স্যামসাং কোম্পানীর ইতিহাসঃ উন্নয়ন, অগ্রগতি ও আওতা

আপনারা স্যামসাং কোম্পানীর সম্বন্ধে জানেন না এমন মানুষ কমই আছেন। তবে হয়তো আপনারা এর সম্বন্ধে যা জানেন তা খুব কমই জানেন। কেন? এই প্রশ্নের উত্তর আপনারা আজকের পোস্ট পড়লেই বুঝতে পারবেন।

স্যামসাং কোম্পানীর ইতিহাসঃ উন্নয়ন, অগ্রগতি ও আওতা
স্যামসাং কোম্পানী এর ইতিহাস


স্যামসাং গ্রুপ একটি দক্ষিণ কোরীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। স্যামসাং বিভিন্ন খাতে ব্যবসায় পরিচালনা করে। যেমন - স্যামসাং ইলেক্ট্রনিকস যারা বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় ইলেক্ট্রনিকস পন্য সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। স্যামসাং টিম কোরিয়ার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। সকল খাতে বিনিয়োগকারী স্যামসাং কোম্পানী বিশ্বের বিক্রিত সবচেয়ে বেশি মোবাইল ফোনের তালিকায়ও রয়েছে শীর্ষ অবস্থানে।


স্যামসাং একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। ১৯৩৮ সালে লি বিয়ং চল স্যামসাং গ্রুপের প্রতিষ্ঠা করেন। স্যামসাং এর সদর দফতর হলো স্যামসাং টাউন, সিওল, দক্ষিণ কোরিয়া। স্যামসাং এর প্রধান ব্যক্তি হচ্ছেন লি কুন হি, যিনি স্যামসাং ইলেক্ট্রনিকস এর চেয়ারম্যান। স্যামসাং মোবাইল ফোন, হোম এপ্লায়েন্স, ইলেক্ট্রনিকস, ইলেক্ট্রিক উপাদানসমূহ, মেডিকেল সরঞ্জাম এবং জাহাজ ব্যবসা সহ আরো অনেক। স্যামসাং এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট হলো samsung.com।


স্যামসাং এর কার্য আওতা 

স্যামসাং বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেমোরি চিপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। স্যামসাং এর বানানো মেমোরি চিপ আইফোনেও ব্যবহার হয় এবং স্যামসাং হলো অ্যাপল এর সবচেয়ে বড় সাপ্লায়ার। স্যামসাং ২০১১ সাল হতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্মার্টফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে এবং আজও তার ধারা বজায় রয়েছে। এছাড়া ২০০৬ থেকে স্যামসাং বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিভি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে বড় এলসিডি প্যানেল প্রস্তুত এর খেতাবও তাদের নামে। আর বিশ্বের শতকরা ৯৮ ভাগ এমোলেড ডিসপ্লেই তাদের বানানো। গতবছর সিএসই(CSE) তে তাদের বানানো টেলিভিশনই ছিল সবচেয়ে বড় ডিসপ্লে এর। 


স্যামসাং এর বিনিয়োগ

১৯৯৫ সালে ফুবু(FUBU) নামের একটি কোম্পানিতে স্যামসাং বিনিয়োগ করে যারা এখন অবধি ৬ বিলিয়ন ডলার ইনকাম করেছে। স্যামসাং বর্তমান সময়ে ৮০ টিরও বেশি দেশে কাজ চালাচ্ছে যেখানে তাদের ৫০০০০০ এরও বেশি কর্মী রয়েছে। যেখানে গুগল, অ্যাপল ও মাইক্রোসফট এর যোগ করা সকল কর্মী সংখ্যাও স্যামসাং এর সমান হবেনা। এটাতো দেখলাম স্যামসাং এর কিছু বিশেষ জায়গা নিয়ে। এবার আসুন দেখি স্যামসাং আসলে কত জায়গায় নিজেদের বিচরণ ছড়িয়েছেঃ


স্যামসাং এর আয় এবং বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতির উদহারণ

স্যামসাং এর ২০১৪ সালের আয় ছিল ৩০৫ বিলিয়ন ডলার যেখানে অ্যাপল এর ছিল ১৮৩ বিলিয়ন ও গুগলের ছিল ৮৩ বিলিয়ন ডলার। দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিপির শতকরা ১৭ ভাগ স্যামসাং এর অবদান। এবার হয়তো আপনি ভাবছেন স্যামসাং এমন কি করে। দেখুন তাহলে:


স্যামসাং এর রয়েছে স্যামসাং ইঞ্জিনিয়ারিং এবং  কন্সট্রাকশন এর ব্যবসায় যেখানে তাদের বেশ কয়েকটি আলাদা সেক্টরও রয়েছে। স্যামসাং এর রয়েছে ইলেক্ট্রনিকস এর ব্যবসায় যেখানে ডিজিটাল ইমেজিং ও মোবাইল ডিসপ্লে এর মত জিনিসপত্র ছাড়াও আরও প্রচুর জিনিস বানানো হয়। এরপর স্যামসাং এর রয়েছে ফাইন্যান্সিং ফাউন্ডেশন যেখানে বীমা, নিরাপত্তা, ইনভেস্টমেন্ট, সহ প্রচুর আর্থিক সুবিধা নিয়ে কাজ করা হয়। স্যামসাং রয়েছে স্যামসাং বিপি ক্যামিকেলস এবং স্যামসাং পেট্রো ক্যামিকেলস নামে দুটি ক্যামিকেলস প্রতিষ্ঠানও। স্যামসাং এর একটি মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানও রয়েছে যেটা শেরিল ইন্ডাস্ট্রিজ নামে পরিচিত। 


এগুলো ছাড়াও স্যামসাং এর মোবাইল নিয়ে কথা না হয় আর নাই বললাম। স্যামসাং বানিয়েছে বিশ্বের প্রথম ১০৮ মেগা পিক্সেল ক্যামেরা স্মার্টফোন। স্যামসাং এর রয়েছে হোটেল এন্ড রিসোর্ট, অর্থনৈতিক গবেষণা কেন্দ্র এবং আরো অনেক কিছু। গত ২০ বছর ধরে রেনল্ট এর সাথে যুক্ত হয়ে গাড়িও প্রস্তুত করছে স্যামসাং।


বিশ্বের কিছু উচ্চতম বিল্ডিং এর নাম বললে দুবাই এর বুলজ খলিফা এবং পেট্রোনাস টাওয়ারের নাম আসে। কিন্তু শুনে অবাক হবেন যে এগুলো স্যামসাং কন্সট্রাকশন কোম্পানির বানানো বিল্ডিং। আরও মজার বিষয় হলো স্যামসাং আমাদের দেশের শাহজালাল বিমানবন্দর এর বর্ধিত টার্মিনালটির কাজও করতে চলেছে।


স্যামসাং এর রয়েছে টেকউইন সেক্টর যেখানে বিভিন্ন সুরক্ষা প্রযুক্তি এবং অস্ত্র ও পারমানবিক বোমা নিয়ে কাজ করা হয়। জেট ইঞ্জিন বানানোতেও কাজ করে যাচ্ছে স্যামসাং। বিশ্বের অন্যতম ভালো জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হলো স্যামসাং হেভি ইন্ডাস্ট্রি। সাধারণ জাহাজের পাশে স্যামসাং এর জাহাজ দেখলে একে অনেকটাই জায়ান্ট মনে হবে। কোরিয়ার সবচেয়ে বড় থিম পার্ক স্যামসাং পরিচালনা করে। আর স্যামসাং কোরিয়াতে এতই বিশাল যে সেখানে স্যামসাং ডিজিটাল সিটি নামে একটি আর্থিক এরিয়া প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। 


স্যামসাং এর রয়েছে বেশ কিছু ফ্যাশন হাউজ যেটা অবশ্য এখনও বিশ্বব্যাপী ছড়ায়নি। এছাড়া রোবোটিক্স, ক্লোনিং, ভার্চুয়াল, ৩ডি প্রিন্টিং এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এর কাজ করার জন্য স্যামসাং এর রয়েছে একটি গবেষণা কেন্দ্র। গুগল এমাজন এর মত স্যামসাং এরও একটি নিজস্ব ভয়েস এসিস্ট্যান্ট রয়েছে যেটার নাম বিক্সবি। স্যামসাং তাদের মুনাফার ১০০ মিলিয়ন ডলার প্রতিবছর তাদের থাকা মেডিকেল সেন্টারে ডোনেট করে।


উপসংহার  

এখান থেকেই বোঝা যাচ্ছে স্যামসাং ছোট একটি মুদি ব্যবসায় থেকে শুরু হলেও আজ তারা বিশ্বের নেতৃত্ব দেয়ার মতো একটি কোম্পানি। তারা যেটা শুরু করেছে তা শুধু প্রসারিত করে গিয়েছে কোন সঙ্কোচন নয়। আশা করা যাচ্ছে ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাবে স্যামসাং। আপনার যদি একটি স্যামসাং মোবাইল থাকে তাহলে এর পর থেকে যখনি আপনি সেটা দেখবেন আপনার দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে অন্যরকম কারণ আপনি জেনে গেলেন যে স্যামসাং আসলে কি এবং এর মূলে কি ছিল।

আপনার যদি এর বাইরে কিছু জানার থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই আমাদের জানাবেন এবং অবশ্যই স্যামসাং এর মানসম্মত পণ্যগুলো ব্যবহার করে দেখবেন।