করবে না। সুতরাং প্রথম পোস্টে আগে নজর দিন ও এখানে আপনার সেবা বা পণ্য সম্বন্ধে সুন্দর ধারণা অন্তর্ভুক্ত করুন যাতে গ্রাহকরা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত হয়। 


৩. কমেন্ট এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে ভুলবেন না

কমেন্ট এবং প্রশ্নগুলো চেক করতে কখনো ভুলবেন না, এগুলো খুবই বিপদজনক হতে পারে। বরং এই পয়েন্ট গুলোকে আপনি উৎপাদনশীল করে তুলতে পারেন। যদি আপনি সবসময় ভিজিটরদের প্রশ্নোত্তর গুলোর জবাব দেন, তাদের সাথে সংযুক্ত থাকেন, তাহলে তারা বুঝবে আপনি আপনার পন্য বা সেবার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছেন। এছাড়াও এই প্রশ্নোত্তর গুলো করলে গ্রাহকরা বুঝতে পারে যে আপনি তাদের প্রতি কতটা মনোযোগী।


৪. শুধু নিজস্ব প্রচারণা নিয়ে পড়ে থাকবেন না

আপনি আপনার পেজে বিভিন্ন ধরণের পন্য সমারোহের বা মজাদার কিছু পোস্ট করতে পারেন, যেগুলো গ্রাহকরা উপভোগ করতে পারে। এতে তারা বুঝবে যে আপনি তাদের উপর কেয়ার নিচ্ছেন। এগুলো সম্পূর্ণ গেম এবং মজাদার কিছুও হতে পারে। যেমন - জনপ্রিয় কোন টপিক বা ধরুন বিংগো কারড স্টোরি যেটা ইন্সট্রাগ্রামে প্রচলিত, সেটা আপনি আপনার পেজেও নিয়ে আসতে পারেন। এছাড়াও আপনি পেজে মাঝেমাঝে মিম পোস্ট বা ছোট গল্প পোস্ট করতে পারেন যাতে গ্রাহকরা আকর্ষিত হয়।


৫. আপনার গ্রাহকদের স্প্যাম করবেন না

আপনার স্থায়ী গ্রাহক বা সম্ভান্য গ্রাহকদের নতুন পন্য বা প্রচারণা সম্বন্ধে জানান কিন্তু তাদের অতিরিক্ত ইমেইল বা মেসেজ দিয়ে বিরক্তিতে ফেলবেন না। এগুলো আপনাকে লাভবান করারর চেয়ে গ্রাহক হারানোর সমস্যায় ফেলতে পারে। সবসময়ই একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় ইমেইল বে মেসেজ দিন, বা নির্দিষ্ট সময় বাছাই করুন। যদি আপনি তাদের প্রয়োজন এর বেশি মেসেজ করেন, তাহলে আপনি মিউট বা ব্লকড হতে পারেন।


৬. সবকিছু হ্যাশট্যাগে অন্তর্ভুক্তি করবেন না

সবকিছু হ্যাশট্যাগে অন্তর্ভুক্ত করবেন না, হ্যাশট্যাগ অবশ্যই আপনার ভিউয়ার বাড়ায়, তবে এক্ষেত্রে কোন অংশ হ্যাশট্যাগের অন্তর্ভুক্ত করবেন তা বাছাই করা জরুরী। আপনার পন্য বা সেবার সাথে জড়িত শব্দ গুলোই হ্যাশট্যাগ এর মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারেন, এছাড়া স্থানীয় হ্যাশট্যাগও ব্যবহার করতে পারেন। 


৭. পুনরাবৃত্তি করবেন না

সবসময় নতুন পোস্ট তৈরি করবেন, নতুন ক্যাপশন এর সাথে, কখনো পুরনো পোস্ট বারবার রিপিট করবেন না। এতে গ্রাহকরা ভাবতে পারে হয়তো আপনার পেজের বিষয়বস্তু কম বা আপনি প্রচেষ্টা কম চালাচ্ছেন। এছাড়াও তারা সবসময় আগের পোস্ট এর সাথে নতুন পোস্ট মিলিয়ে দেখে যে এটা আগের মতই কিনা। তাই নতুন ক্যাপশন এবং পোস্ট সবসময় নতুন করে বাছাই ও প্রচার করবেন।


যেগুলি করা উচিত

১. সঠিক সময় জানুন ও বাছাই করুন

আপনার পোস্ট করার সঠিক সময় নির্ধারণ করার জন্য আগে দেখুন আপনার শ্রোতা কোন শ্রেণির। যেমন - ধরুন গৃহীণি মায়েদের জন্য, দিনে পোস্ট করা উচিত কারণ তখন বাচ্চারা স্কুলে থাকে এবং তারা কিছু সময় ফ্রি থাকতে পারে। এছাড়া ছাত্র ছাত্রী বা কর্মীদের জন্য রাতের সময়ে পোস্ট করা উচিত কারণ তারা তখন ফ্রি থাকে আর অনলাইন চেক করে। এছাড়াও ছুটির দিনগুলো পোস্ট করার জন্য খুবই ভালো কারণ ওইদিন সবাই কমবেশি অনলাইনে ঘাটাঘাটি করে থাকে।


২. আপনার গ্রাহকদের সম্বন্ধে জানুন

যেমন আমরা গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে পোস্ট করার সঠিক সময় বাছাই করেছি, তেমন ভাবেই গ্রাহকরা কোন বিষয়বস্তু বিশেষভাবে পছন্দ করে তাও জানা জরুরি। কোন ধরনের পোস্টে আপনার গ্রাহকরা বেশি প্রতিক্রিয়া দেয় বা কমেন্ট করে, এগুলো নজরে রাখবেন। এতে সহজেই আপনি বাছাই করতে পারবেন গ্রাহকরা আসলে কি বেশি পছন্দ করে।


৩. নতুন এবং বৈচিত্র্যময় তথ্য ব্যবহার করুন

আপনার পেজ সবসময় নতুন ও বৈচিত্র্যময় পোস্ট দিয়ে সাজিয়ে রাখুন। যেমন- অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা টিকটক ভিডিও বেশি পছন্দ করে।   এছাড়াও মিম পোস্ট, রোমান্টিক লাভ স্টোরি তাদের নজর সহজেই কাড়তে পারবে। মনে রাখবেন গ্রাহকভেদে নতুনত্ব নিতে আসুন যাতে তারা এখানে বিনোদন ও কাজ দুই সুবিধাই পেতে পারে। 


৪. সবকিছুর পরিকল্পনা প্রণয়ন করুন

শুধু কি করা উচিত কি নয় এটুকু জানাই যথেষ্ট নয়। বরং কৌশল জানা উচিত, আপনার যে ধরনের উপাদান প্রয়োজন সে সম্বন্ধে ও অন্য সকল বিষয়ে আপনার আগেই পরিকল্পনা করে রাখা উচিত। এক্ষেত্রে আপনি সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টে পরিকল্পনা করে রাখতে পারেন এবং সেগুলোর তালিকা করে সেভ করে রাখতেও পারেন।


৫. একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসাবে উপভোগ করুন

আপনার একাউন্ট বা পেজ নিয়ন্ত্রণ করুন এবং উপভোগ করুন। গ্রাহকদের নিজের বন্ধু বানিয়ে নিন। এগুলো উপভোগ করা খুবই প্রয়োজন কারণ এগুলোর অনেক ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে আপনার কাজে। আপনি আপনার ভুল বা সমালোচনা গুলোকেও এই উপায়ে সাফল্যের  পথপ্রদর্শক হিসাবে ভাববেন যা আসলেই খুব উপকারী। এছাড়া গ্রাহকদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করলে তারা আপনার স্থায়ী গ্রাহকে পরিণত হয়।


এছাড়াও আপনার নিজেরও কাজের সময়গুলো বেশ আনন্দেই কাটতে থাকে। আপনি যদি এর চেয়ে বেশি এ সম্বন্ধে জানতে চান, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি অনুসরণ করতে পারেন। এখানে সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট সামলানোর হাজারো উপায় ও অন্যান্য নির্দেশনা রয়েছে। সুতরাং আপনি যদি এই কাজে উৎসাহী হয়ে থাকেন তাহলে বাছাই করে ফেলুন আপনার পছন্দের প্ল্যাটফর্ম যেটা আপনার মনমতো ব্যবসায় আপনি করতে পারবেন।


উপসংহার

আজকের মত এটুকুই ছিল আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং নিয়ে আলোচনা। যদি আপনাদের কোন নতুন মতামত থাকে বা আমাদের কিছু জিজ্ঞাসা করতে চান অবশ্যই নিশ্চিন্তে জিজ্ঞাসা করতে পারবেন। আমরা খুশি হবো। 

সবাইকে শুভকামনা জানিয়ে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি!