স্মার্টফোন আসক্তি ছাড়তে কি কি করণীয় - জেনে নিন

স্মার্ট ফোন বর্তমানে বেশ সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। আজকাল বাজারে পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে পঞ্চাশ হাজার টাকার স্মার্টফোন বিক্রি হচ্ছে। যার কারণে নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত ও ধনী সকলেই যার যার সাধ্যের মধ্যে স্মার্টফোন কিনে ব্যবহার করছে। শুধু তাই নয়, যুগের এসেছে বিশাল পরিবর্তন।

স্মার্টফোন আসক্তি ছাড়তে কি কি করণীয় - জেনে নিন
স্মার্টফোন আসক্তি ছাড়তে কি কি করণীয়


যার কারণে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলেই স্মার্ট ফোন ব্যবহার করছে। শিশুরা সাধারণত গেমস খেলা কার্টুন দেখা ইত্যাদি কারণে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে। অন্যদিকে বৃদ্ধরা ব্যবহার করেন বিনোদন এর কারণে। মোটকথা স্মার্টফোন এখন মানুষের হাতে হাতে দেখা যায়। তবে এই স্মার্টফোন ব্যবহার করা যে কখন প্রয়োজন থেকে আসক্তিতে পরিণত হয়ে গেছে এটা হয়তো আমরা কেউই জানি না।


আবার অনেকে স্মার্ট ফোন আসক্তি টের পেয়ে সে আসক্তি থেকে মুক্ত হতে চেয়েও মুক্ত হতে পারছে না। বলা হয়ে থাকে স্মার্টফোন আসক্তি মাদকাসক্তির মতই। যা চাইলে ছেড়ে দেয়া যায় না। আপনি হয়তো স্মার্টফোন ব্যবহারে দিনদিন নেশাগ্রস্ত হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু আপনার সময় মত টনক নড়েছে এবং আপনি স্মার্টফোন ব্যবহার করা ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন অথবা নেশা থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছেন কিন্তু পারছেন না। এই ক্ষেত্রে আপনাকে কি করতে হবে?
 


আজকের আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হবে স্মার্টফোন আসক্তি থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই চলুন দেরী না করে দেখে নেওয়া যাক।



নোটিফিকেশন বন্ধ রাখা

নোটিফিকেশন মোবাইল প্রযুক্তির এমন একটি অংশ যার কারণে আমাদের মন সময় ছটফট করতে থাকে। আমরা চেয়েও নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি না। কেউ কোনো একটা কাজ অনেক মনোযোগ দিয়ে করছে ঠিকই, কিন্তু সেই সময় যদি সোসিয়াল মিডিয়া থেকে একটা নোটিফিকেশন তখন ওই একই পরিমাণ মনোযোগ দিয়ে কাজ করাটা ও মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব হয় না।


আমরা সেই দরকারি কাজ ফেলে দিয়ে সরাসরি নোটিফিকেশন বার এ গিয়ে নোটিফিকেশনটা ক্লিক করে দেই। তারপরে শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রোলিং। যা কখনো শেষ হয় না। যখন শেষ হয় তখন আমরা বুঝতে পারি অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। অনেকটা সময়ই হাতের থেকে চলে গিয়েছে।


আর তাই এই স্মার্টফোন আসক্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে নোটিফিকেশনটা বন্ধ করে রাখতে হবে। আপনি যখন কাজ থেকে ফ্রি হবেন তখন চেষ্টা করবেন সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে ঢু মেরে দেখা। নোটিফিকেশন অযথা অন করে রাখার দরকার নেই।


অন্য কাজে ব্যস্ত থাকা

যখনই আপনি বুঝতে পারছেন আপনি দিন দিন স্মার্টফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছেন, তখন চেষ্টা করুন স্মার্টফোনকে হাতের নাগাল থেকে দূরে কোথাও রাখা। এবং নিজেকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখা। এই সময়টায় আপনি ভালো কোনো বই পড়তে পারেন, পড়াশোনা করতে পারেন কিংবা আপনার বিভিন্ন দরকারি কাজে ব্যস্ত থাকতে পারেন। চেষ্টা করুন স্মার্টফোন ব্যবহার না করে নিজেকে ব্যস্ত রাখা।


এতে কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনোযোগ স্মার্ট ফোনের থেকে দূরে চলে যায়। ফলে যে কোন কাজ করতে সুবিধা হয়।  এই প্রক্রিয়াটি ধীরে ধীরে অবলম্বন করলে স্মার্টফোনের উপর থেকে আসক্তি একেবারেই চলে যাবে আশা করা যায়। তাছাড়া আপনি যখন সবকিছু ফেলে দিয়ে আপনার নিজের কাজকে গুরুত্ব দেবেন, তখন স্মার্ট ফোনের প্রতি আপনার মন আর আটকে থাকবে না।


গোল সেট করুন

প্রয়োজন ছাড়া স্মার্টফোন ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন। যদি একান্তই কোন কারণে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে হয় তখন মনে মনে ঠিক করে নিন আপনি স্মার্টফোনে কখন এবং কোন কাজটি করতে যাচ্ছেন। যেমন ধরুন আপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ মেইল চেক করে রিপ্লাই দিতে হবে। তখন আপনার মন-মানসিকতা যাতে শুধুমাত্র সেই কাজটিতে আবদ্ধ থাকে।


আপনি তখন স্মার্টফোনটা হাতে নেবেন জিমেইল অ্যাপ্লিকেশনে ঢুকবেন, মেসেজটা পড়বেন মেসেজের রিপ্লাই পাঠিয়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে স্মার্টফোন আবার হাতের থেকে দূরে কোথাও রেখে দিবেন। এভাবে শুধুমাত্র প্রয়োজনের সময় স্মার্টফোনটা ব্যবহার করবেন এবং যখন আপনার স্মার্টফোনটা ব্যবহার এর দরকার পড়বে না তখন আপনি চেষ্টা করবেন স্মার্টফোনটাকে হাতের সামনে না রাখার। এতে আপনি ভাল ফলাফল পাবেন আশা করি।


ডিলিট করে ফেলুন অ্যাপস

চেষ্টা করে দেখবেন আপনি যে অ্যাপস গুলোতে বেশি আসক্ত সেগুলো বাদ দিয়ে দেওয়ার। হতে পারে নির্দিষ্ট কোন একটি অ্যাপ্লিকেশনে আপনি প্রচুর পরিমাণে মুভি দেখেন। আপনি মুভি দেখাতে আসক্ত হয়ে গিয়েছেন এবং মুভি দেখা বন্ধ করতে চাইছেন। তখন আপনার কাজ হচ্ছে সম্পূর্ণ এপটাই ডিলিট করে ফেলা। ব্যাপারটা একটু কষ্টসাধ্য বটে। তবে মানুষ চাইলেই কি না করতে পারে।


আপনি কি গেমার?

আপনি যদি একজন গেমার হয়ে থাকেন তবে আপনার পক্ষে স্মার্টফোন আসক্তি ছড়াটা বেশ কষ্টকরই হবে। কেননা একজন গেমারের জগৎটাই যেন গেমস নিয়ে থাক। আর এই গেমিংয়ের আসক্তির জন্য একজন গেমার স্মার্টফোন ছাড়তে পারে না। যার দরুন তাকে পড়তে হয় অনেক সমস্যায়।


তবে আপনার যদি স্মার্টফোন আসক্তি ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছাশক্তি প্রবল থাকে তবে আপনাকে গেমিং এর অভ্যাস আস্তে আস্তে কমিয়ে আনতে হবে। যদি আপনি গেমিং এর অভ্যাস কমিয়ে আনতে না পারেন আপনার পক্ষে স্মার্টফোন ব্যবহার আসক্তি কমানো কখনোই সম্ভব না।


আপনার পড়াশোনা কাজকর্ম সকল কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গেম খেলা ভালো। তবে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায়। আর যদি আপনার গেম খেলাটাই আসক্তির মূল কারণ হয়ে থাকে, তবে তো কোন কথাই নেই। একটি নির্দিষ্ট মাত্রা মেইনটেইন করে গেম খেলুন। এতে করে কিছুটা হলেও স্মার্টফোন আসক্তি থেকে আপনি মুক্তি পাবেন। সারাদিন গেম নিয়ে পড়ে থাকলে তো আর হয় না।


ছেড়ে দিন স্মার্টফোনের ব্যবহার

এতক্ষণ ধরে স্মার্ট ফোন আসক্তি ছাড়া নিয়ে অনেক টিপস আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু উপরের পরামর্শগুলো বাস্তবায়িত করার পরেও যদি আপনি স্মার্ট ফোন ছাড়তে না পারেন তবে আপনার সময় হয়ে এসেছে পুরোপুরি স্মার্টফোনকে জীবন থেকে তাড়িয়ে দেয়ার। আপনি একটি বাটন ফোন ব্যবহার করা শুরু করুন।


বাটন ফোন ব্যবহার করলে আপনি ব্যাকডেটেট হয়ে যাবেন না। বরং আপনি সময়ানুবর্তী মানুষদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন। একটা কথা মনে রাখবেন, যারা সময়কে পাত্তা দেয় না সময়ও তাদের কে পাত্তা দেয় না। সুতরাং ব্যাকডেটেড হওয়ার ভয়ে আপনি যদি এই কাজটিও করতে ব্যর্থ হন তবে পাঠক এখানে আমার আর কিছু করার নেই।


স্মার্টফোন আসক্তি ছাড়ার কিছু টিপস সম্পর্কে আমি মাত্র টিপস দিয়্র দিয়েছি। কিন্তু টিপসগুলো বাস্তবায়িত করার পুরোটাই নির্ভর করছে শুধুমাত্র আপনার উপর এবং আপনার ইচ্ছা শক্তির উপর। আশা করি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন।



স্মার্টফোন আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে যারা অনেকদিন ধরে চেষ্টা করছিলেন কিন্তু পারছিলেন না তাদের জন্য হয়তো এই লেখাটি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আপনারা টিপসগুলো অবশ্যই অনুসরণ করে দেখবেন আপনাদের কাজে লেগেও যেতে পারে। তবে আবার বলছি স্মার্ট ফোন আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার মন মানসিকতা আপনার নিজেকেই প্রস্তুত করতে হবে।


আপনার নিজেকেই নিজেকে বোঝাতে হবে এবং আপনার ইচ্ছাশক্তি প্রবল ভাবে থাকতে হবে। অন্যথায় আপনি কাজটি করতে কখনো সম্ভব হবেন না। আজ তাহলে এখানেই ইতি টানছি। ধন্যবাদ।